পৃথিবীর জঙ্গল, জলা থেকে শুরু করে মরুভূমি, গিরিপর্বত সাগর, নদী-নালা, ভূমণ্ডলের সর্বত্রই সরীসৃপ প্রাণী সাপের সাক্ষাৎ মেলে। বিশ্বে দুই হাজার চারশ প্রজাতির সাপ রয়েছে। ধরিত্রীর সর্বত্রই দেখা যায় এদের অবাধ বিচরণ। সাপদের শ্রেণী বিন্যাস করা হয়েছে বিষধর ও নির্বিষ রূপে। পৃথিবীর যত প্রজাতির সর্প রয়েছে এর মধ্যে তিন ভাগের একভাগ মাত্র বিষধর। তন্মধে প্রায় তিনশত প্রজাতির সাপে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ ক্রিয়া। এতই বিষ যে, কোন মানুষের মৃত্যু অবধারিত। ভারতের রাজ গোখরো সাপই হচ্ছে আয়তনের সবচেয়ে বড় আকারে বিষধর সর্প। এটি লম্বায় ১৮ (আঠারো) ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এই রাজ গোখরো সাপের বিষের দংশনে মানুষের সর্বশরীরে স্নায়ুতন্ত্রকে অতি শীঘ্র অকার্যকর করে তোলে এবং হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের রক্ত সঞ্চালনের ক্রিয়া চিরতরে বন্ধ হয়ে অতি শীঘ্রই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ডিম ফুটে সদ্য বেরুনো বাচ্চাগুলোও কম বিষাক্ত নয়। ডিম ফুটে অর্ধেক বাচ্চাগুলো বের হয়ে আসার সময় রীতিমতো ফণা তুলে শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য তেড়ে আসে। গোখরো সাপের প্রধান শত্রু হচ্ছে বেজি। বেজিরা গোখরো সাপের মাংস খেতে বেশি পছন্দ করে। তাই পারত পক্ষে গোখরো সাপেরা বেজিদের এড়িয়ে চলে। সাপ নিয়ে আমাদের ভুল ধারণাগুলো হয়েছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী এবং সে অনুযায়ী চলচ্চিত্র থেকে। যা শুধু অবৈজ্ঞানিকই নয়, অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন বটে। এই যেমন অনেকে বলেন, সাপ নাকি গুপ্তধন পাহারা দেয়। সাপের মাথায় মণিও থাকে, অথচ এ কথাগুলো সঠিক নয়। পুরনো, বদ্ধ, অন্ধকার জায়গায় সাপ এমনিতেই থাকতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে, সাপ সেখানে গুপ্তঘন পাহারা দিচ্ছে। সাপ মাংসাশী প্রাণী, কিছু সাপ দুধ খায় বটে কিন্তু কলা কোন সাপ খায় না। একই ভাবে বলা যায় সব সাপ ডিম পাড়ে না। আনাকোন্ডা, চন্দ্রবোড়া বাচ্চা দেয়। সাপুড়ের তালে তালে সাপ যে নাচে এটা কিভাবে সম্ভব? আসলে সাপ বাঁশির সুর শুনে নাচে না। সাপ সাপুড়ের অঙ্গভঙ্গি এবং বাঁশির দুলুনির অনুকরণে নাচে। আমেরিকার কিং কোবরা হলো আরো একটি ভয়ানক বিষধর সাপ। এর ১ গ্রাম বিষে পৃথিবীর ২৫০ জন লোক নিমিষেই মারা যেতে পারে। কিং কোবরার দংশনে বিশ্বের যে কোন জীব জন্তু এমনকি একটি বড় হাতিও নিমিষেই বিষ ক্রিয়ায় তাৎক্ষণিক মারা যেতে পারে।

আমাজানের জঙ্গলে আরো একটি হিংস্র স্বভাবের সর্প হলো বুশ মাস্টার। এদের বিষাক্ত ছোবলে যে কোন মুহূর্তেই কারো মৃত্যু ঘটে যেতে পারে। ‘নাকা নিনা’ নামক আমাজানের আরো একটি বিষাক্ত সাপ রয়েছে খুব হিংস্র স্বভাবের। এই সর্পটি অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে শত্রু পক্ষকে আক্রমণ করতে পারে।
