গভীর ঘন জঙ্গলের দীঘল সরুপথ ধরে অনেক দূর এগিয়ে গেলে চিকন সূতোর মতো একটা পথ দেখা যায়। সে পথ ধরে যেতে যেতে দেখা মেলে জঙ্গলের ভেতরে চারিদিক সবুজ গাছপালা লতাপাতায় ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম। লম্বা লম্বা গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখা যায় নীল লম্বা চুলের মতো। সে গ্রামে ঢুকলেই দূর থেকে দেখা যায় ঘোড়ার খুরের মতো সোনালীদের ঘরের চাল ।
এই গায়ে বাস করে অল্প কিছু পরিবার। যারা খুব বেশি ধনী নয় তবে গরিবও নয়। ওরা নিজেরা কৃষি কাজ করে নিজেদের খাবার নিজেরা উৎপাদন করে। কেউ ফসল ফলায়, কেউ মাছ ধরে, কেউ গোবাদি পালন করে। সে সব নিজেরা নিজেদের মধ্যে বিনিময় করে খেয়ে পরে সুখেই আছে। ওদের তেমন কোনো চাহিদা নাই। ওরা সবাই নিজেদের মতো সুখী থাকে।
ছোট বালিকা সোনালীর পোষা কুকুর বাহাদুর। তাকে ছোটবেলায় সোনালী ডাকতো গোল্লু নামে । গোল্লু নাম টা বিদ্ঘুটে। কিন্তু সে যখন ছোট ছিল গায়ে নরম পশমযুক্ত ছিল। তখন গুটিয়ে গোল হয়ে শুয়ে থাকতো। দেখতে গোল বলের মতো লাগতো। বাহাদুরকে তাই আদর করে মাঝেমাঝে সোনালী গোললু নামে ডাকে। তাকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিল।
‘আমি হলাম গোল্লু ভুলো।
সিল্কি আমার পশমগুলো।
আমি ডাকি ঘেউ ঘেউ ঘেউ।
দৌড়ে হারাতে পারে না কেউ।’
বাহাদুরকে নিয়ে সোনালী খেলা করে ঘুরে বেড়ায় এদিক সেদিক। গাছ থেকে ফল পাড়ে বাহাদুর দাঁড়িয়ে থাকে আর মিটিমিটি চোখে তাকায়। সোনালী আস্তে হাঁটলে সেও তার পিছু পিছু আস্তে হাঁটে। দ্রুত হাঁটলে সে দ্রুত হাঁটে। সোনালী দৌড় দিলে সে ও তখন দৌড়ে ছুটে।
এই জঙ্গলের ভেতর ছোটবড় অনেক ডোবা ও ঝিল আছে। সেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
সোনালীর বাবা মাছ ধরে জীবিকার্জন করে।
ভোরবেলায় উঠে সোনালীর বাবা মাছ ধরতে যায়। সে তখন গোল্লু বাহাদুরকে নিয়ে ঘরের বাইরে বের হয়। ভোরের ঝির ঝির বাতাস, পুবদিকে কমলা রঙের আকাশ। শিরিষগাছের মাথার উপর সূর্য ওঠে উজ্জ্বল লাল বলের মতো। সুন্দর এ দৃশ্য দেখে সোনালী কবিতা লিখে,
‘এখন গরম কাল
কী যে সুন্দর সকাল!
পুবাকাশে রাঙা রবি
দেখে মনে হয় ছবি।’
এক দিন সন্ধ্যায় সোনালী বাড়ি ফিরে শুনতে পেল পাশের ঘরে তার বাবা মায়ের সাথে বলছে। বাবা বলছেন, সামনে খুব খারাপ সময় আসছে। হয়ত না খেয়েই থাকতে হবে। কী যে হবে উপায়!’
