বাংলা কাব্য সাহিত্য-গগনের উজ্জ্বল নক্ষত্র কবি ফররুখ আহমদ। সহজ সরল জীবনের অধিকারী। আপসহীন। চলায় বলায় স্বতন্ত্র। সততা ও সত্যবাদিতার মূর্তপ্রতীক। এভারেস্ট চূড়ার মতো উচ্চ শির। দৃঢ়প্রত্যয়ী কবি ফররুখ স্বদেশ ও স্বজাতিকে জাগিয়ে তোলার জন্য রচনা করেছেন ‘সাত সাগরের মাঝি’। উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন-
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা।
নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।
দুয়ারে তোমার সাত-সাগরের ফেনা-
তবু জাগলে না? তবু, তুমি জাগলে না?
জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার প্রত্যাশায় রচনা করেছেন ঐতিহাসিক কবিতা পাঞ্জেরী-
রাত পোহাবার কত দেরী পাঞ্জেরী?
এখনো তোমার আসমান ভরা মেঘে?
সেতারা, হেলাল এখনো ওঠেনি জেগে?
তুমি মাস্তুলে, আমি দাঁড় টানি ভুলে :
অসীম কুয়াশার জাগে শূন্যতা ঘেরি।
এ মহান কবি বড়দের জন্য যেমন রচনা করেছেন কালজয়ী অনেক কবিতা, কাব্য, মহাকাব্য তেমনি ছোটদের জন্যও নির্মাণ করেছেন আনন্দভুবন। শিশুসংগঠক ও শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও তিনি সফল কবি।
কর্মজীবনে কবি ফররুখ ছিলেন ঢাকা বেতার কেন্দ্রের একজন দক্ষ স্টাফ আর্টিস্ট ও পাণ্ডুলিপিকার। গীতিকার, আবৃত্তিকার ও পুঁথিপাঠক।
প্রতি শুক্রবার বিকেল পাঁচটায় রেডিও পাকিস্তান ঢাকা থেকে প্রচারিত হতো ছোটদের অনুষ্ঠান ‘কিশোর মজলিস’। পরিচালনা করতেন কবি ফররুখ। এ অনুষ্ঠানের সফল সংগঠকও ছিলেন তিনি।
সেকালে ক’জনের ঘরেই বা রেডিও সেট ছিল। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে তো রেডিও শোনা ছিল সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার জন্যও শিশুশিল্পীর ছিল দারুণ সঙ্কট। তখনকার কথা বলছি, যখন এদেশে টেলিভিশন চালু হয়নি।
কবি ফররুখ বহু চিন্তা-ভাবনা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ‘কিশোর মজলিস’কে ফুলে ফলে সুশোভিত করে তোলেন। অনুষ্ঠানের আগে ও পরে সুমধুর কণ্ঠে ভেসে আসতো ছোটদের জন্য লেখা ফররুখের আত্মপ্রত্যয়ের গান :
তোরা চাস্নে কিছু কারো কাছে
খোদার মদদ ছাড়া,
তোরা পরের ওপর ভরসা ছেড়ে
নিজের পায়ে দাঁড়া।
শুরুতে ফররুখ অপূর্ব সুন্দর দারাজ কণ্ঠে ছোটদের সম্বোধন করে বলতেন-
স্নেহের ছোট বন্ধুরা! অথবা, সোনামণি ভাই-বোনেরা, তোমরা কেমন আছো? আশা করি সবাই ভালো আছো। এক একদিন এক একটি কবিতার বাছাইকৃত অংশ তিনি আবৃত্তি করতেন। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তা আবার বুঝিয়ে দিতেন। এরূপ একটি কবিতা-
শোন হুঁশিয়ার পান্থ সুজন
তোমার চলার পথে গো যদি
গুলশান থাকে, হও শবনম;
সাহারা থাকিলে তুফান হও।
বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও ধর্মীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলো হতো খুবই আকর্ষণীয়। ফররুখ সুচিন্তিতভাবে অনুষ্ঠানসূচি সাজাতেন। লিখতেন সুন্দর গান, হাম্দ, না’ত। এতে অংশ নিত ছোট্ট শিল্পীরা।
শিশুশিল্পীদের স্টুডিওতে নিয়ে আসা ছিল তখন খুব কঠিন কাজ। ফররুখকে অফিসের গণ্ডির বাইরেও এ জন্য বহু কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি কখনো নিয়ে আসতেন কোন সহকর্মীর ছেলে-মেয়েকে। কখনো শিক্ষিত কোন ভদ্রলোককে অনুরোধ করতেন তাঁর সন্তান-সন্ততিকে রেডিওতে পাঠাতে। আবার কখনো পত্র যোগাযোগের মাধ্যমে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন মজলিসের জন্য।
এই কিশোর মজলিস থেকে বহু প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিল্পীর জন্ম হয়। যাঁরা দেশ ও জাতির খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ফওজিয়া খান, সাবিহা মাহবুব, ফারহানা হক, আফসারী খানম, মাহবুবা রহমান, রফিকুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম ও মাসুমা খাতুনের নাম উল্লেখযোগ্য।
শিশু-কিশোরদের তিনি তাঁর হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন ঈর্ষান্বিতভাবে। তার প্রমাণ মেলে ছোটদের জন্য লেখা ফররুখের শত শত ছড়া, কবিতা, গান ও হামদ-না’ত।
ইংরেজ কবি ওয়ার্ডস ওয়ার্থ বলেছেন, The Child is the Father of the man. আর তাঁর শিক্ষক কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন- ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুদের অন্তরে।
এ দুই কবির মর্মবাণী উপলব্ধি করে ফররুখ বলতেন, শিশুর মধ্যে নিহিত থাকে বিপুল সম্ভাবনা। আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। তারাই পরিচালনা করবে দেশ ও জাতিকে। ছোটবেলা থেকে যদি তাদের আপন কৃষ্টি ও সভ্যতার আলোকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা না যায়, তবে তা হবে জাতির জন্য চরম মরণাঘাত।
এ বিশ্বাসকে সামনে রেখে তিনি আমাদের আশপাশের বিবিধ বিষয়, ইসলামের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং প্রচলিত পুঁথি সাহিত্য থেকে সুন্দর সুন্দর উদাহরণ প্রয়োগে রচনা করেন এক একটি ছড়া, কবিতা ও কিস্সা কাহিনী।
ছোটদের জন্য ফররুখের প্রথম বই ‘পাখির বাসা’ বের হয় ১৯৬৫ সালে। প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। ছোটদেরকে কবি এ পৃথিবীর ‘নতুন মানুষ’ রূপে আখ্যায়িত করে তাদের নামে উৎসর্গ করেন ‘পাখির বাসা।’ উৎসর্গিত সে পঙক্তিটি হলো-
নতুন মানুষ এলো যারা
খোদার দুনিয়াতে,
ছোট্ট আমার পাখির বাসা
দিলাম তাদের হাতে।
