বিকেলে খেলতে আসে রাশেদ, সিয়াম, ফাহিম, নিজাম। প্রতি বিকেলেই খেলে। ক্রিকেট। পাড়ার আরো অনেকেই খেলে। দুই দলে ভাগ হয়ে খেলে। কোনো নির্দিষ্ট দল থাকে না কারো।
আজকের খেলায় নিজাম-রাশেদের দলটা টসে হেরে ফিল্ডিং পায়। সিয়াম-ফাহিমরা ব্যাটিংয়ে। রাশেদের বোলিংয়ে দুইবার সহজ ক্যাচ মিস করেছে নিজাম। দুটো উইকেট মিস হলো রাশেদের। তাই রাশেদ রেগে নিজামকে বলে, “দ্বিচরণবর্গের মতো জাবর কাটছিলি নাকি?”
কথাটা শুনে থমকে যায় নিজাম। কী বলল ও! এ ধরনের কথা তো কখনো শুনে নাই। রাগের মাথায় এ কথা কি নতুন কোনো গালি; নাকি…! রাগের মাথায় তো গালিই হওয়ার কথা। গালি হোক বা অন্য কিছু হোক- নতুন শোনা এ কথাটায় বেশ কৌতূহল জেগেছে নিজামের মনে।
পাড়ার বন্ধু ওরা।
এই রাগ, এই হাসি। এই হাতাহাতি, এই গলাগলি- এমনই স্বভাব, এমনই আচরণ সবার মাঝেই। একেক সময় একেক ধরনের কথা, প্রতিকথা- এভাবেই চলছে এ কৈশোরকাল। কৈশোরের এ এক অপরূপতা।
রাশেদ শান্ত স্বভাবের। সাধারণত রাগে না; কিন্তু আজ রেগে গেল? এটা তো বড় কোনো প্রতিযোগিতা না; প্রতিদিনের নিয়মিত খেলাই। এমনকি ওরা বড় ক্রিকেটার হবে; তেমন অনুশীলন ম্যাচও না। একান্তই বৈকালিক আনন্দ-বিনোদন মাত্র। তাতে এমন রাগের কী! আবার এমন অদ্ভুত গালি কেন?
এখন জিজ্ঞেস না করে খেলায় মনোযোগ দেয় নিজাম। খেলা শেষে জানবে এমন আজব কথার মানেটা।
সন্ধ্যার আজানের কিছু আগেই শেষ হয় ওদের খেলা। নিজামরা জিতেছে; কিন্তু সে আনন্দ নেই নিজামের মনে। ওর কৌতূহল ওই কথাটা নিয়ে। তাই খেলা শেষে রাশেদের গলা ধরে শান্তভাবে বলে, এই কোন দেশ থেকে আমদানি করলি?
নিজামের এ কথা শুনে পাশে থাকা ফাহিম-সিয়ামরা অবাক হয়ে তাকায় ওদের দিকে। সিয়াম এগিয়ে এসে নিজামকে জিজ্ঞেস করে, আমদানি করেছে মানে?
চমকানো ভাব নিয়েই ফাহিম বলে, রাশেদ কি ব্যবসা শুরু করেছে ওর বাবার সাথে? স্কুল বাদ; তাই কি রাশেদ!
অন্যরাও জানতে চায় আমদানি করার ব্যাপারটা। সবার এমন কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাশেদ। নিজাম হাসতে হাসতে বলে, কী রে বলছিস না কোন দেশ থেকে আমদানি করলি?
অবাক হয়ে রাশেদ বলে, কী আমদানি? আমি তো কিছুই বুঝছি না!
– না, কিছু বুঝো না? স্যারদের মতো ক্লাসের পড়া কি পড়াচ্ছি আমি, যে বুঝো না?
খোঁচা মেরে বলে নিজাম। সাথে সাথে অন্যরা বলে, কী হয়েছে ওর? তোদের কথাবার্তার আগা-মাথা কিছুই বুঝতেছি না।
নিজাম বলে, আমি ক্যাচ মিস করার পর রাশেদ রেগে একটা গালি দিয়েছে। সে গালিটা আমাদের দেশের গালি নয়। নতুন গালি। আমি সেটা জানতেই জিজ্ঞেস করেছি কোন দেশ থেকে আমদানি করা।
– নতুন গালি!