শুনে সোনালীর মনটা খারাপ হয়ে গেল। সে বাহাদুরকে নিয়ে চুপচাপ তার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
সেই বার অনেক গরম পড়লো। খাল ডোবা সব শুকিয়ে গেল। জঙ্গলের ভেতরে যে সব ডোবা পুকুর ছিল কোথাও মাছ নাই। সোনালীর বাবা আর মাছ ধরতে পারে না। মন খারাপ করে ঘরে বসে থাকে।
সেদিন ভোরে সোনালীর ঘুম ভেঙে গেল। জানালার বাইরে শুনতে পেল দু’টি পাখি অনেক জোরে গান করছে। সোনালী আর ঘুমুতে পারছে না। সে জেগে গেল। বিছানা ছেড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালো। দেখতে পেল ছোট সুন্দর দু’টি লালপাখি তার জানালার পাশে গাছের ডালে বসে গান ধরেছে। একটি পাখি গাইছে,
ভালোবাসো কি? ভালোবাসো কি?’
অপরটি গাইছে, নিশ্চয়, নিশ্চয়।’
বাহাদুর তার গদিতে আরামে ঘুমচ্ছিল। সোনালী তাড়াতাড়ি তার কাছে গিয়ে বললো, ওঠো। আমার মনে হচ্ছে আজ দিনটা বিশেষ দিন হবে। ভালো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।’
বাহাদুর গা মোড়া দেয়। হাঁমি ছেড়ে আবার চোখ বন্ধ করে দিলো। সে খুব অলস। ঘুমুতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মাঝে মাঝে সকাল থেকে সন্ধ্যা।
সোনালী আবার ডাকে, গোললু বাহাদুর-।
সে এক চোখ মেলে দেখলো সোনালী এখনো রেডি হয় নাই বাইরে বের হবার জন্য। কারণ তার জানা আছে কখন সে বের হবে।
সোনালী দাঁত ব্রাশ করে হাতমুখ ধুয়ে নিজের বিছানা গোছালো সুন্দর করে। রাতে ঘুমোবার পোষাক ছেড়ে সুন্দর একটা জামা পরলো। গোলাপী চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালো। মাথায় গোলাপ ফুলের ব্যান্ড বেঁধে নিয়ে ঘরের বাইরে গেল। বাহাদুর চোখ মেলে দেখলো। ওমনি লাফিয়ে সোনালীর পিছু নিলো।
সোনালী হাঁটছে বাহাদুর তার পিছে পিছে হাঁটছে। ওরা জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে গভীর জঙ্গলের দিকে গেল। ভেতর থেকে আরো ভেতরে গেল। অনেক দূরে এসে জঙ্গলের ভেতরে একটি ছোট্ট ঘর দেখতে পেয়ে সেদিকে গেল। কাছে এসে দেখতে পেল এক বৃদ্ধাকে যার মাথার সব চুল সাদা, পরনে সাদা কাপড়। বৃদ্ধা বারান্দায় বসে একমনে তাঁতের সূতা বুনছেন। সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে সোনালী তাকে সালাম জানালো। বৃদ্ধা জিজ্ঞেস করলেন, কি চাও?’
সোনালী কোনো দ্বিধা না করেই বলে ফেললো, এমন কোনো জলাশয়ের কাছে যেতে চাই, যেখানে অনেক মাছ পাওয়া যাবে।
বৃদ্ধা তার দিকে তাকিয়ে থেকে চুপ করে থাকলেন কিছুক্ষণ। তারপর বললেন, তুমি অনেক ছোট মানুষ। সেখানে যেতে পারবে না।
সোনালী খুব সাহসী মেয়ে। সে বললো, নিশ্চয় পারবো আমি। আপনি সে জলাশয়ের সন্ধান দিন।
বৃদ্ধা বললেন, ওটা অনেক দূরে। এই গভীর জঙ্গল থেকে আরো গভীরে।
সে বললো, আমাকে দয়া করে বলুন কোথায়, কোন পথ ধরে যেতে হবে?
