আমিরুল ইসলাম বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান শিশু-সাহিত্যিক। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি ছোটদের জন্য লিখছেন। লেখালেখিতে সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন তিনি ছড়া লিখে। পাশাপাশি লিখেছেন প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, নাটক। এ সময়ে আধুনিক শিশু-সাহিত্যের অন্যতম রূপকার হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন তিনি। ‘রূপকথা’ তার লেখালেখির অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। ছোটবেলায় বাবার মুখে রূপকথার গল্প শুনে শুনেই মগজের ভেতর রূপকথার নিজস্ব জগৎ তৈরি করে ফেলেন। যে কারণে অন্যান্য বিষয়ে লেখালেখির চাইতে সুযোগ পেলেই রূপকথার দিকে ঝুঁকেছেন। লিখেছেনও দু’হাতে। তার সময়ে তার চাইতে আর কেউ এত বেশি রূপকথা লিখেন নি। পাঁচশত রূপকথার গল্প লেখা তারই বড় প্রমাণ। আমিরুল ইসলাম অত্যন্ত জীবন-রসিক, আড্ডাবাজ, কৌতুকপ্রিয় এবং ভোজনপ্রিয় মানুষ। লেখালেখিতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশু-সাহিত্যসহ বহু পুরস্কারে ভূষিত হন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-
মেজবাহ মুকুল

কখন থেকে বুঝতে পারলেন যে ‘আর কিছু নয় লেখালেখিই হবে আমাকে দিয়ে?
এরকম কখনো বুঝি নাই। সবসময় মনে হয়েছে লেখালেখি করুম, ফুটবল খেলুম, ক্রিকেট খেলুম, ছবি আঁকুম, সংগঠন করুম। নিজের মতো করে একটা আনন্দময় জীবন কাটামু। এরকমই ভাবছি সবসময়। আর কিছু হবে না লেখালেখিই হবে এমনটা ভাবি নাই। টেলিভিশন হবে। টেলিভিশন প্রোগ্রাম বানাবো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র করবো। এরকম নানা কিছুই ঘটছে জীবনে। লেখালেখিটাই চরম কিংবা চূড়ান্ত না আরকি। এর বাইরেও অনেক আনন্দ ছিল আমার জীবনে।

সাহিত্য বিষয়ক পড়াশোনা কেমন করতেন ছোটবেলায়?
পড়তাম। প্রচুর পড়তাম। ক্লাসে যা পড়া দিত তা পনেরো মিনিটে শেষ হয়ে যেত। যদি ছাত্রের বুদ্ধি থাকে। তারপর যে অফুরন্ত সময় আমি কি করুম। আরও ছিলো মর্নিং শিপট ক্লাস। তখনই বইসা বইসা দুপুরের রোদে বই পড়তাম। দুপুরের আগে বই পড়তাম। অনেক সময় গোসল করতে দেরি হইতো। খাইতে দেরি হইতো। তো মনের ভেতর থাকতাম আরকি। আমার এই পড়ার আকর্ষণ শুরু হইছে ক্লাস থ্রি থেকে। তখনি আমি লাইব্রেরির মেম্বার। আমি আর আমার বড় ভাই। ডেইলি একটা করে বই আনি আর গোগ্রাসে গিলি। লাইব্রেরিতে ফেরত দিয়া আবার নতুন বই আনি। তখন চিন্তার বাইরে বই পড়েছিলাম। এই আকর্ষণ পরবর্তী জীবনেও ছিলো, আছে এবং এখনো বই পড়ি। সব ধরনের বই পড়ি।

