৩১ আগস্ট হতে যাওয়া মহাদেশীয় ক্রিকেটের সবথেকে বড় টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ নিয়ে বিতর্কের পর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। পাকিস্তানে মাত্র চারটি ম্যাচ আয়োজিত হবে আর শ্রীলঙ্কায় হবে ৯টা ম্যাচ। ঘরের মাঠে আয়োজিত হওয়া চার ম্যাচের মধ্যে বাবর আজমরা খেলবে মাত্র একটা ম্যাচ। বিসিসিআই পক্ষ থেকে প্রথমেই এশিয়া কাপকে নিরপেক্ষ ভেনুতে আয়োজনের দাবি জানানো হয়েছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান চেয়েছিল হাইব্রিড মডেল। তবে শেষে সেটা মেনেই হাইব্রেড মডেল এশিয়া কাপের ঘোষণা হয়। ফলে শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানে হবে ম্যাচ। রোহিত-কোহলিদের সবগুলো ম্যাচ হবে শ্রীলঙ্কায়। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা বৃষ্টির কথা ভেবে কলোম্বো থেকে ম্যাচগুলো ডাম্বুলায় সরিয়ে দিয়েছে। এই ভেনুতেই পাকিস্তান ও ভারত দুইবার মুখোমুখি হবে। যদি দুই দলই ফাইনাল নিশ্চিত করে তাহলে তৃতীয় ম্যাচটিও হবে এই ভেনুতে। এসিসির সূচি অনুযায়ী, আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এবারের আসর। টাইগারদের এবারের টার্গেট শিরোপা। সে লক্ষ্যে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ক্লোজডোর অনুশীলন করিয়েছেন। মিডিয়ার কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি অনুশীলনে। টাইগারদের আগ্রাসী মনোভাব কাজে লাগিয়ে শিরোপার দাবীদার সাকিব বাহিনী। যদিও ২২ আগস্ট পর্যন্ত দলের সাথে যোগ দেননি অধিনায়ক সাকিব।

এশিয়া কাপের খুঁটিনাটি
১৯৮৪ সালে প্রথম আয়োজিত হয় এশিয়া কাপ। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় সেবার অংশ নিয়েছিল মাত্র তিন দল, পরের আসরেও অংশ নেয় তিন দল। কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে এবারের এশিয়া কাপে অংশ নেবে ছয়দল। এখন পর্যন্ত হওয়া ১৫ আসরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কা ছয়বার, বাকি দুবার চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।
এশিয়া কাপের ১৫ আসরের মধ্যে একমাত্র শ্রীলঙ্কাই অংশ নিয়েছে সবগুলো আসরে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অংশ নেয় ১৪ আসরে।
১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় আসর থেকে এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ। সেবার লঙ্কান বোর্ডের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্ক থাকায় শ্রীলঙ্কা সফর করেনি ভারত। ভারত অংশ না নেয়ায় আরেকটি দল পূরণে আমন্ত্রণ জানানো হয় তখনকার সহযোগি সদস্য বাংলাদেশকে।
এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি পাঁচবার স্বাগতিক ছিল বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে তৃতীয় আসর দিয়ে বাংলাদেশি এশিয়া কাপ আয়োজন শুরু। এরপর লম্বা বিরতির পর ঢাকায় এশিয়া কাপ হয় ২০০০ সালে। ২০১২, ২০১৪, ২০১৬ সালে টানা তিন আসরের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ।
প্রথম আসরসহ সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপ হয়েছে চারবার। এবারের আগে শ্রীলঙ্কাতেও এশিয়া কাপ হয়েছে চার বার।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, এশিয়ার বড় দুই পরাশক্তি ভারত ১৯৯০ সালে ও পাকিস্তান ২০০৮ সালে মাত্র একবার করে এশিয়া কাপ আয়োজন করে। এবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় এশিয়া কাপ আয়োজন করছে পাকিস্তান। মূলত ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতায় দুই দেশে এশিয়া কাপ আয়োজন সবসময়ই কঠিন। নিরপেক্ষ ভেনু হিসেবে থেকেছে আরব আমিরাত।
ভারত সবচেয়ে বেশি ট্রফি জিতলেও এশিয়া কাপ ওয়ানডের আসরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জিতেছে শ্রীলঙ্কা। তাদের জয় ৩৪টি, ভারত ম্যাচ জিতেছে ৩১টি। পাকিস্তান ২৬টি। বাংলাদেশের এশিয়া কাপে জয় ৭টি। আফগানিস্তানের তিনটি।
এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপ দুবার হয়েছে টি-২০ সংস্করণে। বাকী সবগুলোই হয়েছে ওয়ানডে ফরম্যাটে। টি-২০ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে হওয়া আসরে প্রথম টি-২০ এশিয়া কাপ হয়। তখন থেকে সিদ্ধান্ত হয়, যে বছর যে সংস্করণের বিশ্বকাপ হবে, তার আগের এশিয়া কাপ হবে সেই সংস্করণে। সে অনুযায়ি ২০২২ সালেও হয় টি-২০ সংস্করণের এশিয়া কাপ। এবার সামনে ওয়ানডে বিশ্বকাপ থাকায় এশিয়া কাপ হবে ওয়ানডে সংস্করণে।
এশিয়া কাপ ওয়ানডে আসরে সবচেয়ে বেশি রান শ্রীলঙ্কার সনৎ জয়সুরিয়ার। ২৫ ম্যাচে ১ হাজার ২২০ রান রয়েছে তার। সর্বোচ্চ ৬ সেঞ্চুরিও তার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানও আরেক লঙ্কান কুমার সাঙ্গাকারার। ২৪ ম্যাচে করেছেন ১ হাজার ৭৫ রান। ভারতের শচিন টেন্ডুলকার ২৩ ম্যাচে করেছেন ৯৭১ রান।
সবচেয়ে বেশি উইকেটও কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের। ২৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৩০ উইকেট। তার স্বদেশী লাসিথ মালিঙ্গা মাত্র ১৪ ম্যাচে নিয়েছেন ২৯ উইকেট। এই তালিকায় ১৮ ম্যাচে ২২ উইকেট নিয়ে ছয়ে আছেন বাংলাদেশী বাঁহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক।

