যৌবনের টগবগে সময়ে জমিদার বাড়িতে ঠাঁই হয় একজোড়া মোরগ-মুরগির। কোনো এক হাটের দিনে জমিদার বাবু বাজার থেকে ওদের শখ করে কিনে এনেছিলেন। সেই থেকে ওদের সাথে জমিদার বাবুর সখ্য গড়ে ওঠে। ওদের আগমনের পর থেকে প্রতিদিন ভোরে জমিদার বাড়ির সবার আলসেমি কাটে ওদের কোক্কুরুৎ, কক কক কক ডাকে। জমিদারের শখের মোরগ-মুরগি বলে কথা। জমিদার বাড়ির সবাই ওদের যত্নের সাথে দেখে। বিশেষ করে জমিদার বাড়ির বিশ্বস্ত চাকর বারেক একটু সময় পেলেই ওদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়। কখনও জমিদারের সাথে। আবার কখনও একাকী সে নিজ হাতে ওদের খাওয়ায়। জমিদারের অনুপস্থিতিতে সেই ওদের দেখভাল করে। দেখতে দেখতে এবাড়িতে ওদের প্রায় এক বছরের মতো সময় কেটে গেছে। ইতোমধ্যে ওদের নিজেদের আলাদা আলাদা নামও জুটেছে। জমিদার আদর করে একজনের নাম রাখলেন রাজা। আরেকজনের নাম রাখলেন রানী। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে নিজেদের নাম ওদের মুখস্থ হয়ে যায়। মোরগটি নিজেকে রাজা আর মুরগিটি নিজেকে রানী ভাবতে শুরু করে। জমিদার বাড়ির এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ওরা চষে বেড়ায়। এরই মধ্যে ওদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় একে একে ছয়টি ফুটফুটে বাচ্চা। বাচ্চাদের পেয়ে ওরা খুব আনন্দে দিন কাটাতে লাগল।
বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর থেকে ওদের প্রতি জমিদারের স্ত্রীরও ভালোবাসা বাড়ে। ইদানীং মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও ওদের খাবার দিয়ে যান। এ বাড়িতে রাজা-রানী বেশ আরাম-আয়েশের মধ্য দিয়েই দিন অতিবাহিত করছিল। এরই মধ্যে ঘটল এক বিপত্তি।

একদিন শুক্রবার সকাল, দুপুর পর্যন্ত ওদের মন ভালোই ছিল। বাচ্চাদের নিয়ে ওরা পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়িয়েছে। এরপর বাচ্চাদের নিচতলায় রেখে ওরা এক পা, দু পা করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলার কাছাকাছি উঠে আসে। হঠাৎ নিচতলা থেকে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পেয়ে ওরা ভয়ে আঁতকে ওঠে। বাচ্চাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজা-রানী দ্রুত লাফিয়ে লাফিয়ে নিচতলার দিকে নেমে আসে। বাবা-মাকে দেখতে পেয়ে বাচ্চারা দৌড়ে এসে মায়ের ডানার নিচে জায়গা করে নেয়। মা ওদের পরম উষ্ণতা দিয়ে ঢেকে রাখে। বাবা তখন ঘুরে ঘুরে তাদের পাহারা দিতে লাগল।
চারিদিকের পরিবেশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বাচ্চারা মায়ের ডানার ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দে ছুটোছুটি করতে লাগল। হঠাৎ করে বাচ্চাদের এমন আনন্দ দেখে রানী তাদের কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
: কী ব্যাপার! আজ তোমাদেরকে এতো খুশি লাগছে কেনো?
বাচ্চাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটজন বলল,
: আম্মু জানো, একটু আগে বাড়িতে ঐ লাল গাড়িতে করে মেহমান এসেছেন।
: মেহমানকে কী তোমরা দেখেছো?
