বাবার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং তাৎপর্য বলে বা লিখে শেষ করা যায় না। এক কথায় অপরিসীম ও অবর্ণনীয়। আমরা পৃথিবীকে ও জীবনকে দেখি এক দৃষ্টিকোণ থেকে আর বাবাদের চাহনিতে তা হয় অন্যরকম। বাবারা পরিবার এবং সন্তানদের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। বাবাদের কাছে আনন্দ মানে নিজের আনন্দ নয় বরং তার পরিবার ও সন্তানদের আনন্দ। প্রতিদিন কত বাবাকে দেখি তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের তাগিদে ছুটে চলছে। কেউ রিকশা নিয়ে, কেউ কোদাল নিয়ে, কেউ তাদের জীবনের আনন্দঘন যৌবনটা কাটায় প্রবাসে আবার অনেক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধও তাদের নাতি-নাতনির সাথে সুন্দর সময় কাটানোর বদলে পড়ে আছে প্রবাসে কারণ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। আদতে এসব বাবারা তার স্বপ্ন নয় বরং তার পরিবারের স্বপ্ন বাস্তবায়নেই নিজেদেরকে বিলিয়ে দিচ্ছেন। তাদের পরিবার ও সন্তানদের বর্তমানকে আনন্দময় আর ভবিষ্যৎ রঙিন করার জন্যই তারা আত্মবিসর্জনে মত্ত হয়ে থাকেন।
এইতো সেদিন গ্রামের বাড়ি থেকে আশার সময় বাস থেকে নেমে কত বাবাকে দেখলাম রাতের অন্ধকারে তারা তাদের স্বপ্ন খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমি কাউন্টার থেকে হলে আসার জন্য একটি বাইকে উঠলাম আর দেখলাম রাতের আঁধারে এক স্বপ্নচারী বাবাকে যে কী না দিনের বেলায় একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিয়ে এসেছেন। আর এখন তিনি বাইক নিয়ে রাস্তায় অথচ তখন মধ্যরাত। কেননা তার একটি স্বপ্ন পরদিন ব্যবহারিক পরীক্ষা দিতে যাবে তখন তার ঐ স্বপ্নের হাতে অন্তত দু’শত টাকা না দিলেতো তার স্বপ্ন হাসবে না। তাই খালি পেটে পরের দিনের নতুন চাকরিতে যুক্ত হওয়ার কথা চিন্তা না করে বাইক নিয়ে বের হয়েছেন। এভাবে কত বাবা তাদের স্বপ্ন অর্থাৎ নিঃস্বার্থ দায়িত্ব পালন করার জন্য সকালে বের হন আর তাদের রাত হয় না। অথচ রাত হয়েছে অনেক আগেই। তাদের জীবনে সেই আনন্দ আর ফিরে আসে না যা এসেছিলো তার শৈশবে নদীর পাশে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময়। কেননা তার সন্তানের শৈশব আনন্দময় করতে হবে।
আজ বাবার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম বাবা! তুমি বাড়িতে আসবে না? বাবা আমায় জবাবে বললেন, ‘হয়তো জানুয়ারিতে ছুটি নিয়ে আসবো।’ আমি রীতিমতো অবাক হয়েছি আর নিজেকে ধিক্কার দিয়েছি। কেন জানেন? কারণ আমার বাবা এখন ৫৮ বছরের বৃদ্ধ। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম আবার ছুটি কেন একেবারে চলে আসুন। বাবা বলে তোর অনার্স মাত্র শুরু হলো আর আমি চলে আসলে তোর পড়ার খরচ চালাবে কে? এই পরিশ্রমের কি কোনো মূল্য আছে? কোন বাবা কি আজ পর্যন্ত কোন সন্তানের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চেয়েছেন? না, বরং তারা তাদের স্বপ্নগুলোকে সফলতার উচ্চ শিখরে পৌঁছাতে যেকোনো প্রকার মূল্য দিতে প্রস্তুত আর তার বিনিময়ে তাদের জীবন হলেও।
বাবারা তার সন্তানের জন্য আত্মত্যাগ করতে কখনো দ্বিধাবোধ করেন না। আর তার উদাহরণ কেউ খুঁজতে চাইলে তাকে দূরে যেতে হয় না বরং প্রত্যেকে তাদের বাবার দিকে তাকালেই দেখতে পাবে। পরিশেষে বারবার বলতে ইচ্ছে হয় যেটা চিরন্তন সত্য, ‘বাবা শুধু বাবা নয় এক সৈনিক, খেটে যায় আজীবন সে তো দৈনিক।’

Share.

মন্তব্য করুন