পরীক্ষায় ভালো করতে হলে । অধ্যাপক রাশেদ মাহমুদতোমাদের সামনে শুধু পরীক্ষা আর পরীক্ষা। অষ্টম শ্রেণীতে যারা আছো তারা অন্তত একটা পাবলিক পরীক্ষা দিয়ে এখানে এসেছো, কিন্তু পঞ্চমে এবার সমাপনী দিচ্ছো যারা তাদের তো আসলে প্রথমবার। তাই দেখে-শুনে পরীক্ষা দিতে হবে কিন্তু। তোমাদের নিশ্চয় অনেক স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন ছাড়া কে বাঁচে বলো? তুমি যতটুকু স্বপ্ন দেখবে ততটুকু বড় সফলতা পাবে। পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণীর পর কোথায় ভর্তি হবে? উপজেলার সবচেয়ে বড় ইশকুলে, নাকি দেশের সবচেয়ে বড় ইশকুলে? তোমার রেজাল্টই তোমাকে নিয়ে যাবে যেখানে যাওয়ার।

পরীক্ষার আগের সময়টুকুতে যা করবে
রুটিন : চাইলে রুটিন করে পড়তে পারো। রুটিনে যদি তোমার অভ্যাস না থাকে জোর করে রুটিন করতে যেও না। নিজের মতো পড়ো। ধরো ২ দিনে বাংলা বই, ৪ দিনে ইংরেজি বই- এভাবে পড়ো। নতুন কিছু না শেখাই ভালো আগের পড়াগুলোকে রিভিশন দাও।
খাবার : খাবারের ব্যাপারে ইচ্ছেমতো খাও। ‘ডিম-কলা খেলে পরীক্ষায় গোল্লা পাওয়া যায়। এটা খেলে ওটা হয়’- এসব ব্যাপার মাথায় নিও না। বরং তোমার পছন্দের খাবার বেশি খাও। কিছু খাবারে পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। কচু, ফলমূল এ সমস্ত জিনিস বেশি খাও। ডিম দুধ নিয়মিত খেতে পারো।
পরিশ্রম : দৈহিক পরিশ্রম এড়িয়ে যাও। অবশ্য এ সময় মা-বাবাও চান না যে তোমরা ঘরের কাজকর্ম করো। সাইক্লিং-ব্যায়াম এগুলো কম কম করো। সময় যেন কম নষ্ট হয়- সেদিকে খেয়াল রেখো।
স্মার্ট ডিভাইস : মোবাইলটা একদম বন্ধ না করলেও চলে। আর হাতে যখন ফোন আছে তা নিশ্চয়ই স্মার্টফোন! এই এক মাস ফোন না ছুঁয়ে দেখো, জীবনটা সুন্দর হয়ে যাবে। কম্পিউটার থেকেও দূরে থাকো। মাঝে মধ্যে অনলাইন টিউটোরিয়াল দেখতে হলে ডাউনলোড করে রাখো। বন্ধ রাখো বাসার ওয়াইফাই কানেকশন। একটা মাসই তো!

যা না করলে ভালো হয়
এই রে! উপদেশ দেওয়া শুরু করলাম না তো! পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজ কাজ উপদেশ দেওয়া। আর কঠিন কাজ সেই উপদেশ মেনে চলা। সহজ কাজটিই করি। কঠিন কাজ দিয়ে দিচ্ছি তোমাদের জন্য। এগুলো কিন্তু উপদেশ নয়। চাইলে তুমি এভাবে করতে পারো। আর না চাইলে নিজের মাথা খাটিয়ে নতুন পথ বের করে নাও। বিজয়ীরা আলাদা কোনো কাজ করে না। আমি-তুমি যেই কাজ করি সেই একই কাজ তারা ভিন্নভাবে করে।
১. আগেই বলেছি মোবাইল থেকে একটু দূরে থাকো
২. নতুন কিছু শেখা মোটেই কাজের কাজ নয়।
৩. ৬ ঘণ্টার কমবেশি ঘুমানো যাবে না। দিনে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টা ঘুম, ৬ ঘণ্টা খাওয়া-দাওয়া গোসল আর ১২ ঘণ্টা পড়া। এক দিনের অর্ধেক যদি কাজে না লাগাতে পারো তবে তো দিনটাই মাটি।
৪. অনুশীলনীর উত্তর দেখে দেখে প্র্যাকটিস করার সময় এখন না। এখন বরং মডেল টেস্ট ও পূর্বের বছরগুলোর প্রশ্নগুলো দেখো, কাজে আসবে।

পিইসি/ইবতেদায়ি পিইসি/ইবতেদায়ি 
ধরো, তোমাদের প্রশ্ন এসে পড়লো পিইসি মানে কী? পূর্বে এর নাম কী ছিল? কবে থেকে এটি পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে গণ্য হয়- ঠিক ঠিক পারবে তো? যাকগে, আমি আবার অতোশতো পারি না। খালি পারি তোমাদের পিঠের উপর পড়াশোনার বিশাল বস্তা চাপিয়ে দিতে। এই কিশোর পাতা যেদিন পাচ্ছো ঐদিন অক্টোবরের ১ তারিখ। আর তোমাদের পরীক্ষা শুরু নভেম্বরের ১৭ তারিখ। সময় পাচ্ছো মাত্র ৪৭ দিন। মানে একদম সময় নেই। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক, মানে ২৩/২৪ দিন যদি ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারো তাহলেই পোয়াবারো।
