ফাইনালটা হয়েছে ফাইনালের মতোই। সিলেটের হারের ব্যবধান বড় হলেও ম্যাচটি অনেকটা সময় দুলছিল পেন্ডুলামের মতো। কুমিল্লার লক্ষ্য ছিল ১৭৬ রানের। ১৬ ওভার পর্যন্ত দুই দলেরই জয়ের সমান সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। শেষ ২৪ বলে কুমিল্লার দরকার পড়ে ৫২ রান। রুবেল হোসেনের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাশরাফি। ওই ওভারেই ম্যাচটা চলে যায় কুমিল্লার হাতে। জীবন পাওয়া জনসন চার্লস আর মঈন আলি মিলে ওভারে তুলে নেন ২৩ রান। শেষ পর্যন্ত এই জুটিই ম্যাচ বের করে নিয়ে এসেছে।

দুর্দান্ত ছন্দের ধারা ফাইনালেও ধরে রাখলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অসাধারণ এক ফিফটিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিপিএলের এক আসরে করলেন পাঁচশ রানের মাইলফলক। তার সঙ্গে জ্বলে উঠলেন দলের অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিমও। তাতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্যই ছুঁড়ে দিয়েছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ১৭৫ রানের ইনিংস গড়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। জবাবে চালর্স-লিটন-মঈন ঝড়ে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নরা চার বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে। পাশাপাশি চতুর্থ শিরোপা উল্লাসে মাত্র কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
সিলেট স্ট্রাইকার্স : ১৭৫/৭ (শান্ত ৬৪, মুশফিক ৭৪*, বার্ল ১৩, রাসেল ১/৩১, তানভির ১/২১, নারাইন ১/৩৩, মোস্তাফিজ ২/৩১, মঈন ১/৩১)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯.২ ওভারে ১৭৬/৩ (লিটন ৫৫, চার্লস ৭৯*, মইন ২৫*; রুবেল ২/৩৯, লিন্ডা ১/১৪)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ : জনসন চার্লস (কুমিল্লা)।

মেট্রোরেলে বিপিএলের ট্রফি উম্মোচন
নানা বিতর্কতায় বিপিএল শুরু হলেও শেষ দিকে এসে একের পর এক চমক দিচ্ছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। দুদিন আগেই ঘোষণা সমাপনী দিনে হবে কনসার্ট। যা এর আগে কোনো সংস্করণে ফাইনালের দিনে হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী ফাইনালের আগে মিরপুর শেরেবাংলায় দুই দলের অধিনায়ককে নিয়ে ট্রফি উন্মোচন বা ফটো সেশন হয়। এবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মেট্রোরেলে হলো বিপিএলের ট্রফি প্রদর্শন। ট্রফি নিয়ে ফটো সেশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট অধিনায়ক মাশরাফির পরিবর্তে মুশফিকুর রহিম। অন্যদিকে কুমিল্লার নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমরুল কায়েস।

এক নজরে বিপিএল অর্থপুরস্কার
চ্যাম্পিয়ন : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, দুই কোটি টাকা
রানার্স আপ : সিলেট স্ট্রাইকার্স, এক কোটি টাকা
ফাইনাল সেরা : চালর্স জনসন (কুমিল্লা), ৫ লাখ টাকা
সিরিজ সেরা : নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট), ১০ লাখ টাকা
সর্বোচ্চ রান : নাজমুল হোসেন শান্ত (সিলেট) ৫১৬ রান, ৫ লাখ টাকা
সর্বোচ্চ উইকেট : তানভির (কুমিল্লা) ১৭ উইকেট, ৫ লাখ টাকা
সেরা ফিল্ডার : মুশফিকুর রহিম (সিলেট) ১৪ ডিসমিসাল, ৩ লাখ টাকা

প্রাইজমানির পুরো টাকাটাই দিয়ে দিলো সিলেট
বিপিএলের এবারের আসরে মাশরাফির নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলে সিলেট স্ট্রাইকার্স। যদিও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ৭ উইকেটে হেরে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। শিরোপা না জিতলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের মন জিতেছে মাশরাফি ও তার সতীর্থরা। তাইতো এক কোটি টাকা প্রাইজমানির পুরোটা খেলোয়াড় ও টিম ম্যানেজমেন্টকে দিয়ে দিয়েছে সিলেট।