পাখির বাসা, মজার ব্যাপার, পাখ-পাখালি, পাঁচ মিশালী, রূপ-কাহিনী, সিতারা ও শাহীন এবং চলার গান এ সাতটি পর্বে বিভক্ত বইটি। যাতে ৪৪টি ছড়া-কবিতা সন্নিবেশিত। অপূর্ব ছন্দে প্রথম কবিতা ‘পাখির বাসা’য় কবি কিশোর মনে দোল্ ছড়ান এভাবে-
আয়গো তোরা ঝিমিয়ে পড়া দিনটাতে,
পাখির বাসা খুঁজতে যাব এক সাথে।
কোন্ বাসাটা ঝিঙে মাচায়
ফিঙে থাকে কোন্ বাসাটায়
কোন্ বাসাতে দোয়েল ফেরে সাঁঝ রাতে।
অপরের দয়ায় যারা বেঁচে থাকতে চায় তারা কখনো সুখী হতে পারে না। কবি তাই ছোটদের স্বনির্ভরতার ডাক দিয়েছেন রূপক ছাড়া ‘চড়–ই পাখির বাসা’য়-
চড়ুই পাখি চালাক তো ভাই
নিজের বাসার ঠিক ঠিকানা নাই,
পরের দালান বাড়ি খুঁজে
থাকে সেথায় মাথা গুঁজে
সবাই তাকে খারাপ বলে
বলে যে, দূর ছাই।
পরের দয়ায় বাঁচতে যারা চায়
দুঃখ তাদের ঘোচানো যে দায়॥
ছোটদের জন্য কবির এ পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ‘পাখির বাসা’ প্রকাশিত হবার পরের বছর ১৯৬৬ সালে আন্তর্জাতিক ‘ইউনেস্কো পুরস্কার’ দেয়া হয় কবিকে।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ফররুখের দ্বিতীয় শিশুতোষ কাব্যগ্রন্থ ‘নতুন লেখা’। প্রকাশ করে আহমদ পাবলিশিং হাউস। এ বইয়ের মোট ৬৯টি ছড়া-কবিতায় কবি বাংলার রূপ-প্রকৃতি, ঋতুবৈচিত্র্য, দেশপ্রেম এবং মানব চরিত্রের নানা দোষ-গুণ অপরূপ ভঙ্গিতে তুলে ধরেন। প্রতিটি ছড়া-কবিতায় রয়েছে ছোটদের জন্য বিচিত্র জ্ঞান-সম্ভার আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিক্ষা। যেমন :
বন্ধু নির্বাচন-
“বন্ধু যদি বেড়াও খুঁজে
চিনবে তাকে চুক্ষু বুজে।”
“লোকটা কেমন?”
মন্দ কি আর
মন্দ শুধু স্বভাবটা তার
হর হামেশা বাইরে ঘরে
দ্বন্দ্ব-মানে ঝগড়া করে,
হিংসুটে আর কিপ্টে বেজায়
ফুর্তি শুধু পরের কথায়।
ভাষা সৈনিক কবি ফররুখ মাতৃভাষা বাংলাকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসতেন। সেই ভালোবাসার সুস্পষ্ট নিদর্শন ছোটদের জন্য লেখা কবির ‘হরফের ছড়া’ বই। বাংলা বর্ণমালাকে শিশুদের কাছে ছন্দে ছন্দে সুখপাঠ্য করে তোলার জন্য তিনি এ বইটি লেখেন। ১৯৬৮ সালে ‘হরফের ছড়া’ প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। আমরা এখানে তিনটি বর্ণের পরিচয় দিচ্ছি-
ক-য়ের কাছে কলমিলতা
কলমিলতা কয় না কথা,
কোকিল ফিঙে দূর থেকে
কলমি ফুলের রঙ দেখে।
ঝ-য়ের পাশে ঝিঙে
ঝিঙে লতায় ফিঙে
ঝিঙে লতা জড়িয়ে গেলো
কালো গরুর শিঙে।
ব-য়ের কাছে বন-বিড়াল
আনলো ডেকে সাত-শিয়াল,
বোল-বোল-বোল আমের বোল
বাদুড় এসে বাজায় ঢোল।
একসময় কবি ছোটদের জন্য নানা বিষয়ে কবিতা রচনা করেন। নাম কবিতাগুচ্ছ। আর সে সব কবিতায় পাখির মুখে আল্লাহর গুণগান প্রকাশ করেন। যেমন তাঁর বুলবুলিকে নিয়ে চার পঙক্তির একটি শিশুতোষ কবিতা-
“বুলবুলি গো বুলবুলি
কোথায় যাবে সুর তুলি?”
