কত কিছু জানার জন্য মন আকু পাকু করে। মাছরাঙা পাখিটা পুকুরের তির তির করা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে যখন মাছ ধরে খায় সে ছোঁ মারার দৃশ্যটা কল্পনা কর একবার। কী যে ভালো লাগে! মহাশূন্যে থাকা ফ্লাইং সসারও এ রকম নাকি হঠাৎ করে কাউকে জানান না দিয়ে এসে পড়ে পৃথিবীতে। আজ তার কথাই বলবো। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষ মাথা খাটিয়ে বের করেছে কিছু। জানা যাচ্ছে কত মজার মজার বিষয়। ফ্লাইং সসার আর এলিয়েনের বিষয়েও জানা যাচ্ছে অনেক কিছু। এলিয়েন হচ্ছে ভিন গ্রহের মানুষ। তারা নাকি মাঝে মাঝে হানা দেয় আমাদের গ্রহে। এ বিশাল সৌর জগতে পৃথিবী ছোট একটা গ্রহ মাত্র। আশপাশে আছে আরো গ্রহ উপগ্রহ। উলকা আর গ্রহাণু ঘুরছে আপন পথে বা কক্ষপথে। কখনো ছিটকে পড়ছে পৃথিবীতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর বাইরেও প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে এবং সেই ভিনগ্রহীরাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মরিয়া…। আমরা যে রকম তাদের বিষয়ে জানতে চাই আর কি। এরকম ধারণা সায়েন্স ফিকশন বা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে এবং ছায়াছবির মাধ্যমে আমাদের মাথার মধ্যে গেঁথে বসেছে। কিন্তু যতই কল্প হোক, কিছুটা তো বিজ্ঞানও বটে! তাই বিশ্ব জুড়ে এই ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণাতে ব্যস্ত অনেক বিজ্ঞানী। ‘আনআইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট’ অর্থাৎ অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু-সংক্ষেপে ইউএফও সে রকমই একটা কিছু। অনেকে বলেন ফ্লাইং সসার। দেখতে বিচিত্র আকারের নভোযানের মতো। অতি দ্রুতগতিতে উড়ে আসে। হঠাৎ আবার অদৃশ্য হয়ে যায়, যেমনটা বলছিলাম। এসব নিয়ে অনেক সাহিত্য, চলচ্চিত্র, টিভি সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।
কিন্তু ভিনগ্রহীদের বিমান যে একটা চাকতির মতো দেখতে, সেটা একটু হেলে কোনাকুনি ভাবে পাড়ি দেয় আকাশ থেকে মহাশূন্যে, যার জন্য তার নামই হয়ে গিয়েছে ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত চাকতি, তা কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীরা জানাননি। জানিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। আর ব্যাপারটা নাকি ছিল নিছক তাঁর বোঝার ভুল। যাই হোক সে থেকে মানুষের এ বিষয়ে জানার আগ্রহের সূচনা।

ইতিহাস কী বলছে?
