জালাল স্যার প্রাথমিক শিক্ষার একজন পদস্থ কর্মকর্তা। সৎ, যোগ্য এবং দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে উনার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সেদিন তিনি পাঁচলী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। তখন সকাল এগারোটা বাজে। জালাল স্যারের আগমনের সংবাদ শোনে উনাকে অভ্যর্থনা জানাতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস ছেড়ে সবাই চলে আসেন। তখন জালাল স্যার সবাইকে বললেন, আপনারা সবাই নিজ নিজ ক্লাসে যান। আমি পঞ্চম শ্রেণিতে একটি ক্লাস নিতে চাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মালেক উনাকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসে নিয়ে গেলেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। শিক্ষার্থীরা সবাই দাঁড়িয়ে উনাকে সম্মান জানালো। উনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বসতে বললেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আবদুল মালেক বললেন, স্যার আপনি অনুমতি দিলে আমিও আপনার ক্লাসে উপস্থিত থেকে ধন্য হতে চাই।
জালাল স্যার জবাবে মুচকি হেসে বললেন, অবশ্যই, অবশ্যই…. আপনি বসুন।
অতঃপর জালাল স্যার একটি চক এবং ডাস্টার হাতে নিলেন। ব্লাকবোর্ডের একপাশে বড় বড় অক্ষরে আজকের তারিখ, পিরিয়ড এবং বোর্ডের মাঝখানে ক্লাসের শিরোনাম লিখলেন, ভিটামিনের ক্লাস। স্যারের হাতের লেখা খুব সুন্দর। ছাপানো অক্ষরের মতো। এরপর তিনি সবার দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কেমন আছ ছোট্ট বন্ধুরা?
সবাই সমস্বরে জবাব দিলো, আমরা ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন স্যার?
আমিও খুউব খুউব ভালো আছি। আচ্ছা বন্ধুরা, তোমরা কি কেউ বলতে পারবে এখন কী মাস?
প্রায় সবাই সাথে সাথে জবাব দিলো, জুন মাস স্যার।
জালাল স্যার বললেন, তোমাদের উত্তর সঠিক হয়েছে। এবার বলতো দেখি, বাংলা মাসের নাম কী?
এবার আর সবাই উত্তর দিতে পারলো না। একজন আরেক জনের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগলো। অবশেষে একটি মেয়ে বলল, এখন বাংলা জ্যৈষ্ঠ মাস স্যার।
জালাল স্যার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল, উত্তর সঠিক হয়েছে। তোমার নাম কী ছোট্ট বন্ধু?
মেয়েটি বলল, আমার নাম মায়িশা হামিদ আরশি।
জালাল স্যার বললেন, বাহ খুব সুন্দর নাম। এই মাসের আরও একটি নাম আছে। তা কি তোমরা কেউ বলতে পারবে?
ক্লাসের সবাইকে চুপ থাকতে দেখে সেই ছোট্ট মেয়ে আরশি আবার দাঁড়িয়ে বলল, মধুমাস স্যার।
আরশির জবাব শোনে জালাল স্যার খুব খুশি হলেন। সবাইকে বললেন, বন্ধুরা আরশির জন্য একটি করতালি হয়ে যাক। সাথে সাথে সবার তুমুল করতালিতে ক্লাসের প্রাণ ফিরে এলো।
স্যার বললেন, এই মাসকে কেন মধুমাস বলা হয় তা কি তোমরা জান বন্ধুরা? আচ্ছা ঠিক আছে। আমিই বলে দিচ্ছি। এই মাসে বাংলাদেশে পাওয়া যায়, এমন প্রায় সকল ফলই পাকে। গাছে গাছে পাকা ফলের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। এসব ফলের অধিকাংশই মিষ্টি এবং রসে ভরপুর। এই যেমন- আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। আরো আছে আম, জাম, লিচু ইত্যাদি…। এতটুকু বলেই উনি ব্যাগ ভর্তি আম, জাম এবং লিচু সবাইকে দেখালেন। তারপর বললেন, বুঝলে বন্ধুরা এগুলো হলো বাস্তব উপকরণ। ক্লাস শেষে তোমরা মজা খেতে পারবে।
ক্লাস ক্যাপ্টেন ঐশী সবার পক্ষ থেকে জালাল স্যারকে ধন্যবাদ জানালো। স্যার আবার কথা বলা শুরু করলেন, বন্ধুরা, আমরা সবাই জানি যে ভিটামিন এবং খনিজের প্রধান উৎস হলো এই ফল। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে কোন ফলে কোন কোন ভিটামিন বা খনিজ বা পুষ্টিগুণ রয়েছে। ফলের পুষ্টিগুণ জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন! কারণ এতে করে আমরা আমাদের পুষ্টির প্রয়োজন অনুযায়ী ফল খেতে পারবো। কী বল বন্ধুরা?
সবাই সমস্বরে বলে উঠলো, জি স্যার।
জালাল স্যার বললেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিনই গড়ে ১১৫ গ্রাম পরিমাণ ফল খাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা তা খাই না। এবার চলো, জেনে নিই কোন ফলে কোন কোন ভিটামিন রয়েছে:
ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ফল: প্রায় সকল প্রকার পাকা ফলেই ভিটামিন এ থাকে। তবে কিছু কিছু ফলে ভিটামিন এ বেশি থাকে; যেমন- পাকা আম, পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, আনারস, আমড়া, পেয়ারা, বড় বাতাবি লেবু, জাম, জামরুল, বাঙি ইত্যাদি।
ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ ফল: পাকা আম, পাকা কঁঠাল, আমড়া, কামরাঙ্গা, কদবেল, পানিফল, পাকা কলা, ডাবের পানি, আনারস, বাঙি, ইত্যাদি।
ভিটামিন বি২ ফল: পেয়ারা, পাকা কাঁঠাল, বাঙি, জামরুল, আমলকী, আতা, লিচু, বরই, ডেউয়া, লটকন, অরবরই ইত্যাদি।
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: পেয়ারা, আমলকী, অরবরই, লেবু, বাতাবি লেবু, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, আমড়া, জলপাই, খুদিজাম, কাঁচা আম, কমলা, লিচুসহ টক জাতীয় ফলগুলোতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয় এবার বুঝতে পেরেছ, কোন ফলে কোন ভিটামিন থাকে। আমি তোমাদের সুবিধার জন্য একটি চার্ট তৈরি করে এনেছি। তোমাদের প্রধান শিক্ষক স্যার এটি ফটোকপি করিয়ে বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিতরণ করবেন। আমরা ক্লাসের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। এবার চলো আমরা সবাই মিলে একটি গান করি-
বেশি বেশি ফল খাবো…. রোগ বালাই থেকে দূরে থাকবো।

Share.

মন্তব্য করুন