মাথার ওপর মস্ত বড় আকাশটাকে নিয়ে কতরকম করে যে ভাবনা জাগে তার কোনো শেষ নেই। সেই ছোটবেলা থেকে কতর কম ভাবনা যে ভেবেছি মনে হয় এমন ভাবনা আর কিছু নিয়ে কখনও ভাবিনি বা ভাবতে পারিনি। তবে যারাই ভাবে আকাশ নিয়ে তারা জানেন এ ভাবনার কোনো শেষ নেই। এ ভাবনার কখনও শেষ ছিলো না এবং আজও এই ভাবনার শেষ নেই। আর ভবিষ্যতেও কখনও এর শেষ হওয়ার কোনোরকম সুযোগ বা সম্ভাবনাও নেই। ভাবনার বিষয়ে বলতে বলতে অনেকে অনেক কিছু লিখে বইও করে ফেলেছেন! আবার অনেকে অনেক কিছু লেখার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেন বা পরিকল্পনা করে লেখেন। যেমন কবিতা গল্প গবেষণা নিবন্ধ ফিচার আরও আরও কত কী ধরনের লেখেন বা লিখবেন এবং লিখতেই থাকবেন তারও শেষ হবে না।
কিন্তু আবার এই আকাশ নিয়ে ভাবতে হয় বা ভাবা দরকার এ ভাবনার কথা অনেকের মাথায়ও আসে না বা মনে সহজে জাগেই না। এর কারণ হয়তো আছে সত্যি। তবে অনেকের একটা ধারণা হলো আকাশ নিয়ে ভাবনার আবার কী আছে বা কী থাকতে পারে। আকাশ তো উপরে নীল রঙ মেখে বিরাট হয়ে ছড়িয়ে আছে বিশ্বজগতের সবখানে। আকাশের গায়ের এই নীল রঙ নিয়েও কত লেখক কবি লিখেছেন তার কোনো হিসাব কিন্তু নেই। ভবিষ্যতেও এমন এমন আরও কবিরা লেখকেরা নানান বিষয় লিখবেন। সেই সব লেখা পড়ে হয়তো অনেক কিশোর-কিশোরী যুবক যুবতী এবং চিন্তা করে এমন লোকেরা আকাশের দিকে চেয়ে থাকবে। চেয়ে থেকে একসময় বলে উঠবে- আহা বিশাল এ আকাশ সৃষ্টির সবচেয়ে বড় এক নিদর্শন। মহান আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতার এ এক বিরাট উপমা।
আকাশের বুকে সকালবেলা সূর্য উঠে আসে টকটকে লাল হয়ে। সূর্য উঠে সারা পৃথিবীর সবখানে রোদ দিয়ে গাছপালার ওপর তাপ দেয়। আকাশ নিয়ে যারা ভাবতে চায় না তারা মনে করে- এমনতো আকাশ থেকে হচ্ছেই প্রতিদিন প্রতিটা সকাল দুপুর বিকেলে। তাই এ আকাশ নিয়ে ভেবে কি কিছু লাভ হবে নাকি।
আসলে আকাশ নিয়ে ভাবনার আছে অনেক অনেক বেশি। কারণ কেমন করে খুঁটিবিহীন এত বিশাল আকাশ শূন্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে কোটি কোটি বছর ধরে। এটি ভাবতে হবে না? আকাশের গায়ে কোনো ফুটো বা ছিদ্র অথবা ফাটল নেই। কোথাও কোনো জোড়াতালি বা একটি ফাটলও দেখা যায় না। মেঘ আসে মেঘ চলেও যায়। সূর্য ওঠে আবার দিন পার করে সূর্যও ডুবে যায় কোনো অন্ধকার রাজ্যে। রাতের বেলায় আকাশে চাঁদ ওঠে। চিকন চাঁদটা দিনদিন করে একসময় অনেক বড় হয়ে পূর্ণিমা হয়। তখন রূপালি আলোর জোয়ার ওঠে যেনো। আবার চাঁদ থাক কিংবা না থাক রাতে আকাশে ফোটে কোটি কোটি তারার ফুল। রূপালি তারার মেলায় সারা আকাশ রাতভর ঝিকমিক ঝিকমিক করে ধীরে ধীরে ভোর হয়। ভোর হলে বা সকাল হলে তারা এবং চাঁদ কোথায় যে হারিয়ে যায় বুঝতে পারে না কেউ। এসব নিয়ে ভাবতে হবে সকলের। ভাবতে হবে এ কারণে যে এসব নিয়ে ভাবলে মহান সৃষ্টিকর্তার অপার শক্তি ও ক্ষমতার রূপ বুঝতে পারবো আমরা। বুঝতে পারবো মহান আল্লাহ কত কত ক্ষমতার মালিক। তিনি কী বিস্ময়কর গঠনে বানিয়েছেন এই মহা বিশ্ব এবং ওই মহা মহাকাশ। এ আকাশের শেষ সীমানা কোথায় কিংবা আদৌ কি আকাশের সীমানার শেষ আছে? এ কথা তো কেউ জানে না বা জানতে পারে না। কোনো নবী-রাসূল ফেরেশতা জিন এমনকি স্বয়ং জিবরাইল ফেরেশতাও জানেন না। এর চেয়ে মহা বিস্ময় আর কী হতে পারে বলে মনে হয়!