ডিস্ক-আকৃতির উড়ন্ত বস্তুগুলো মধ্যযুগ থেকে বিক্ষিপ্তভাবে রেকর্ড করা হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উইকিপিডিয়া বলছে : “২৫ জানুয়ারি, ১৮৭৮-এ, ডেনিসন ডেইলি নিউজ একটি নিবন্ধ ছাপিয়েছিল যেখানে স্থানীয় কৃষক জন মার্টিন একটি বড় অন্ধকার বৃত্তাকার বস্তুকে ‘বিস্ময়কর গতিতে’ বেলুনের মতো উড়তে দেখেছিলেন। সংবাদপত্রের বিবরণ অনুসারে মার্টিন বলেছিলেন যে এটি তার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সসারের আকারের বলে মনে হচ্ছে। এই প্রথম ‘সসার শব্দের প্রথম ব্যবহার হয়। যা পরে ইউএফও নামেও কথিত হয়েছে। ফ্লাইং সসার শব্দের আরো একটি নথিভুক্ত ব্যবহার দেখা যায় ১৯৩০ সালে। একে একটি সম্ভাব্য উলকা বলা হয়েছিল যা ১৭ জুন, ১৯৩০ এ আমেরিকার টেক্সাস এবং ওকলাহোমার ওপর পড়েছিল। অদ্ভুত আলো দেখেছেন এমন কেউ কেউ একে একটি বিশাল ধূমকেতু হিসেবে বর্ণনা করেছেন, একটি জ্বলন্ত ফ্লাইং সসার বলেছেন। এটি ছিল একটি দুর্দান্ত লাল আভা, আগুনের বল। ‘ফ্লাইং সসার’ শব্দটি ১৮৯০ সাল থেকে একটি মাটির পায়রার শ্যুটিং টার্গেটকে বুঝাতে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা একটি ক্লাসিক ইউএফও আকৃতির অনুরূপ। – কেনেথ আর্নল্ড ২৪ জুন, ১৯৪৭-এ রকম কিছু দেখেছিলেন বলে বেশ প্রচার রয়েছে। যার ফলে মার্কিন সংবাদপত্রগুলো এটিকে ফ্লাইং সসার নামে আখ্যায়িত করে এবং এরপর বিষয়টি বা শব্দটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও আর্নল্ড কখনই নির্দিষ্টভাবে ফ্লাইং সসার শব্দটি ব্যবহার করেননি, সে সময় তাকে উদ্ধৃত করা হয়েছিল যে তিনি যে বস্তুগুলো দেখেছিলেন তার আকৃতি ‘সসার’, ‘ডিস্ক’ বা ‘পাই-প্লেট’ এর মতো ছিল। বেশ কয়েক বছর পরে তিনি আরো বলেন যে ‘বস্তুগুলো পানির উপর দিয়ে সসারের মতো সরে যায়। ফ্লাইং সসার এবং ফ্লাইং ডিস্ক উভয় শব্দই ১৯৫০ এর দশকের গোড়ার দিকে মিডিয়াতে সাধারণভাবে বা কমন শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।’
বলছিলাম কেনেথের কথা। এ বিষয়ে আরো কিছু বলতে হয়। এ উড়ন্ত চাকতির দেখা না কি প্রথম পেয়েছিলেন কেনেথ আর্নল্ড। আমেরিকার আইডাহো শহরের বাসিন্দা এই ব্যবসায়ী ছিলেন এক শখের বিমানচালকও। ১৯৪৭ সালের ২৪ জুন তিনি তাঁর বিমানে করে চষে বেড়াচ্ছিলেন আমেরিকার মাউন্ট রেনিয়ার অঞ্চল। এমন সময়েই পথে হলো দেখা! আকাশপথেই দেখলেন আর্নল্ড- এক অদ্ভুত তীক্ষè আলো কিছু একটা থেকে ছিটকে এসে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। ভালো করে এদিক, ওদিক তাকানোর পর টের পেলেন, আলোটা আসছে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে থাকা এক ঝাঁক বিমান থেকে। এমনটা এর আগে কেউ দেখেনি তো বটেই, আওয়াজটাও প্রথম শুনলেন আর্নল্ড-ই! ওরিগনোর পেন্ডলটনের এক এয়ার শো-তে পৌঁছেই এই অদেখা বিমান নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন আর্নল্ড। কথা ছড়িয়ে পড়ল মুখে মুখে। ২৫ জুন এক বৈঠকে সাংবাদিকদের জেরার মুখে পড়তে হলো ভদ্রলোককে। সেই সাংবাদিক বৈঠকেই ওই বিমানের ওড়ার ভঙ্গি নিয়ে বলেছিলেন আর্নল্ড- অনেকটা যেন পানির উপরে ছেড়ে দেওয়া চাকতি! এই কথাটাই বুঝতে ভুল হয়েছিল ইউনাইটেড প্রেসের সাংবাদিক বিল বিকোয়েটের। দফতরে এসে সরাসরি তিনি লিখে দিলেন আর্নল্ডের উড়ন্ত চাকতি দেখার কথা!