বৃদ্ধা তাকে সব বলে দিলেন। আর বললেন, সাবধানে যেও। তাড়াতাড়ি ফিরে এসো সন্ধ্যা হওয়ার আগে। ’
সোনালী আর বাহাদুর জঙ্গলের সেপথ ধরে যেতে যেতে আরো অনেক ভেতরে গেল। সেপথ গাছপালা লতাপাতায় ঘেরা। কোনো দিন কোনো মানুষের পা সেখানে পড়ে নাই। গাছে গাছে নানান রঙে অচেনা ফুল ফুটে আছে। নানান পাখি গান করছে। পথে বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির দেখা মিললো যা এ জঙ্গলের বাইরে কখনো কেউ দেখেনি। মাঝে মাঝে অদ্ভুত শব্দও শুনতে পেল। বাহাদুর থেমে যায় ভয়ে। সে কান খাড়া করে শুনতে চায়। সোনালী বড় সাহসী মেয়ে। সে বলে, ভয় পেও না বাহাদুর। চলো এগিয়ে যাই।’
ওরা আবার হাঁটতে থাকে। ঘন জঙ্গলে আকাশ দেখা যায় না। সোনালী উপরে চেয়ে দেখে পাতার ফাঁক দিয়ে সরু একটু আলো আসছে। সে বুঝে নেয় বাইরে এখনো দিনের আলো আছে। হঠাৎ অদ্ভুত একটা জন্তু ওদের রাস্তার সামনে এসে দাঁড়ায়। সোনালী পিছিয়ে যায়। সে জন্তুটা ঠায় দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। কিছু একটা ঘটাবে নিশ্চয়। প্রস্তুতি নিচ্ছে। একটাই সরু রাস্তা। ডানে বামে যাওয়ার জায়গা নাই। গাছগাছালি আর কাঁটালতায় ঘেরা। ভয়ে যদিও বাহাদুরের গায়ের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তবুও সে মুহূর্তে লাফিয়ে সোনালীর সামনে এসে দাঁড়ালো। ঘেউ ঘেউ করে ডাকতে শুরু করল। জন্তুটা রেগে বিকট আকার ধারণ করলো। বাহাদুরের স্বরও বেড়ে গেল। এমন সময় একটা নীলপাখি উড়ে এসে গাছের ডালে বসলো। সে জন্তুটার উদ্দেশ্যে বললো, ওদের যেতে দাও’। জন্তুটা সরলো না। তখন পাখিটি বললো, ওরা আমাদের জঙ্গলের অতিথি। ওদের সাথে কোনো খারাপ আচরণ করবে না। নইলে বনের রাজার কাছে নালিশ দিবো। তোমার কঠিন বিচার হবে।’
শুনে জন্তুটা পথ ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ জঙ্গলের ভেতর চলে যায়। পাখিটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করে।
পাখিটা তার একটা পালক ঝরিয়ে দিয়ে বললো, এটা রেখে দাও যদি প্রয়োজন পড়ে পালক ধরে আমাকে ডেকো।’ সোনালী পালকটি তুলে পকেটে রেখে দিলো।
গাছপালায় ঠাসা ঘন জঙ্গলে ওরা হেঁটেই চলেছে। হঠাৎ দূরে একটু ফাঁকার মতো দেখতে পেল। সেদিকে এগিয়ে গেলে একটা বড় হিজলগাছ দেখতে পেল। গাছের তলায় জলের মতো যেন ঝিলমিল করছে। সোনালী বাহাদুরকে নিয়ে দ্রুত গিয়ে দেখে জলে ভরা একটা টলমলে স্বচ্ছ জলাশয়। গাছের গোড়ায় একটি ডিঙ্গি নৌকাও বাঁধা আছে। সোনালী খুশিতে চেঁচিয়ে ওঠে, বাহাদুর আমরা পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু এ জলে মাছ পাওয়া যাবে কি।’ ভাবতে থাকে।
