প্রযুক্তি সম্পর্কে আমাদের কত কিছুই না জানতে ইচ্ছে করে। এই ধরো ক্যালকুলেটর। কিভাবে খুব দ্রুত ও নিখুঁত হিসেব করে দেয়? একটি বাটন চাপলেই কম্পিউটারে খুলে যায় পৃথিবী! সফ্টওয়্যার কীভাবে একটি রোবটকে মানুষের মতো করে কাজ করাতে পারে? এমন কতই না প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খায়। এসব বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। জানতে হলে পড়তে হবে। না হয় পুরো পৃথিবী থেকে যাবে অজানা।
বন্ধুরা অও (AI) প্রযুক্তি সম্পর্কে নিশ্চয় তোমরা কিছু না কিছু শুনেছ। একটি মেশিন মানুষের মতোই নানান কাজ করছে। দু’ একটা উদাহরণ দিলে সহজে বুঝবে। মনে করো ফেসবুকে তোমার এক চায়না বন্ধু আছে। সে একটা পোস্ট করলো চায়না ভাষায়। কিন্তু চায়না ভাষা তো তোমার জানা নেই। তাহলে তুমি কি করে বুঝবে তোমার বন্ধুর মনের কথা? সেটি বুঝার সহজ উপায় হলো পোস্টের নীচে Sea translation লেখা আছে। সেখানে ক্লিক করার নিমিষেই তার পোস্টটি বাংলা হয়ে যাবে। এমনকি তোমাকে লাইক, কমেন্টস কে বা কারা করছে তা মুহূর্তেই জেনে যাচ্ছ। এসবই জানিয়ে দিচ্ছে এআই। আরও অবাক করা খবর হলো এআই এখন মানুষের মত করে টিভিতে খবর পড়ে। বাংলাদেশেও সেটি সম্ভব হয়েছে। তোমরা হয়তো জেনেছ বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি Channel-24-এ দেখা গেছে এআইকে খবর পড়তে। নারীর কণ্ঠে খবরা পড়া সেই এআই রোবটটির নাম হলো অপরাজিতা।

AI-কি?
A- মানে হলো Artificial, যার অর্থ নকল। Intelligence- অর্থ বুদ্ধি বা জ্ঞান। সুতরাং rtificial Intelligence-এর পূর্ণ বাংলা অর্থ হলো নকল বুদ্ধিমত্তা বা নকল বুদ্ধিময়। একটি রোবটের মধ্যে একধরনের সফ্টওয়্যার বসানোর পর রোবটটি চিন্তা করার ক্ষমতা, বোঝার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা লাভ করে। এই সফ্টওয়্যারটিকে বলা হয় চ্যাটজিপিটি বা চ্যাটবট।
এখন প্রশ্ন হতে পারে চ্যাটজিপিটি বা চ্যাটবট কি? হ্যাঁ বন্ধুরা, চ্যাটজিপিটি হলো একটি ভাষা মডেল। এই ভাষা মডেলটি কাজ করে নিউরাল নেটওয়ার্ক ইনপুট টেক্সট কোডিং-এর মাধ্যমে। মনে আছে তো উপরে বলেছিলাম কীভাবে চায়না বুঝেছ। মূলত এই ভাষা মডেল বা চ্যাটজিপিটি রোবটের মাঝে বসানো বা ইনস্টল করার পরই কিন্তু এটি সম্ভব হয়েছে। আর এই ভাষা মডেল বা চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে একটি রোবটকে মানুষের মত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যে ভাষায় তাকে ব্যবহার করা হবে। তবেই না সে রোবটটি মানুষের মতো করে কাজ করতে পারে। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ এআই অপরাজিতার খবর পড়ার বিষয়টি সম্ভব হয়েছে মূলত চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে।

বাংলাদেশের আগে যেসব দেশে এআই ব্যবহৃত হয়েছে-
এআই প্রথম সফলভাবে ব্যবহার করে চায়নারা। ২০১৮ সালে চীনের শিনহুয়া এজেন্সি এআই দিয়ে টিভিতে প্রথম খবর পড়ায়। ২০২১ সালে চীনের আরও দুটি টেলিভিশন এআই দিয়ে খবর পড়ায়। অই বছর কোরিয়াও তাদের টিভিতে নিয়ে আসে এআই। ২০২৩ সালে এসে এআই টিভিতে এর ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, গ্রিস, কুয়েত এবং ভারতের টিভি পর্দাতেও এআই খবর পড়ে।

এআই সম্পর্কে প্রথম ধারণা ও এর জনক-
যন্ত্রকে বুদ্ধি বা জ্ঞান দিয়ে কাজ করানোর প্রথম শুরু হয় আমেরিকায়। ১৯৫৬ সালে বিজ্ঞানী জন ম্যাকার্থি “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত ডার্টমাউথ সামার রিসার্চ প্রজেক্ট” নামে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ কাজে যারা আগ্রহী শুধুমাত্র তারাই অংশগ্রহণ করতে পেরেছে। ম্যাকার্থির সাথে তখন যোগ দেন অ্যালেন নিউয়েল, হারবার্ট সিমন, জন ম্যাকার্থি, মার্ভিন মিনস্কি এবং আর্থার স্যামুয়েল। ম্যাকার্থি ও তার ছাত্ররা মিলে তখন একটা প্রোগ্রাম তৈরি করে। যাতে বীজগণিতের সমাধান ও যুক্তিগত তত্ত্ব প্রমান করতে পেরেছে। এমনকি তাদের আবিষ্কৃত এআই ইংরেজিতে কথা বলতেও সক্ষম হয়েছিল। সেসময় হারবার্ট সিমন বড় গলায় বলেছিলেন, “মেশিন বিশ বছরের মধ্যে একজন মানুষ যা করতে পারে তা করতে সক্ষম হবে”। অবশ্য তারা এআই এর কাজের কিছু অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাই বলে এআই গবেষণা থেমে থাকেনি। নানা সময়ে সফলতাও ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত এআই বিজয় লাভ করেছে। আর এ বিজয়ের প্রথম চিন্তার মানুষ জন ম্যাকার্থিকেই ‘এআই জনক’ খেতাব দেয়া হয়।

Share.

মন্তব্য করুন