মজার ব্যাপার, ভুল কিছু লিখলে সম্পাদকরা সাংবাদিককে প্রশ্ন করে থাকেন ও সত্যাসত্য নির্ণয় করে থাকেন আর ভুল প্রমাণ হলে সংশোধনী দেন। হয়তো কাজ হারান সেই সাংবাদিক। কিন্তু এর দিন কয়েক পরেই যখন ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের এক কর্মীও জানালেন যে তিনি আকাশে এমন নয়টির মতো উড়ন্ত চাকতি দেখেছেন, তখন লোকের মুখে মুখে ফ্লাইং সসার নামটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠল! কে জানে, আসলে ভিনগ্রহীদের বিমান ঠিক কেমন দেখতে!
ফ্লাইং সসার বিষয়ে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলছে: Flying Saucer : A flying object that people say they have seen in the sky, that is usually round like a saucer or disc, and that is believed by some people to be a spaceship from another world.
উইকিপিডিয়া বলছে :  flying saucer (also referred to as “A flying disc”) is a descriptive term for a type of flying craft having a disc or saucer-shaped body, commonly used generically to refer to an anomalous flying object. The term was coined in 1947[2] but has generally been supplanted since 1952 by the United States Air Force term unidentified flying objects (or UFOs for short).

১৯৪৭ সালে কী ঘটেছিল?
এই ঘটনাটাও ১৯৪৭ সালের। কেনেথের দেখার এক মাস পরের ঘটনা। স্থান আমেরিকার নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল। হঠাৎ প্রচণ্ড বেগে গোল চাকতির মতো একটি বস্তু আকাশ থেকে সেখানে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ল। সেই জায়গাটির প্রচুর মানুষ সেই দৃশ্য নিজ চোখে দেখেছে। সবাই ছুটে গেল সেখানে। কিন্তু আগুনের প্রচণ্ড তাপ ফুলকির মতো বের হওয়ার কারণে কাছে ঘেঁষতে পারছিল না কেউ। কিছুক্ষণ বাদেই সেনাবাহিনীর একটি বিরাট দল এসে জায়গাটি ঘিরে ফেলল। আর্মির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শুধু সাংবাদিকদের জানিয়ে গেলেন, বিরাট চাকতির মতো একটি বস্তু আকাশ থেকে পড়েছে। যেন কোনো আকাশযান। বাকিটা পরে জানতে পারবেন।
পরদিন সব পেপারেও এর খবর ছাপা হলো। সবার মনে এন্তার প্রশ্ন। তাহলে কি এটা ইউএফও? এলিয়েনরা তাহলে আসলেই পৃথিবীতে চলে এসেছে! কিন্তু কয়েক ঘণ্টা বাদেই শুরু হলো সরকারের ধোঁকাবাজি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় তারা নতুন করে গল্প ফাঁদতে লাগল। একবার বলল এটা আর্মিদেরই নতুন আকাশযান আবার পরে বলল এটা নাকি উল্কাপিণ্ড! বিষয়টা আসলে কী সেই সত্য আর কখনও জানানো হয়নি।
রসওয়েলের ঘটনার আরো বিবরণ মেলে এভাবে। ঘটনাটি ঘটেছিলো রসওয়েল (নিউ মেক্সিকো, আমেরিকা) শহরে, ৮ জুলাই ১৯৪৭এ। রসওয়েলের মরুভূমিতে একটি অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর (টঋঙ) ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এবং সরকার এই ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানায় যে, এগুলো একটি পরীক্ষামূলক বস্তুর ধ্বংসাবশেষ এবং একে উচ্চ সতর্ককারী বেলুন বলা হয়। এই প্রোগ্রামটি “মুগুল” নামকরণ করা হয়েছিলো। সেখানে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিলো তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেক ইউএফও বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ জনগণ মনে করেন যে, এটি একটি ভিনগ্রহী মহাশূন্যযান যা এখানে ধ্বংস হবার পরে এর পাইলটের (এলিয়েন) দেহ পুনরুদ্ধার করে সামরিক বাহিনী তা লুকিয়ে ফেলেছে। উইএফওর ঘটনাটি একটি কিংবদন্তি হয়ে যায় এবং রসওয়েল নাম পরিবর্তন হয়ে একে ইউএফও রসওয়েল বলা হয়। ভিনগ্রহী প্রাণী ধরার ব্যাপারটা তখন মিডিয়া এবং গবেষকদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো।

আর কোথায় দেখা গেল ইউএফও? তবে আসল কউ?
