ঘুম ভাঙার পর থেকে আদনান ঘোরের মধ্যে আছে। অনেক দিন পর মাকে স্বপ্নে দেখেছে সে। একটু অন্যরকম লাগছে। মনে হচ্ছে একটু আগেও মা পাশে ছিল। বন্ধুর ডাকে সম্বিত ফিরে পায়। মনটা তখন আরো খারাপ হয়ে যায়।
: এই আদনান কী ভাবছিস? স্কুলে যাবে না?
: না রে। আজ ভালো লাগছে না।
: কী বলিস এসব। আজতো ম্যাথের নতুন চ্যাপ্টার বুঝিয়ে দিবেন সায়েম স্যার।
: মন ভালো না থাকলে কি অঙ্ক বুঝা যায়, বল।
: তোর আবার কী হয়েছে। কেউ বিচার টিচার দিছে নাকি? দিলেই আর কী হবে এটাতো তোর রুটিন হয়ে গেছে।
: নারে এমন কিছু না। এমনিতেই মন ভালো নেই।
: আমাকে কোনো কিছু লুকাচ্ছিস, তাই না?
: বললেওতো তোরা বিশ্বাস করবে না!
: কে বললো বিশ্বাস করবো না? আমি তো আর রুমেলের মতো না। কখনো কি তোর কথা অবিশ্বাস করেছি বল?
: না, তা করিস নি। তবে?
: কোনো তবে নেই। বল্।
: কাল রাতে আমি মাকে স্বপ্নে দেখেছি। জানিস্, মা কি বলেছেন? মা আমার মাথায় হাত দিয়ে বলেছেন, বাবা তুই এখন অনেক বড় হয়েছিস। এবার দুষ্টুমি ছেড়ে দে। তোর বাবার বয়স হয়েছে, তোকে নিয়ে সারাক্ষণ টেনশন করে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আর কী বলেছেন জানিস?
: না বললে জানবো কেমন করে!
: মা কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছেন, তোর ছোটবোনটাও এখন বড় হচ্ছে। তুই দুষ্টুমি না ছাড়লে সেও দুষ্টু হয়ে যাবে। আমিতো দুনিয়া থেকে চলে এসেছি, এখন তোমরা বাবা-ছেলে মিলেই সাদিয়াকে দেখবে। মা মরা মেয়ে। তারপর মা আমাকে তার বুকে জড়িয়ে বললেন, তোর বোনের যেন কোনো কষ্ট না হয়, বাবা। এরপরেই আমি জেগে যাই। আজ কতদিন পর মাকে দেখলাম।
: আসলেই আদনান। আমিও কয়েকদিন থেকে এমনটা ভাবছি। আমরা এখন স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়র। আর আমরাই যদি এমন কাজ করি তাহলে আমাদের ছোটরা আমাদের কাছ থেকে ভালো কিছু শিখতে পারবে না।
: দেখিরে! একটু ভাবি। তুই স্কুলে চলে যা। আমি কাল যাবো। বিকেলে আসার সময় খাতাটাও নিয়ে আসিস। আর স্যার কিছু জিজ্ঞেস করলে বলিস অসুস্থ।
: অসুস্থ বলবো?
: না, মিথ্যা বলার দরকার নেই, শুধু বলবে কালকে আসবো।
: আচ্ছা।
রাহাদ যাওয়ার পর থেকেই আবারো চিন্তার জগতে হারিয়ে গেল আদনান। এইতো গতকাল বাবা তাকে অনেক বকেছেন। বকা দেয়ার কিছুক্ষণ পর কি একটা কাজে সে বাবার রুমের পাশে গিয়েছিল। দেখে বাবা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। বাবা তাকে বকা দিলেও কখনো তার কোনো চাহিদা অপূর্ণ রাখেননি। দুই বছর আগে মা মারা গেলেও মায়ের কোনো অভাব বুঝতে দেননি।
আদনানের স্মৃতির জানালায় একেকটা ঘটনা মনে পড়ছে। এভাবে সে কতক্ষণ বসে ছিল মনে নেই। চোখে পানি এসে গেছে। হঠাৎ ছোট বোনের কথায় বাস্তবে ফিরে আসল আদনান।
: এই ভাইয়া তুই স্কুলে যাস নি? তোর চোখে পানি কেন? আব্বু আজকেও তোকে বকেছে, তাই না? তোকে এতবার বারণ করার পরও তুই এমন করিস কেন বলে আদিবাও কেঁদে দিল!
: এই আদিবা তোর আবার কী হল, তুই কাঁদছিস কেন? আর আব্বু বকেছে এটা তোকে কে বলল? আমিতো কাঁদছি না। চোখে মনে হয় কিছু পড়েছে, তাই চোখে পানি এসে গেছে।
: কী বল ভাইয়া, দেখি দেখি চোখটা দেখাও। ওমা এ কি! চোখটা একদম লাল হয়ে গেছে। কি পড়েছে তুমি বুঝতে পার নাই? কবে যে তুমি বুঝতে পারবে!
আদিবার এমন কথায় আদনান হেসে দিল। উপলব্ধি করল ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসা।