বহুদিন পর গ্রামে এসেছি। ভোরের সালাত আদায় করে রাস্তার পাশের শিউলি গাছটার নিচে রইলাম। শিশিরসিক্ত শিউলিগুলো মোহাচ্ছন্ন করে দিলো আমার মন। হৃদয় কাড়া ঘ্রাণে ম-ম করে উঠলো চারদিক। ভোরের স্নিগ্ধ সুষম হাওয়ায় এমন শিশিরে ভেজা শিউলির পাপড়ি ছুঁয়ে দিতে কার মন না চায়! আমি আলতো করে ছুঁয়ে শিউলির গায়ে। এক অদৃশ্য কোমলতা যেনো আমাকে জড়িয়ে ধরে। বিষাদে ছাওয়া মন নিমেষেই প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। নীল পাঞ্জাবির বুকপকেটে কিছু শিউলি ফুল ভরে নিলাম। কাঁচা আতরের সুবাসের মতো তার স্নিগ্ধ সুবাস যেনো বারবার নিতে পারি। মোহগ্রস্ত এমন সময় ছেড়ে পা বাড়ালাম বাড়ির উঠোনে। ততক্ষণে সূর্যমামা তার তেজ ঢেলে দিচ্ছে পৃথিবীর গায়ে। হেলেঞ্চা শাকের পাতায় পাতায় জমে থাকা শিশিরকণাগুলো ঝরে গেছে। কুয়াশায় ভেজা জবুথবু গ্রাম আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠবে এখন। গ্রামের এমন রঙময় দৃশ্য মোহগ্রস্ত করে। এক অন্যরকম মোহমায়ায় জড়িয়ে রাখে। এজন্য মানুষ আজন্মকাল ধরে গ্রাম ভালোবাসে।

গ্রামে এসেছি দুই দিন হলো। অলস সময় কেটে যাচ্ছে একেবারে। দুচোখে ঘুমের ভীষণ চাপ। অন্যদিকে লেখা তৈরির নিঃশব্দ তাড়া। শিথানে ফেলে রাখা উস্তাদ শরীফ মুহাম্মদের স্মৃতিগদ্যের বই ‘স্মৃতির শ্লেট’। কিছু অংশ পড়তেই হৃদয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি ঢেউ খেলে যায়। কী এক বিষণœ প্রস্ফুরিত সময় কাটছে আমার! নৈঃশব্দ্য আঁধারের মতো যেনো ছেয়ে যাচ্ছে জীবন। আলো-আঁধারির দোলাচালে হেসে যায় স্বপ্ন। নিঃসঙ্গতায় বেঁধে রাখি বন্ধুত্ব। সন্ধি করে রাখি একাকিত্বের সাথে। একাকিত্ব আমার কাছে খুব প্রিয়। যখন খুব বেশি বিষাদে নীল হয়ে যায় কিংবা বিভীষণ বেদনায় কুঁকড়ে যাই তখন একাকিত্বের আশ্রয় গ্রহণ করি। যাবতীয় উদ্বেগ, মনখারাপী ভুলে যাই। একাকিত্বই তখন আমাকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করে। সবকিছু ভুলে যেতে। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেবে আজন্ম গরমিল। একাকী জীবনে হেঁটে যাই যখন একবুক হাহাকার আর বিষণœতা নিয়ে তখন একাকিত্বের কোলে ঢলে পড়ে আমার যাপিত জীবনের দীর্ঘশ্বাস। অজস্র বিষাদ যখন উতলে উঠে টগবগিয়ে তখনও আমি একাকিত্বের কোলে মাথা গুঁজে রাখি। তাই হৃদয়ের সব আবেগ দিয়ে বলে, একাকিত্ব আমার সহোদর বোন।

Share.

মন্তব্য করুন