এটা আয়ারল্যান্ডের ঘটনা। হঠাৎ দিনের বেলা দেখা গেল জিনিসটা। আকাশে নয়, রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে একটি উড়ন্ত সসার! না না, কোনো বিজ্ঞান কল্পকাহিনী নয়, একদমই বাস্তব। এক শনিবারের ঘটনা। আয়ারল্যান্ডের গোরি শহরের ছেলে-বুড়ো সবাই দেখলেন, তাদের চোখের সামনে রাস্তা দিয়ে অল্প গতিতে উড়ে চলেছে একটি রূপালি চাকতি। আর এটিকে পেছন পেছন ধাওয়া করছে পুলিশের একটি গাড়ি। ২ ডিসেম্বর ২০১৬ খবরটি বাংলাদেশের একটি অনলাইন পত্রিকাসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ পায়।
স্কাইনিউজ লিখেছে- Onlookers in an Irish town found themselves rubbing their eyes on Saturday after witnessing a police car chasing down a flying saucer through the streets. সসারটি প্রথমে শহরের একটি পার্কের ওপর স্থির হয়। এরপর উড়তে উড়তে এটি বাচ্চাদের খেলার মাঠের ওপরে গিয়ে থামে। তারপর চক্কর খেতে খেতে উড়ে চলতে থাকে সামনের দিকে। শেষমেশ নেমে আসে শহরের ব্যস্ত সড়কে। স্কাই নিউজের শিরোনাম, Low-speed pursuit as police chase flying saucer.
পরে উৎসুক মানুষ জানতে পারলেন, এটি ভিনগ্রহ থেকে উড়ে আসা কোনো সসার বা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু নয়। বরং, এটি মানুষের হাতে তৈরি একটি আর্ট পিস মাত্র। যদিও কল্পকাহিনীতে বর্ণিত সসারের আদলেই বানানো হয়েছে এটি। আর ড্রোনের মতো ওড়ার জন্য এতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে ইঞ্জিন। ব্যস! রহস্য এটুকুই। সসারটি তৈরি করেছেন আলি কামাল আলি নামের স্থানীয় একজন কারু ও চারুশিল্পী। একটি আর্ট ফেস্টিভ্যালকে সামনে রেখে তিনি তৈরি করেছেন এই আর্ট পিস। আলি কামাল মজা করে আগে-ভাগেই পুলিশকে রাজি করিয়েছিলেন, যেন তারা সসারের পেছনে ছোটার নিখুঁত অভিনয়টা করে। পুলিশও এটুকু অভিনয়ের মাধ্যমে লোকজনকে আনন্দ দিতে রাজি হয়।

সত্যি কি ভিনগ্রহের যান পৃথিবীতে আসে?
অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু-সংক্ষেপে ইউএফও নিয়ে ধারণা করা হয়, এগুলো মহাকাশ থেকে আসা কোনো অজ্ঞাত বুদ্ধিমান প্রাণীর মহাকাশযান। বহুকাল আগে থেকেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় এমন অবাক বস্তু দেখার খবর পাওয়া যায়। বৈমানিক থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষ পর্যন্ত রহস্যময় এই উড়ন্ত যান নিজ চোখে দেখার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু অনেকেই তাদের বর্ণনা বিশ্বাস করেন না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এলিয়েন বা কথিত ভিনগ্রহের প্রাণীদের ব্যাপারে তিনি যা জানেন তা তিনি তার পরিবারের কাছেও প্রকাশ করবেন না। আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. বারাক ওবামা বলেন, যেটা সত্যি তা হলো, আমি সিরিয়াসভাবেই বলছি যে আকাশে উড়ন্ত কিছু বস্তুর ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কী? তা আমরা জানি না। আমরা ব্যাখ্যা করতে পারছি না যে কিভাবে এগুলো ওড়ে? তাই এগুলো কী তা বের করার জন্য গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। প্রশ্ন উঠেছে সত্যি কি ইউএফও রয়েছে? বিষয়টা নিয়ে মানুষের মনে দোলাচল ও কৌতূহল রয়েছে এটা সত্যি কথা।

আরো কিছু ঘটনা
দৃশ্যপট-এক
