মাঘের শৈতপ্রবাহ যখন শেষের দিকে, চারদিকে বসন্তের আগমনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে তখন আমরা দুই ভাই পরিবারসহ ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলাম গত ২৮ শে জানুয়ারি ’২৩ সকাল ৭টায় নতুন ঐর অপব মাইক্রো নিয়ে। শেষ রাতে উঠে প্রার্থনা শেষে গোছগাছ শুরু হলো। তারপর গাড়ি এসে অপেক্ষা করছে। গাড়িচালক কল করতেই আমরা বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। যাত্রা শুরু হলো আমরা যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া উজান ভাটি রেস্টেুরেন্টে পৌঁছালাম তখন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। ফ্রেশ হওয়ার পর সকালের নাস্তা গ্রহণ করলাম। তারপর কফি পানের পালা। যখন শায়েস্তাগঞ্জ পৌঁছালাম সেখানে ওলিপুরে শুয়ে আছেন বিখ্যাত ওলি হযরত শাহ সোলেমান ফতেহ শাহ গাজী (রহ:)। তিনি বাগদাদ থেকে এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি বাংলাদেশে আগত ১২ আউলিয়ার একজন। বিখ্যাত ওলি হযরত শাহ সোলেমান ফতেহ শাহ গাজী (রহ:) এর মাজার জিয়ারত শেষে আমরা বেরিয়ে পড়লাম শ্রী মঙ্গলের উদ্দেশে। গাড়ি ছুটে চলল উঁচু নিচু পাহাড়িয়া পথ বেয়ে। দুই পাশে চা বাগান। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় শ্রীমঙ্গলে। সেখানে গভীর বন পাহাড় মাঝে মাঝে সাইন বোর্ডে লেখা বন্য প্রাণীর এলাকা সাবধানে চলাচল করুন। আমরা পাহাড় পাড়ি দিয়ে পৌঁছালাম লাওয়াছাড়া শুটিং স্পটে। আরও একটু দূরে জঙ্গলি পথ পাড়ি দিয়ে একটা ফাঁকা ময়দানে যেয়ে হাজির হলাম। তারপর বাসা থেকে রান্না ভাত, নুডুলস কোক, ডিম মুরগির রোস্ট নিয়ে মাঠে বসে পড়লাম গামছা বিছানোর পর। বনে ভোজন করতে কত মজা তা না গেলে বোঝা যাবে না। আমাদের চাঁদা ধরল মাথা পিছু ১৭ টাকা। পরবর্তীতে নিতে অস্বীকার করাই আমরা তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বিদায় দিয়ে ছিলাম। চা বাগান দুটি কুঁড়ি, একটি পাতা মাঝে মাঝে উঁচু উঁচু পাহাড় ঢালু পথ বড় গাছ। আমরা বাগান থেকে প্রস্তুত চা শাপলা টি হাউজ ভানু গাছ রোড শ্রীমঙ্গল থেকে কিনলাম তিন কেজি। প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা। তিন কেজি ১৬৫০ টাকা। শ্রী মঙ্গলে সাত রংয়ের চা দেখতে পেলাম। কত স্বাদ আছে যে চায়ে তা একমাত্র সৃষ্ঠিকর্তাই জানে। শুটিং স্পটে সাপ, জঙলি পশু পাখি, বানর, সাপ, দেখলাম যা আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করে ফেলেছিল। ছোট ভাইয়ের মেয়ে অর্থি বলে ফেলল চাচ্চু এখানে সাপ আছে। সাবধানে চল। সে বানর দেখে ভয় পেয়েছিল।

পাহাড় জঙ্গল পথ পাড়ি দিয়ে আমরা আসার সময় টি কন্যার সাথে ছবি না তুলে পারলাম না। যা মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত। স্ত্রী মঙ্গলের চা বাগানের সৌন্দর্য এবং জঙ্গলি প্রাণীবেষ্টিত পাহাড়িয়া জঙ্গল আমাদের আকৃষ্ট করেছিল। আমরা বিকাল চারটার সময় ঐর অপব মাইক্রো নিয়ে শ্রীমঙ্গল থেকে যাত্রা করলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে। পথে শ্রীমঙ্গলের আনারস আটটি কিনলাম ৪০০ টাকা দিয়ে। যার স্বাদ এত মধুর এত মিষ্টি এবং রসে ভরা সুসাদু যা ভুলবার নয়। আমরা ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিলে পথে সার্জেন্টের সাথে মোকাবেলা করতে হয়েছিল। আমাদের গাড়ি থামিয়ে রাখছিল আধা ঘণ্টা। আমরা বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে ছিলাম। গাড়িচালক বলল আমাদের গাড়ি চট্টগ্রাম রোডের সিলেট রোডের নয়। কিন্তু সারা বাংলাদেশ চলার পারমিশন আছে। মনে হয় সার্জেন্ট হয়রানি করে খামাখা আমাদের যাত্রাকে তিক্ততার সৃষ্টি করেছিল। এই ধরনের পুলিশ অফিসার দেশের জন্য মঙ্গল নয়। গাড়ি ছুটে চলল ঢাকার উদ্দেশে। পথে উজান ভাটি রেস্টুরেন্ট আবার ফ্রেশ হওয়ার পর আইসক্রিম, ফিরনি, দই, চা খেলাম। অবশেষে রাত ১০টা ২০ মিনিটে আমরা কেরানীগঞ্জ ঢাকা বাসার সামনে এসে পৌঁছালাম। আমাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটল। শ্রীমঙ্গলের চা শ্রীমঙ্গলের আনারস বাংলাদেশ খ্যাত। আমরা এটা খেয়ে বহুদিন ভুলতে পারব না। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের কাছাকাছি যাওয়া ভ্রমণটি আমাদের মনের মণিকোঠায় চিরকাল জাগরিত থাকবে।

Share.

মন্তব্য করুন