সেই থেকেই কি লেখালেখি শুরু করেন নাকি বই পড়তে পড়তে মনে একধরনের আগ্রহ তৈরি হওয়ার পর শুরু করেন?
বই পড়তে পড়তেই লেখালেখি শুরু করি। মনে হইলো আমিও তো এরকম লিখতে পারি। এবং খুব খেলতে খেলতে লিখছি আমি। লিখতে লিখতেই খেলা। মানে এটা যে অনেক গবেষণা, অনেক ভাবনা, মাথা ঝাঁকানি এইসব না। এই ভালো লাগলো একটা লেখা লিখলাম। এই যে তুমি আসছ যে আমি লিখতেছি কিন্তু। এর মধ্যে অফিসের লোক আসবে, কাজ হবে, কথা হবে, সব হবে। তো ক্লাস সেভেনে বইসা লেখালেখি শুরু করলাম। পরে পত্রিকায় পাঠাইলাম। ছাপা হয়ে গেল। উৎসাহ পাইলাম। এভাবেই লেখালেখি শুরু করলাম।

কৈশোরে দেখা স্বপ্ন জীবনে কতখানি পূরণ করতে পেরেছেন?
কৈশোরে কোনো স্বপ্ন দেখি নাই। খুব দরিদ্র পরিবারে জন্ম এবং কোনো স্বপ্ন ছিল না। সে স্বপ্ন যে বাস্তব হবে এমনও জানতাম না। তবে কোনো স্বপ্ন না নিয়ে ছেলেবেলা থেকে যে লেখালেখি শুরু করছিলাম, সেটা লিখতে লিখতে যে এত বই হবে। এতগুলো রচনাবলি বের হবে। লোকজন কিছুটা নাম জানবে। খ্যাতি বা অখ্যাতি হবে। পুরস্কার পাবো এইরকম কোনোদিন ভাবি নাই। এখন পেছনে তাকাইলে একটু অবাকই লাগে যে, এতকিছু করলাম জীবনে, এগুলো তো করার কথা ছিলো না। হয়তো আমি মাস্তান হইতে পারতাম, পলিটিক্যাল ক্যাডার হইতে পারতাম। সেগুলি না হয়ে জীবনের এই পর্যায়ে এসে দেখি যে, অনেক লিখছি। এই যে আনন্দ পাইছি লিখতে গিয়া। জীবনের সুন্দর সময় যে ব্যয় হইছে। জীবনটাকে যে সুন্দর করতে পারছি। এটা ভেবে খুব ভাল্লাগে। লেখা কি অইছে ব্যাপার না। সেগুলি মহাকাল বিচার করবে। অথবা কিছুই হয়নি অত লেখা। ছাইভষ্ম হইছে। এটা ব্যাপার না। ব্যাপার হইছে আমি কাজটা (লেখালেখি) যখন করতাম। তখন দেখতাম আমি মনের আনন্দ নিয়া করতাম। মনের আনন্দে আমি লিখি। একটা বই বেরোলে খুশি হই। আবার পরের বইয়ের স্বপ্ন দেখি। এই যে একটা প্রসেস, জার্নি জীবনের, লেখালেখিটা যে এতদিন ধরে করলাম, এত যে লিখলাম, এত বই বেরোলো, এটা ভেবে যখন পেছনের দিকে তাকাই তখন অবাক লাগে। এটাতো হওয়ার কথা ছিলো না আমার এই জীবনে।

কিশোরেরা কী ধরনের বই পড়তে আগ্রহী বলে মনে করেন?
সব ধরনের বই পড়তে আগ্রহী। যেমন কিশোরেরা নানান কাহিনী পড়ে, গোয়েন্দা রহস্যও পড়ে, আবার খুব মানবিক গল্পও পড়ে, আবার অ্যাডভেঞ্চারও পড়ে, রূপকথাও পড়ে। তাদের কচি মন। সবদিকেই তাদের ছোটাছুটি। অস্থিরতা। যে কারণে কিশোররা নির্দিষ্ট কিছু না। যা পায় তাই পড়তে চায়। তাদের এই খিদা চরম। যে কারণে যা পায় তাই গোগ্রাসে গিলে। এ জন্য তুমি নির্দিষ্ট করতে পারবে না কিশোররা কী পড়ে। এটা রিসার্চ করেও বোঝা যাবে না। তারা সর্বভুক। সব ধরনের জিনিসই কিশোরেরা পড়ে।

শিশু-সাহিত্যের পরিবেশ এখন কেমন মনে হয়?
পরিবেশ বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছ?