আমেরিকার টেনিসি এলাকা। হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন বেসরকারি কোম্পানির মালিক জন উইনফিল্ড। সঙ্গে তার বন্ধু ডেভিড রথম্যান। রাত প্রায় ৯টা বাজে। রাস্তা একেবারে ফাঁকা। যতদূর চোখ যায় কোনো গাড়ি বা লোকজন নজরে পড়ে না। আকাশ পরিষ্কার। দুই বন্ধুতে গল্প করতে করতে প্যারিস (ফ্রান্সের প্যারিস নয়) শহর থেকে যাচ্ছেন ম্যাক কেনজি শহরের দিকে। হঠাৎ একটা জোরালো আলো এসে পড়ল গাড়ির উইন্ডশিল্ডে। চমকে উঠলেন দুই বন্ধু। এমন ফাঁকা জায়গায় আলো এলো কোত্থেকে! আলো লক্ষ করে একই সঙ্গে ওপরের দিকে দুজন তাকালেন। না, কোনো কিছু দেখা যায় না। রাস্তার ধারে গাড়ি থামিয়ে নেমে এলেন। এবার অবাক হওয়ার পালা। গাড়ির সোজা ওপরের দিকে চাকতির মতো একটা যান ভেসে রয়েছে আকাশে। তারই জানালা থেকে বেরিয়ে আসছে এই জোরালো আলো। ভিন গ্রহ থেকে আসা যান বা সসারের ছবি দেখতে যেমন, এও ঠিক তেমনি। গাড়ি থেকে খাড়া দেড়-দুইশ ফুট উঁচুতে এক জায়গায় স্থির হয়ে রয়েছে। চাপা গুনগুন আওয়াজ বেরোচ্ছে তা থেকে। ঘটনা সম্পর্কে জন উইনফিল্ড বলেন, মিনিট দেড়েক পর জোরালো আলোটা নিভে গিয়ে যানটার চারপাশে হালকা নীল আলো জ্বলে উঠল। তারপরই খানিকটা দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে চলে গেল পূর্ব দিকে। আমরা দুজন ফিরে এলাম গাড়িতে। তবে মিনিট দশেক আমাদের কারও মুখ থেকে কোনো কথা ফোটেনি। সেদিন ওই এলাকার অন্তত ছয় জায়গায় এই বস্তু দেখা যায় বলে আমরা পরদিন খবর পাই।

দৃশ্যপট-দুই
এক সকালে তুরস্কের আকাশে দেখা মেলে অদ্ভুত মেঘের। লাল-কমলা রঙের ওই মেঘ দেখে বোঝা মুশকিল আদৌ মেঘ নাকি অন্য কিছু, যা তৈরি করে দৃষ্টিবিভ্রম। অনেকের কাছে এটা ইউএফও তথা ভিনগ্রহের প্রাণীদের মহাকাশ যানের মতো দেখতে লাগে। তবে দেশটির আবহাওয়া দফতর জানায়, পাহাড়ের ওপর প্রবল বাতাসের কারণে তৈরি হয় এমন মেঘ। তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বুরসা থেকে এটা দৃষ্টিগোচর হয়। অনেক মানুষ মেঘের বিস্ময়কর এ গঠন দেখতে জড়ো হয়েছিলেন। অনেকে ছবি, সেলফি তুলেছেন। ভিডিও করেছেন। আর সেগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। অদ্ভুত রঙিন এই মেঘের ভিডিও এবং ছবি বিশ্বজুড়ে ভাইরাল হয়েছে। শত শত সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা একযোগে বলেন- মেঘটি দেখতে ইউএফওর মতো। তবে তুরস্কের স্টেট মেটিওরোলজিক্যাল সার্ভিস বলছে, বিরল ঘটনাটি কেবল একটি ‘লেন্টিকুলার ক্লাউড’। এ ধরনের মেঘ তাদের বাঁকা ও ফানেল আকৃতির চেহারার জন্য পরিচিত। ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ এর বিভিন্ন সংবাদপত্রে তুরস্কের এ খবরটি বেশ আলোড়ন তোলে। খবরে বলা হচ্ছে: গত বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্কের বুরসা শহরের আকাশে ধরা পড়েছে এক বিরল দৃশ্য। বড় গোলাকার মেঘপুঞ্জের মতো একটি বস্তু ঘুরে বেড়াচ্ছিল আকাশে। একঝলকে দেখলে মেঘের রাশি মনে হতে পারে। সেই বস্তু ওড়ার ছবি অনেকে শেয়ার করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একঝলকে দেখলে ওই মেঘের রাশিকে ‘আন-আইডেন্টিফায়েড ফ্লাইয়িং অবজেক্ট’ (ইউএফও) বলেই মনে হতে পারে। তুরস্কের আকাশে থাকা অদ্ভুত গোলাকার আকৃতির বস্তুটি মেঘ না অন্য কিছু, এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তুরস্কের আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি একটি বিরল ঘটনা, যা লেন্টিকুলার ক্লাউড (লেনসের মতো ডিম্বাকৃতির আকারের মেঘ) নামে পরিচিত। এটি এক ধরনের মেঘ। গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, লেন্টিকুলার মেঘগুলো বাঁকা, উড়ন্ত