বুলবুলি কয়. “খানে কা’বা; কা’বা ঘরে যাই
চলার পথে খোদার হাম্দ; নবীর তারিফ গাই।
১৯৭০ সালে ছোটদের জন্য ‘ছড়ার আসর’ নামে অনিন্দ্য সুন্দর একটি ছড়ার বই প্রকাশিত হয়, যা বাজারে আসার সাথে সাথে নিঃশেষ হয়ে যায়।
প্রতিটি শিশু-কিশোর এমনকি বড়দের কাছেও প্রাণিজগৎ সম্বন্ধে জানার তীব্র আগ্রহ চোখে পড়ে। এজন্য দেশে দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনেক চিড়িয়াখানা। আর চিড়িয়াখানা ছোটদের জন্য এক রহস্যময় পৃথিবী। একটু সুযোগ পেলেই তো সবাই ছুটে যায় চিড়িয়াখনার বিচিত্র জীব-জন্তুকে দেখে নিতে।
ছোটদের জন্য প্রকাশিত ফররুখের ‘চিড়িয়াখানা’ শিশু-সাহিত্যের জগতে এক অনন্য সংযোজন। সুদৃশ্য প্রচ্ছদ, ৩৪টি কবিতার প্রতিটিতে সংশ্লিষ্ট জীব-জন্তুর স্কেচ সংযোজনের সুবাদে ‘চিড়িয়াখানা’ গ্রন্থ সবার কাছে লোভনীয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ১৯৮০ সালের ১০ জুন কবির ৬২তম জন্মদিবসে, ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে, রাজশাহী প্রকাশ করে ‘চিড়িয়াখানা।’ এর প্রথম কবিতা-
দেখতে যাব কাজের ফাঁকে
প্রাণীর বাসা জগৎটাকে,
খোদার গড়া এই দুনিয়ায়
কেউ পানিতে, কেউ বা ডাঙ্গায়,
কেউ বা ঘোরে শূন্য হাওয়ায়,
দেখি আজব চিড়িয়াখানায়।
কবি আল্লামা ইকবালের প্রিয় পাখি হলো ‘শাহীন’ আর ফররুখের ‘ঈগল’। কবির প্রত্যাশা আমাদের শিশু-কিশোর তরুণরা ঈগলের মতো স্বাধীন স্বভাব অর্জন করবে। সুস্বাদু পুষ্টিকর হালাল খাদ্য খাবে। আপন মনে ঊর্ধ্বাকাশ, নীল আসমানে উড়ে বেড়াবে। ঈগলের মতো তাদের দৃষ্টি হবে সুদূরপ্রসারী। শিকার হবে নিশ্চিত। তারা চিত্তে প্রবল শক্তি অর্জন করবে। বুকে থাকবে উচ্চ আশা। সাহসে বলীয়ান এই তরুণ কিশোররা বেঁচে থাকবে সুতীক্ষè দৃষ্টিসম্পন্ন ঈগলের মতো। কবি চিড়িয়াখানা ছড়াগ্রন্থের ঈগল নামক ছড়ায় লেখেন-
ঈগল পাখি, স্বর্ণ ঈগল সকল পাখির রাজা
নীল আকাশে উড়ে যে তার মন থাকে তরতাজা,
উঁচু আশা ঈগল পাখির, সাহস ভরা বুক,
মুক্ত স্বাধীন জীবনে তার নাই ভাবনা দুখ,
পাল্লা দিয়ে ওড়ে ঈগল সবার উপরে;
পাহাড় চূড়ায় বাঁধে বাসা মেঘের শহরে।

চিড়িয়াখানায় প্রকাশিত আরেকটি ছড়া উটকে নিয়ে। মরুভূমির জাহাজ উটকে আমরা খুব ভালোবাসি। এটি আল্লাহ্র অপার দান। উট আমাদের প্রিয় নবীজিকে আমরণ বহন করেছেন। কবি সংক্ষেপে অথচ অত্যন্ত চমৎকারভাবে উটের ছড়ায় লেখেন-
উট চলে ধূ ধূ বালু মরুভূমির পথ ঘুরে,
ভুখ পিয়াসে শান্ত থেকে দূরান্তরে যায় দূরে,