আগে যেমন রবীন্দ্র-নজরুল বা অন্যান্য কবিরা যেসব লেখা লিখেছেন শিশু-কিশোরদের জন্য সে মাপের লেখা এখন দেখতে পাচ্ছি না। এই প্রেক্ষাপট থেকেই এই প্রশ্ন করা।
রবীন্দ্রনাথের লেখা তুমি বিচার করছো একশ বছর পরে। আজকের লেখাকে একশ বছর হইতে দাও। একশ বছর পরে আজকের দিনের যে লেখাগুলো টিকে থাকবে সেগুলোর এরকমই মূল্যই হবে। যার জন্য সবসময় সব পরিবেশেই কোনো না কোনো মহিমা থাকে। কোনো পরিবেশই খারাপ না। অন্ধকার না। ব্যাপারটা এরকম। যে কারণে এখনকার মূল্য তো আমি ঐ সময়ের সাথে তুলনা করতে পারি না। এখনকারটা এখনকার। রবীন্দ্রনাথেরটা রবীন্দ্রনাথের আমলের। প্রত্যেকটা আমলের ভেতরেই কিছু উজ্জ্বল আলোকণা থাকে। সেটাকে চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগে। এখনতো বানের জলের মতো অনেক কচুরিপানা। কিন্তু মুক্তোতো কোথাও লুকানো আছে। আমি সে মুক্তো সন্ধান করতে পারছি না। যার জন্য কচুরিপানার কথাই বলবো তা না। রবীন্দ্র-নজরুলের যুগেও তো অনেক কচুরিপানা ছিল। তারাতো আজকে সব হারিয়ে গেছে। যে কারণে তুমি হতাশ হয়ো না। এখনও অনেক বড় বড় লেখা হচ্ছে। যা বাংলা শিশু-সাহিত্যের কন্টেস্টে অনেক বড়।

শিশু সাহিত্য লিখে আমাদের শিশুদের কি শেখাতে পেরেছি?
শিশু-সাহিত্য তো আনন্দ দেয়ার জন্য লেখা। শেখানোর জন্য না। এটা তো স্কুল না। যখন স্কুল তৈরি হয়নি তার আগে থেকে শিশু-সাহিত্য চলতেছে। তবে আনন্দের ভেতর দিয়ে শিশুরা শেখে।

পড়তে পড়তে তো তাদের ভেতরে এক ধরনের বোধ তৈরি হয়।
সে বোধ তো অন্য জিনিস। ভালো-মন্দ, খারাপ কোনো কিছু তো আমরা বলতে পারবো না কী হয়। শিশু-সাহিত্য তো অনুভবের ব্যাপার। সাহিত্য পাঠ মানে আসলে একটা আনন্দ। আনন্দের মধ্য দিয়া মানুষ জীবন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়ায়। শেখে। সেই শেখাটা একাডেমিক শেখা না। আনন্দের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা আরকি। সে কাজ তো শিশু সাহিত্য করেই। একটা ছেলে ১০টা ভালো বই পড়ছে আরেকটা ছেলে ১০টা ভালো বই পড়েনি। এই দু’জনের মধ্যে স্পষ্ট একটা পার্থক্য দেখা দেয়। চাকরি জীবনে যে ছেলেটা ভালো ২৫টা বই পড়ছে, যে ছাত্রের রেজাল্ট ভালো কিন্তু ভালো ২৫টা বই পড়েনি এই দু’জনের ক্যারিয়ারে বড় একটা গ্যাপ থাকে। তখন বোঝা যায় ভালো বইগুলো পড়ায় অন্তর্গত হৃদয়ে, চেতনা-চৈতন্যে একটা প্রভাব বিস্তার করে। সেটি শিশু-সাহিত্যের মূল কাজ।