সসারের মতো চেহারার জন্য পরিচিত, যা দুই হাজার থেকে চার হাজার মিটার উচ্চতায় দেখা যায়। পরিবেশবিজ্ঞানীদের ভাষ্য, সাধারণত এ ধরনের মেঘ আকাশে দেখা গেলে পরের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে। আমেরিকার ফক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের মেঘ শীতকালে প্রায়ই দেখা যায়। বছরের অন্য সময়ে কম দেখা মেলে। বাতাস শান্ত ও আর্দ্র থাকলেই এমন মেঘ তৈরি হয়। সাধারণত পাহাড়ের দিক থেকে আর্দ্র ঠাণ্ডা বাতাস দ্রুতগতিতে এলেও এ ধরনের মেঘের সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি খুব কম জায়গাতেই হয়। তাই এটিকে বিরল দৃশ্য বলা যেতে পারে। ঝড় আসার ইঙ্গিতও দেয় এমন মেঘ। এ ধরনের মেঘ নানা আকারও ধারণ করে।
ভাইরাল ভিডিও ঘিরে হইচই হয়েছে। আর একটি পত্রিকা লিখেছে : ‘আকাশে কি ইউএফও? এ পৃথিবীতে উড়ে এসেছে ভিনগ্রহের প্রাণী? সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ঘিরে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
এই মেঘ কি নিজের সঙ্গে কোনও বার্তা বয়ে নিয়ে আসে? আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, সাধারণত এই ধরনের মেঘ আকাশে দেখা গেলে পরের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে। ঝোড়ো হাওয়া বওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়।

দৃশ্যপট-তিন
পাঁচ বছর আগে আয়ারল্যান্ডে দেখা মেলে ইউএফওর। একটি সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে ১৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে বলা হয় : ‘চার পাইলটের কেউ বলছেন ভয়ঙ্কর গতি। কেউ দেখেছেন, গোটা আকাশে তীব্র আলোর জ্যোতি ছড়িয়ে দিয়েছিল। কারও বক্তব্য, মুহূর্তে বিমানের বাঁ দিক থেকে ডান দিকে অদৃশ্য হয়ে গেল। কেউ বা বর্ণনা করার ভাষাই পাচ্ছেন না, কারণ এমন কোনও ‘যান’ বা ‘যন্ত্র’ কখনও দেখেননি।’
বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, অন্তত চারজন পাইলট ওই অঞ্চল দিয়ে বিমান ওড়ার সময় সেই অদ্ভুত বস্তু দেখেছেন। তাই ঘিরেই তোলপাড় চলছিল মুক্তোর দেশে। সরকারি তরফে বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবরও শুরু হয়। রহস্যভেদে উঠে পড়ে লাগেন বিজ্ঞানীরাও।
চারজন পাইলটের বক্তব্যে অন্তত দু’টি মিলও খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। প্রচণ্ড গতি এবং তীব্র আলোয় গোটা আকাশ আলোকিত। একটি বেসরকারি সংস্থার মন্ট্রিয়ল থেকে লন্ডনগামী এক বিমানের চালক বলেছেন, ‘‘প্রথমে আমাদের বিমানের বাঁ দিকে প্রচণ্ড আলোর ঝলকানি দেখলাম। মুহূর্তের মধ্যেই আবার অদৃশ্য হয়ে গেল।’’ অন্য এক পাইলট আবার বলেছেন, ‘‘সুপারসনিক বিমানের গতির চেয়েও বেশি ছিল গতি। আর আলো এতটাই জোরালো যে, ওরকম আলো দেখা যায়নি।’’
কোনও বস্তুর গতি শব্দের চেয়ে বেশি হলে তাকে বলা হয় সুপারসনিক গতি। মার্কিন সামরিক বাহিনীতে সর্বোচ্চ গতিবেগের যে যুদ্ধবিমান রয়েছে, তার গতি শব্দের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এক জন পাইলটের বক্তব্য, ওই যুদ্ধবিমানের চেয়েও বেশি ছিল গতি।
গতির কথা মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, কোনও সামরিক মহড়ার কারণে তীব্র আলো বা দ্রুতগামী যান দেখা যেতে পারে। তবে প্রাথমিক তদন্তে সেনার সঙ্গে কথা বলে সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড সরকার। কারও ধারণা, উল্কাপাতের কারণেও অনেক সময় তীব্র আলো দেখা যেতে পারে। তবে সাধারণত বায়ুমণ্ডলের এত নিচের স্তরে উল্কার আলো এত তীব্র থাকে না। তবে সম্ভাবনা এখনও বাতিল হয়নি। সব মিলিয়ে জল্পনা বেড়েই চলেছে। ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য।

