সমুদ্রে বক্সফিশ নামের এক প্রকার মাছ বসবাস করে। মাছটা আকারে বেশি বড় না হলেও বড় মাছরা এদের ভয়ে তাদের গিলে ফেলার সাহস করে না। ভুল করে এদের হাঙরে যদি খেয়ে ফেলে হাঙরের পেট চিরে এরা বেরিয়ে আসে। তার মানে হাঙরের কাম সারা। আমাজান নদীতে বসবাসকারী ছুরি মাছ দেখতে ছুরির মতোই। এদের দু’পাশে কিংবা সামনে পিছে কোনো ডানা নেই। এরা ৮ ইঞ্চি লম্বাটে হয়ে থাকে। এদের কোনো লেজ নেই। নীল তিমির ওজন ১৫০ টন পর্যন্ত হতে পারে। বড় একটা নীল তিমির ওজন সমান ২,২০০ জন মানুষের ওজনের অথবা ৩০টা হাতি বা ৩৩০টা গরুর ওজনের সমান।
ইন্দোনেশিয়ার বান্দ্রা দ্বীপে এক ধরনের মাছের মাথার হেডলাইট রয়েছে। পানিতে চলার সময় হেডলাইট থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ে। এ্যাংলার ফিশ মানুষের মতো হাঁটতে পারে। জেলি ফিশ নামক মাছের কোনো হৃৎপিণ্ড মগজ এবং চোখ থাকে না। মাছেরাও পানির নিচে বাসা বানায়। কোনো কোনো মাছ গর্ত খুঁড়ে বাসা তৈরি করে, আবার কোনো কোনো মাছ গর্তই শুধু খোঁড়ে না, সেখানে জলজ উদ্ভিদ এনে জড়ো করে বাসাকে অতি মনোরম করে তোলে। যেমন: সিয়ামিস ফাইটিংফিশ। এ মাছ সাধারণত মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করে থাকে। অ্যাকুরিয়ামের মাছ হিসেবেও এদের পরিচিতি রয়েছে। উত্তর আমেরিকার দূষণ মুক্ত নদীসমূহে এক ধরনের মাছ রয়েছে মামিগশ নামক এ মাছের দেহ ৩ ইঞ্চি সাইজের। এ মাছগুলো নোংরা পানি থেকে পরিষ্কার পানিতে সরিয়ে আনলে মৃত্যুবরণ করে। সমুদ্রে কড মাছ নামে এক ধরনের মাছ রয়েছে। এই মাছ একবারে ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ ডিম পেড়ে থাকে। আটলান্টিক মহাসাগরের তীর ঘেঁষা নিউ ইয়র্ক ও ব্রাজিল উপকূলের অগভীর জলে সি হর্স বা সামুদ্রিক ঘোড়া নামের এক প্রজাতির মাছ বসবাস করে।

অস্ট্রেলিয়ার তাসমেনিয়া সাগর উপকূলেও এ মাছ দেখা যায়। সবচেয়ে বড় আকৃতির সি হর্স মাছ এখানেই পাওয়া যায়। এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘হিপ্পো ক্যাম্পাস ইরেক্টাস’। নামের ক্ষেত্রে এ মাছ যেমন চমকপ্রদ, দেখতেও এরা তেমনি নজর কাড়া। মাথাটা দেখতে একদম ঘোড়ার মতো বৃত্তাকার ঢেউ তোলা টিনের মতো সাজানো এদের শরীর। দেহে বা লেজে পাখনা নেই। দেহের রঙ লাল খয়েরিতে মেশানো। দৈর্ঘ্য ৬ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে। এরা লম্বা লেজের সাহায্যে সাগর জলে চলাফেরা করে। এক প্রকার মাছের নাম ড্রামিফিশ। এদের দাঁতের কড়মড় শব্দ অবিকল গানের মতো শোনা যায়। তাই বলা হয়, ড্রামিফিস মানুষের মতো গান গাইতে পারে। ক্রোকার জাতীয় মাছ পেটের পেশি ব্যবহার করে অদ্ভুত শব্দ তুলতে পারে। সমুদ্রে বসবাসকারী টুনা মাছ ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার বেগে পথ চলতে পারে। সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক সামুদ্রিক মাছের নাম ইলেকট্রিক ঈল। এদের শরীরে ৪০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ উৎপাদিত থাকে। এই বিদ্যুতের আঘাত পেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে।
গহিন সাগরে যত প্রকার অদ্ভুত মাছ রয়েছে সে সবের মধ্যে ফ্রগ-ফিশ অন্যতম। এ মাছ নানা ধরনের রূপ ধারণ করতে পারে। এরা কখনো পাথরের মতো, কখনো ঝাউওয়ালা শ্যাওলার মতো, কখনো বালির ঢিবির মতো, আবার কখানো অন্য কোনো মাছের মতো বেশ ধারণ করতে পারে। বিচিত্র রূপ ধারণ করতে সক্ষম বিধায় ফ্রগ ফিশকে ‘ছদ্মবেশী মাছদের রাজা’ বলা হয়।
ইলিশ মাছ এক সঙ্গে কতটা ডিম পাড়ে শুনলে হতভম্ব হতে হয়। ইলিশ মাছ একবারে ১৫ লক্ষ ডিমের জন্ম দেয়। সমুদ্রে বসবাসকারী কুড়াল মাছের দু পাশে সবুজ আর বেগুনি রঙের আলো জ্বলে। ডলফিন আর তিমি মাছের শব্দ শোনার জন্য কোনো কান নেই। ওরা নিচের চোয়াল এবং কপালের হাড় দিয়ে শব্দ বার্তা অনুভব করে। সামুদ্রিক মাছ চিকলিড ফুলকা ফাঁপিয়ে সাগরের অন্য প্রাণীদের ভয় প্রদর্শন করে থাকে। কোনো কোনো চিকলিড উজ্জ্বল বর্ণ ছড়িয়েও ভীতির সঞ্চার ঘটিয়ে চলে।