চমকে সবাই জিজ্ঞেস করে- কী গালি রে! কেমন খারাপ গালি?
নিজাম ওদেরকে বলে- একবার শুনেছি, আমার কি মনে আছে?
এবার হো হো করে হেসে দেয় রাশেদ। হাসতে হাসতেই বলে, ও, এ কথা? শুন বোকা, এটা কোনো দেশ থেকে আমদানি করা নয়; আমার কারখানায় উৎপাদিত গালি!
– তোর কারখানা! বল তো গালিটা। শুনি তোর নতুন গালিটা। আমরা ওই গালি কেউ গায়ে মাখব না। বল্। বল…।
সবার মাঝেই আগ্রহ আর কৌতূহল শোনার জন্য। রাশেদ বলে দুই ক্যাচ মিস করায় আমি একটু রেগেই গিয়েছিলাম। তাই বলেছি, ‘দ্বিচরণবর্গের মতো জাবর কাটছিলি নাকি?’
– কী বললি?
সবাই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি।
– ‘দ্বিচরণবর্গের মতো জাবর কাটছিলি’ এটা বলেছি।
– মানে কী?
ফাহিম জানতে চায়। সাথে সাথে সবাই বলে, বল এর মানে কী? কত খারাপ এ গালিটা?
এতক্ষণ চুপচাপ ছিল মাসুম। এবার সে বলে, এটা গালিই বা হলো কেন?
সবাই সমস্বরে বলে, হ, তাই তো! নিজাম তুই এটাকে গালি ভাবলি ক্যান? এটা অন্য কিছুও তো হতে পারে।
নিজাম মুখ ভ্যাংচিয়ে বলে, না, না, গালি না গান আর কি! এই বোকারহদ্দরা! রাগের সময় কি গালি না দিয়ে গান গায় মানুষ? এই সহজ ব্যাপারটা বুঝিস না?
– তাও তো ঠিক। আমরা না, মাসুম বোকার মতো প্রশ্ন করেছে। মাসুমই বোকারহদ্দ।
নিজাম বলে, তোরা ওরে সাপোর্ট দিয়ে বুদ্ধিমান হয়েছিস, না?
রাশেদ কিন্তু চুপি চুপি হাসছে। সবাই আবারও রাশেদকে জিজ্ঞেস করে, বললি না এর মানে কী?
– মানে সহজ যদি তোরা লেখাপড়া শেখা মানুষ হস। আর কঠিন যদি অশিক্ষিত মানুষ হস। বল তোরা কোনটা?
সিয়াম বলে, স্যারদের মতো এমন কঠিন আর নীতিকথা বলিস না। সোজা করে বল ‘দ্বি… দ্বি… কী যেন বললি ওটা?
সবাই কথাটা বলতে চেষ্টা করে, ঠিক করে কেউ বলতে পারে না। নতুন শুনেছো তো, তাই ঠিক ধরতে পারেনি কথাটা। রাশেদই আবার বলে, “আমি বলেছি দ্বিচরণবর্গের মতো জাবর কাটছিলি।”
-সহজ! তুই বলেছিস বলেই তোর কাছে সহজ। আমাদের বুঝতে হবে না?
এবার রাশেদ বুঝিয়ে বলে, দ্বিচরণ মানে দুই পা। আর এর বর্গ; দুইয়ের বর্গ কী? দুইয়ের বর্গ চার হয় না? জানিস তো? নাকি সেটাও জানিস না।
– আরে ধ্যাৎ বল্ …
– দুইয়ের বর্গ চার; মানে দুই পায়ের বর্গ চার পা। চার পায়ের কোন জিনিস জাবর কাটে?
আচমকা অট্টহাসি দিয়ে সবাই বলে, গরু, গরু…। তার মানে জাবরকাটা দ্বিচরণবর্গ অর্থ গরু। বাহ্, নতুন শব্দ তো…!

Share.

মন্তব্য করুন