ডিঙি নৌকায় উঠে পড়ে সোনালী আর বাহাদুর পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। নৌকাটা বেয়ে মধ্য সরোবরে গিয়ে দেখতে পায় পানির নিচে বড় একটা মাছ সাঁতরিয়ে যাচ্ছে। খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। ওমনি তার মাথার ব্যন্ড থেকে একটা গোলাপ ফুল পানিতে পড়ে যায়। ফুলটি ভাসতে ভাসতে দূরে চলে যায়। সোনালী সেটা তুলতে পারে না। এমন সময় বৃদ্ধ মাছটি সে ফুলটা মুখে করে তার নৌকার কাছে নিয়ে আছে। সে মাছটিকে ধন্যবাদ জানায়। উপহার স্বরূপ এ ফুলটি তাকেই দিতে চায়।
সোনালী তখন দেখতে পেল স্বচ্ছপানির নিচে পুরো জলাশয় ভর্তি মাছ আর মাছ কিলবিল করছে। এত মাছ দেখে ভীষণ খুশি। ভাবছে তাদের গ্রামে অভাব এসেছে। মানুষ না খেয়ে আছে যদি সে মাছগুলো ধরতে পারতো। কিন্তু কিভাবে মাছ ধরবে সে। তার কাছে তো মাছ ধরার কিছু নাই।
তখন বুদ্ধি এলো। সে তার মাথার চুলের ব্যন্ড থেকে আরো একটি গোলাপ খুলে পাপড়িগুলো পানিতে ছড়িয়ে দিলো। পুকুরের সব মাছগুলো খাবার ভেবে লাফালাফি করতে লাগলো। মাছগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে সোনালীর নৌকায় পড়তে লাগলো। পুরো নৌকা মাছে ভরে গেল। মাছ ভর্তি নৌকা বহু কষ্টে সোনালী ডাঙায় তোলার চেষ্টা করে। বাহাদুরও তাকে সাহায্য করে। এত মাছ বাড়ি নিবে কিভাবে। সোনালী তার গায়ের কোটটা খুলে মাছ ভরে নিলো। সেটা বাহাদুর মুখ দিয়ে টেনে নিতে লাগলো। কিছু মাছ রশিতে বেঁধে সোনালী কাঁধে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিলো।
বাড়ির পথ বহুদূর। কিছুদূর যেতেই সন্ধ্যা পেরিয়ে গেল। জঙ্গলের মধ্যে অন্ধকারে আর পথ চিনতে পারছে না। নানা রকমের পশুপাখি ডাকাডাকি করছে। ওরা বাড়ি ফিরবে কিভাবে! সোনালী ঘাবড়ে গেল। বৃদ্ধা বলেছিল সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে। হঠাৎ মনে পড়ে সেই পাখির কথা। সোনালী পকেট থেকে পালক বের করে পাখির উদ্দেশ্যে বলে, বন্ধু তুমি কোথায়? তোমাকে বড্ড প্রয়োজন।’ মুহূর্তে সেই পাখিটা ঝলমলে নীলডানা মেলে উড়ে এসে সোনালীর মাথার কাছের ডালে এসে বসে। বললো, বলো বন্ধু, কি কাজে আসতে পারি?’ সোনালী বলে, অন্ধকারে বাড়ি ফেরার পথ দেখতে পারছি না। নীলপাখিটা বলে, কোনো অসুবিধা নেই। তোমরা আমাকে অনুসরণ করো।’
নীলপাখি উড়ে উড়ে যেতে লাগলো। তাকে অনুসরণ করে ওরা পথ চলতে শুরু করলো।
কিছুদূরে এগিয়ে গেলে দেখে জঙ্গলের ভেতর কুঠিবাড়িতে আলো জ্বলছে। পাশ দিয়ে যেতে দেখে এটা সেই তাঁতি বুড়ির বাড়ি। তিনি তখনো কুপি জ্বালিয়ে চরকা ঘুরিয়ে সুতা বুনছেন। ওদের দেখে বলেন, তোমরা এসে গিয়েছ? আমি তোমাদের জন্য চিন্তা করছিলাম।
সোনালী বললো, আপনাকে একটা মাছ দিতে চাই।’ তিনি বললেন, আমার মাছ লাগবে না। তোমরা বাড়ি যাও। বাবা মা নিশ্চয় চিন্তা করছে।’ বলেই আবার চরকা ঘুরাতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
নীলপাখিটা ওদের বাড়ির কাছে নিয়ে এলো। পাখিটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।
সোনালীর বাবা মা এত্ত মাছ দেখে অবাক হলো। জানতে চাইছে কোথায় পেল!
