কৃষ্ণচূড়া
গ্রীষ্মের আগুন রাঙ্গা ফুল হিসেবেই চিনি এই কৃষ্ণচূড়াকে। এই গাছটি পুরোটাই ফুলে পরিপূর্ণ হয়। গুচ্ছ আকারে চোখে পড়ে এর ফুলগুলো। গাছ প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। হাওয়ায় হাওয়ায় দোলে ওঠে এই ফুল। কখনো এরা হাওয়ায় ঝরে পড়ে। যেন মনে হয় ফলের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ঝরে ঝরে। এ ফুলের পাপড়ি গুলো চারটি পাপড়ির সমষ্টি দিয়ে গঠিত। পাপড়িগুলো একেকটি পাঁচ থেকে আট মিটার লম্বা হয়ে থাকে। কৃষ্ণচূড়ার মাঝেও আছে নানা রঙ। এর মধ্যে লাল, কমলা ও হলুদ রঙ বেশি চোখে পড়ে। ঢাকার পার্কে, উদ্যানে, লেকের পাড়ে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সড়কের পাশসহ সবখানেই তার কমবেশি সমাবেশ থাকে। এমন সমাবেশ থাকে গ্রামের পথেও! পাতাহীন ডালে ডালে কৃষ্ণচূড়া দূর থেকে স্বাগত জানায় পথিককে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘ডাক দিয়ে যায় পথের ধারের কৃষ্ণচূড়ায়।’

জারুল
গরমের আরেক আগুনরাঙা ফুল জারুল। গ্রীষ্মের সময়েই এই ফুলটি চোখে পড়ে। জারুল গাছ ২০ থেকে ৩০ মিটার উঁচু হয়ে থাকে। ফুল চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা। প্রতিটি ফুলের ছয়টি করে পাপড়ি। গ্রীষ্মের শুরুতেই ডালে ডালে বেগুনি রঙের থোকা থোকা ফুল ফোটে। বর্ষা পর্যন্ত দেখা যায় এই ফুল। হয়তো গ্রীষ্মকে বর্ষার সাথে দেখার স্বাক্ষী হিসেবে জেগে থাকে সে। কখনো শরৎ অবধি জারুল ফুলের রেশ লেগে থাকে। একটা সময় শহরে, গ্রাম-গঞ্জে, নদীপাড়ে অনেক জারুলগাছ দেখা যেত। এখন জারুলগাছের সেই প্রাচুর্য নেই বললেও চলে। তবুও প্রকৃতি থেকে তার সরব উপস্থিতি এখনো হারিয়ে যায়নি, যাবে না। এদের কাঠ যথেষ্ঠ দামি।

হিমচাঁপা
গ্রীষ্মের আরেক জনপ্রিয় ফুল হিমচাঁপা। এটি অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ফুুল। সবুজ লম্বাটে গড়নের বৃক্ষ জাতীয় ফুুল গাছ এটি। গাছটি ছয় থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। বসন্তের শেষদিকে এ গাছে ফুলের কলি আসে। গ্রীষ্মের শুরু থেকে গাছের শাখায় শাখায় হেসে ওঠে ফুল। সুবাস বেশ মিষ্টি। ছয় থেকে ১২টি পাপড়ি থাকে এই হিমচাঁপায়।

সোনালু
গ্রীষ্মের আরেকটি ব্যতিক্রমী রঙের ফুল সোনালু। এই ফুল সোঁদাল, সোনাইল, বানরলাঠি কিংবা বান্দরলাঠি নামেও পরিচিত। সড়কে সোনালুর হলুদসোনালি রং পথিকের মনে আনন্দ দেয়। যেন আনন্দের হিল্লোল বইয়ে দেয় মনে-প্রাণে। এই ফুলকে কেউ বলেন হলুদ আলোর ঝাড়বাতি। আবার কারো কাছে মনে হয় সোনালি পরি। দিন দিন কমে আসছে সোনালুগাছের সংখ্যাও। এর কাঠ খুব দামি নয়। বাড়েও ধীরে। তাই অনেকেই সোনালুগাছ লাগাতে আগ্রহী হন না। কিন্তু যখন ফুল হয়, তখন হলুদ-সোনালি হাসিতে হাত বাড়ায়। এ সময় আনমনে তাকিয়ে থাকতে মন চায়।