গবেষকরা কী বলেন?
গবেষকরা বলেন, এমন ঘটনার নানা ঐতিহাসিক উৎস রয়েছে। যেহেতু অনেকেই দাবি করেন ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করে। তাদের দেখাও পাওয়া গেছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তারা ১৪০ বারের বেশি আকাশে ‘অস্বাভাবিক বস্তুর’ দেখা পাওয়ার দাবি করেছেন এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে এ ব্যাপারে জানিয়েছেন। তাদের দেখা বস্তুর মধ্যে রয়েছে বেলুনাকৃতির বিশাল একটি স্তম্ভ। তাই এটা অসম্ভব নয় যে, পৃথিবীর আদি বাসিন্দারাও ভিনগ্রহের প্রাণী দেখেছেন। তাই ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের প্রমাণ জোগাড়ে গবেষকরা এখন ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের প্রাণীর সন্ধান করছেন।
ইউএফও বা ফ্লাইং সসারের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া না গেলেও অনেক বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, মহাকাশ থেকে অজ্ঞাত বুদ্ধিমান প্রাণীরা মাঝে মধ্যেই তাদের নিজস্ব মহাকাশযান বা ইউএফও চড়ে পৃথিবীতে আসে। বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেন না। অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন, পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব মোটেও অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়।
পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের (এলিয়েনের) অস্তিত্ব রয়েছে কি না কিংবা থাকলেও সেগুলো পৃথিবীতে আসে কি না এ নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগন। মূলত মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা একাধিকবার ভিনগ্রহের প্রাণীদের যান- ইউএফও দেখা পাওয়ার দাবি করার পরই তদন্তে নামেন পেন্টাগনের গবেষক দল।
গবেষকরা বলেন, ইউএফও দেখতে পাওয়ার এসব খবর শতকরা ৯০ ভাগের কোনো ভিত্তি নেই। লোকজন আকাশে কোনো উজ্জ্বল তারা, বিমান, পাখি, বেলুন, ঘুড়ি, আতশবাজি, অদ্ভুত আকৃতির মেঘখণ্ড, উল্কা বা কৃত্রিম উপগ্রহ দেখে ইউএফও দেখেছে বলে রিপোর্ট করে। বাকি খবরেরও অধিকাংশ ধোঁকাবাজি। তবে তাদের সেসব দাবি যে একেবারে মিথ্যা, তা প্রমাণ করাও কঠিন কাজ। লোকজন সত্যি সত্যিই এমন কিছু দেখেছে কি না এবং তা আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য মার্কিন বিমান তদন্ত চালায়। বিমান বাহিনীর গবেষকরা সাধারণ লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া ইউএফও-সংক্রান্ত মোট ১২ হাজার ৬১৮টি রিপোর্টের একটি তালিকা করে এবং এর মধ্যে ৭০১টি ঘটনাকে রহস্যজনক বা ব্যাখ্যার অনুপযোগী হিসেবে চিহ্নিত করে। এসব রিপোর্ট সম্পর্কে তদন্ত চালানোর পর মার্কিন বিমানবাহিনী জানায়, প্রাপ্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত চালিয়ে ইউএফওর অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ মেলেনি এবং আমেরিকার নিরাপত্তার ওপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন কিছুও দেখা যায়নি। ওদিকে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দফতরও ইউএফও নিয়ে গবেষকদের চারশ পৃষ্ঠার এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা বিভাগ ৩০ বছর