৩২ বছর বয়সী ব্রিটিশ মাছশিকারি রুক স্পেনের বার্সেলোনার এবরো নদী থেকে ৭ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা ও ৯৬ কেজি ওজনের একটা মাগুর ধরেছিলেন। বড়শি দিয়ে তিনি এ মাছটা ধরেন। ধারণা করা হচ্ছে এটাই পৃথিবীতে মিঠা পানিতে বাস করা সবচেয়ে বড় মাছ। মাছটা যাতে আরো বড় হয়, এ কথা বিবেচনা করে একই নদীতে মাছটাকে আবার ছেড়েও দেয়া হয়েছে।
সামুদ্রিক ক্যাট ফিশ বিচিত্র ক্ষমতার অধিকারী। এরা শরীরের যে কোনো অংশ দিয়ে খাদ্যের স্বাদ অনুভব করতে পারে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ায় সুমাত্রা দ্বীপে আবিষ্কৃত কার্প গোত্রের মাত্র ৭.৯ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য মাছটাকেই বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সব থেকে ছোট মাছ। অ্যাংগ্লার ফিশের দৈর্ঘ্য ৭ মিলিমিটার হলেও ওটা কিন্তু মাছ নয়, মাছ আকৃতির পরজীবী প্রাণী। ওয়াশিংটনের একটা মৎস্য হ্যাচারি হতে ২০০৫ সালে ২.৯ ইঞ্চি মাপের ১টা মাছকে নদীতে ছেড়ে দেয়া হয়। মাছটার শরীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয় একটা ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক ট্যাগ। মাছটাকে শনাক্ত করা এবং কতদূর পথ অতিক্রম করে ইত্যাদি জানার জন্য ট্যাগ দেয়া হয়। দীর্ঘ আড়াই বছর পরে ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসে নিউজিল্যান্ডের দক্ষিণে বিগমাগ দ্বীপে মাছটা ধরা পড়ে। ইলেকট্রনিক ট্যাগ দেখে মাছটাকে চেনা যায় এবং ট্যাগে ভেসে উঠতে দেখা যায়। মাছটা ধরা পড়ার আগ পর্যন্ত মোট ৭,৭০০ মাইল পথ অতিক্রম করেছে।
আমাদের অতি পরিচিত দানব তিমি মাছ তাদের বাচ্চাদের দুধ পান করায়। সাগরে সূর্যমাছ নামক এক রকমের মাছ রয়েছে। এ মাছের একেকটা মাছ একবারে ৩০ কোটি ডিম পাড়ে। এক প্রকার খুবই বিষাক্ত প্রাণীর নাম কাঁকড়া বিছে মাছ। লম্বা ও ধারালো হুলের মাধ্যমে এরা শত্রুর শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয়। এদের অনেকগুলো নাম রয়েছে। যেমন: জেব্রা মাছ, ড্রাগন মাছ, আগুন মাছ, সিংহ মাছ, শয়তান মাছ, টার্কি মাছ, পালক মাছ ইত্যাদি।
‘হানকো’ নামের জাপানি কৈ কার্প জাতের একটা মাছ মারা যায় ১৯৭৭ সালে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২২৬ বছর। ধারণা করা হয় ‘হানকো’র জন্ম মার্কিন বিপ্লবেরও আগে, ১৭৫১ সালে। জাপানি কৈ কার্প জাতের গড় আয়ু ৪০ বছর। ২২৬ বছর পৃথিবীতে টিকে থেকে ‘হানকো’ এমন এক রেকর্ড গড়েছে যে অন্য কোনো মাছ এটা ভাঙতে পারবে কিনা সন্দেহ।
বৈজ্ঞানিক নাম সেরা স্যালমান ন্যাটেরেরি। সাধারণ মানুষ চেনে আরেকটা নামে পিরানহা। হিংস্রতা আর ভয়ঙ্করতার দিক থেকে পিরানহা নামে দক্ষিণ আমেরিকার এই মাছ বিশ্বজুড়ে এখন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ব্রাজিলের ম্যানাউ শহর থেকে ১২৫ মাইল দূরে ফেরি করে উরুবু নদী পর হয়ে যাচ্ছিল যাত্রী বোঝাই একটা বাস। নদীটাতে সব সময় গিজ গিজ করতো রাক্ষুসে ভয়ঙ্কর পিরানহা মাছ। দুর্ঘটনায় অকস্মাৎ ফেরি থেকে নদীতে পড়ে যায় বাসটা, আর রক্ষে নেই। দু’ঘণ্টা পর যখন ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকর্মীরা বাসটিকে তুলতে সক্ষম হয় অকস্মাৎ চমকে উঠে সবাই, অজ¯্র কঙ্কালের স্তূপ পড়ে আছে সবার। তাই পিরানহা হাঙরের চেয়ে ভয়ানক বিপজ্জনক প্রাণী। দুর্ঘটনায় নিহত ৩৮ জন যাত্রীর শুধু হাড়গুলো ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট ছিল না তাদের দেহে।

Share.

মন্তব্য করুন