ঐযে সাজেক! কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ, মেঘ পাহাড়ের লুকোচুরি, বারবার দৃষ্টি হারিয়ে যায় দূর নীলিমার পানে, দিগন্ত জোড়া মেঘ-পাহাড়ের এক অনন্য মিতালির নাম সাজেক ভ্যালি।
ভ্রমণের আনন্দ অন্য কোনো কিছু দিয়ে মেটানো অসম্ভব তাই আশাব্যঞ্জক চিত্তাকর্ষক ভ্রমণ বাংলার ভূস্বর্গ সাজেক ভ্যালির রুই লুই পাড়া ও ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট সুউচ্চ কংলাক পাহাড়। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে দুটি গাড়িতে প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ শিশু যুবক বৃদ্ধ রাত ১০টায় যাত্রা শুরু করি, পরিণত হয় মুদ্রণ শিল্পের কারিগরদের পারিবারিক মিলনমেলায়। ভোর পাঁচটায় পৌঁছাই খাগড়াছড়ি জেলা শহরে, ফজরের সালাত আদায় করে ভোরের হাঁটাহাঁটির পর সকালের নাশতা করে রিজার্ভ জিপে চড়ে দীঘিনালার আর্মি ক্যাম্প থেকে স্কট দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে রুইলুই পাড়ায় পৌঁছাই দুপুর নাগাদ। আদিবাসী শিশুরা হাত নেড়ে সাদর সম্ভাষণ ও স্বাগত জানায় আমাদেরকে।
সাজেকের অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার্থে খাগড়াছড়ি থেকে যেতে হয়েছে। আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে চান্দের গাড়িতে যেতে যেতে যত দূর চোখ যায় সবুজে মোড়ানো পাহাড় আর পাহাড়, বন-বনানী, কুয়াশা আর মেঘ। মাঝে মধ্যে ছনের ছাউনি আর বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি পাহাড়িদের ছোট ছোট ঘরবাড়ি, বাজার, নদীর মতো বয়ে চলা নিচু ভূমি ঝরনা এবং চারপাশে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো বিস্তীর্ণ পাহাড় সারি।
পাহাড়ি রাস্তার প্রতিটি বাঁকে নতুন সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমায়, কিছু দূর যেতেই প্রকৃতির পরিবর্তন দেখা গেল কুয়াশা মেঘের ভেলায় মুছে গিয়ে আকাশ নীলে নীলে নিচে নেমে এলো যেন ওই পাহাড়টা ধরতে পারবো আমি। মেঘের উপত্যকা সাজেকের সৌন্দর্য আর প্রকৃতির ঘ্রাণ নিয়ে যায় অন্য এক দুনিয়ায় মনে এক ধরনের স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি হলো। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা মেঘ-পাহাড়ের রাজ্য সাজেকের পথটি রোমাঞ্চকর, পাহাড় থেকে অতলে তাকাতেই গা শিউরে ওঠে কত উঁচুতে উঠেছি। মায়াবী প্রকৃতি স্নিগ্ধ বাতাসে রূপের ডালি উপভোগ করেছি আমরা। সব মিলিয়ে সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক ভ্যালি।
মেঘ বিলাস রিসোর্টে চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই অরকেন রেস্তরাঁয়, বিকেলে এখানকার মূল আদি জনগোষ্ঠী লুসাই গ্রামে তাদের ঐতিহ্য এবং জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ করে হেলিপ্যাড থেকে মেঘের সাথে আলিঙ্গন, যেন হাত বাড়ালেই মেঘ ধরা যায়, অগত্যা মেঘ ছুঁয়েছে মন। পাহাড়ি বরই পেঁপে কলা আনারস বেশ সুস্বাদু। সূর্যাস্তের পর জোছনা রাতে খোলা আকাশের নিচে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বারবিকিউ পার্টি চলে রাত অবধি।
সকালের স্নিগ্ধতা দুপুরের অলসতা বিকেলের বিলাসী সন্ধ্যার বর্ণিল আর রাতের এক মায়াবী সাজেক রূপসী অপূর্ব অপরূপ অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করি।
মনে পড়ে যায় আব্দুল হালিম চৌধুরীর গান : ঐ পাহাড় আর গাছ গাছালি নীল ঝর্ণার গান, জানি গো প্রভু জানি যে শুধু সকলই তোমার দান, ঐ আকাশ ঐ যে বাতাস তোমার নামে তাসবিহ আঁকে, ও নদী ঐ যে সাগর কলতানে তোমায় ডাকে, প্রকৃতির সুরে সুরে তোমারই নাম তোমারই গান, আকাশের মিষ্টি গানে বৃষ্টি নামে তোমার দানে, ধরণী ফুলে ফুলে সুশোভিত তোমার দানে, সুরুয আর চন্দ্র তারা নিত্য ছড়ায় আলোরই বান।
পরদিন কুয়াশা জড়ানো সকালে নাশতার পর ঘোরাঘুরি করে সকাল দশটায় সাজেক ত্যাগ করে দুপুরে খাগড়াছড়িতে পৌঁছে নামাজ ও লাঞ্চ সেরে জেলা পরিষদের হর্টিকালচার পার্ক ঝুলন্ত ব্রিজ, লেকের পাড়ে কফিতে চুমুক দিয়ে চলে যাই আলুটিলা গুহায় এরপর শহরে কেনাকাটা করে রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেই।

Share.

মন্তব্য করুন