চাঁদ কতই না সুন্দর! তার মুখটা উজ্জ্বল গোলাকার। সে সমগ্র পৃথিবীতে কোমল আলো ছড়িয়ে পৃথিবীবাসীকে মুগ্ধ করে। কিন্তু একটা সময় ছিলো যখন চাঁদ এখনকার মতো এত সুন্দর ছিলো না। ছয় হাজার বছর আগে এক রাতের বেলা চাঁদের চেহারা বদলে যায়। তার আগে তার মুখটা এত অন্ধকার ও বিষণœ ছিলো যে, তার চেহারার দিকে কেউ তাকাতেই চাইতো না। এ জন্য তার মনটা সবসময় খারাপ থাকতো।
একদিন সে ফুল ও তারাদের কাছে গিয়ে তার দুঃখের কথা জানালো। সে বললো, “আমি চাঁদ হতে পছন্দ করি না। আমি যদি কোনো তারা কিংবা ফুল হতে পারতাম! যদি আমি তারা হতাম, এমনকি সবচেয়ে ছোট তারাটিও হতে পারতাম তাহলে সবাই আমার যত্ন করতো। কিন্তু হায়! কেবলই আমি চাঁদ এবং কেউ আমাকে পছন্দ করে না। আমি যদি ফুল হতে পারতাম এবং সেই বাগানে ফুটে থাকতাম যেখানে বিশ্বের সুন্দর সুন্দর রমণীরা ঘুরতে আসতো, তারা আমাকে তুলে তাদের চুলের মধ্যে রাখতো এবং আমার সুঘ্রাণ ও সৌন্দর্যের প্রশংসা করতো। কিংবা আমি যদি বুনোফুল হয়েও কোনো বনের মধ্যে ফুটে থাকতাম তাহলে পাখিরা সেখানে আসতো এবং আমার জন্য মিষ্টি করে গান গাইতো। কিন্তু আমি হলাম গিয়ে শুধুমাত্র চাঁদ এবং কেউ আমাকে সম্মান করে না।”
তারারা তার কথা শুনে বললো, “আমরা তোমাকে কোনো সাহায্য করতে পারবো না। আমরা যেখানে জন্মেছি সেখান থেকে কখনও কোথাও যেতে পারি না। আমরা কখনও কাউকে পাইনি, যে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাই, সারা দিন আমরা কাজ করি এবং অন্ধকার রাতে মিটিমিটি করে জ্বলি, যাতে আকাশকে সুন্দর দেখায়। এরচেয়ে বেশি কিছু আমরা করতে পারি না।” এই কথা বলে বিষণœ চাঁদের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা একগাল ঠাণ্ডা হাসি হাসলো।
এরপর ফুলেরা মিষ্টি করে হেসে বললো, “আমরা জানি না কী করে তোমাকে সাহায্য করতে হয়। আমরা সবসময় এক জায়গাতেই থাকি, সেই বাগানের মধ্যে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী বালিকা আসে। সে খুব দয়ালু। সবার বিপদে সে এগিয়ে আসে। আমরা তাকে তোমার ব্যাপারে বলবো। আমরা তাকে খুব ভালোবাসি, সেও আমাদেরকে ভালোবাসে। তার নাম হলো ‘সেনিও’।”
চাঁদের মন তখনও খুব খারাপ ছিলো। সুতরাং একদিন সন্ধ্যেবেলা সে সুন্দরী সেনিওকে দেখতে গেল। সে যখন তাকে দেখলো, সে দেখেই তাকে ভালোবেসে ফেললো এবং বললো, “তোমার মুখটা খুবই সুন্দর। তুমি যদি আমার কাছে আসতে এবং আমার মুখটা যদি তোমার মুখের মতো হতো! তোমার চলনভঙ্গি অত্যন্ত সুন্দর ও মার্জিত। তুমি আমার সাথে আসো। আমরা এক হয়ে যাবো এবং একেবারে নিখুঁত হয়ে যাবো। আমি জানি পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মানুষও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে এবং তোমাকে ভালোবাসবে। আমাকে বলো কিভাবে তুমি এত সুন্দর হলে।”
সেনিও জবাবে বললো, “আমি সবসময় তাদের সাথে থেকেছি যারা ভদ্র ও সুখী। আমার বিশ্বাস এটাই হলো আমার সৌন্দর্য ও ভালোত্বের একমাত্র কারণ।”
এভাবে চাঁদ প্রতি রাতে সেনিওকে দেখতে যেত। গিয়ে সে তার জানালায় নক করতো। সাথে সাথে সেনিও চলে আসতো। সে যখন দেখতো সেনিও কত বিনয়ী ও সুন্দর তখন তার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পেত এবং সে চাইতো সে তার সাথে সবসময় থাকুক।
একদিন সেনিও তার মাকে গিয়ে বললো, “আমি চাই আমি চাঁদের কাছে চলে যাই এবং সেখানে সবসময় থাকি। তুমি কি আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেবে?”
তার মা তার প্রশ্ন নিয়ে তেমন মাথা ঘামালো না এবং কোনো উত্তরও দিলো না। সেনিও তার বন্ধুদেরকে জানলো যে, সে চাঁদের বধূ হতে যাচ্ছে।
কয়েক দিনের মধ্যে সে চলে গেল। তার মা সর্বত্র তার তালাশ করলো কিন্তু তাকে খুঁজে পেলো না। সেনিওর এক বন্ধু তাকে বললো, “সে চাঁদের কাছে চলে গেছে কারণ চাঁদ তাকে বহুবার অনুরোধ করেছে তার কাছে যেতে।”
এভাবে বছরের পর বছর কেটে গেল। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে ভদ্র ও সুন্দরী বালিকা সেনিও আর কখনও ফিরে এলো না। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো, “সে চিরদিনের জন্য গেছে। সে এখন চাঁদের সাথেই আছে।”
চাঁদের মুখটা এখন কতই না সুন্দর! সে এখন সুখী ও উজ্জ্বল। পৃথিবীর সবাইকে সে কোমল আলো উপহার দিয়ে থাকে। কেউ কেউ বলে, চাঁদ এখন সেনিওর মতো হয়ে গেছে, যে সেনিও ছিলো বিশ্বের বালিকাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী।

Share.

মন্তব্য করুন