আমাদের শিশু-সাহিত্যে কী ধরনের শূন্যতা অনুভব করেন?
নাহ, আমিতো কোনো শূন্যতা অনুভব করি না। পরিপূর্ণ শিশু-সাহিত্য। যা হওয়ার তাই হয়েছে। তবে মানবিক গল্প লেখা একটু কমে গেছে। মানবিক উপন্যাস লেখা, মানুষের লেখা কমে গেছে। ভূত-প্রেত, সায়েন্স ফিকশন এসব একটু বেশি হচ্ছে। আমার ধারণা কিছু দিনের মধ্যে মানবিক গল্পগুলা তৈরি হবে। বাচ্চাদের জন্য আবার লেখা হবে।

এককথায় বলতে গেলে শিশু-সাহিত্যে জীবনবোধটা তেমন আর নেই!
হ্যাঁ, এখনকার শিশু-সাহিত্যে কমে গেছে। এটা আবার ফিরে আসবে। এজন্য আমি হতাশ না।

কোনো দুরন্তপনা গল্প মনে পড়ে কি?
আমার পুরো ছোটবেলাটাই দুরন্তপনা। নির্দিষ্ট কোনো গল্প নাই। ফুটবল, ক্রিকেট, হৈ-চৈ সব করছি ছেলেবেলায়। যে কারণে নির্দিষ্ট কিছু বলা যাবে না। এই দুরন্তপনার ফাঁকে আবার দেখা যায় সন্ধ্যাবেলায় লিখতেছি। এরকম।

বিশেষভাবে কোনো খেলার প্রতি আগ্রহী ছিলেন?
ছোটবেলায় ফুটবল, পরবর্তীতে দাবা খেলার প্রতি অনেক আকর্ষণ ছিলো আমার। আর ক্রিকেট খেলা দেখার আকর্ষণ ছিলো। ওটা এখন কমে গেছে। কিন্তু দাবার আকর্ষণ ছোটে নাই। দাবাটা ভালো বুঝি। বাংলাদেশের যারা টপ প্লেয়ার তাদের সঙ্গে আমার খুব খাতির। ওদের সঙ্গে দাবা নিয়া কথা-টথা বলি। তবে ওদের সাথে খেলে লাভ নেই। সব গেম হারতে হবে (হাসি)। কিন্তু একটা বন্ধুত্ব আছে আরকি। স্নেহপূর্ণ বন্ধুত্ব।

