কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম পৃথিবীর স্বর্গ নামে পরিচিত কাশ্মিরে। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি কিছু দর্শনীয় স্থান খুব কাছে থেকে দেখেছি বাকৃবি সাংবাদিক সমিতির আমরা আটজন। শুধু কাশ্মির নয়, এই সফরে আমরা ঘুরেছি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরও। দুই সপ্তাহের ট্যুরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি এমন কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলো আমাদের আনন্দ দিয়েছে, কষ্ট দিয়েছে, অবাকও করেছে। তেমন অদ্ভুত কিছু অভিজ্ঞতা নিয়ে আজকে লিখছি।
মানিব্যাগ হারানো
শিয়ালদহ থেকে জম্মু যাবার পথে হামসাফার এক্সপ্রেসে ৩৪ ঘণ্টার যাত্রা। সেই রাতে আতিকের মানিব্যাগ হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। সেই মুহূর্তটা আমাদের সকলের কাছেই বিষাদময় ছিল।

হিন্দি বলার ব্যর্থচেষ্টা
পুরো ভারত সফরে আমরা সেখানকার মানুষের সাথে কথা বলার জন্য হিন্দি ভাষা ব্যবহার করেছি। তবে যা বলেছি তার প্রায় সবই ছিল ভুলভাল। আতিক আর রনি ভাই কিছুটা হিন্দি বলতে পারলেও বাকিরা এমন সব শব্দচয়ন করেছে, ট্যুরে আনন্দের অন্যতম খোরাক ছিল এটি।

কফি হাউজ খোঁজা
কলকাতা শহরে এসেছি, আর কফি হাউজে যাবো না, তা কি হয়! এমন চিন্তা করেই সবাই কফি হাউজে যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। লোকাল বাস থেকে নেমে হেলপার দেখিয়ে দিলেন পথ। তবে আদৌও সেটি কফি হাউজ ছিল না, ছিল কেএফসির শপ। এরপর আশপাশে খুঁজতে লাগলাম, রাস্তায় মানুষকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। এমন সময় বাশার ভাই এক দোকানদারকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, ‘কে মান্না দে?’ বাশার ভাই তখন তাকে গান গেয়ে শোনালেন, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আর নেই।’ লোকটা পুরো হাঁ হয়ে তাকিয়ে ছিল। অনেক খুঁজেও না পেয়ে অগত্যা আমরা ফিরে এলাম কফি হাউজে না গিয়েই।

চেকপোস্টে ব্যাগ রেখে আসা
শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম যাবার পথে চেকপোস্টে সবাইকে চেক করা হয়। মেশিনে চেকিং করিয়ে সাথের লাগেজ নিলেও কাঁধের ব্যাগ ফেলে চলে আসে তানভীর। পরে চার কিলোমিটার চলে আসার পর মনে পড়ে এবং গাড়ি থেকে নেমে আবার যেতে হয় চেকপোস্টের কাছে। যদিও খুব সহজেই ব্যাগটি পাওয়া যায়, তবে সবাই খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছিল।

ট্রেনের শিকল টানা
জম্মু থেকে ফেরার পথে ট্রেনের তৃতীয় টায়ারে রাফি ভাই শুয়ে আছে। কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে শিকলে টান দিয়ে বসেন তিনি। সাথে সাথে ট্রেন থেমে যায়। যাত্রীরা সবাই বিচলিত হয়ে যায় ট্রেন থামায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে কয়েকবার খোঁজ করে, তবে ততক্ষণে রাফি ভাই স্থান পরিবর্তন করে অন্য সিটে চলে যায়। সে যাত্রায় এক হাজার রুপি জরিমানার হাত থেকে বেঁচে যাই আমরা।

খুনসুটি অবিরাম
পুরো ট্যুর জুড়েই ছিল মজা আর খুনসুটি। বিশেষ করে জীম আর রনি ভাই ছিল কমেডির কেন্দ্রবিন্দু। রিল আপলোড দেয়া, একে অপরের পেছনে লাগা, পিঞ্চ করা, ফানি ডান্স সবই ছিল। ঠাট্টার ছলে কাশ্মিরি মেয়ের প্রসঙ্গ তুলে আব্দুল আউয়াল ভাইয়ের বউকে নালিশ করা, অতঃপর জীমের দৌড়ানি খাওয়া মনে রাখার মতো স্মৃতি। বস্তুত, সিনিয়র জুনিয়র সবাই যেন মিশে গেছিলাম এই ট্যুরে।

সাত হাজারের উত্তরে দুই শ’
পেহেলগামে উঁচু উঁচু পাহাড়ে উঠার জন্য ঘোড়া ভাড়া পাওয়া যায়। এসময় একজন দাম হাঁকালেন সাত হাজার রুপি। প্রত্যুত্তরে আব্দুল আউয়াল ভাই বললেন দুই শ’। এটা শুনে ঘোড়ার মালিকসহ আশপাশের সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ভাইয়ের দিকে। অবশ্য পরে পাঁচশ রুপিতে যেতে রাজি হয় ঘোড়ার মালিক, তবে আমরা পায়ে হেঁটেই পাহাড়ে উঠেছিলাম।

Share.

মন্তব্য করুন