বীরের নাম রুকানা। আরবের শ্রেষ্ঠ বীর। চারিদিকে তার নাম ডাক। সবাই তাকে এক নামে চেনে। তাকে কুস্তিতে কখনও হারাতে পারেনি কেউ। সবার ধারণা- কেউ তাকে হারাতে পারবেও না। তার মাথা কারো কাছে নত হয়নি। হয় না। উন্নত শির নিয়ে ঘুরে বেড়ায় সে। তার অহংকারও ছিলো খুব।
আমাদের মহানবী স ছিলেন শান্তির বাণী বাহক। তিনি চাইতেন সবাই ইসলামের এই শান্তির বাণী গ্রহণ করুক। মহানবীর শান্তির এ বাণী প্রচারের বিরুদ্ধে ছিলো এই খ্যাতিমান বীর রোকানা। রুকানার পেশা ছিলো ছাগল লালন পালন করা। মাঠে ছাগল চরাতো সে।

একদিন মাঠেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ স এর সাথে দেখা হয়ে গেলো রুকানার। মাঠটি তখন ছিলো নির্জন। মাঠের কোথাও কেউ ছিলো না। আশপাশেও ছিলো না কোনো লোকজন।
রুকানা আমাদের মহানবী স কে বললো- আপনি আমাদের প্রভু সম্পর্কে খারাপ কথা বলেন। আমাদের দেবতাদের বিরুদ্ধে বলেন। আর আপনি ইবাদত করেন নিজের কাল্পনিক মা’বুদের। যাকে দেখা যায় না। যদি আপনার সাথে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক না থাকতো,তবে আজ আপনাকে পৃথিবী থেকে পরপারে পাঠিয়ে দিতাম।
তবে আজ আপনার সাথে আমাদের চূড়ান্ত ফয়সালা হয়ে যাক। আজ হয়তো আপনি সত্যবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবেন। নয়তো আপনার সকল কর্মকাণ্ডের শেষ হয়ে যাবে।

আপনি আমার হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনার আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। আজ আপনার সত্য নবী হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যাবে। আপনি যা বলেন তার সত্যতাও প্রমাণিত হবে।
এরপর রুকানা রাসুল স কে এক অভিনব প্রস্তাব দিলো। বললো- আপনার সত্যতা প্রমাণের জন্য আজ আপনাকে আমার সাথে কুস্তি লড়তে হবে! আপনার বিজয়ের জন্য আপনার আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন। আমিও প্রার্থনা করবো আমার দেবতা লাত ও উযযার কাছে।
আপনি যদি আমাকে হারাতে পারেন তবে আমি আমার ছাগলের পাল থেকে আপনার পছন্দ মতো দশটি তাগড়া ছাগল দিয়ে দেবো আপনাকে।
রাসুল স বললেন- তোমার ছাগল আমর প্রয়োজন নেই। তুমি একজন নাম করা কুস্তিগীর। যদি আমি তোমাকে কুস্তিতে হারাতে পারি তাহলে তুমি এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আনবে?
রুকানা বললো- হ্যা, আপনি যদি আমাকে হারাতে পারেন তো আমি অবশ্যই ঈমান আনবো এবং আমি ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে যাবো।
কুস্তি লড়ার জন্য তাকে এমনই শর্ত দিলেন রাসুল স। তারপর কুস্তি লড়লেন। রাসুল স তাকে আচ্ছা মতো ধরে মুহূর্তে পরাজিত করে ফেললেন। সে কিছুই করতে পারলো না। একদম চুপসে গেলো সে। মহানবী স কুস্তিতে হারিয়ে দিলেন তাকে।

ভীষণ বিস্মিত হলো সে। বিস্ময়ের সাথে বললো- আচ্ছা আরেকবার কুস্তি লড়তে চাই।
রাজি হয়ে গেলেন রাসুল স। বললেন- ঠিক আছে, তাই হোক।
আবার কুস্তি হলো। এবার আগের চেয়েও দ্রততম সময়ের মধ্যে রাসুল স. পরাজিত করলেন তাকে।
এবার সে বিস্ময়ের সাথে অস্থির হয়ে গেলো। বললো- এটি তো আশ্চর্যজনক বিষয় যে তুমি আমাকে হারিয়ে দিয়েছো! যাই হোক কি আর করা। আমি পরাজিত হয়েছি এটিই সত্য। মক্কার বীর পাহালোয়ান রাসুল স এর কাছে পরাজয় স্বীকার করলো। কিন্তু মুহূর্তেই সে কণ্ঠ চড়া করে বললো- আসলে আপনার নিকট আমার পরাজয় হয়নি। বরং আপনার আল্লাহ তায়ালারই বিজয় হয়েছে। আমার লাত-উযযা আমাকে সাহায্য করেনি। যে কারণে আপনি আমার পিঠ মাটিতে লাগাতে পেরেছেন। এর আগে আমার এ পিঠ কেউ মাটিতে ছোঁয়াতে পারেনি।
কিন্তু এই বীর তার দেয়া ওয়াদা রক্ষা করেনি। পরাজিত হলে সে ঈমান আনার কথা। অথচ ঈমান আনেনি সে। বরং সে সবার কাছে বলে বেড়ালো- মুহাম্মদ একজন ভয়াবহ যাদুকর।

Share.

মন্তব্য করুন