ইংরেজি : তোমাদের প্রথম পরীক্ষা ইংরেজি। ইংরেজিতে যে সমস্ত অনুচ্ছেদ থাকে তার অর্থ বোঝা খুব জরুরি। অর্থ বুঝে তারপর প্রশ্নগুলোর দিকে তাকাও। সময় ভাগ করে নিলেই সুবিধা হয়। অনুচ্ছেদ থেকে যে সমস্ত প্রশ্ন আসবে তা একটু মাথা খাটালেই লিখতে পারবে। এরপর কিন্তু একটা আনসিন প্যাসেজ মানে অজানা অনুচ্ছেদ থাকবে। এর অর্থ বুঝে খুব ভালো মতো উত্তর লিখতে হবে। কারণ সবার জন্যই এটা অচেনা অচেনা লাগে। শূন্যস্থান পূরণ তো খুব মজার জিনিস। বক্স থেকে শব্দ নাও আর উত্তর মিলাও। প্রথমে যে যে শব্দের সাথে ভালো পরিচয় আছে ওগুলো বসিয়ে দাও। তারপর দুয়েকটা অচেনা শব্দ মিলাতে কষ্ট হবে না। True or False. এ খুব একটা কষ্ট করতে হবে না। False হলে সঠিকটা লিখতে হবে। পত্র লিখনে খাম আঁকতে পারো, না আঁকলেও ক্ষতি নেই। বেশ বড় না করলেই ভালো। এক পৃষ্ঠার বেশি লিখলে পাশাপাশি পৃষ্ঠায় লিখবে। ব্যস! বাকিটুকু মাথা খাটালেই ইংরেজিতে A+।
বাংলা : বাংলার জন্য মোটেই হেলাফেলা নয়। বাংলাতে সবচেয়ে কষ্টকর বিষয় হচ্ছে সময় মতো শেষ করা। দেখা যাবে সময় শেষ কিন্তু ফুল আনসার হলো না। কি যে কষ্ট! সুতরাং বাংলাতে সময় দেখে দেখে লিখো। কোনোভাবেই বসে থাকা চলবে না। বেশি ভাবাও চলবে না। পয়েন্ট আকারে লিখলে বাংলায় সবচেয়ে ভালো করা যায়। আর নানারকম উদ্ধৃতি তোমার খাতাকে অন্যদের চেয়ে আকর্ষণীয় ও আলাদা করে তুলবে। বাংলায় A+ তোলা বেশ কঠিন। তবুও শতভাগ উত্তর ও আলাদা ধরনের লেখা তোমাকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং বিজ্ঞান : এই বিষয়গুলোর জন্য খুব বেশি সময় মেনটেইন না করলে সমস্যায় পড়তে পারো। এখানেও বাংলার মতো সময় ধরে ধরে লিখবে। এ ছাড়া এখানে যে সমস্যায় পড়তে পারো তা হচ্ছে বিভিন্ন সাল, সংস্থাগুলোর নাম- এগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। বিজ্ঞানে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখবে তা হচ্ছে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য যেগুলো দরকারি জিনিস- ওগুলো মনে রাখতে হবে। বিজ্ঞানীদের নাম মনে রাখা খুব জরুরি। বিজ্ঞান বিষয়ে ভালো করতে হলে সাজেশন ও মডেল টেস্টগুলো দেখতে পারো। এগুলো কাজে লাগবে। তবে স্যারেরা যেগুলো আন্ডারলাইন করিয়ে দিয়েছেন কিংবা তুমি যেগুলোতে আন্ডারলাইন করেছ ওগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে চোখ বুলিয়ে নাও।
ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা : ক্লাসে হুজুর স্যার যে সমস্ত আয়াত এবং বিধি-বিধানের প্রতি নজর দিতে বলেছেন ওগুলো বারবার পড়ো। এই বিষয়ে A+ পেতে চাইলে বিভিন্ন আয়াত এবং আয়াতের অনুবাদ পাঠ্যবই থেকে শিখতে হবে। এ ছাড়া ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়গুলো ভালোমতো পড়বে। তোমরা যারা হিন্দু-বৌদ্ধ কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় পুস্তকের উপর ক্লাস করেছ ঐ সমস্ত ধর্মগ্রন্থের শ্লোক-লাইন ভালোভাবে মনোযোগ দিয়ে রিভাইস দাও। সাফল্য তোমার হাতেই।