স্বর্ণচাঁপা
এরা সোনার মতো রং, তাই স্বর্ণচাঁপা। গ্রীষ্মের শুরুতেই স্বর্ণচাঁপা ফোটে। অনেক ফুল আছে তীব্র রঙের, কিন্তু ঘ্রাণ নাই। আবার কিছু আছে সুগন্ধি ফুল। সুগন্ধের কারণেই খুব ভাল্লাগে। যেমন স্বর্ণচাঁপা। শাহবাগে স্বর্ণচাঁপার তোড়া বিক্রি হতে দেখা যায়। পথ শিশুরা মাথায় কখনো ঝাঁকা ভরে স্বর্ণচাঁপা বিক্রি করে। রাজধানীর বলধা গার্ডেন, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফুটে এই স্বর্ণচাঁপা। মজার বিষয় হলো ফুলটিকে অনেকেই কাঁঠালিচাঁপা ভেবে ভুল করে। আমরা তাকে স্বর্ণচাঁপাই বলব।

জিনিয়া
শীত আর গ্রীষ্ম এ দু’সময়েই দেখা যায় এই ফুুল। তবে জিনিয়াকে গরমের ফুল হিসেবেই বেশি চিনি। বাড়ির ছাদ থেকে শুরু করে বাগানেও অনায়াসে এ ফুল স্নিগ্ধতা দিতে পারে। তবে জিনিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উর্বর মাটি। একইসাথে পর্যাপ্ত পানির চাহিদাও তার আছে।

কনকচূড়া
গ্রীষ্ম আসতে না আসেতই চারপাশ আলোকিত করে ফোটে কনকচূড়া। এটি আমাদের দেশি উদ্ভিদ নয়। সংসদ ভবনের খেজুরবাগান থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান পর্যন্ত এ ফুলের দীর্ঘ একটি বীথি আছে। কনকচূড়ার রয়েছে হালকা মিষ্টি ঘ্রাণ।

গুলাস
গ্রীষ্মের আরেক আকর্ষণীয় ফুল গুলাস। পাতাহীন গাছে ডালের আগায় থোকা থোকায় এ ফুল ফোটে। গুলাস গাছের উচ্চতা আট থেকে ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। জাতভেদে লাল, সাদা, গেলাপি আর হলুদাভ রঙের ফুল হয়। এই গাছের ডালে ডালে মায়াবী গ্রীষ্মের হাসি দেয় যেন এই ফুল। এই হাল্কা মিষ্টি ঘ্রাণেই মন টানে।
এসব ছাড়া গ্রীষ্মের আরো অনেক ফুল আছে। লেখাটা বেশি বড় হবে বলে তাদের সম্পূর্ণ পরিচিতি না দিয়ে শুধু নাম দিচ্ছি। তারা হলো অর্জুন, ইপিল, করঞ্জা, কামিনী, ক্যাজুপুট, গাব, জ্যাকারান্ডা, তেলসুর, দেবদারু, নাগকেশর, নাগেশ্বর, নিম, পরশপিপুল, পলকজুঁই, পাদাউক, পারুলদ, পালাম, বনআসরা, বরুণ, বাওবাব, বেরিয়া, মাকড়শাল, মিনজিরি, মুচকুন্দ, মেহগনি ও রক্তন ইত্যাদি। গ্রীষ্মের ওই ফুলগুলো তো গ্রামে গঞ্জে শহরের বৃক্ষে হেসে ওঠে। তাদের ছাড়া আরো কিছু ফুলের দোকান ও মেলায় পাওয়া যায়। এসব ফুলের পসরা সাজিয়ে রাখেন তারা, তার মধ্যে রয়েছে গন্ধরাজ, রজনীগন্ধা, বেলি, কাঠগোলাপ, হিমচাঁপা, ডুলিচাঁপা, নাগলিঙ্গম, জ্যাকারান্ডা, বরুণ ও ঝুমকো লতা। গ্রীষ্মের খরতাপে এসব ফুল যেন প্রাণিকুলের প্রতি প্রকৃতির দারুণ উপহার।

Share.

মন্তব্য করুন