পরদিন খুব ভোরে সোনালী আবার তৈরি হলো। মাছ ধরার সব প্রস্তুতি নিয়ে ঘর থেকে বের হলো। সেই পথ ধরে যেতে যেতে সেই তাঁতিবাড়ির কাছে এলো। তাঁতিবুড়ি তখনো চরকা কাটছেন। সেই কুঠিবাড়ি পার হয়ে গতবারের মতো বৃদ্ধার দেখানো সেই পথ ধরে এগিয়ে যেতে লাগালো। সে জঙ্গলের সব গাছগাছালি সরুপথ পেরিয়ে বৃদ্ধ হিজল গাছটার তলায় এলো।
কিন্তু এ কী! কোথাও কিছু নেই। সরোবর তো দূরের কথা। কোথাও পানির চিহ্ন পর্যন্ত নেই। সোনালী অবাক! হ্যাঁ এখানেই সে এসেছিল কাল। এই সেই বড় হিজল গাছ। এখানেই ছিল সরোবর। গাছের গোড়ায় নৌকা বাঁধা ছিল। কিন্তু কোথায় গেল সরোবর! কোথায় পানি! কোথায় মাছ! সোনালী ফিরে গেল তাঁতি বাড়িতে বৃদ্ধা তখনো সুতা বুঁনছেন। ওদের দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে তুমি? কি চাও?
সোনালী বললো, আমাকে চিনতে পারছেন না? আমি সোনালী। গতকাল আপনার কাছে এসেছিলাম। আপনি গভীর জঙ্গলে একটা সরোবরের পথ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। আমি আপনার দেখানো পথ ধরে সেখানে গিয়েছিলাম। আজ আবার সেখানে গিয়েছিলাম; কিন্তু গতকালের সেই সরোবর সেখানে নেই। এটা কি করে হলো?
তাঁতি বুড়ি চিন্তায় পড়ে গেলেন। বললেন, তুমি কখনো আমার কাছে এসেছো বলে মনে পড়ছে না। তুমি ভুল বলছো।’
সোনালী বললো, আপনার মনে নেই? সন্ধ্যায় মাছ নিয়ে ফেরার পথে আপনাকে একটা মাছ দিতে চেয়েছিলাম। আপনি নেননি। বললেন তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও বাবা মা চিন্তা করছেন।’
বৃদ্ধা বললেন, কই না তো এমন ঘটনা তো কখনো ঘটেনি। আমি বুড়ো হলেও স্মরণশক্তি কিন্তু প্রখর। আমার বাড়িতে কোনো দিন কোনো মানুষ আসে নাই। আজ তুমিই প্রথম এলে।
শুনে সোনালী ক্ষুব্ধ হয়ে বলে, তাহলে গতকাল যা কিছু ঘটেছে সব মিথ্যে?
এবার বৃদ্ধা একটু সময় নিয়ে ভেবে বললেন, মিথ্যেও নয়। সে তোমার কল্পনা।
সোনালী ভাবে কল্পনা!
তিনি হেসে বলেন, তুমি বাচ্চা মেয়ে, তবে অনেক ভালো একটা মেয়ে। আসলে সত্যিই তুমি আসোনি কখনো। ঘটনা টা হলো। তুমি যা ভাবো বা তুমি যা করতে চাও, তাই কল্পনায় করেছ। ওই সরোবর ছিল তোমার কল্পনার সরোবর। যে সরোবরে তুমি টলমলে স্বচ্ছজল দেখতে চাও, ফুল দেখতে চাও, জলাশয় ভর্তি প্রচুর মাছ দেখতে চাও। সে সবই ছিল তোমার কল্পনায়।
এবার সোনালী হাঁটতে হাঁটতে বাহাদুরকে নিয়ে বনের ভেতর যায়। সেই বৃদ্ধ হিজল গাছের কাছে এসে আস্তে গাছের নিচে হেলান দিয়ে বসে। বাহাদুরও তার পাশে গা ঘেঁসে বসে। সোনালী পকেট থেকে তার কবিতার খাতা বের করে আবার কবিতা লিখতে থাকে।
হোক সে কল্পনা
যা করি রচনা।
মানুষের সুখ
মানুষের হাসি,
আমি যে দেখতে
বড় ভালোবাসি।

Share.

মন্তব্য করুন