পৃথিবী বড়ই বিচিত্র। এর কিছু জিনিস আমাদের ভাবিয়ে তোলে। কিছু জিনিস ভয় পাইয়ে দেয়। আবার কিছু জিনিসের রহস্যময়তায় চমকে উঠি। তেমনিভাবে পৃথিবীতে কিছু শহর আছে যার বাস্তবতা মানুষকে বিস্মিত করে। এমনই কিছু শহরের কথা জানবো আজ।

মৃত্যু নিষিদ্ধ শহর
সাভালবার, লংইয়ারবনের শহরটি পৃথিবীর উত্তর দিকে অবস্থিত। জনবসতি হলেও এখানে রয়েছে এক অদ্ভুত নিয়ম। দেশটির নিয়ম অনুযায়ী এই শহরে বসবাসরত মানুষের মৃত্যু নিষেধ। বিষয়টা অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি। এই শহরে বাস করলে কারো মৃত্যু হবে না। অথবা এই শহরে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকার স্বীকৃতি পেয়ে গেছে এমন নয়। এ রহস্য বের করে জানা যায় এই শহরটি আসলে সীমাহীন ঠাণ্ডা। এতটাই ঠাণ্ডা যে তা মৃতদেহকে নিঃশেষিত হতে বাধা দেয়। যার কারণে বন্য প্রাণীদের আকর্ষণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে মাংসাশী পশুগুলো হিংস্র হয়ে ওঠে। যার কারণে একেবারে মৃত্যুর মুখোমুখি মানুষদের দ্রুত সেখান থেকে নরওয়ের মূল ভূমিতে নিয়ে আসা হয়। যদিও শহরটিতে একটি গোরস্থান রয়েছে কিন্তু বিগত ৭০ বছর সেখানে কাউকে দাফন করা হয়নি।

দ্য লাস্ট ফ্রি সিটি
ক্যালিফোর্নিয়ার ‘স্ল্যাব সিটি’ শহরটি মূলত ভবঘুরেদের বাসস্থান। অবসরপ্রাপ্ত এবং যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তারাই মূলত সেখানে বসবাস করে। সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য ট্রেইলার তথা এক ধরনের মিনিবাস যেখানে থাকার সুব্যবস্থা আছে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, সেখানে পানি, বিদ্যুৎ এমনকি কোনো বসতির ঠিকানা পর্যন্ত নেই। যার ফলে শুল্ক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসও নেই সেখানে। তাহলে মনে হতে পারে নিশ্চয়ই সেখানে মানুষের পক্ষে থাকা অসম্ভব এবং বেশ কষ্টকর! কিন্তু আরও আশ্চর্যের বিষয় সেখানে যারাই গিয়েছে তাদের কাছে জায়গাটি বসবাসের জন্য বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে। সেই স্ল্যাবারের বাসিন্দারা তাদের শহরকে বলে থাকে ‘দ্য লাস্ট ফ্রি প্লেস ইন আমেরিকা’।

নরকের শহর!
পৃথিবীতে যদি কেউ নরকে জায়গা করে নিতে চায় তবে তাকে যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে! যদিও শহরটির নামের উৎপত্তির বিষয়টি অনিশ্চিত। স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের এমন নারকীয় ভাবমূর্তি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জীবিত রেখেছেন। যখনই কোনো পর্যটক সেখানে গিয়ে পৌঁছায় তখনই অধীর আগ্রহের সহিত ‘ওয়েলকাম টু হেল’ তথা ‘নরকে স্বাগতম’ লেখা বড় বোর্ডের সামনে ছবি তুলে নেয়। সাথে সাথে তারা সেখানকার স্থানীয় উপহারের দোকান থেকে ৬.৬৬ ডলার দিয়ে একটি ওয়ারেন্টি দলিল কিনে নেয়, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের নামে নরকে ১ বর্গইঞ্চি পরিমাণ জায়গা নিশ্চিত করে নেয়।

দুই দেশের এক শহর
জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের অংশে অবস্থিত একটি শহরের নাম বুসেনগেনইয়াম হোকারহেন। এ শহরে দু’দেশের অংশ থাকায় প্রভাব বিস্তার করছে তারা। অর্থনৈতিকভাবে শহরটি সুইজারল্যান্ডের অংশ অন্যদিকে প্রশাসনিকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে জার্মানি! শহরটি জার্মানির হলেও এখানে সুইস ফ্রাংক প্রধান মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব ছাড়াও শহরটিতে দেখা যায়- একই শহরে দুই দেশের দুটি পোস্ট কোড ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা দুই দেশেরই ফোন নম্বর ব্যবহার করে। জার্মানির একমাত্র দল এফসি বুসেনগেইন, যা সুইস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলে।

গুহার শহর
অতীতে ঘর-বাড়ি নির্মাণের জ্ঞান ছিলো না বলে মানুষ গুহায় বাস করতো। সে তো অতীত। কিন্তু এই আধুনিক যুগে এসেও যদি শুনতে যে শহরের মানুষ হয়েও তারা গুহায় বসবাস করে। তাহলে তো চোখ কপালে উঠবেই। এই বিরল ঘটনাটি ঘটেছে তিউনিসিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত মাতমাতা শহরে। সেখানে এখনো যাযাবর প্রকৃতির মানুষ বসবাস করে। ১৯৭০ সালে এসব মানুষের জন্য মাটির উপরে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হলেও তারা ভূগর্ভে থাকা ঐতিহ্যবাহী ঘরগুলোতেই থাকতেই পছন্দ করে।

অস্ট্রিয়ার গ্রাম চীনে অবস্থিত
চায়নারা যেকোনো জিনিসের অবিকল তৈরিতে বেশ পটু। তাই বলে পুরো একটি গ্রাম বানিয়ে ফেলবে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। এই অসাধ্য তাদের দ্বারাই সম্ভব এমনকি বাস্তবে এর রূপও দাঁড় করিয়ে ফেলেছে তারা। অস্ট্রিয়ার দৃষ্টিনন্দন একটি গ্রামের নাম হালস্টাট। পুরো এক বিলিয়ন ডলার খরচ করে অস্ট্রিয়ার হালস্টাট গ্রামটি নিজেদের দেশের ভেতরেই বানিয়ে ফেলে তারা। প্রথমে তারা গ্রামের গির্জাটি তৈরি করে। পরে গ্রামের রাস্তা তৈরি করে। যা দেখতে অবিকল অস্ট্রিয়ার হালস্টাট গ্রামের মতোই।

Share.

মন্তব্য করুন