[বন্ধুরা, আজ তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবো ছোট্ট বন্ধু ফাতিহা আয়াতের সঙ্গে। তোমরা অনেকেই অবশ্য চেনো তাকে। বিশেষ করে তোমরা যারা ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা টেলিভিশনে চোখ রাখো। ফেসবুক-ইউটিউবে তার শিক্ষামূলক অনেক কন্টেন্ট রয়েছে। এছাড়া এই মাহে রমজানে একুশে টেলিভিশনে প্রতিদিনই তোমরা তার অনুষ্ঠান দেখতে পাবে। সে একজন শিশু অধিকার কর্মী এবং পরিবেশ বিষয়ক ক্যাম্পেইনার। শিশুদের জন্য তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের নাম ‘চাইল্ড এন্ড ডি’। এছাড়া সে একজন লেখকও! অবাক হওয়ার কিছু নেই। এই বয়সেই তার তিন তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে, স্বনামধন্য সব প্রকাশনা সংস্থা থেকে। ম্যাথ, সায়েন্স এবং আর্টেও সে অর্জন করেছে গুরুত্বপূর্ণ সব অ্যাওয়ার্ড। জাতিসংঘের নানান কনফারেন্সে বক্তৃতা করার পাশাপাশি বিশ^বিখ্যাত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতেও একজন শিশু বক্তা হিসেবে সে বক্তৃতা করেছে। কথা না বাড়িয়ে চলো তার সঙ্গে আলাপ করা যাক।]
ফাতিহা, কেমন আছো তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।

তোমার অ্যাকাডেমিক সাফল্য/পড়াশোনা সম্পর্কে কিশোর পাতার পাঠক বন্ধুদের জানাও।
আমি নিউ ইয়র্কের ‘গিফটেড অ্যান্ড ট্যালেন্টেড প্রোগ্রাম’ এর ফোর্থ গ্রেডে বিজ্ঞানে পড়ছি। সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে গণিত প্রতিযোগিতায় অনারেবল মেনশন পেয়েছি। এ ছাড়াও ‘ম্যাথ লিগ’ এ প্রথম হয়েছি।

বর্তমানে কী নিয়ে কাজ করছো?
একুশে টেলিভিশনের সাথে রমজান প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি, যা রমজানে প্রতিদিন প্রচারিত হবে। এ ছাড়া এখন আমার পুরো কনসেন্ট্রেশন কুরআন মাজিদ হিফজের প্রতি। অলরেডি ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০ নম্বর পারা হিফজ করেছি।

তুমি খুব সুন্দর করে তেলাওয়াত করতে পারো। তোমার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই এখন তেলাওয়াত চর্চা করছে। এবার বলো, তুমি কার থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলে? বা তোমার তেলাওয়াতের শুরুটা কিভাবে ছিলো?
যখন প্রথম প্রথম কোরআন পড়া শুরু করেছি তখন বাবা আমাকে মারিয়াম মাসুদের তেলাওয়াত শোনান। শোনার পর মুগ্ধ হয়ে যাই এবং তার তেলাওয়াত ফলো করতে শুরু করি। এরপর তো আমরা একসাথে একটা ভিডিওতে কাজও করেছি। বোন মারিয়াম সত্যি সত্যিই অসাধারণ একজন মানুষ।

দেখা যায়, তুমি সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই হিজাব পরে যাও। এটাও আমাদের মুসলিম অভিভাবক এবং শিশু-কিশোর বন্ধুদের আকৃষ্ট করেছে। এর অনুপ্রেরণা কে জুগিয়েছেন? কিংবা এটার কারণে কখনও কি নিজের কাছে খারাপ লাগা কাজ করেছে (যখন তোমার বয়সী অনেকেই এটা পরছে না)?
আমি কখনোই হিজাব পরার কারণে হীনমন্যতায় ভুগি না। হিজাব পরলে কেন খারাপ লাগা কাজ করবে? আমি তো মনে করি, এটা আমার রিলিজিয়াস বিলিভ আর পোশাকেরই একটা পার্ট। সত্যি বলতে, এ বিষয়ে আমার কখনো খারাপ লাগা কাজ করেনি বরং আমি এটাকেই এনজয় করি খুব বেশি। আমার যখন বয়স তিন, তখনই খেয়াল করলাম মা হিজাব পরেন। এটা আমার খুব ভালো লেগে গেল এবং আমিও হিজাব পরতে শুরু করি।

জাতিসংঘে তোমার বক্তৃতা সবাই শুনেছে। ওখানকার একটা ভালো লাগার অনুভূতি শেয়ার করো।
বক্তৃতা দেয়ার অনেক আগে থেকেই জাতিসংঘের নানান কনফারেন্সে আমি যেতাম। যখন প্রথমবার বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ হলো, সেদিন ১৩ অক্টোবর ২০১৭। এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ, বক্তৃতা দেয়ার পর সবাই আমাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে দিলো। আমি প্রাউড ফিল করলাম।

দেশভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলো।
আলহামদুলিল্লাহ, দুই-তিন বছর বয়সেই আমার চীন ও মালয়েশিয়া যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। এছাড়া আমেরিকার নানান স্টেটে ঘুরে বেড়িয়েছি। আমেরিকার যে পনেরটি স্টেটে ঘুরেছি তার মধ্যে সবচেয়ে ভালো লেগেছে আলাস্কা। সেসনা অ্যারোপ্লেনের কো-পাইলট হিসেবে আমি ঘুরে বেড়িয়েছি অনেক জায়গায়। যখন প্লেন থেকে আলাস্কার দিকে তাকাই, কি সুন্দর ভিউ। মাশাআল্লাহ! আল্লাহ কী দারুণ করেই না এসব সৃষ্টি করেছেন!