এই আধুনিক সময়ে শিশুরা বই বিমুখ হচ্ছে কেন?
বই তৈরি হয়েছে এই পৃথিবীতে ধরো আনুমানিক ১৫০০ থেকে ১৬ ’শ সালের ভিতরে। গুটেন বার্গ প্রথম ছাপার মেশিন তৈরি করে। তার আগে বই মানে হচ্ছে হাতে লেখা। তার মানে বই হচ্ছে অল্প সংখ্যায়। অভিজাত শ্রেণী শুধু পড়তে পারবেন। কোরআন মজিদ মসজিদে থাকবে। টপমোস্ট হুজুররা কোরআন ধরে পড়তে পারবে কারণ তখন কারো বাসায় তো কোরআন ছিলো না। কারণ কোরআন তো প্রিন্ট হয় না। হাতে লেখায় থাকে। তারও আগে পৃথিবীতে রোল করে করে প্যাপিরাস কাগজে বই লেখা হতো। এক একটা রোল করে রাখা আছে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে। এখন অবশ্য ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরিতে আছে। তারও আগে রোজেটা পাথরে লেখা থাকতো কোনো একটা তথ্য, কথা, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর বইতো মাত্র সেদিনকার ব্যাপার। ১৫০০-১৬০০ সালে। আর আজকে ২০২৩ তার মানে আটশ বছর। আটশ বছর ধরে বইয়ের বিবর্তন। নানা ফর্মের বই ছাপা হলো। বই অ্যাভেইল্যাবল হইলো। তাও কি অ্যাভেইল্যাবল হইছে বই। তুমি যখন কোনো রেয়ার বই পেয়ে যাও তখন তা কাউকে আর দেখাতে চাও না। এখন বই আছে কিন্তু বইয়ের ফর্মটা বদলে যাচ্ছে। সেই যুগে যেমন প্যাপিরাস পেপার বদলে গেল। আজকে বই বদলে তোমার ইন্টারনেটে ঢুকে গেল। একই তো ব্যাপার। তাতে পৃথিবীতে যে জায়গা নষ্ট হইতো। কাগজের জন্য যে বৃক্ষ নিধন হইতো। সবকিছু গুল্লি হয়ে যাবে। তুমি একটা বই পাওয়ার অধিকার রাখো। প্রত্যেকটা বই পাওয়ার অধিকার রাখো। কুক্ষিগত করার তো কিছু নাই। এক অধ্যাপক বই পাইছে। আমারে দেখতেই দিবো না পত্রিকাটা। সে ওটা নিয়ে চোঠা মারবো। প্রবন্ধ লিখবো। ওই যুগ তো এখন আর নাই। ওই পত্রিকাটা তোমারও পড়ার অধিকার আছে। আমারও পাওয়ার অধিকার আছে। এই ইন্টারনেট সেটাই করে দিচ্ছে। একটা বইকে সকলের অধিকার করে দিচ্ছে। বইয়ের ফর্মটা বদলে যাচ্ছে। বইয়ের দোকান থাকবে না। বই এই ফর্মে (বাঁধাই) থাকবে না। বই থাকবে ইন্টারনেটে। তখন হয়তোবা আরো বেশি বইমুখো হবে ছেলেরা।

আপনার শিশু-সাহিত্য দর্শন কী?
বেঁচে থাকাটা অনেক আনন্দের। প্রকৃতি অনেক সুন্দর। মানুষ প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতিতে গাছ-পালা, পশু, পাখি, মানুষ সব একসাথে থাকে। মানুষও যা একটা প্রাণীও তাই। একটা গাছও তাই প্রকৃতির মধ্যে। এই যে প্রকৃতির প্রতি মুহূর্তের রহস্য আমরা বুঝি, কিছু বুঝি না। এই যে প্রতিদিন সূর্য ওঠে, সূর্য ডুবে যায়। কেন হয়? আমরা জানি না। চাঁদ ওঠে আলো দেয় কেনো? গাছ খাবার দেয় আমাদেরকে, অক্সিজেন দেয়। আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা দেয়। এই যে একটা গভীর আনন্দ আমাদের বেঁচে থাকার ভেতরে। আমার শিশু-সাহিত্যে আমার এই গভীর আনন্দটা এবং প্রকৃতির রহস্যটাই ছোটদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি সারাজীবন।

এই দর্শন কতোটা সার্থক করে তুলেছেন?
না, একেবারেই না। ব্যর্থ। এতে সফল হওয়া যায় না। এই দর্শনে চেষ্টা করলাম আরকি। সব চেষ্টা যে সফল হয় তা না। কিন্তু মানুষ লড়াইটা করে তো। সে যে বুড়ো সার্দিয়া গো ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্যা সি’তে শেষ পর্যন্ত তিনি একটা তিমি মাছ ধরলেন। ক্ষত-বিক্ষত মাছটাকে অন্য মাছরা খেয়ে চলে গেছে। হয়তো সামান্য একটু হাড় সেটা নিয়েই সে আসলো। মাছটা পেলো না। মানুষের জীবনটা হলো এরকম। লড়াইটা করে। সংগ্রামটা করে। স্বপ্নটা দেখে। সাফল্য কাকে বলে কেউ জানে না। এবং সাফল্য একটা ভুয়া কথা।

