পড়ন্ত বিকেল। হলুদ রোদ খেলা করছে গাছের পাতায়। বিলের পানিতে। পথের ওপরে। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই হলুদ। এমন দৃশ্য সবসময় দেখা যায় না। আজ তাই আবিদের মনটাও হয়ে উঠেছে রঙিন। কেমন ঝরঝরে অনুভূতি দোলা দিচ্ছে তাকে! শুধু তা-ই নয়, এর সাথে যোগ হয়েছে আরেকটি নতুন আনন্দ। একটু পরেই সে আব্বু-আম্মুর সাথে নানুবাড়ি যাবে। এ জন্য সে গুনগুন করে গানও গেয়ে বেড়াচ্ছে-
‘নায়ের মাঝি! আমায় করো পার-
আমি যাব নানুর বাড়ি,
সয় না দেরি আর।’
যদিও নানুর বাড়ি যেতে হলে নদী পাড়ি দিতে হয় না, তবুও এ গানটি তার খুবই পছন্দের। ‘নানুবাড়ির গান’ বলে কথা! আবিদরা জেলা-শহরে থাকে। নানুর বাড়ি শহর থেকে একটু দূরেই। বাসে যেতে প্রায় দু’ঘণ্টা সময় লাগে। যথাসময়ে তারা বাসে উঠে পড়ল। বাস ছাড়ার সাথে সাথে আবিদের প্রজাপতি মনও উড়তে লাগল রঙিন ডানায় ভর করে। বাসে প্রচুর যাত্রী। দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেকেই। একজন বয়স্ক লোকও ছিলেন তাদের ভিড়ে। মুখভরা ধবধবে সাদা দাড়ি। দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁর ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। তখন আবিদের আব্বু দাঁড়িয়ে নিজের আসনে তাকে বসতে দিলেন। বাস থেকে নামার সময় লোকটি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লেন। আব্বুর মাথায় হাত বুলিয়ে অনেক দোয়া করলেন।
নানুর বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে রাত হয়ে গেছে। রাতের খাবার সেরে সবাই যখন ঘুমোতে যাবে, তখন আবিদ প্রশ্ন করল, আচ্ছা আব্বু! ওই লোকটি কি তোমার পরিচিত? যাকে তুমি বসতে দিয়েছিলে। আব্বু বললেন, না। তিনি আমার বয়সে অনেক বড়। তার কষ্ট হচ্ছিল দেখে তাকে নিজের আসন ছেড়ে বসতে দিয়েছি। এটা আমার দায়িত্ব ছিল। বড়দের প্রতি সম্মান দেখানোর ব্যাপারে মহানবী সা. কী বলেছেন, জানো? তিনি বলেছেন, “কোনো যুবক যদি কোনো বৃদ্ধ লোককে সম্মান করে শুধু এ কারণেই যে, তাঁর বয়স বেশি; তাহলে আল্লাহ ওই যুবকের জন্য এমন একজনকে নির্ধারণ করে দেন, যে তাকেও তার বৃদ্ধাবস্থায় সম্মান করবে।” (তিরমিজি) আব্বু বললেন, আমি যদি কাউকে শ্রদ্ধা না করি, আমাকেও আমার ছোটরা শ্রদ্ধা করবে না- এটাই স্বাভাবিক আবিদ তার আব্বুর এ অনুপম চরিত্র-মাধুরীতে মুগ্ধ হয়। তার মনেও তখন ডালপালা ছড়াতে থাকে ভালোবাসার এক সবুজ বৃক্ষ। যে বৃক্ষের শীতল ছায়ায় সে স্থান দেবে ছোট-বড় সকলকেই।

Share.

মন্তব্য করুন