– লালু বাবা সোনা আমার, তুমি কাঁদছো কেন?
– মা, আমি শুনলাম তোমরা নাকি আমার ছোট সোনারে জবাই দিবা?
– বাবা, এমন করে বইলো না, মহান আল্লাাহ্ তা’লা নারাজ হবেন। তুমি বলো আল্লাাহ্র পথে কোরবানি দিবো।
লালু ছোট মানুষ কোরবানির ফজিলত সে বোঝে না। পরিবারের সবচেয়ে আদরের একটা ছাগল আছে। লালুর সাথে সব সময় খেলা করে। বলতে গেলে লালুর খেলার একমাত্র সাথী। দু’জন এক সাথে ঘুমায়, এক বিছানায় ঘুমায়, এক সাথে খায়। ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দু’জনের মধ্যে। শুধু লালুর একার প্রিয় না এই ছোট সোনা ছাগলটি। এটা সবার প্রিয় একটি বস্তু।
তাই লালু চাচ্ছে না, তার খেলার সাথীকে নিজের কাছ থেকে হারিয়ে ফেলতে। তার মা লালুকে নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলো। তবুও সে বুঝল না।
– শোন মা, এটাই আমার শেষ কথা, সবাই যে ভাবে বাজার থেকে পশু কিনে এনে কোরবানি দিচ্ছে, তোমরাও তেমনি করে বাজার থেকে টাকা দিয়ে বড় পশু কিনে এনে কোরবানি দিবে। ফলে আমরা আমাদের ছোট সোনাকেও হারাতে হবে না। এবং আমরা অনেক মাংস পাবো ও বেশি মাংস খেতে পারবো।
একে একে সবাই লালুকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কেউ পারলো না। দাদা-দাদী, মা, কাকা- কাকী কেউ তাকে বুঝাতে পারলো না।
অবশেষ রাতে ফিরলো বাবা।
লালু আর বাবা খেতে বসেছে।
– লালু বলতো বাবা আমরা কী খাচ্ছি?
– বাবা, আমরা এখন ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, সবজি আর ভাত খাচ্ছি।
– হুম, ঠিক বলছো। দেখতো বাবা পৃথিবীতে আমাদের মত আর কোন কোন প্রাণী এত কিছু এবং এত সুস্বাদু খাবার খেতে পারে?
– পৃথিবীতে তেমন আর কোনো প্রাণী নেই বাবা।
-হুম, ঠিক ধরেছো। তাহলে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাাহ্ তা’লা আমাদের সবার চেয়ে একটু বেশি ভালোবাসে, তাই না লালু বাবা?
– হুম, ঠিক বলছো বাবা।
– তাহলে আমাদেরও আল্লাাহ্ তা’লার প্রতি কী করা উচিত?
– আমাদেরও উচিত সবার চেয়ে তাঁকে বেশি বেশি ভালোবাসা এবং তাঁর আদেশ অনুযায়ী কাজ করা।
– ঠিক ধরেছো লালু বাবা। তাহলে আমরা আল্লাহ্ তা’লাকে ভালোবেসে কী আমাদের ছোট সোনা ছাগলটি কোরবানি দিতে পারি না?
– না, তা পারি না বাবা ।
– কেন পারি না?
– কারণ আমাদের ছোট সোনা বাজারের অন্যান্য পশুর (গরু/মহিষ) চেয়ে ছোট। ফলে মাংস কম হবে। এ ছাড়াও আমাদের ছোট সোনা আমাদের সবার প্রিয় একটি প্রাণী। বাজার থেকে বড় প্রাণী ক্রয় করে এনে কোরবানি দিলে আমরা মাংস বেশি পাবো এবং আমাদের আদরের ছোট সোনা হারাতে হবে না।
– উপযুক্ত কথা বলছো বাবা লালু। কিন্তু যে তোমাকে এত ভালোবাসে তাকে তুমি তোমার উপযুক্ত ভালোবাসা দিবে কী না তাই বলো? নিশ্চয়ই দিবে। বাজার থেকে কিনে আনা পশুর প্রতি যতটুকু মায়া তোমার আছে, তার থেকে তোমার পোষা প্রাণীর প্রতি বেশি মায়া আছে কিনা তাই বলো? নিশ্চয়ই আছে। আল্লাাহ্ তা’লা আমাদেরকে পরীক্ষা করেন এই কোরবানি দিয়ে, আমরা তাঁর জন্য কী করতে পারি। যিনি আমাদের সব দিয়েছেন তাঁর জন্য কী আমরা এতটুকু দিতে পারি কী না তাই বলো? নিশ্চয়ই পারি। আমাদের কোরবানি পশুর মাংস এবং রক্ত আল্লাাহ্র কাছে যায় না, যায় আমাদের তাকওয়া। যে ব্যক্তি মাংস খাওয়ার লোভে কোরবানি করেন। আল্লাাহ্ তা’লা তার কোরবানি কবুল করেন না। সুতরাং আমরা যে কোরবানি করবো সেটা তুমি নিশ্চয়ই চাও আমাদের কোরবানি আল্লাাহ্ তা’লা কবুল করুক ।

অবশেষে লালু ঘাড় নাড়াল। বাড়ির সবাই আল্লাাহ্র কাছে শুকরিয়া জানালো।

Share.

মন্তব্য করুন