ঈদগাহ ইসলামি সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত প্রসিদ্ধ এবং অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি শব্দ। যা দিয়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায়ের জন্য খোলা আকাশের নিচে বড় ময়দানকে বোঝানো হয়ে থাকে। সুন্নত অনুযায়ী ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, সাধ্যমতো নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে জমায়েত হন। ঈদের নামাজ মসজিদে পড়লেও হবে তবে ঈদগাহে নামাজ পড়া সুন্নত। ঈদের মাঠে জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে সবার মধ্যে সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত অনেক ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ রয়েছে। বক্ষ্যমাণ লেখামালায় আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ মাঠ নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ।

সৌদি আরব : সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতটি অনুষ্ঠিত হয় গ্র্যান্ড মস্ক ইন মক্কা নামে পরিচিত কাবা শরিফে। এখানেই সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতের আয়োজন করা হয় সরকারিভাবে। তবে অন্যান্য মসজিদেও ঈদের জামায়াতের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
জেরুসালেম : জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদে সব সময় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতটি। এটি ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। জায়নবাদী ইসরাইলি ইহুদিবাদীদের কামান আর গুলির ঝুঁকি নিয়ে এখানে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে আসেন।
বাংলাদেশ : বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলা শহরের ঐতিহাসিক গোর এ শহীদ বড় ময়দানের পশ্চিম প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ। ৫২ গম্বুজের এই ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে ছয় লক্ষাধিক মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন।

মরক্কো : মরক্কো হাসান-২ মসজিদে সে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতের আয়োজন করা হয়। মসজিদটি মরক্কোর ক্যাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত। এ মসজিদে একসঙ্গে প্রায় বিশ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এ মসজিদের আরেকটি বিখ্যাত দিক হলো এর মিনারটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মিনারটি এ মসজিদের।
ওমান : ওমানের মাস্কটে সে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াতের আয়োজন করা হয়। সবচেয়ে বড় এ ঈদ জামায়াতটি অনুষ্ঠিত হয় মাস্কটের সুলতান কাবুস মসজিদে। বলা হয়ে থাকে, সুলতান কাবুস মসজিদ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। ওমানের দর্শনীয় জায়গাগুলোরও একটি এ মসজিদ। ১৯৯২ সালে এ মসজিদ তৈরি করা শুরু হয় এবং ছয় বছর সময় লাগে এ মসজিদটি তৈরি করতে। এতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

ইউরোপ : ইউরোপের বড় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় বার্মিংহামে। প্রতি বছর সেখানে প্রায় ৭০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বিভিন্ন দেশের কমিউনিটির, বিভিন্ন কালচারের ৭০ হাজার মুসল্লি এক সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়ের পর সেখানে তারা তাদের ছুটির দিনটি কাটান বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সঙ্গে।
আবুধাবি : আবুধাবির শেখ জায়েদ মসজিদে আয়োজন করা হয় সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতের। প্রতি বছর আরব আমিরাতে অবস্থিত এ মসজিদে হাজার হাজার মানুষ ঈদের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে থাকেন। সরকারিভাবে এই জামায়াতের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ঈদ উপলক্ষে খুব জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে সাজানো হয় পুরো শহরকে। বলা হয়ে থাকে, প্রায় ৪০ হাজার মানুষ একসঙ্গে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় ঈদের জামায়াত এটিই।

মিসর : ক্যারিওর আল আজহার মসজিদে সেখানকার সবচেয়ে বড় ঈদ জামায়াতের আয়োজন করা হয়। হাজার হাজার মানুষ এখানে সমবেত হয়ে থাকেন ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য। ধারণা করা হয় ৯৭০ সালে এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল। এই মসজিদটি মিসরের ঐতিহাসিক স্মৃতি বহন করে থাকে।
উপসংহার : মুসলিম কোনো ভৌগোলিক কিংবা ভাষাকেন্দ্রিক অথবা শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক কোনো জাতির নাম নয়। মুসলিম একটি আদর্শিক জাতির নাম। সারা বিশ্বের মুসলমানরা একই বিশ্বাস ও বিধানের অনুসারী একই সাংস্কৃতিক মূলধারার অধিকারী। তাই ঈদ যখন আসে নতুনের খুশি নিয়ে, নতুনের আনন্দ নিয়ে এই খুশির আমেজ সারা বিশ্বের প্রায় দেড় শ’ কোটি মুসলমানের হৃদয়কে একই সাথে দোলা দিয়ে যায়। ঈদ আমাদের যে ভ্রাতৃত্ব ও প্রীতির বন্ধন শেখায় তা সামগ্রিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আরো সুন্দর হয়ে উঠবে আমাদের জীবন। গ্লোবাল ভিলেজের এই পৃথিবী।

Share.

মন্তব্য করুন