পাশ থেকে বড়জন বলল,
: হ্যাঁ, মা দেখেছি। উনি জমিদারের মেয়ের জামাই। সাথে জমিদারের মেয়ে লুবনা আপাও ছিলেন। ঐ দেখো মা, কী সুন্দর লাল রঙের গাড়ি! তারা সাথে করে কতো কী এনেছেন! নিশ্চিত করে বলতে পারি, আজ ওদের পাশাপাশি আমরা ভালো ভালো খাবার পাব।
(মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল)
বড় বাচ্চাটির মুখের কথা শেষ হতে না হতেই তার ছোটজন বলল,
: আম্মু, আপু ঠিকই বলেছেন। আজ আমাদের আর খাবারের কোনো চিন্তা নেই। চলো না, আমরা ওদের ঘরে গিয়ে একটু দেখে আসি।
বাচ্চার কথা শেষ হতে না হতেই সবগুলো বাচ্চাকে বুকের ভেতর নিয়ে নিজের বিশ্বস্ত ডানাজোড়া দিয়ে ঢেকে নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল রানী। রাজাও তখন রানীর পাশে এসে অস্থিরতা শুরু করলো।
বাবা-মাকে এমন উতলা অস্থির হয়ে থাকতে দেখে বড় বাচ্চাটি বলল,
: মা, তোমরা এমন করছো কেনো? আজ জমিদারের মেয়ে তার জামাই নিয়ে এ বাড়িতে এসেছেন। এটা তো আমাদের জন্য খুশির খবর। অথচ তোমরা মন খারাপ করে আছ! একটু হাসো, মা। একটু হাসো, বাবা।
সন্তানের এমন কথায় রাজা-রানীর অন্তরে যেনো জ্বালা ধরে ওঠে। ওদের সাথে মনের সবকিছু ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে করে তাদের। এতো জ্বালা বুকে নিয়ে থাকলে যে বুকটা একসময় ফেটেও যেতে পারে। আবার ভাবলো, আমরা একি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি! আবেগের মধ্যে যদি পরম সত্যটি ওদের বলে দিই তবে তো ওরা আরো অসহায় হয়ে যাবে। না, ওদের কোনো ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না। আমাদের এখন বয়স হয়েছে। এমনিতেই তো একদিন এই পৃথিবী থেকে চিরতরে চলে যেতে হতো। যা হবার তাই হবে। আর আমরা চলে গেলে ওদের নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা হবে। সবার উপরে এক আল্লাহ আছেন। তিনিই ওদের উত্তম রক্ষাকারী।
এরই মধ্যে বারেক সেখানে এসে হাজির হলো। তার হাতে বেশ খানা দেখে রানী ডানার নিচ থেকে বাচ্চাদের আলতোভাবে বের করে দেয়। একে একে ছয়টি বাচ্চা বারেকের খুব কাছে চলে আসে। বারেক আনন্দময় চিত্তে ওদের খাইয়ে দিতে লাগল। বাচ্চারা তা মজা করে খাচ্ছে। হঠাৎ বারেক লক্ষ করল, খানিক দূরে দাঁড়িয়ে রাজা-রানী কাঁদছে। বারেক হাতের খানা বাচ্চাদের সামনে দিয়ে বড় বড় পায়ে সেদিকে ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলো,
: রাজা-রানী, কী হয়েছে তোমাদের? এভাবে একা একা কাঁদছো কেনো?
রাজা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলল,
: কী আর বলব তোমায়, ভাই! সারাদিন ভালোই ছিলাম।
: তো হঠাৎ কী হয়েছে?
: গতকাল হাঁটতে হাঁটতে আমরা দু’জনে দোতলায় উঠে গিয়েছিলাম। জমিদারের কক্ষ বরাবর যেতেই ভিতর থেকে একটা কথা আমাদের কানে এসে বাজলো।
: কী কথা?
: জমিদারকে তার স্ত্রী বললেন, তাদের মেয়ে আর মেয়েজামাই আসছেন। তার জন্য বাজার থেকে ভালো ভালো মাছ, তরকারি আর গরুর গোশত কিনে আনতে হবে।
: এতে মন খারাপ করার কী আছে?
: এরপরই বললেন, আমার অনেক দিনের আশা এবার পূরণ করব। জবাবে জমিদার বললেন, কী সেই আশা? জমিদারের স্ত্রী আবার বললেন, আমাদের লুবনা মামণি তার জামাই নিয়ে এ বাড়িতে এলে আমাদের রাজা আর রানীকে এবার ওদের জন্য জবাই করব। রাজা-রানী খেয়ে খেয়ে কতো মোটাতাজা হয়েছে। দেখতেও মাশাআল্লাাহ কতো সুন্দর হয়েছে! লুবনা ও জামাই ওদের দেখলে খুব খুশি হবে।
এই কথা শোনার পর আমরা আর সেখানে একমুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। ভয়ে আমাদের সারা শরীরে কাঁপন দিয়ে ওঠে। আমরা দ্রুত সেখান থেকে নিচে নেমে আসি। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো আমাদের বাচ্চাদের কাছে পেয়ে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা সবকিছু ভুলে যাই। ওদের নিয়েই হেসে খেলে চলতে থাকি। এভাবে একদিন কেটে যায়। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে জমিদারের মেয়ে লুবনা তার স্বামীকে নিয়ে এ বাড়িতে এসেছেন। এই খবরে আমাদের বুকের ভেতর সবকিছু যেনো ওলট-পালট হয়ে গেছে। আমরা আমাদের জন্য চিন্তা করছি না। আমাদের যত চিন্তা আমাদের ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। আমাদেরকে ছাড়া ওরা কিভাবে বাঁচবে? আমাকে জবাই করলে করুক। কিন্তু আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে হলেও যেনো রানীকে জবাই না করে।
পাশ থেকে রানী কাঁদো গলায় বলল,
: না, আমাকে জবাই করুক। তাহলে ওরা তোমার সাথে সাথে থেকে বাঁচতে পারবে।

রাজা-রানীর কথা শুনে বারেকের চোখেও জল এসে যায়। ছোটবেলায় বাবা-মা হারানো বারেক এ বাড়িতে আসার পর এই প্রথম চোখের জল ছেড়ে কাঁদছে। ওর কান্নার একটাই কারণ রাজা-রানীর এমন দুঃসময়ে খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ওর কিছুই করার নেই। জমিদারের স্ত্রী কারো কোনো কথা শোনেন না। স্বয়ং জমিদার পর্যন্ত তার মুখের ওপরে কোনো কথা বলতে চান না।
রানী বারেককে নীরব থাকতে দেখে বলল,
: তুমি কোনো কথা বলছো না কেনো, ভাই?