কোন দলে কারা খেলছেন
বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শেখ মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, তাসকিন আহমেদ, আফিফ হোসেন, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও নাঈম শেখ।
শ্রীলঙ্কা দল : দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশন মেন্ডিস (সহ-অধিনায়ক), চরিথ আসালঙ্কা, ধনঞ্জয় ডি সিলভা, ভানুকা রাজাপক্ষে, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ, সাদিরা সমারাবিক্রমা, দানুষ্কা গুণতিলকা, দুষ্মন্ত চামিরা, দিলশান মাদুশাঙ্কা, দীনেশ চ-ীমাল, নুয়ানিদু ফার্নান্দো, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহিশ তীক্ষণা, মাথিশা পথিরানা।
আফগানিস্তান দল : হাসমতউল্লাহ শাহিদী (অধিনায়ক), ইব্রাহিম জাদরান, ইকরাম আইখিল, নাজিবুল্লাহ জাদরান, রহমানুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), আজমতুল্লাহ ওমরজাই, মহম্মদ নবি, রহমত শাহ, রশিদ খান, শহীদুল্লাহ, ফজলহক ফারুকি, মহম্মদ সেলিম, মুজিব-উর-রহমান, নিজাত মাসুদ।
পাকিস্তান দল : আবদুল্লাহ শফিক, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, বাবর আজম (অধিনায়ক), আগা সালমান, ইফতিখার আহমেদ, তায়্যিব তাহির, মোহাম্মদ রিজওয়ান, মোহাম্মদ হারিস, শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), মোহাম্মদ নওয়াজ, উসামা মির, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, নাসিম শাহ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি।
ভারত দল : রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শুভমন গিল, লোকেশ রাহুল (উইকেটরক্ষক), শ্রেয়াস আইয়ার, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজ, কুলদীপ যাদব, ইশান কিষান (উইকেটরক্ষক), অক্ষর প্যাটেল, শার্দুল ঠাকুর, সূর্যকুমার যাদব, তিলক বর্মা, প্রসিধ কৃষ্ণ। রিজার্ভ প্লেয়ার: সঞ্জু স্যামসন।
নেপাল দল : রোহিত কুমার পাওডেল, মোহাম্মদ আসিফ শেখ, কুশাল ভুরটেল, ললিত নারায়ণ রাজবানশি, ভিম শারকি, কুশাল মাল্লা, দিপেন্দ্রা সিং আইরে, সন্দীপ লামিচানে, কারান এলসি, গুলশান কুমার ঝা, আরিফ শেখ, সোমপাল কামি, প্রাতিশ জিসি, কিশোর মাহাতো, সুন্দীপ জোরা, অর্জুন সাউদ ও শায়াম ধাকাল।

সাকিব তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক
এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সাকিব আল হাসানকে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগে থেকেই তিনি টেস্ট ও টি-২০র নেতৃত্বে আছেন। তিন ফরম্যাটেই এবার অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। গত ১১ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সাকিবকে ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
গত ৩ আগস্ট বিসিবির সঙ্গে বৈঠক শেষে পাপনের বাসভবনের গ্যারেজে সংবাদ সম্মেলন করে স্বেচ্ছায় অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের আগ-মুহূর্তে তামিমের এই সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়ে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অধিনায়ক হিসেবে একাধিক নাম ঘিরে গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাকিবেই আস্থা ক্রিকেট বোর্ডের।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফি বিন মর্তুজা ইনজুরিতে পড়ায় সাকিবকে সহ অধিনায়ক থেকে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক করা হয়। প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই নিজেকে প্রমাণ করে পরের সিরিজেই হন ভারমুক্ত। এসময় ২ বছর দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
২০১১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরের পর সাকিবকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। এর ৬ বছর পর ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-২০ থেকে অবসরে গেলে আবারও নেতৃত্বে ফেরেন এই অলরাউন্ডার।
একই বছরে মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট ফরম্যাটেও অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব। এরপর ২০১৯ সালে আইসিসি কর্তৃক একই বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়ে সাকিব দ্বিতীয় দফায় নেতৃত্ব হারান।
এরপর ২০২২ সালের জুনে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আবারও দলের নেতৃত্বে ফেরেন সাকিব। মাস কয়েক পরেই টি-২০র নেতৃত্বও পান। এবার পেলেন ওয়ানডের অধিনায়কত্ব। তাতে প্রায় এক যুগ পর আবারও তিন ফরম্যাটে সাকিবের নেতৃত্বে খেলবে বাংলাদেশ।
টেস্ট ক্রিকেটে তিন দফায় ১৯ ম্যাচে টাইগারদের নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব। যেখানে ৪ জয়ের বিপরীতে হেরেছে ১৫ টেস্ট। ওয়ানডেতে দুই দফায় ৫০ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অধিনায়কত্ব করে সাকিব ২৩ জয়ের বিপরীতে হারে ২৬ ম্যাচ। কোনো ফলাফল আসেনি একটি ম্যাচে। আর টি-২০তে তিন দফায় সাকিবের নেতৃত্বে ৩৯ বার মাঠে নেমে বাংলাদেশ ২৩ হারের বিপরীতে ১৬ বার হাসি মুখে মাঠ ছাড়ে।

Share.

মন্তব্য করুন