তরুণ ছড়াকারদের ভবিষৎ কেমন দেখছেন?
খুব ভালো। ভালো লিখতেছে অনেকে। ভালো লাগে ওদের দেখলে। মামুন সরওয়ারে ছড়া সমগ্র বের হয়েছে, ইমরান পরশ, মঈন মুরসালিন ও আহমাদ স্বাধীন, মাসুম আউয়াল ভালো লিখতেছে। এদের লেখা যখন পড়ি তখন ভালোই লাগে। এরা সামনের দিকে এগিয়ে আসছে। ভালো লিখতেছে। লিখতে লিখতেই তো ধারালো তরবারির মতো হয়ে যাবে। এবং এই যে সম্ভাবনাটা দেখাচ্ছে যে এরা ভালো লিখবে এটাই বড় ব্যাপার। এর জন্য আমি সবসময় আশাবাদী। তরুণরা ভালো লিখে। আরও তরুণরা আসবে তারাও ভালো লিখবে।

আপনার লেখালেখি জীবন নিয়ে কোনো বই প্রকাশ করতে চান?
আমার কোনো ইচ্ছে নেই। এগুলো নিয়ে অন্য কেউ যদি ভাবে তাদের ব্যাপার। আমি ক্যামনে নিজের ঢোল নিজে পিটাবো। এটা সম্ভব না।

ছোটবেলায় মা দাদি থেকে শোনা একটি শিক্ষণীয় গল্প বলুন?
সে রকম গল্প এখন মনে পড়ছে না। তবে আমার বাবার ‘ঠাকুরমার ঝুলি’টা পুরো মুখস্থ ছিলো। তখন তো গরমকালে ফ্যান ছিলো না বাসায়। বাবা তালপাখা হাতে নিয়ে বাতাস করতেন আর ঠাকুরমার ঝুলির যেকোনো একটা করে গল্প শুনাইতেন। বাবার মুখেই ছোটবেলায় অরুণ-বরুণ, কিরণমালা কিংবা শীত-বসন্ত গল্পগুলা বহুবার শুনছিলাম। এতে আমার মগজের ভিতরে একটা রূপকথার পৃথিবী তৈরি হইছিলো। এবং আমি সারাজীবন সবসময় সময় পাইলেই রূপকথা লিখছি। আমার কালে আমিই সবচেয়ে বেশি রূপকথার গল্প লিখছি।

কতগুলো গল্প লিখছেন?
প্রায় শ’ পাঁচেক হবে বোধ হয়। রূপকথার তিন খণ্ড রচনাবলি বাইর হইছে পাঁচ’শ পৃষ্ঠা করে। রূপকথা খুব প্রিয় বিষয় আমার। এটা হলো বাবার গল্প শুইনা অনুপ্রেরণা।

আমিরুল ইসলামের ছড়া

শিশুর চোখে

শিশুর চোখে ঘাসফড়িং।
আকাশ নীল। সবুজ মাঠ
শিশুর চোখে হলুদ ঘড়ি।
কাঠের ব্যাট। ফুলের ঝুড়ি।
খেলনা গাড়ি। শোলার পাখি।
শিশুর চোখে রঙিন ছাতা
গ্যাসের বেলুন। হাতি ঘোড়া।
শিশুর চোখে গোলাপ ফুল।
মোমের আলো। বৃষ্টি দিন।
ক্লাসরুম। বেঞ্চিগুলো।
টিউবকল। বটের ঝুরি।
শিশুর চোখে রবি ঠাকুর।
আমার পড়া-ক্লাসের বই।
শিশুর চোখে দূরের মাঠ
সুজন মাঝির নদীর ঘাট।
শিশুর চোখে পদ্মা সেতু
চিরসবুজ বাংলাদেশ।

এক যে ছিলো খুকি

এক যে ছিলো খুকি
নাম ছিলো টুকটুকি।
খুকি বড়ই দুখি।
সারাটাদিন বন্দি ঘরে।
জানলাতে দেয় উঁকি।

যায় ছুটে খেলার মাঠে
থইথই ঐ আকাশ পাটে
জানলা ধরে সময় কাটে
খুকি তখন সুখী
নাম ছিলো টুকটুকি।

Share.

মন্তব্য করুন