মস্ত বড় একটি গ্রাম। গ্রামের নাম পদ্মপুকুর। এটি নওগাঁ জেলার অন্তর্গত। এই গ্রামের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে তানিয়া আফরিন তমা। সবাই তমা নামেই চিনে। তার বাবা আলতাফ হোসেন। ছোটবেলা থেকেই ওর টিভি দেখার অনেক নেশা ছিল। বিশেষ করে কার্টুন। কখনও কখনও ভারতীয় কিছু নাটক। এভাবে টিভি দেখেই যেন তার অনেক সময় চলে যায়। পড়ালেখার প্রতি একেবারে অমনোযোগী। পড়ালেখার চেয়ে টিভি দেখার প্রতি বেশ মনোযোগী। টিভির খুব কাছাকাছি বসত। মা বাবা নিষেধ করলেও শুনত না। কিছু বললেও রেগে উঠত। তাই একসময় মা-বাবাও তেমন কিছু বলে না।
প্রথমত তমাদের বাড়িতে টিভি ছিল না। প্রতিদিন অন্যের বাড়িতে দেখতে যেত। ওর বাবা ভাবল, মেয়ে হয়ে কিভাবে অন্যের বাড়িতে প্রতিদিন টিভি দেখতে যাবে? এটা মানুষ জানলেও খারাপ দেখায়। তাই নিজের বাড়িতে একটা টিভি কিনলেন। সে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে,বয়স ১২ বছর। সে জানত না বা বুঝত না তার কী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে! সে দিন ছিল ১৬ এপ্রিল ২০১৬। নির্ধারিত দিনে ওদের স্কুলে ‘ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল’ থেকে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ গিয়েছিলেন। দুই/তিন দিন আগে থেকে সবাই সে কথা শুনেছিল। তবে অনেকেই বিষয়টির প্রতি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এমনকি তমাও ভাবেনি ওর চোখের সমস্যা হয়েছে! সেও বিষয়টি এড়িয়ে চলল।
নির্ধারিত দিনে সকাল ১০টায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ এলেন। স্কুলের বিশাল বড় একটি হলরুমে চোখের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলল। সেদিন শুধু ৬ষ্ঠ শ্রেণির সকল ছাত্রী-ছাত্রী সমবেত হলো। যাহোক, পর্যায়ক্রমে বেলা ১টার সময় তমার চোখ পরীক্ষা করা হলো। ওর চোখের সমস্যা ধরা পড়ল। সে এখন অনেকটা হতাশ হয়ে গেল। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর চোখের সমস্যা ধরা পড়ল। কেউ কেউ চশমা ব্যবহার করল, কেউ কেউ করল না। তবে যাদের বেশি সমস্যা ধরা পড়ল, ওদের হাসপাতালে অপারেশন করা হলো।
তমা স্কুল থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে গেল। প্রথমে মা-বাবাকে বিষয়টি অবগত করল। তমা বলল, ‘ডাক্তার বলেছেন চোখের সমস্যা, চশমা ব্যবহার করতে হবে।’ ওর বাবা বললেন, ‘চশমা ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কারণ, মানুষ তখন চারচোখী বলবে।’ তাই তমা চশমা ব্যবহার করল না। এভাবে চলে গেল একটি বছর।
ওর বড় বোন লতা। পড়ে নার্সিং কলেজে। আগে কোনদিন শোনেনি তমার চোখের সমস্যা হয়েছে। সে একদিন কলেজ হোস্টেল থেকে বাড়ি গেল। এবার কিন্তু ওর বাবা আর বিলম্ব করলেন না। তমার চোখের সমস্যার কথা মেয়েকে জানিয়ে দিলেন। লতা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখল। যেহেতু সে সব রোগ সম্পর্কে ভালোই জানে। তাই সে অতি শিগগিরই মেডিক্যালে নিয়ে যেতে চাইল। তমা এখন পড়ে ৭ম শ্রেণিতে। এখন বয়স ১৩ বছর।
অতঃপর ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে তমাকে মেডিক্যালে নিয়ে গেল। ভাল একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখাল। সেখানেও চোখের একই সমস্যা ধরা পড়ল। ডাক্তার চমশা ব্যবহারের নির্দেশ দিলেন। আর বললেন, ‘তমা নিশ্চয়ই বেশি টিভি দেখে। তাই চোখের এই সমস্যা। তবে কারও কারও সমস্যা থাকে বংশগত।’ এরপর লতা সে দিনই বাজার থেকে তমাকে একটা চশমা কিনে দিল। অবশেষে তমা চশমা পরে বাড়ি ফিরে এলো।
সেই থেকে তমা চশমা ব্যবহার শুরু করল। আজ অবধি সে চশমা ব্যবহার করছে। তার বাবা সর্বপ্রথমে বাড়ি থেকে টিভি সরিয়ে ফেলে। তমাও এখন ধীরে ধীরে সুস্থতা বোধ করছে। টিভি দেখার প্রতি এখন একটুও নেশা নেই। এমনকি কারও বাড়িতেও আর টিভি দেখতে যায় না। সে এখন নিয়মিত পড়ালেখা করে। নিয়মিত স্কুলে যায়। সে ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে, টিভি দেখার জন্যই আজ তার এই চোখের সমস্যা। সবাইকে এখন সে বুঝাতে পারে টিভি দেখার পরিণতি কী!