ধরে সংগ্রহ করা বিভিন্ন রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাপক তদন্ত চালিয়েও ইউএফও বা ফ্লাইং সসারের কোনো আলামত পায়নি। সাধারণ মানুষ যাকে ইউএফও বলে মনে করছে তা কোনো উল্কা, মেঘ বা এ রকম কিছু হতে পারে। তবে ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কোনো যান কোনোমতেই নয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের গবেষণায় বলা হচ্ছে যে একজন-দুজন নয়, ১০-২০ জনও নয়, শত শত লোক আকাশে এসব ইউএফও দেখেছে। কখনো কখনো সবাই একসঙ্গে দেখতে পেয়েছেন। বিশেষজ্ঞের ধারণা, এগুলো গোপন কোনো সামরিক বিমানের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলেন এগুলো ভিনগ্রহ থেকে আসা বুদ্ধিমান প্রাণীদের নভোযান। পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা রোনাল্ড মোলট্রি বলেন, আকাশে, মহাকাশে ও পানিতে অস্বাভাবিক বস্তু এলিয়েনের যান খুঁজতে গিয়ে তাদের কাছে অনেক প্রতিবেদন এসেছে। সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পেন্টাগনের নবগঠিত অল ডোমেইন এনোমালি রেজ্যুলেশন অফিসের পরিচালক সিন কির্কপ্যাট্রিকের মতে, পৃথিবীর বাইরে অন্য কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেন না তারা। তবে তারা এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিকভাবে এগিয়ে যেতে চান। পেন্টাগনের বিজ্ঞানীরা বলেন, আমরা জানি যে রাশিয়াও এ নিয়ে কাজ করছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে কেজিবির ভেতরে থাকা একদল গবেষক। আমাদের পৃথিবীবাসীর নিজেদের ভালোর জন্যই এ ব্যাপারে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, এসব ইউএফওর প্রযুক্তি যদি অন্য কোনো গ্রহের প্রাণীদের না-ও হয়, তবে এসব নিশ্চয়ই যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী দেশ- রাশিয়া বা চীনের হতে পারে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ১৬ বছর আগে ওই প্রকল্পটি শুরু হয়। ২০০৭ সালে শুরু হয়ে ২০১২ সালে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭তে তা প্রকাশ করা হয়। এই গোপন কর্মসূচির বিষয়ে জানতেন কেবল হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা। একজন সাবেক ডেমোক্র্যাট সিনেটর হ্যারি রেইড-এর মস্তিষ্ক-প্রসূত এই প্রকল্প। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এই কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য আমি মোটেই লজ্জিত, বিব্রত বা দুঃখিত নই। আমি এমন কিছু করেছি যেটি আগে কেউ করেনি।’ ব্যয় কমানোর জন্য এই কার্যক্রম বন্ধ করার আগ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ খাতে ২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে। একজন সাবেক কংগ্রেস কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশী শত্রুদের প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নজরদারির জন্য এই গোপন কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল বলে তিনি মনে করেন। এই বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত সিআইএর হাজার হাজার গোপন নথিতেও ইউএফও এবং ফ্লাইং সসার সংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে। এ বিষয়ে মানুষের মনে যেমন জানার আগ্রহ রয়েছে তেমনি বিজ্ঞানীরাও কাজ করে চলেছেন এর আদি অন্ত জানার জন্য। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, যা চলতেই থাকবে।

Share.

মন্তব্য করুন