পারিবারিক জীবনটাকে পরিপূর্ণ সুখের আমেজে ভরিয়ে রাখতে চাই আমরা সবাই। এ জন্য কত চেষ্টা আমাদের। পারিবারিক আন্তঃসম্পর্ক অর্থাৎ বাবা-মায়ের সাথে সন্তানদের, ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা ভাই-বোনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যদি ঠিকভাবে ঠিক পথে না চলে, মনোমালিন্য আর ঝগড়া-বিবাদের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বজায় থাকে, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব থাকে, তাহলে সেই পরিবারে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি হারিয়ে যায়। সুখের বদলে দুঃখ আর অশান্তি বাসা বাঁধে সেই পরিবারে। সঠিকভাবে সম্পর্কের বিকাশ না ঘটায় পারস্পরিক বোঝাপড়ায় ঘাটতি থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বার্থপরতা, অতিলোভ উদারতার অভাব, সেক্রিফাইসিং মনোভাবের ঘাটতি আমাদের পারিবারিক জীবনযাপনে অশোভন পরিস্থিতি ও ঘটনার জন্ম দেয়, যা কারোরই কাক্সিক্ষত কিংবা প্রত্যাশিত নয়। কেউ যদি পরিবারে তার অবস্থানটি ঠিকমতো প্রতিষ্ঠিত করে অন্য সবার সাথে সম্পর্ক সুন্দরভাবে বজায় রাখতে পারে তাহলে পারিবারিক জীবনে সুখ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়।

একটি পরিবারে ভাইবোনের এবং ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের সম্পর্কের বন্ধনটি পারিবারিক সুখ শান্তি স্বস্তি সমৃদ্ধি অর্জনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, অবশ্যই। সব ভাইবোনের মধ্যে শৈশব একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বুনে দেয়। এই সম্পর্কটিকে অটুট রাখার ক্ষেত্রে ভাইয়ের যেমন অনেকটা দায় থাকে তেমনি থাকে বোনেরও। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের কিংবা ভাইয়ের সাথে বোনের কিংবা বোনের সাথে বোনের ঝগড়া, ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। তবে সেসব মিটিয়ে ফেলতে হবে সঙ্গে সঙ্গে এই ঝগড়ার কারণে সৃষ্ট মনোমালিন্য, ভুল বোঝাবুঝির মাত্রা কোনোভাবেই বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। ভাই যদি ভুল পথে পা বাড়ায় তাহলে তার ভুল ধরিয়ে দেয়া এবং সঠিক পথ দেখানো অন্য ভাই কিংবা বোনের জন্য জরুরি। ভাই কিংবা বোনকে সঠিক বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে ভালোভাবে সাফল্য সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে দিতে হবে পরিবারের অন্যান্য ভাই বোনকেই। ভাইয়ে-ভাইয়ে কিংবা ভাইবোনে ঈর্ষাবোধ অনেক সময় পরিবারে অশান্তি এবং দুঃখ ডেকে আনে। সবাইকে বুঝতে হবে কোনো সম্পর্কেই খবরদারি, দখলদারি, কড়াকড়ি খাটে না, বরং পরস্পরের ইচ্ছাকে সম্মান করার মধ্য দিয়েই সম্পর্ক বেঁচে থাকে।

ভাই কিংবা বোনের মনে আঘাত দেওয়া উচিত নয় কোনোভাবেই। ভাই অথবা বোন যদি কোনো দোষত্রুটি করে ফেলে, তার ভুলের জন্য কঠিন শাস্তি না দিয়ে তাকে শুধরে নিতে সুযোগ দিতে হবে। কঠোরতা প্রকাশ কিংবা তিক্ত আচরণ এ ক্ষেত্রে সমাধান নয়। আবেগ আর সম্প্রীতিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। ভাইয়ের সাথে বোনের কিংবা ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের সম্পর্ক যতই জোরদার ও মজবুত হবে, জীবনে ততই একটা বিরাট সহায়তা ও নির্ভরতার উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে তা। ভাইয়ের কিংবা বোনের ভালোবাসা, বিশ্বাস ধরে রাখতে পারলে সেটা এক সময় অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজে লাগতে পারে। সম্পর্কটিকে সুন্দর এবং নির্ভরযোগ্য করে তোলার জন্য অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। সহিষ্ণু ভাব ধরে রাখতে হবে নিজের মধ্যে। অনেক আন্ডারস্ট্যান্ডিং, কেয়ারিং হতে হবে। ভাইয়ের কিংবা বোনের সুসময়ে যেমন পাশে থাকতে হবে তেমনি দুঃসময়ে তার পাশে শক্তভাবে সাহস মনোবল নিয়ে দাঁড়াতে হবে। ভাইয়ে ভাইয়ে, ভাই বোনে কিংবা বোনে-বোনে এক ধরনের ঈর্ষাকাতরতা দেখা যায়, যাকে বলে ‘সিবলিং জেলাসি’। এটা খুব সাধারণ ঘটনা হলেও এর ফলে অনেক সময় পরিবারে নানা জটিলতা দেখা যায়। সিবলিং জেলাসির কবল থেকে মুক্ত রাখতে হবে প্রত্যেক ভাইবোনকে।

পরিবারে বড় ভাই কিংবা বোন হিসেবে ছোট ভাইবোনদের প্রতি স্নেহ ভালোবাসা অফুরন্তভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। অনেকটা অভিভাবক হিসেবে ছোটদের গাইড করা দরকার। ঠিকভাবে ঠিকপথে চলতে বুদ্ধি পরামর্শ দিতে হবে। প্রয়োজনে শাসনও করতে হবে। বাবা-মায়ের অবর্তমানে বড় ভাই অথবা বোন হিসেবে পরিবারের নানা বিষয় দেখাশোনা করা উচিত। কোনোভাবেই নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে চলার সুযোগ নেই।
পরিবারে ছোট ভাই ও বোনেরও কিছু দায়িত্ব এবং কর্তব্য রয়েছে, এটা ভুলে গেলে চলবে না। বড় ভাই-বোনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা প্রকাশের সাথে সাথে তার ভালো মন্দ ইত্যাদি দেখা দরকার। বড়দের কাছ থেকে এক তরফা স্নেহ ভালোবাসা পাওয়া যাবে কিন্তু এর পাশাপাশি ছোটদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। এ বিষয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে যেতে হবে ছোটদের। বর্তমান জটিল জীবনযাপনে আমরা সবাই নিজেকে নিয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকছি। এটা কোনোভাবেই সুস্থ জীবন ধারার অংশ হতে পারে না। ভাই-বোনের মধ্যে সাহায্য-সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে আগে পরিবার থেকেই। এক ভাই যদি তার অন্য ভাই কিংবা বোনকে তার বিপদে-দুঃসময়ে সাহায্যের সহানুভূতির ডালা নিয়ে এগিয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই সেও এক সময় আমার অসময়ে, বিপদে-আপদে পাশে এসে দাঁড়াবে, সাধ্যমতো সাহায্য-সহযোগিতা করবে। তবেই গড়ে উঠবে একটি পারস্পরিক সুসম্পর্ক। গড়ে উঠবে একটি সুখী ও আনন্দময় পরিবার।

Share.

মন্তব্য করুন