চমৎকার সকাল!
চারদিকে পড়ছে ঝলমলে মিষ্টি রোদ। বইছে দক্ষিণা ঝিরিঝিরি বাতাস। অনামিকা ঘুম থেকে উঠে এসে দাঁড়ালো তার ফুলবাগানে। ফুলবাগানের দিকে তাকিয়েই মনটা আনন্দে ভরে উঠলো তার। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো বাগানের দিকে।
বাগানে আজ নানান রঙের ফুল ফুটেছে।
সদ্য ফোটা ফুলগুলো সকালের ঝিরিঝিরি বাতাসে দুলছে হেলেদুলে। নেচে নেচে।
নিজের বাগানের ফুল দেখে যারপর নেই খুশি অনামিকা। প্রতিটি ফুলগাছের কাছে গিয়ে নরম হাতে ফুলগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিলো সে। তারপর দৌড়ে বাসায় গিয়ে বাবার ভিডিও ফোনটা নিয়ে এলো। ভাইয়াকে ভিডিও কল দিতে হবে তো! ভাইয়াকে তার বাগানের ফুলগুলো দেখাতে হবে তো!
ভাইয়াকে ফোন দিলো সে। উচ্ছ্বাসভরা গলায় বললো, জানো ভাইয়া! আজ না আমার বাগানে অনেক ফুল ফুটেছে!
সত্যি?
হুম, সত্যি। দেখবে?
দেখি।
অনামিকা একটি ফুল হাতে ধরে ভাইয়াকে ভিডিও কল দিলো। দেখতে পাচ্ছো ভাইয়া?
হুম।
খিলখিল করে হেসে উঠলো অনামিকা। খুব সুন্দর, না?
হুম, খুব সুন্দর!
তারপর বললো, ভাইয়া! এখন রাখি। বাসার সবাইকে সুখবরটা দিয়ে আসি।
ফোন কেটে দিয়ে দৌড়ে বাসায় গিয়ে একে একে বাসার সবাইকে তার বাগানে ফুল ফোটার সুখবরটা জানালো সে।
তার বাগানে ফুটেছে শুনে বাসার সবাই খুব খুশি হলো।
বাবা খুশি হলো।
মা খুশি হলো।
দাদা আর দাদীও খুশি হলো।
স্কুল যাওয়ার সময় অনামিকা মাকে বললো, মা, আমার বাগানের ফুলগুলোর দিকে একটু খেয়াল রেখো, কেউ যেনো ফুল ছিঁড়তে না পারে।
মা হেসে বললেন, আচ্ছা, মামণি!
দুপুরের দিকে আকস্মিক শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি, সাথে ঝড়োবাতাস। বৃষ্টি আর ঝড়োবাতাস দেখে অনামিকার খুব ভয় পেয়ে গেলো। বাগানের ফুলগুলোর কোনো ক্ষতি হলো না তো আবার?
বৃষ্টি থামার পর দ্রুত স্কুল থেকে বাসায় ফিরলো সে। তার ধারণাই সত্যি। বাগানের সবগুলো ফুলগাছ মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে আছে। ফুলগুলো কাদা-পানিতে মেখে একাকার হয়ে গেছে। ফুলগুলোর এমন করুণ অবস্থা দেখে তার খুব কান্না পেলো। দৌড়ে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ফুলগাছগুলোকে খাড়া করে খুঁটি দিলো সে। তারপর ঝড়ে পড়া ফুলগুলো কুড়িয়ে কাদামাটি পরিষ্কার করে একটি বয়য়োমে ভরে পড়ার টেবিলে রেখে দিলো। তারপর মন খারাপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। একসময় ঘুমিয়ে পড়লো। ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার দিকে। ঘুম থেকে উঠে আবার বাগানে গেলো সে।
বাগানের একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে শুনতে পেলো কে যেনো চিকন সুরে চিঁ চিঁ করে কান্না করছে।
চারপাশে তাকালো ও। না, কোথাও কেউ নেই।
ভয় ভয় গলায় বললো, কে কাঁদছো, কে?
চিকন সুরটা বললো, আমি।
অনামিকা খুব ভয় পেয়ে গেলো এবার। ভূত ভূত বলে চিৎকার করবে, তখন চিকন সুরটা আবার বললো, ভয় কেনো পাচ্ছ বন্ধু? আমি তো তোমার বন্ধু, ফুল বন্ধু।
ফুল বন্ধু!
হ্যাঁ, ফুল বন্ধু।
কী বলছো এসব? ফুল কি কখনো কথা বলতে পারে নাকি? কাঁদতে পারে নাকি?
পারি, পারি। আমরা ফুলেরা আর গাছেরাও কথা বলতে পারি, কাঁদতে পারি, হাসতে পারি। তোমাদের মতো আমাদেরও জীবন আছে। কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না।
অনামিকা অবাক হলো। অবাক হয়ে বললো, কিভাবে?
টেলিপ্যাথির মাধ্যমে।
টেলিপ্যাথি!
হুম, টেলিপ্যাথি।
টেলিপ্যাথি কী?
টেলিপ্যাথি এক ধরনের বিশেষ ক্ষমতা। যাদের মনের সঙ্গে আমাদের মন মিলে যায়, আমরা তাদের সঙ্গে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কথা বলি। আর টেলিপ্যাথির মাধ্যমে কথা শুনার জন্য মানুষের বিশেষ এক ধরনের ক্ষমতা থাকতে হয়। যাদের এই ক্ষমতা আছে কেবল তারাই আমাদের কথা শুনতে পায়। তোমার সেই ক্ষমতা আছে বলেই তুমি এখন আমার কথা শুনতে পাচ্ছো। আগে এসো, আমাকে বাঁচাও। আমি মুখ থুবড়ে কাঁদামাটিতে পড়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। তারপর আমরা অনেক কথা বলবো।
তুমি কোথায়? আমি তো তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না।
তোমার সামনে। ভালো করে লক্ষ্য করো, দেখতে পাবে।
অনামিকা সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা গোলাপ ফুল এখনো মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। তার শরীরে কাদামাটি লেগে আছে। সে বুঝতে পারলো এই গোলাপটিই এতক্ষণ তার সাথে কথা বলছিলো। সে দৌড়ে গিয়ে গোলাপগাছটি মাটি থেকে তুলে খুঁটি দিয়ে খাড়া করে দিলো। ফুলের শরীরের কাদামাটি ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলো।
ধন্যবাদ, বন্ধু- বললো গোলাপ ফুলটি। আমাকে সাহায্য করার জন্য তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
অনামিকা ফুলটিকে গভীর মমতায় বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমাকেও ধন্যবাদ, বন্ধু।
তারপর থেকে অনামিকা স্কুল থেকে এসেই বিকেল ফুলদের সাথে খেলা করে। গল্প করে। হাসে। বাগানের ফুলগুলি হয়ে ওঠে তার প্রিয় বন্ধু।

Share.

মন্তব্য করুন