কতযে মজার ঘটনা ঘটে জগতে। মানুষ কতরকম আয়োজন করে নিজের জীবনকে সহজ করার জন্য। সহজে কাজ করা। সহজে অফিসে যাওয়া। সহজে ভ্রমণ করা। এ রকম কতোকি! কিন্তু একটি এলাকার সবমানুষ যখন বিমানে চড়ে অফিস করে প্রতিদিন। এবং সেই বিমানগুলো যদি হয় ব্যক্তিগত তবে কেমন মজা!

শহরে বাস-ট্যাক্সি বা ব্যক্তিগত গাড়ি চলে। এসব যানবাহন দিয়েই অফিসে যায় অফিসাররা। অফিসে ঢুকে গাড়ির রাখার জায়গা খুঁজে। এই প্রয়োজনে তৈরী হয় গ্যারেজ। এমনইভাবে বিমানে চেপে অফিসে যাবার দারুণ খবর আছে। এ এক আশ্চার্য খবর বটে। বিমানে চড়ে অফিসে যায়। শুধু কি অফিসে যাওয়া! আছে গাড়ির গ্যারেজের মতো প্লেন রাখার হ্যাঙ্গার। আছে প্রতি ঘরে ঘরে। সেটা কোথায় আছে! আছে আমেরিকার এক শহুরে। শহরটির নাম- ক্যামরণ পার্ক। এ শহরে প্লেনও চলে সেভাবে। গাড়ির গ্যারাজের মতোই প্লেন রাখার হ্যাঙ্গার রয়েছে ঘরে ঘরে!
এ শহরে অলিগলি, ছোট-বড় রাস্তা নেই। একটাই পথ! তার পুরোটাই রানওয়ে। এ কারণে শহরকে দু’ভাগে ভাগ করে ওই রানওয়ে। রানওয়ে মিশেছে যে রাস্তাায় সেই পথটিও ১০০ ফুট প্রশস্ত। বিমান অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে সেখানেও। এমনকি ব্যস্ত রাস্তায় চলন্ত গাড়িকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায় মুহুর্তে। যেতে পারে বিনা বাধায় যেকোনো জায়গায়।
ক্যামেরন পার্ক আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত। এখানে যারা থাকে তারা অফিস যান প্লেনে চড়ে! সপ্তাহান্তের ছুটি কাটাতেও বেড়িয়ে পড়েন প্লেন নিয়েই। এমনকি ইচ্ছে হলে কোথাও ঘুরে আসে অনায়াসে।
সরকারি নথিতে অবশ্য ক্যামেরন পার্ক শহর নয়। একটি ফ্লাই-ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি। কমিউনিটি মূলত বিমানপোতে গড়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার বহু বিমানপোত অকেজো হয়ে যায়। এতে অবসরপ্রাপ্ত পাইলটের সংখ্যাও বাড়ছিল। দ্বিতীয বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় সেপ্টেম্বর ১, ১৯৩৯ সালে আর শেষ হয় সেপ্টেম্বর ২, ১৯৪৫ সালে। এই যুদ্ধের ১৯৩৯ সালে পাইলটের সংখ্যা ৩৪ হাজার থেকে বেড়ে ১৯৪৬-এ চার লাখে ঠেকে।
ওই যুদ্ধে অংশ নেয়া পাইলটদের আরামের অবসর দিতেই ফ্লাই-ইন রেসিডেন্সিয়াল কমিউনিটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমেরিকার অসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ ঠিক করার কাজ করে। সফলও হয়। অকেজো বিমানপোতগুলোতেই অবসরপ্রাপ্ত বিমানচালকদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। চেনা পরিচিত পরিবেশে থাকতে পাইলটদের ভালো লাগবে। এই ধারণা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন।
১৯৬৩ সালে সেই ভাবনা থেকেই তৈরি ক্যামেরন পার্ক। একসময় নাম ছিল ক্যামেরন পার্ক এয়ারপোর্ট। সেই নাম বদলে হয় ক্যামেরন এয়ারপার্ক। শহরটির প্রতিটি পরিবারেরই কোনো না কোনো সদস্য একসময় পাইলট বা বিমানচালক ছিলেন।
বিশ্বে এমন ফ্লাই-ইন কমিউনিটি রয়েছে ৬৪০টি। এরমধ্যে ৬১০টিই আমেরিকায়। বৈশিষ্ট্যে ক্যামেরন পার্ক সবচেয়ে নিখুঁত বলে মনে করা হয়।
রাস্তার পাশের সাইনবোর্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে নিচু করে। প্লেনের ডানা লেগে নষ্ট না হয়ে যায়। এজন্যই অতিরিক্ত সাবধানতা। এমনকি রাস্তাার নামও ‘বোয়িং রোড’।
ক্যামেরন পার্কে গাড়ির পাশাপাশি প্লেনেরও প্রদর্শনী হয়। বছরে এক দিন হয় এই প্রদর্শনী। রানওয়ে বরাবর সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন মডেলের বিমান। রানওয়ে ধরে একসাথে এসব বিমানের উড্ডয়নের দৃশ্য অশাধারণ।
১২৪টি বাড়ি রয়েছে এই শহরে। এর মধ্যে ২০টি বাড়ি ফাঁকা। এসব বাড়ি সস্তায় বেঁচেও দিচ্ছেন মালিকরা। ফেব্রুয়ারিতে এমন একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন সামনে আসে। ইন্টারনেটে দেয়া প্লেনের হ্যাঙ্গারসহ ওই বাড়িটির দাম চাওয়া হয় মাত্র ৬ লাখ ৮৫ হাজার ডলার!
ছোট্ট ‘শহর’ এ সুবিধার কমতি নেই। স্কুল, বাজার, হাসপাতাল, এমনকি শপিংমলও রয়েছে। আর যদি কিছু না পাওয়া যায় তা হলেই বা চিন্তা কীসের! প্লেনে চড়ে কাছের শহরে চলে যাওয়া তো মিনিট কয়েকের ব্যাপার মাত্র! এসব নিয়ে ক্যামেরন পার্কের অধিকাংশ বাসিন্দা আরামেই আছেন।

Share.

মন্তব্য করুন