তাই আকাশ নিয়ে আমার ভাবনা সারাক্ষণ চলতেই থাকে চলতেই থাকে। আমি যখনই আকাশের গায়ে নীল দেখি সেই নীল যখন সমুদ্রের বুকে দেখি তখনই মনে হয় সমুদ্রের রূপের কথা। আকাশের নীল কি সুন্দর করে ছায়ার মতো বুকে রাখে সমুদ্র। বা সমুদ্রের তলদেশে এমনকি নদীর তলও আকাশের নীল বিছানা করে স্থির হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে ঢেউ উঠে নীল ছায়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। একটুও এদিক সেদিক হয় না বা হতে পারে না। আসলে মহান আল্লাহ তায়ালা এ আকাশকে স্থিরতায় দাঁড়িয়ে রাখার একটা সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছেন। যা কোনো ঝড়ঝঞ্ঝা তুফান সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় সিডর জলোচ্ছ্বাস বা হারিকেন কোনো কিছুতেই কিছু হবার মতো নয়। তাই আকাশ নিয়ে আমার ভাবনার কোনো শেষ ছিলো না কখনও। আর এখনো কোনো শেষ নেই।
সেই ছোটবেলায় ধানের ক্ষেতের আলে অথবা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে অকারণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকার কথা এখন বেশ মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে খুব সকালের আকাশের রঙ মাখানো দৃশ্যের বিষয়গুলো। কতরকম রঙের খেলায় মাখামাখি হতো মেঘগুলো। এখনও আজও সেই রকম রঙের খেলা জমে জমে সকালকে সুন্দর করে তোলে। কিন্তু আমরা যারা শহরের বাসিন্দা এবং মোবাইল দেখে দেখে রাত পার করে তারপর ঘুমাতে যাই- ঘুমের মধ্যে কেটে যায় আমাদের সোনালি সকালটা। তাহলে আমরা কেমন করে দেখবো সকালের আকাশের নানান রঙের সমাহার।
যখন বৃষ্টি হওয়ার সময় হতো তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতাম পুরো আকাশটা কালো মেঘে একেবারে ঢেকে গেছে। দেখে মনে হতো হঠাৎ আকাশটা বুঝি নিচে নেমে এলো মেঘের ভারে অথবা বৃষ্টি দেয়ার জন্য। ডানে বাঁয়ে সামনে পেছনে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সবদিকে মেঘের ঘনঘটা আর বিজলি বিদ্যুতের ঝলকানির রূপ। দিনের আলো এবং সূর্যটা কোথায় যে হারিয়ে যেতো বুঝতে পারতাম না। যার ফলে দিনের বেলায়ও চারিদিকে অন্ধকারের কাছাকাছি বা সন্ধ্যা নামার মতো আঁধার জমে যেতো। দক্ষিণ দিক থেকে দেখতাম ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক আর পাখিরা দ্রুত উড়ে যাচ্ছে তাদের বাসার খোঁজে। রাখালেরা গরু ছাগল ও ভেড়ার পাল নিয়ে ফিরে আসছে তাদের নিজস্ব ঠিকানায়। মেঘ যখন সারা আকাশজুড়ে ছড়িয়ে ঘন হয়ে ছুটতে থাকে তখন কোথাও কোনো বাতাসের আনাগোনা একটুও থাকতো না। মনে হতো বুঝি আকাশ দম বন্ধ করে নিঃশ্বাস না নিয়ে বা না ফেলে দাঁড়িয়ে আছে। এই পরিস্থিতি বেশি সময় থাকতো না। তারপর হঠাৎ কোনো একদিক থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বইতে শুরু করতো।
এখনও বৃষ্টি আসার আগের সময়টাতে এমনই ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যায়। এ বাতাস আসলে বৃষ্টির খবর বা সংবাদ নিয়ে আসে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বর্ণিত আছে এমন কথাই। আল্লাহ বলেছেন- আমি বৃষ্টিগর্ভ বাতাস পাঠাই। অর্থাৎ বৃষ্টির সংবাদ আছে বা বৃষ্টির আলামত আছে অথবা আছে বৃষ্টি আসার সুসংবাদ। সেই বৃষ্টি নামে আকাশ থেকে মেঘের বুক থেকে। পৃথিবীর মাটিগুলো নরম হয় বৃষ্টিতে। আর এ নরম মাটিতে জন্ম হয় বৃক্ষ ও ফসলের। সুতরাং প্রতিদিন প্রতিক্ষণ আকাশ নিয়ে ভাবতে হবে আমাদের সবার এবং সকলের।

Share.

মন্তব্য করুন