বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তরুণ থেকে বৃদ্ধ সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে রয়েছে তার জনপ্রিয়তা। তার অভিনয়ে মুগ্ধ মানুষ। তিনি শুধু অভিনেতা নন, একজন সফল সংগঠকও। বর্তমানে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকে সম্মানিত। সম্প্রতি নিজের শৈশব ও সফলতা নিয়ে কিশোর পাতার মুখোমুখি হয়েছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান সাইদুল

কেমন আছেন?
এই তো, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।
কিভাবে শৈশব কেটেছে আপনার?
আমার শৈশব বেশ ভালো কেটেছে। সবুজ গাছগাছালির ছায়ায় ঘুরতাম। পাখির ডাক শুনতাম। পাখির সেই কিচিরমিচির সুর এখনও মনে পড়ে। মাঠের ঘন ঘাসের ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতাম। খেলতাম কত রকমের খেলা। নদীর কূলে ঘুরে বেড়াতাম। বলতে পারি, আমার শৈশব নদীর সাথেই কেটেছে। সেসব দিনগুলো খুব মজার ছিলো। গ্রাম মানেই তো সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর! চারিদিকে কত রকমের গাছ। আবার সবুজের হাতছানি।
এখন এখানে এই ঢাকার ইটপাথরের যে জীবন দেখেন তাতে কী মনে হয়?
এটি তো সময়ের ব্যাপার। এখন যারা বড় হচ্ছে এই ইটপাথরের ভিন্ন পরিবেশে, তাদের শৈশব আর আমাদের শৈশব তো এক হবে না। তবে আমরা অনেক ভাগ্যবান। খোলা আকাশের নিচে আমরা বড় হয়েছি। খেলাধুলা করার মাঠ ছিলো কত বড়। যেদিকে ইচ্ছা ছুটে গেছি। কিন্তু এই ঢাকা শহরে এসব তো কল্পনাও করা যায় না। তবে এখন গ্রামও আগের মতো নেই। এই শহরে যাদের শৈশব আছে তাতেও তাদের জন্য ভালো দিক আছে। খোলা মাঠঘাট না থাকলেও অন্য অনেক সুবিধা তো আছে।
ছোটবেলার দিনগুলো কি মনে পড়ে? কেমন করে মনে পড়ে?
আবারও বলি আমি ভাগ্যবানই। আমি একজন কৃষকের ছেলে। আমার বাবা কৃষক, এটি আমি গর্ব করেই বলি। কৃষকরাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক। গ্রামে কৃষিকাজ দেখতাম। খেলার মাঠে খেলতাম। আবার নানা রকম খেলা ও যাত্রাপালা দেখতাম। এসব স্মৃতি আমি খুব মনে করি। মনে পড়েও। সেই জীবনকে মিস করি খুব। এখন তো এগুলো স্বপ্নের মতো।
বর্তমানে যে শিশু-কিশোরদের দেখেন, এদের দেখে কষ্ট হয় কি?
কষ্ট তো হয়ই। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। নিজকে নিয়ে ব্যস্ত। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। একইভাবে ইন্টারনেট দুনিয়ায় মানুষ নিজকে ব্যস্ত রাখে। এখনকার শিশু-কিশোররা তো ইন্টারনেট জগতেরই বাসিন্দা। নেট ছাড়া তাদের চলেই না। কার্টুন, ইউটিউব আর হরেকরকম ভিডিও দেখে দেখে কাটে এদের দিনরাত।
ছোটবেলার কোনো স্মৃতি মনে পড়ে কি?
একটি গল্প খুব মনে পড়ে। ঠিক গল্প না, আমার জীবনেরই একটি ঘটনা। সেটি হলো- মানুষ নিজের চেষ্টায় অনেক কিছু করতে পারে। একদিন আমি বাবার সাথে বাজারে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার পাশে একজনকে দেখলাম সিগারেট খেয়ে শেষ অংশটুকু ফেলে দিয়েছে। আমি দৌড়ে গিয়ে সে অংশটুকু তুলে মুখে নিয়ে টানতে শুরু করেছি। বাবা দেখে ফেললেন। কিন্তু আমাকে কিছুই বলেননি তখন। বাজার থেকে ফিরে এলাম বাড়িতে। বাড়িতে এসে বাবা আমাকে একটি লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করলেন। আমি তো ভয়ে শেষ। বাবা বললেন- তোর এত বড় সাহস! সিগারেট মুখে তুললি! সেই যে মার খেলাম তারপর থেকে আমি আর সিগারেট ধরিনি। কিন্তু ইন্টারে পড়ার সময় কী কারণে আবার সিগারেট ধরি। পরে যখন বুঝতে পারি যে, সিগারেট ভালো জিনিস নয়। তখন তা নিজেই ছেড়ে দেই। ইচ্ছে করলে মানুষ নিজের চেষ্টায় অনেক খারাপ স্বভাব দূর করতে পারে।
এখন এই বয়সে এসে কেমন মনে হয় জীবনকে?
আমার জীবন আসলে উপন্যাসের মতো! নানারকম উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে আমার জীবনটি। অনেক দুঃখ-বেদনা সহ্য করে এগিয়েছি। তবে সবকিছুর মধ্যেও মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, তিনি আমাকে অনেক দিয়েছেন।
কেন অভিনয় জগতে এলেন?
এখানে একটি মজার কথা বলি। আসলে আমি জীবনকে নানারকমভাবে দেখার জন্য অভিনয় জগতে এসেছি। ধরো, একজন ডাক্তার হলে তিনি শুধু ডাক্তারি জীবন দেখবেন। একজন ইঞ্জিনিয়ার হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের জীবন দেখবেন। কেউ ব্যবসায়ী বা শিক্ষক হলে সেই জীবনই দেখবেন শুধু। কিন্তু অভিনয় জগতে একজন অভিনেতা এসব চরিত্রে অভিনয় করে। ফলে সবকটি জীবন দেখার সুযোগ হয় এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে।
আপনার জীবনে তো অনেক সফলতা রয়েছে। বিখ্যাত নায়ক, সংগঠক এবং বর্তমানে শিল্পী সমিতির সভাপতি…।
আসলে মানুষ যখন সঠিক কাজ করবে। সৎ পথে থাকবে তখন তার জীবনে সফলতা আসবেই। আমি আসলে নাম-যশ কিংবা বিখ্যাত হতে কাজ করিনি। আমি আমার কাজটি সৎপথে থেকে সুন্দরভাবে করার চেষ্টা করেছি। এখনো করছি। এভাবে কাজ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আসলে মানুষকে সৎ এবং সুন্দর থাকতে হয়। সততার সাথে কাজ করলে সফলতা আসেই।
কিশোর পাতার পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।
আজকের শিশু-কিশোর যারা, তোমরা তোমাদের সময়কে ভালো কাজে লাগাও। শুধু ইন্টারনেটে পড়ে থাকলে চলবে না। নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তোলো। সুন্দর মানুষ হও। আর আমার পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জেনো- ঈদ মুবারক!

Share.

মন্তব্য করুন