গল্পটি ভয়ঙ্কর আবার ভীষণ মজার! মহানবী সা.-এর একজন খাদেম বা সেবক। তার নাম সাফিনা। হজরত সাফিনা রা. বলেছেন গল্পটি। তিনি বললেন- একবার আমি সফরে যাচ্ছিলাম। যাচ্ছি সমুদ্রপথে জাহাজে চড়ে। সমুদ্র ছিলো ভীষণ উত্তাল। হঠাৎ ঢেউয়ের আঘাতে আমাদের জাহাজটি ভেঙে গেলো। সমুদ্রের অথৈ পানিতে পড়লাম আমি। প্রচণ্ড ঢেউয়ের উথাল পাথাল। ভাবলাম যেভাবেই হোক জীবন বাঁচানোর চেষ্টা তো করতে হবে। আমি আমাদের ভাঙা জাহাজের একটি তক্তা ধরে ফেললাম।

জাহাজের তক্তাটি ধরে ভাসতে থাকলাম সমুদ্রের বিশাল জলরাশির ওপর। ভাসতে ভাসতে একসময় আমি সমুদ্রের কূলে ভিড়লাম। দেখি সমুদ্র কূলের ওই অংশে বিশাল বাঁশ ঝাড়ের বন। বড় এবং ঘন বেশ। এমনই ঘন বাঁশঝাড় সূর্যের আলো ভেতরে পড়ছে না। এ অবস্থায় আমি ভয়ে বেশ কাবু হয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম- এখন আমার কী হবে! কী করে বের হবো এই গভীর জঙ্গল থেকে। ভাবছি আর হাঁটছি। একবার ডানে তো আরেকবার বামে। কখনও সোজাসুজি। কিন্তু কোনদিকে তার শেষ সে কথা বুঝতে পারছি না কোনোভাবে। এভাবে কেটে গেলো অনেক সময়। আমার চিন্তাও বাড়তে থাকলো। মনের ভেতর একটিই প্রশ্ন- কেমন করে বের হবো এই গহিন বাঁশবন থেকে।
এসব ভাবতে ভাবতে আমার ভয় আরও বাড়ছিলো। ভীত চোখে দেখছিলাম এদিক ওদিক। হঠাৎ দেখি একটু দূরে একটি ভয়ঙ্কর সিংহ! আমার দিকেই তাকিয়ে আছে সিংহটি! দেখা মাত্র ভয়ে আমার সমস্ত শরীর হিম হয়ে এলো। আমার বুকের ভেতর ভয় যেনো ঢুস ঢুস হাতুড়ি পেটাচ্ছিলো। ভাবলাম আজ এখানেই শেষ আমার জীবন। সিংহ চিবিয়ে খাবে আমার শরীর। আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। মনে মনে কালিমা পড়ে নিলাম।
একটু সময় পার হলো। দেখলাম সিংহ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। সিংহের ঘাড়ে বিশাল কেশর দুলছে। সিংহের দুটি চোখ যেনো সূর্যের মতো জ্বলছে। আমার মনে হচ্ছিলো এ যেনো মৃত্যুর আলো।
কিন্তু সিংহটি কোনো তর্জন গর্জন করছে না। এক মনে ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে আমার দিকে। ভয় এতই তীব্র হলো আমার আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। আকস্মিক শুয়ে পড়লাম আমি। মনের অজান্তে চোখ বন্ধ হয়ে এলো। অবশ্য কিছুক্ষণ। তারপর দেখলাম- সিংহটি একদম চুপিচুপি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। খুব করে কী যেনো দেখলো আমাকে। একসময় সিংহের কাঁধ দিয়ে আমার শরীর স্পর্শ করলো। আমি তখন একেবারে মৃত মানুষের মতো পড়ে আছি।
কিন্তু বিস্ময়ের বিষয়! আমাকে কোনোভাবে কামড় দিচ্ছে না। আক্রমণ করছে না। বা খাওয়ার চিন্তা করছে না। এভাবে কেটে গেলো আরও কিছু সময়। তারপর হঠাৎ আমাকে কেমন করে যেনো তুলে নিলো ঘাড়ে। ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে চললো কোথাও। চলতে চলতে একসময় একটি পথের ওপর এনে আমাকে দাঁড় করিয়ে দিলো। এরপর কাঁচুমাচু করে নরম ভঙ্গিতে কি যেনো বলতে লাগলো। আমি তো আর সিংহের ভাষা বুঝি না।
একটু পর সিংহটি তার লেজ দিয়ে আমার হাত স্পর্শ করলো।
এবার আমি ঠিকঠিক বুঝে ফেললাম- সিংহটি আমাকে আমার পথে তুলে দিয়েছে। এখন সে আমার কাছ থেকে বিদায় নিতে চাচ্ছে।
আমি তাকে ভীষণ আনন্দের সাথে বিদায় জানালাম। সিংহটি ধীরে ধীরে আবার সেই বাঁশবনের গহিনে ঢুকে গেলো।
আমি মহান আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করলাম।

Share.

মন্তব্য করুন