যে সাপকে নিয়ে আমাজানের কিংবদন্তি গল্প রয়েছে তার নাম হলো ‘আনা কোন্ডা’। আয়তনের দিক থেকে এটি হলো বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বড় সাপ। আয়তনে এক একটা আনাকোন্ডা ৬৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা ও ৪০০ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে বলে সর্প বিশেষজ্ঞরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আনাকোন্ডা জলে, স্থলে ও গাছের ডালে অনায়াসে স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারে। সুযোগ পেলেই আনাকোন্ডা শিকার খপ করে ধরে ফেলে এবং কাউকে একবার শরীরের সাথে জড়াতে পারলেই আর রক্ষা নেই। কোনো মানুষের একখানা হাড়ও আস্ত থাকবে না। এই সাপের বিশালকার দেহের দানবীয় শক্তির কাছে কারো কোনো তুলনা হয় না।

মালয়েশিয়ার জঙ্গলে ও জাভা দ্বীপের গাছে এক ধরনের সাপ দেখতে পাওয়া যায়। সেই সাপ প্রয়োজন মতো পাতলা ফিতার মতো আকার ধারণ করে ও একগাছ থেকে অন্য গাছে ওড়ার ভঙ্গিতে যাতায়াত করে। ওড়ার শক্তি সেই সাপের না থাকলেও এদের পাতলা শরীর কিছুক্ষণ বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম (Chrysopekaornata)। বার্মা, দক্ষিণ চীন, সুমাত্রা, বোর্নিও ও আসামের পার্বত্য অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। এই সাপকে ধরে চিড়িয়াখানায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু বাঁচানো যায়নি। এর অসাধারণ নাম সোনালি গেছো সাপ (Golden tree snake)। এ বিশ্বে প্রায় সব সাপের মতোই পাইথন বা অজগররাও ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী জাতীয় পাইথন বা অজগর কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টিরও বেশি ডিম পাড়ে এবং ডিমের ওপর তা দিয়ে এক নাগাড়ে ৬০ দিন কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকে। ডিমে তা দেওয়ার সময় এই অজগররা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। একেবারে উপোস থাকে। নির্দিষ্ট সময় তাদের এই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হয়ে আসে। কিছু কিছু সর্প আছে যারা দূর থেকে শত্রুকে বিষ ছুড়ে ঘায়েল করে। দশ, বারো হাত পর্যন্ত দূর থেকে চোখে বিষাক্ত বিষ ছুড়ে শিকারকে তারা সাময়িকভাবে অন্ধ করে দিতে পারে। অব্যর্থ তাদের নিশানা। এরা হলো আফ্রিকার ব্ল্যাক নেব্ড স্পিটিং কোবরা এবং আমেরিকার কিংস হল্স সাপ। এ ছাড়াও বিদেশে ডাঙায় যেসব সাপ বাস করে তাদের মধ্যে সব চাইতে বিষাক্ত সাপ হলো তাইপান এবং ব্রাউন স্নেক। দুটোরই আদি নিবাস হলো অস্ট্রোলিয়ায়। এশিয়ান কোবরা, রাসেল ভাইপার এবং সস্কেন্ড ভাইপারও হলো বিষাক্ত সাপ। এদের শরীরেও রয়েছে মারাত্মক বিষক্রিয়া। মার্টিনিক বার্বা ডোস ও সেন্ট লুসিয়াতে অতি ক্ষুদ্র আকারের এক প্রকারের সাপ পাওয়া যায়, যার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ চার ইঞ্চি আর দেহটা ম্যাচের কাঠির চেয়েও সরু। সাপদের মধ্যে কোনো কোনো প্রজাতির দীর্ঘকাল বেঁচে থাকতে পারে। ফিলাডেলফিয়া চিড়িয়াখানায় ‘বো’ প্রজাতির ‘পপি’ নামে সাপটি যখন মারা যায় তখন এর বয়স হয়েছিল চল্লিশ বছর একশত চার দিন। ১৯৩২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় একটি সাপ ধরা পড়েছিল যেটি লম্বায় ৩২ ফুট ১০ ইঞ্চি ছিল। সাপের কামড়ে সবচেয়ে বেশি লোক মারা যায় শ্রীলঙ্কায়। ক্রেট, শ্রীলঙ্কান কোবরা আর রাসেল ফাইপার নামের তিন প্রজাতির সাপের কামড়ে বেশি লোক মারা যায় সেই দেশে। আমাদের ভারত উপমহাদেশে যে সাপটি বিষধর সাপ হিসেবে পরিচিতি রয়েছে সেটি হলো ক্রেইট। বাংলায় যাকে বলে কাল কেউটে। এরা দিনে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকে এবং রাতে শিকার ধরে। এরা যে কোন সাধারণ কোবরা থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি বিষাক্ত।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো অধুনা লুপ্ত এই উপমহাদেশের মানুষের সবারই বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে, আমাদের বাংলাদেশে অতি পরিচিত কাল-নাগিনী নামক সাপটি মারাত্মক বিষধর। এটি কামড়ালে মানুষের বাঁচার আশা থাকে না। (বেহুলার পালাগানে বাসর রাতে লক্ষীন্দরকে সে সাপটি দংশন করেছিল বলে লোকের বিশ্বাস।) এ কথা একেবারেই ভ্রমাত্মক। আমাদের গ্রাম বাংলার বহুল পরিচিত এই কাল-নাগিনী সাপটি হলো আসলে নির্বিষ। এ সাপের বিষক্রিয়া নেই। এটি প্রমাণিত হয়েছে।
সাপ সাধারণত কুনো ব্যাঙ, পোকা-মাকড়, ইঁদুর, টিকটিকি ইত্যাদি খেয়ে কৃষকের ক্ষেতের উপকারই করে। আগেই বলা হয়েছে, পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট সাপ হচ্ছে আফ্রিকা ও আমেরিকার থ্রেড স্নেকস। এরা সাধারণত মাত্র চার ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। আর ওজনে সবচেয়ে বড় সাপ হচ্ছে পাইথন বা বোয়া জাতের অজগর সাপ। এটা সাধারণত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দেখা যায়, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং শিকারের সন্ধানে ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ পেলে বনের হরিণ, বন্যশূকর এমনকি গোটা মানুষকেও আস্ত গিলে খায়। অজগর সাপকে নিরীহ বলা যায়। এরা ওজনে একটন পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবীতে সামুদ্রিক সাপদের বিষ হলো সবচেয়ে মারাত্মক ও ভয়ানক। ‘গ্যাবুন’ সাপ আফ্রিকা মহাদেশের জঙ্গলের এক প্রকার অতি ভয়ানক হিংস্র সাপ। এদের গায়ের রং এমন চমৎকার যে, শুল্ক প্রায় ডালপালার সঙ্গে খুব সহজে অন্য জন্তুর দৃষ্টির আড়ালে থাকতে পারে। কিং স্নেক আমেরিকায় এক ধরনের সাপ পাওয়া যায়। এই সাপকে মানুষের বন্ধু বলা চলে। কারণ এরা ‘র‌্যাটল’ নামক অতি ভয়ানক সাপ মেরে ভক্ষণ করে। এই সাপটি হলো নির্বিষ, অতি সহজে পোষ মানে এবং গৃহপালিত বিড়াল, কুকুরের মতো মানুষের সঙ্গে একই ঘরে বাস করে। বাংলাদেশে বিষধর ‘শংখচুর’ নামক একটি সাপ দেখা যায়, যে সাপ হলেও সাপ ধরে খায়। শুধু সাপই যে ব্যাঙ ধরে খায় একথা আদৌ ঠিক নয় অনেক সময় ব্যাঙকেও সাপ ধরে খেতে দেখা গেছে। আসলে উভয়ই উভয়ের খাদ্য। যদি ব্যাঙটা কোন অবস্থাতে সাপটিকে পরাস্ত করতে পারে তবে সেটি হলো ব্যাঙের খাদ্য (আমি বৃহৎ ব্যাঙের কথাই বলছি)। সাপদের মাটিতে ছিদ্র বা গর্ত করার কোনো ক্ষমতা নেই। তার নিজস্ব কোনো আলয় নেই। তাই সে সব সময় ইঁদুর বা অন্যের গর্তে বাস করে। সাপ তাদের বছরে একবার করে খোলস ছাড়ে। মাটিতে খোলস ছাড়ার সময় সাপের চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায়। দুই একদিন পরে আবার সেই সাবেক দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। বিশ্বের একমাত্র সর্পমুক্ত দেশ হলো আয়ারল্যান্ড। যেখানে একটি সাপও নেই। পৃথিবীর সব ধরনের সাপ অবশ্যই তাদের খাবার গিলে খায়। মজার ব্যাপার হলো তাদের লম্বা সুচালো দাঁত কোনো কিছু চিবিয়ে খেতে পারে না। নিজের মাথার চেয়ে তিনগুণ বড় যে কোন প্রাণীকেই সাপেরা গিলে খেতে পারে। সাপের শরীরের নার্ভগুলো এতই সংবেদনশীল যে তারা শিকারের দিকে তাকিয়ে তাকে সম্মোহিত করে ফেলে। সাপের চোখের পাতা নাই। তাই তাদের চোখের পলক পড়ে না। সাপের কান ও নাক নেই তাই সে কোন শব্দ ও ঘ্রাণ সাধারণত অনুভব করতে পারে না। প্রায়ই তার লম্বা চওড়া লিক লিকে দ্বিখণ্ডিত জিভ দিয়ে দ্রুত গতিতে মুখের বাইরে বারবার বের করে এবং এভাবেই বাতাসে ভেসে আসা গন্ধ সে জিভ দিয়ে অনুভব করে। সাপের জিভের ঘ্রাণ শক্তি অত্যন্ত প্রখর। সুতরাং আমরা যতই বলি না কেন সাপ বাঁশির মিষ্টি সুরে মোহিত হয়, এ কথা আদৌ ঠিক নয়। কারণ সাপের কর্ণ নেই। সাপ বাঁশির আওয়াজ শুনবে কী করে? ফুলের গন্ধে সাপ আসে এ কথাও অমূলক, কারণ সাপের নাক না থাকায় সে গন্ধ অনুভব করতে পারে না। সুতরাং অন্ধকার রাত্রিতে সাপের ভয়ে আমরা যে হাতে তালি দিয়ে সাপকে সরবার ব্যবস্থা করি এটাও অত্যন্ত হাস্যকর ও বোকামি। সাপের বিষদাঁত অনেকটা ডাক্তারের ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মতোই কাজ করে। সাপের দাঁতের ভিতর সরু নলের মতো ফাঁপা ছিদ্র রয়েছে এবং মাড়ির সঙ্গে একত্রে বিষের থলের সাথে যুক্ত রয়েছে। যখন মানুষ বা অন্যান্য জীবজন্তুকে সাপ ফণা তুলে ছোবল মারে তখন তার এই বিষদাঁত মানুষ বা জন্তুর শরীরে ঢুকে যায় এবং তড়িৎগতিতে মাড়ির বিষের থলির ভেতর থেকে সরু ফাঁপা নলের মতো ফুটো দাঁতের ভিতর দিয়ে বিষটা মানুষের শরীরে ইনজেকশনের সিরিঞ্জের মতো রক্তের মধ্যে ঢেলে দেয়। সাপের বিষ বলে পরিচিত ‘হেমোটক্সিক’ নামক এই বিষ রক্তের নালীগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে আর সে কারণেই অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায় সাপে কাটা মানুষ। সাপের বিষ রক্তের সাথে ক্রিয়া না করলে মানুষ মরবে না এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়। সাপের বিষদাঁত ভেঙে দিলে তা আবার অল্প কয়েক দিনের মধ্যে গজায়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে একজন চীনা শেফ গোখরা সাপের কাটা মাথা দিয়ে স্যুপ বানানোর সময় এর কামড়ে মারা যান। স্যুপটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ২০ মিনিট পর এ ঘটনা ঘটেছে (প্রথম আলো ২৫ অক্টোম্বর ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ)।

সাপের বিষ সাধারণত সাপের খাদ্যের হজমশক্তির সহায়ক। মানুষ যদি সাপ ধরে খায় তাতে কি মানুষ মারা যাবে? কখনই না। সাপের বিষ মানুষের রক্তের সাথে কোনো সংযোগ ঘটাতে না পারলে মানুষ কখনই মারা যাবে না। সুতরাং মানুষ সাপ ধরে খেলেও মোটেই মৃত্যুর সম্ভাবনা নেই। এমনকি সাপের বিষ চুমুক দিয়ে খেলেও শরীরে মানুষের কোনো বিষক্রিয়া হবে না এ কথা নিঃসঙ্কোচে বলা যায়। তবে স্মরণ রাখতে হবে সাপের বিষ খাওয়ার সময় যাতে মানুষের দাঁতে কোনো রক্ত লেগে না থাকে। জাপান, তাইওয়ান, সাংহাই, কোরিয়া এমন পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যারা সাপ ধরে আগুনে ঝলসিয়ে খায়। এতে তাদের বিশ্বাস নিদারুণ যক্ষ্মা রোগের এর থেকে ভালো ঔষধ নেই। শীতকালে সাপদের বড় একটা দেখা যায় না। গর্তে মরার মতো পড়ে থেকে কাটিয়ে দেয়। একেবারে ব্যাঙের শীতনিদ্রার মতো ইংরেজিতে যাকে বলে ‘হাইবার নেশান’। তখন সাপ গর্তে কোনো খাবার গ্রহণ করে না। সাপের শরীরে যে চর্বি সঞ্চিত থাকে তাতেই তার খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হয়। গ্রীষ্মকাল এলেই সাপ গর্ত থেকে বের হয়ে যত্রতত্র বিচরণ করতে দেখা যায়। বর্তমানে সর্প বিজ্ঞানীরা সাপের বিষ থেকে ক্যান্সার ও ক্যান্সারের মতোই অনেক দুরারোগ্য ব্যাধির ঔষধ আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় ব্যস্ত রয়েছেন এবং মানবের অশেষ কল্যাণে নিয়োজিত রয়েছেন।

উপসংহারে বলতে হয় সারা বিশ্বে প্রতি বছর সাপুড়ে ও মানুষের হাতে ব্যাপক হারে সাপের মৃত্যু ঘটেছে। আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সাপের মূল্যবান চামড়া দিয়ে জুতা, পার্স, বেল্ট, ওয়ালেট প্রভৃতি তৈরি করছে। তাছাড়া গ্রাম ও শহর আধুনিকীকরণের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করা হচ্ছে। তাই সাপের আবাসস্থল ও তাদের বাসস্থান চিরতরে ধ্বংস হয়ে পর্যাপ্ত সাপ মারা যাচ্ছে। সুতরাং এর প্রতিকার এখনই করতে না পারলে বিভিন্ন প্রজাতির সর্পরা পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন ও লুপ্ত হয়ে যাবে এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যেতে পারে।

Share.

মন্তব্য করুন