গণিত : সব ভালো যার শেষ ভালো তার। গণিত বিষয়ের মধ্য দিয়েই এক সপ্তাহের কষ্টকর ভ্রমণ শেষ করবে তুমি। আর শেষ দিকে আমাদের মন কেমন উড়ু উড়ু থাকে। প্রথম দিকের মতো সিরিয়াস থাকে না। মোটেই হেলাফেলা করো না। গণিতের সূত্রগুলো বড়ই ডেঞ্জারাস। কখন কোন জায়গায় গুবলেট পাকিয়ে ফেলে তার ঠিক নেই। সুতরাং সূত্রগুলো সাদা কাগজে লিখে টাঙিয়ে রাখো। প্রতিদিন একবার চোখ বুলাও। প্রশ্ন আগে বুঝতে হবে। সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন থেকেই শুরু করতে হবে। যে প্রশ্নটা তুমি সবচেয়ে ভালো পারো তা দিয়েই শুরু করো। আস্তে ধীরে মাথা ঠাণ্ডা রেখে করো। প্রচুর সময় হাতে। জ্যামিতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজ হচ্ছে প্রশ্ন কী চায় তা বুঝে নেয়া। পেনসিল রাবার বন্ধুদের থেকে নেওয়া খুব ঝামেলার কাজ। আরেক জনকে কিছু জিজ্ঞাসা করছো ভেবে পরীক্ষার খাতা নিয়েও ফেলতে পারেন হল পরিদর্শক। সুতরাং এসব জিনিস হাতের কাছে রাখো। লসাগু ও গসাগু থেকে প্রশ্ন আসবেই। সাধারণ ভগ্নাংশ সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য অনুশীলনই বার বার প্র্যাকটিস করো। অনুশীলনী ৮ বারবার কষলে গড় থেকে যে প্রশ্ন আসবে তাই পারবে। শতকরা দশমিক এগুলোর ক্ষেত্রে (%) ও (.) এই চিহ্ন দু’টির ব্যবহার করতে সতর্ক থাকতে হবে। রাফ পাতা হিসেবে শেষ পৃষ্ঠা ব্যবহার করতে পারো। গণিতে নম্বর কাটা যায় না। ভুল করলে নম্বরও পাওয়া যায় না। সুতরাং বি কেয়ারফুল।

ইবতেদায়ির জন্য অতিরিক্ত বিষয়
তোমাদেরও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১৭ নভেম্বর । উপরে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা আছে সেগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে। এ ছাড়া তোমাদের যে দু’টি অতিরিক্ত বিষয় আছে তা নিয়ে আলোচনা করি।
আরবি : আরবি বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ছেলে A+ মিস করে। মোটেই ভুল করা চলবে না। এখানেও যেহেতু ইংরেজির মতো সীন-আনসীন বা চেনা অনুচ্ছেদ ও অচেনা অনুচ্ছেদ আছে, সেহেতু পাঠ্যবইয়ের শুরুতে যে কয়েকটি অনুচ্ছেদ দেয়া আছে সেগুলোর দিকে বেশি নজর দিবে। অচেনা অনুচ্ছেদের জন্য তোমরা আরবি কবিতাগুলো থেকে প্র্যাকটিস করতে পারো। আরবিতে যে অর্থ ভালো পারে মুন্সিয়ানা দেখাতে পারে সে-ই। সুতরাং বেশি বেশি শব্দের অনুবাদ করো। দেখবে প্রশ্নে চেনা-অচেনা বলতে কিছু নেই, সবই চেনা। বাক্যগঠন ভালোভাবে করা শিখো, পুরো পরীক্ষায় কাজে লাগবে। উত্তর শেখার চেয়ে মাথা খাটাও। কাজে দিবে।
কোরআন মজিদ এবং আকাইদ ফিকহ : স্কুলের ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার পরিবর্তে একই দিনে তোমরা এই পরীক্ষাটি দিবে। কোরআনের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে প্রচুর আয়াত ও আয়াতের অনুবাদ। আর আকাইদ ফিকহ সম্পর্কে তোমরা আইন-কানুনগুলো ভালো করে দেখে নিতে হবে। মাসআলা-মাসায়েলগুলো তথ্যসূত্রসহ উল্লেখ করলে বেশি নম্বর পাবে।

পিইসি ও ইবতেদায়ীর জন্য শেষ কথা
তোমরা সমাপনী পরীক্ষার পরই কিন্তু ভালো একটা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। ক্লাস সেভেন থেকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি নেয়। মাদ্রাসা-স্কুল সবখান থেকেই যেতে পারবে। ক্লাস ফাইভের পরপর প্রস্তুতি নাও। আর সিক্স-সেভেন থেকে ভর্তি নেয় বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), যেখান থেকে সাকিব তামিমরা উঠে এসেছেন। তাহলে আর দেরি কেন? এখন থেকেই প্রস্তুতি নাও। ভালো রেজাল্ট সে প্রস্তুতিতে তোমাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