: কী কথা বলব! ভেবে কোনো কূল পাচ্ছি না। তোমরা তো জানো, জমিদারের স্ত্রী কেমন মহিলা! তার কাছে কোনো কিছু বলে কাজ হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। তারপরও ভাবছি, বিষয়টি নিয়ে আমি জমিদারের সাথে আলোচনা করব। তোমরা কোনো চিন্তা করো না।
এই কথা বলে বারেক দোতলার দিকে উঠে গেল।
এ সময় জমিদারের বাড়ি থাকার কথা। কিন্তু বাড়ির সব জায়গায় খুঁজেও তাকে পাওয়া গেল না। বারেকের ম্লান মুখ দেখে জমিদারের স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন,
: কিরে বারেক, তোকে এমন লাগছে কেনো? তোকে কেউ কি কিছু বলেছে?
বারেক চোখ বন্ধ করে একটু ভেবে নিয়ে বলল,
: না, খালাম্মা, আমাকে কেউ কিছু বলেনি।
: তাহলে এমন বেজার মুখে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?
: খালু সাবকে খুঁজছি।
: তোর খালু বাজারে গেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। কোনো কিছু বলার থাকলে আমায় বলে যা।
: না, আমি খালুকেই বলব।
: আচ্ছা, বাপু, এক কাজ কর। আমাদের পুকুরপাড়ের নারকেল গাছ থেকে কয়েকটা ডাব পেড়ে নিয়ে আয়। তোর আপা আর দুলাভাইকে কেটে খেতে দে। তুইও খাস।
: জি, খালাম্মা।
এ কথা বলে বারেক ডাব পাড়ার জন্য পুকুরপাড়ের দিকে চলে গেল।
একটু পর জমিদার বাজার থেকে বাড়ি ফিরলেন। লুবনা তার স্বামীসহ বাবাকে সালাম করে বাবার পাশে খাটের ওপর বসলো। অনেকদিন পর লুবনাকে কাছে পেয়ে জমিদার আবেগাপ্লুত হয়ে গেছেন। এরপর তাদের সুখ-দুঃখের গল্প শুনলেন।
এরই মধ্যে বারেক ডাব নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। বারেককে ডেকে জমিদারের স্ত্রী ডাবগুলো কেটে সবাইকে দিতে বললেন। বারেক রান্নাঘরে গিয়ে ডাবগুলো কেটে চারটি গ্লাসে নিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে চলে আসে। সবার হাতে ডাবের পানি দিয়ে সে দরজার পাশে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। জমিদার বারেককে দেখে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
: কী হয়েছে, বারেক? তোর এ অবস্থা কেনো?
বারেক আস্তে করে বলল,
: খালু, আপনার সাথে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
: কী বলবি, বল।
: না, এখানে বলব না। আপনি একটু আমার সাথে বাইরে চলেন।
জমিদার মৃদু হেসে বললেন,
: আচ্ছা, চল।
বারেককে সাথে নিয়ে জমিদার বাড়ির ছাদে উঠে এসে বললেন,
: কী বলবি, এবার বল।
বারেক কাঁদো গলায় বলল,
: খালু, আপনার শখের রাজা-রানী ভালো নেই!
: কেনো ওদের আবার কী হয়েছে?
: আজ লুবনা আপা আর দুলাভাই আসার পর আমি রাজা-রানী ও তাদের বাচ্চাদের খাবার দিতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি বাচ্চারা ঠিকমত খেলেও রাজা-রানী একপাশে দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। এরপর আমি ওদের কাছে গিয়ে ওদের সাথে কথা বলি। তখন ওরা আমায় সব খুলে বলে।
: কী কথা!