তোমার সব সাফল্যের পেছনে কার অবদান/উৎসাহ সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে?
এখনো সফল হতে পেরেছি বলে মনে করি না। আমার জার্নি মাত্র শুরু হয়েছে। পৃথিবীর কতো কতো সফল মানুষ আছেন, আমি তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাই। আমি এখনো প্রতিনিয়ত শিখছি। আর এ পর্যন্ত আসতে আমাকে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট দিয়েছেন আমার প্যারেন্টস।

তোমার ‘ডায়েরি অব অ্যা মুসলিম কিড’ নিয়ে কিছু বলো।
‘ডায়েরি অব অ্যা মুসলিম কিড’ তাদের উদ্দেশ্যে ডেডিকেট করা হয়েছে যারা সাইবার বুলিংয়ের শিকার। বইয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ তুলে ধরা হয়েছে। তা হলো, ‘বি কাইন্ড, বি স্ট্রং’। অনন্যা বাংলাদেশে এই বইয়ের অনুবাদ প্রকাশ করেছে। এই বই ছাড়াও আমার আরো দু’টো বই আছে, ‘বিয়ার উইথ বিয়ার’ এবং ‘সিস্টার্স রিইউনিয়ন’।

ইসলামি জীবনযাপনে আগ্রহী হয়েছো কিভাবে?
আলহামদুলিল্লাহ, আমি একটি মুসলিম পরিবারে জন্মেছি। পরিবারের সবাইকে দেখেই আগ্রহী হয়েছি। ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবনবিধান। তাই আমি পুরোপুরি তা মেনে চলার চেষ্টা করি।

বিজ্ঞান ও আইটি বিষয়ে তোমাকে খুব আগ্রহী দেখা যায়। কী ভাবছো এ নিয়ে?
এখন তো সবকিছুই অনলাইনে হচ্ছে। এজন্য আমার কোডিং ও আইটি বিষয়ে পারদর্শী হওয়া খুবই প্রয়োজন। ভবিষ্যতে বেশির ভাগ জিনিস ইন্টারনেটের দখলে চলে যাবে, একটি ভালো জব পেতে হলেও আইটি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখতে হবে। আমি সায়েন্স আর গণিত নিয়ে কাজ করতে বেশি ভালোবাসি। ম্যাথ তো আসলে সব জায়গায়ই লাগে। ভবিষ্যতে সায়েন্স নিয়ে কিছু করার ইচ্ছে আছে।

আর কী কী বিষয়ে তোমার আগ্রহ আছে? ভবিষ্যতে কী হতে চাও আসলে?
আগেই বলেছি ম্যাথ ছাড়াও আমার আগ্রহের জায়গা কোডিং। আর্ট-ক্যালিগ্রাফিও আমার ভালো লাগার মধ্যে আছে। এছাড়া কোরআন মাজিদ হিফজ করতে চাই। ভবিষ্যতে শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। অলরেডি শিশুদের নিয়ে একটা ফাউন্ডেশনও প্রতিষ্ঠা করেছি। ইচ্ছা আছে বাবার মতো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।

পরিবারে কে কে আছেন? তাদের নিয়ে কিছু বলো।
আমার কোনো ভাইবোন নেই। বাবা-মা’র সাথে শুধু আমিই থাকি। অবশ্য দাদা বাংলাদেশে থাকেন।

আসন্ন মাহে রমজান এবং ঈদুল ফিতর নিয়ে তোমার পরিকল্পনা কী?
ইনশাআল্লাহ, এই রমজানে যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ ইবাদত করবো। কোরআন হিফজ করার কাজে সবচেয়ে বেশি এফোর্ট দেবো। আর আব্বু-আম্মুর সাথেই ঈদ করবো।
কিশোর পাতার ‘ঈদসংখ্যা’ তোমাকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যাবে দেশের অগণন শিশু-কিশোর পাঠকের কাছে। ওদের অনেকে তোমাকে জানে এবং ভালোবাসে; আবার অনেকেই নতুন করে জানবে তোমাকে। কী বলবে ওদের উদ্দেশ্যে?
সবার উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, পড়াশোনাকে ভয়ের জিনিস বানিয়ো না। এটাকে চাপ হিসেবে নিও না বরং আনন্দের একটা অংশ বানিয়ে নাও।
আমি এটাও বলতে চাই, এখন ক্লাসের বাইরে অনলাইনেও অনেক পড়াশোনা সম্ভব। তবে ক্লাসের পর যেন কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বসে থেকো না। বেশিক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকালে চোখের ক্ষতি হয়।

কিশোর পাতার পক্ষ থেকে তোমাকে ধন্যবাদ, আয়াত।
ইট’জ মাই প্লেজার। ধন্যবাদ কিশোর পাতা ও কিশোর পাতার সকল পাঠককে। আসসালামু আলাইকুম।

Share.

মন্তব্য করুন