ব্যাটিং ও বোলিংয়ে দেশিদের রাজত্ব
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট  নবম আসরের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটারই বাংলাদেশের। বোলিংয়েও যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন দুই দেশি বোলার তানভীর ইসলাম ও হাসান মাহমুদ।

বিপিএলের ৯ ফাইনাল
১ম বিপিএল ফাইনাল (২০১২) : প্রথম আসরের ফাইনালে লড়েছিল ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ও বরিশাল বার্নার্স। আগে ব্যাটিং করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ান ব্র্যাড হজের ৭০ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪০ রান করে  বরিশাল। জবাবে পাকিস্তানের ইমরান নাজিরের ৭৫ রানে ভর করে ১৬তম ওভারেই ৮ উইকেটের জয় তুলে নেয় মাশরাফির ঢাকা।
২য় বিপিএল ফাইনাল  (২০১৩)  : দ্বিতীয় আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয় ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স ও চিটাগং কিংস। টস জিতে প্রথমে বোলিং করে এনামুলের ৫৮ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭২ রান করেছিলো ঢাকা। জবাবে ১৯ বল বাকী থাকতে ১২৯ রানে অলআউট হয় চিটাগং। ফলে ৪৩ রানের জয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা জিতে মাশরাফির ঢাকা।
৩য় বিপিএল ফাইনাল (২০১৫) : তৃতীয় আসরের ফাইনালে বরিশাল বুলসকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপার স্বাদ পেয়েছিলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। টস হেরে  ব্যাট হাতে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৬ রান তুলে বরিশাল। জবাবে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৭ রান তুলে কুমিল্লা। তাতে অধিনায়ক হিসেবে হ্যাটট্রিক শিরোপার স্বাদ পায় মাশরাফি।
৪র্থ বিপিএল ফাইনাল (২০১৬) : চতুর্থ আসরের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটস ৫৬ রানে রাজশাহী কিংসকে হারিয়ে শিরোপা জিতে। টস প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৯ রান করে ঢাকা। জবাবে ১০৩ রানে গুটিয়ে ম্যাচ হারে রাজশাহী।
৫ম বিপিএল ফাইনাল (২০১৭) : পঞ্চম আসরে রংপুরের বিদেশী রিক্রুট ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ৫৭ রানে হারায় ঢাকা ডায়নামাইটসকে। ৬৯ বলে ৫টি চার ও ১৮টি ছক্কায় অপরাজিত ১৪৬ রান করেন গেইল। ২০ ওভারে ১ উইকেটে মাশরাফির রংপুর করে ২০৬ রান। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান করে ঢাকা।
৬ষ্ঠ বিপিএল ফাইনাল (২০১৮) : ষষ্ঠ আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিপিএলের শিরোপা ঘরে তুলে কুমিল্লা। টস হেরে প্রথমে ব্যাট তামিম ইকবালে ৬১ বলে ১০ চার ও ১১ ছক্কায় অপরাজিত ১৪১ রানে ভর করে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান করে কুমিল্লা। জবাবে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮২ রান করে ম্যাচ হারে ঢাকা।
৭ম বিপিএল ফাইনাল  (২০১৯) : সপ্তম আসরের ফাইনালে খুলনা টাইগার্সকে ২১ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মত শিরোপা ঘরে তুলে রাজশাহী রয়্যালস। ৪ উইকেটে ১৭০ রান করে রাজশাহী। জবাবে  ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৪৯ রান পর্যন্ত যেতে পারে  খুলনা।
বিপিএল ফাইনাল (২০২২) : অষ্টম আসরে তৃতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে কুমিল্লা। শ^াসরুদ্ধকার ফাইনালে কুমিল্লা ১ রানে হারায় ফরচুন বরিশালকে। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫১ রান করে কুমিল্লা। জবাবে ৮ উইকেটে ১৫০ রান করে হার মানে বরিশাল।
বিপিএল ফাইনাল (২০২৩) : নবম আসরে প্রথম ৩ ম্যাচ হারের পর টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠে কুমিল্লা। ফাইনালে ৭ উইকেটে হারায় মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সদের। প্রথমে ব্যাট করে শান্তর ৬৪ ও মুশফিকের ৭৪* রানে ভর করে ৭ উইকেটে ১৭৫ রান করে স্ট্রাইকার্সরা। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে কুমিল্লা।

Share.

মন্তব্য করুন