: গতকাল ওরা আপনাদের কক্ষের বাইরে থেকে শুনেছে, খালাম্মা নাকি আপনার সাথে কথা বলার সময় বলেছেন, লুবনা আপারা এলে ওদের দু’জনকে জবাই করবেন।
: হ্যাঁ, বলেছিল তো। এখন সমস্যা কী?
: তারপর থেকে ওরা খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ ওরা বাচ্চাদের বুকের মধ্যে নিয়ে কাঁদছে। ওরা আমায় বলেছে, ওরা শেষ হয়ে যাবে তাতে ওদের মনে কোনো দুঃখ থাকবে না। ওদের শুধু একটা আক্ষেপ, ওরা চিরতরে চলে যাবার পর ওদের বাচ্চাদের কী হবে! খালু সাব, আপনিই বলুন না, ওদের বাচ্চাদের কী হবে! আপনি একটু খালাম্মাকে বোঝান। ওদের যেনো জবাই না করেন।
জমিদার একটু ভেবে নিয়ে বললেন,
: আচ্ছা, এ নিয়ে তোমার আর চিন্তা করতে হবে না। আমি দেখি কী করা যায়!
জমিদার বারেকের সাথে আলোচনা শেষ করে আবার দোতলায় চলে আসন। জমিদারের স্ত্রী উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
: কী হলো? বারেককে নিয়ে কোথায় গেলে? আর ও এতক্ষণ ধরে তোমায় কী কথা বলেছে? জানো! তুমি বাসায় আসার আগ পর্যন্ত ও খুব মন খারাপ করে থেকেছে।
: বারেক আমায় যা বলেছে তা শুনলে হয়তো তোমার মাথা খারাপ হতে পারে। কিন্তু এ কথা সত্য, বারেক আমার অন্তরের কথাই বলেছে। যা গতকাল আমি তোমায় বলতে পারিনি।
জমিদারের স্ত্রী বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললেন,
: কী এমন কথা যা শুনলে আমার মাথা খারাপ হতে পারে! প্লিজ, লুবনার আব্বু, আমায় তাড়াতাড়ি বল।
: বারেক আমায় বলল, আমাদের রাজা-রানীর অবস্থা খুব খারাপ। ওরা নাকি খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছে।
: কিন্তু কেনো? আমি এখনও তোমার কথার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না।
: গতকাল আমরা যখন ওদের নিয়ে কথা বলছিলাম তখন রাজা-রানী নাকি আমাদের কক্ষের বাইরে থেকে সব শুনেছে। সেই থেকে ওদের মন ভালো নেই। তার উপর আমাদের লুবনা মামণিও জামাইকে নিয়ে বেড়াতে এসেছে।
: এ আবার কেমন কথা! আমাদের মেয়ে তার জামাইকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। এ তো খুশির খবর! আর এই খুশিতেই তো ওদেরকে আজ জবাই করব। আমার বহুদিনের শখ, রাজা-রানীকে আমাদের মেয়ে ও জামাইয়ের সামনে জবাই করব। ওদের মজা করে রান্না করে খাওয়াব।
: না, রাজা-রানীকে জবাই করবে না। ওরা আমাদের সবার খুব প্রিয় মোরগ-মুরগি। প্রয়োজনে বাজার থেকে আমি তোমায় একশো একটা মোরগ-মুরগি কিনে দেবো। তারপরও যেনো আমাদের রাজা-রানীর কিছু না হয়।
: পাগলামি করছো কেনো? নিজেদের শখের জিনিস জবাই করে আমরা আমাদের মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে খাওয়াব। এটাই তো স্বাভাবিক।
: না, লুবনার মা, একবার ভেবে দেখো, রাজা-রানীর ছয়টা ফুটফুটে অবুঝ বাচ্চা আছে। ওরা এখনও বড় হয়নি। সারাক্ষণ মায়ের কাছে কাছে থাকে। আমরা যদি রাজা-রানীকে জবাই করি তবে ওদের বাচ্চাদের কী হবে?
স্বামীর মুখ থেকে কথাগুলো শুনে জমিদারের স্ত্রীর চোখজোড়া আর্দ্র হয়ে ওঠে। এক মুহূর্তে তার কঠিন মন গলে যায়। তিনি আনমনে ভাবতে লাগলেন, ‘মাতা-পিতাহীন অবুঝ সন্তানের জীবন কতো কষ্টে ঘেরা! যে হারায় সে শুধু বোঝে।’

Share.

মন্তব্য করুন