মাথার ওপর গনগনে রোদ আগুন যেন দেয় ঢেলে
মানুষ পিঠে নিয়ে তবু উট চলে দুই চোখ মেলে,
খোদার রহম, মরুভূমির শ্রেষ্ঠ বাহন উট দেখি,
“মরুর জাহাজ” নাম হয় তাই, বন্ধু খাঁটি; নয় মেকি।
বিশ্ব সাহিত্যে সমাদৃত আরব্য উপন্যাস “আলিফ লায়লা” ও ইরানের জাতীয় কবি আবুল কাসেম ফেরদৌসির ‘শাহ্নামা’ এদেশের ঘরে ঘরে বহুল পঠিত। গল্পাকারে, পুঁথি-গদ্যে, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলার ঘরে ঘরে ওসব কাহিনী প্রচলিত। ছোটদের প্রিয় কবি ফররুখ ‘আলী বাবার কিস্সা’, ‘আলা উদ্দীনের কিস্সা’, ও ‘সাত মনযিলের কাহিনি’ এ ৩টি গল্পের মাধ্যমে রচনা করেন ‘কিস্সা কাহিনি’ নামক শিশুতোষ কাব্য। ১৯৮৫ সালে এটি প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। “আলোকলতা” নামে ছোটদের জন্য তাঁর লেখা আরো একটি কবিতার বই প্রকাশ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।
বাংলার বিলে-ঝিলে-মাঠে, নদ-নদী-পুকুরে ও গৃহাঙিনায় ফুটে থাকে বিচিত্র ধরনের ফুল। শাপলা-শালুক, কদম-কেয়া, গোলাপ-ডালিয়া, হাস্নাহেনা, রজনী গন্ধা, ঝুমকো-জবা আরো কতশত ফুল। সুসজ্জিত মলাট আর ২৩টি ফুলের ছড়া ছবিসহ ১৯৮৫ সালে ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি’ ফররুখের ‘ফুলের সজ্জা’ প্রকাশ করে।
উপরোক্ত ৮টি শিশুতোষ গ্রন্থ ছাড়াও ফররুখ ছোটদের জন্য আরো ২৩টি পাণ্ডুলিপি লিখে রেখে যান। যেগুলো এখনো প্রকাশের মুখ দেখেনি। ফলে সুন্দর সুন্দর, শিক্ষামূলক অনেক ছড়া-কবিতা থেকে বঞ্চিত রয়েছি আমরা, আমাদের দেশের লক্ষ কোটি সত্যসন্ধানী শিশু-কিশোর। সেগুলো হলো-
ছড়ার আসর-২, ছড়ার আসর-৩, পোকা-মাকড়, ফুলের দেশে, পাখির ছড়া, আলোক লতা, খুশির ছড়া, মজার ছড়া, রং মশলা, জোড় হরফের ছড়া, পড়ার শুরু, ফুলের ছড়া, দাদুর কিস্সা, ছড়া ছবি, হরফ নিয়ে খেলা, হিবিজিবি, কুরআন মঞ্জুষা, আমপারা, সিকান্দার শা’র ঘোড়া, রক্ত গোলাপ, কাব্যগীতি, রাজ-রাজড়া, সাঁঝ-সকালের কিস্সা প্রভৃতি।
ছোটদের জন্য দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে যে আনন্দভুবন রচনায় কবি মনোযোগ দিয়েছিলেন তা তিনি ছন্দে আনন্দে পরিপূর্ণ করে গিয়েছেন। বাংলা কাব্য সাহিত্যে এটি একেবারে বিরল। তাঁর সমকক্ষও কেউ নন।
এই মহান কবি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১০ জুন, ১৯১৮। জন্মস্থান, মধুমতি নদীর তীরে যশোর জেলার ছায়া ঢাকা পাখি ডাকা মাঝআইল গ্রামে। বাবা- খান সাহেব সৈয়দ হাতেম আলী। মাতা- বেগম রওশন আখতার।

Share.

মন্তব্য করুন