জেএসসিজেএসসি/জেডিসি
বন্ধুরা! কিশোর পাতা যেদিন হাতে পাচ্ছো তার ঠিক এক মাস পরে তোমাদের জেএসসির মহারণ। চারদিকে একটা চাপ চাপ ব্যাপার। কিন্তু মোটেই চাপ নিবে না তোমরা। একটা পরীক্ষাই তো। দিনশেষে কতো হাজারো পরীক্ষা হবে। এ তো সবে শুরু। জেএসসি যারা দিচ্ছো তাদের প্রথম পরীক্ষা বাংলা আর জেডিসি যারা দিচ্ছো বাংলা তাদের শেষ পরীক্ষা। কী দারুণ ব্যাপার তাই না? এসো তাহলে বাংলা নিয়ে কথা বলি।
বাংলা : সৃজনশীল মানেই প্যারা, তার উপর ৭টা সৃজনশীল। উফ! লিখতে লিখতে হাত ব্যথা। এর উপর সময় যেন আকাশে ওড়ে। যাকগে, এমনও রেকর্ড আছে ভুলক্রমে ৮টা সৃজনশীল দিয়েও চলে আসছে অনেকে। সুতরাং ৭টা সৃজনশীল তো একদমই সহজ। সৃজনশীলে সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় পদ্যে। পদ্য অর্থাৎ কবিতা ভালোভাবে পড়লে সৃজনশীল লিখতে মোটেই অসুবিধা হবে না। আর সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখবে। ৭টা সৃজনশীল তার উপর আবার ইয়া বড় একটা রচনা, কিচ্ছু বাদ দেওয়া চলবে না।
ইংরেজি : সীন-আনসীনে যে সমস্যাটা হয় তা হলো উত্তর খুঁজে বের করা। এ জন্য যেটা করতে হবে- প্যাসেজটা ভালোমতো মাথায় তুলে নিতে হবে। মানে প্যাসেজের আদ্যোপান্ত মনে রাখতে হবে। শব্দের অর্থ ও Key point গুলো মাথায় রাখতে হবে। ধরো, প্যাসেজে সাল দেওয়া আছে। এই জিনিসটা মনে রাখতে হবে। গ্রামার ভালোমতো পারলে আর্টিকেল, সেনটেন্স চেঞ্জিং, স্পিচ চেঞ্জিংয়ে সমস্যায় পড়ার কথা না। ১৩ নম্বর প্রশ্নটা অনেকে ছেড়ে আসে। কোনো প্রশ্ন ছেড়ে আসা যাবে না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি : এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশে কী ধরনের উন্নয়ন ঘটছে এবং সারা বিশ্বে এর প্রভাব। প্রশ্ন আসতে পারে পিপীলিকা কোন দেশের সার্চ ইঞ্জিন, ইয়াহু, জিমেইল সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে আর পাঠ্যবইয়ের চেয়ে তোমার ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান কতটুকু বেশি সেটি কাজে লাগবে।
ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা/ধর্ম শিক্ষা : ধর্ম সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকলে এই সাবজেক্টে ভালো ফল সম্ভব। সুতরাং পাঠ্যবইয়ে যে সমস্ত আয়াত দেওয়া আছে ওগুলো ভালোভাবে পড়লে সবচেয়ে ভালো মার্ক পাওয়া সম্ভব। ভুলেও সময় নষ্ট করা চলবে না। এই সাবজেক্টে  A+ পাওয়া সহজ। কিন্তু তুমি কতটুকু দিতে পারছো মূলত তার উপরই নির্ভর করবে ভালো করা। এ ছাড়া যারা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের পাঠ্যবই পড়েছ তারা শ্লোক লাইনগুলো ভালো করে পড়ো। ধর্ম আমাদের যে নৈতিকতা শেখায় তা না জানলে ধর্মকে ভালোবাসতে পারবে না। শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্যও এই পাঠগুলো শেখা জরুরি।
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় : বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় হচ্ছে সবচেয়ে দারুণ একটা সাবজেক্ট। চাইলে সহজেই A+ তুলে নিতে পারো এখান থেকে। গুরুত্বপূর্ণ সালগুলো ভালো করে পড়ো। মনে রাখবে সাল তারিখ এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বিশ্বের বড় সংস্থাগুলো ও তাদের নামের ইতিহাস- এগুলো সমান গুরুত্বপূর্ণ।
গণিত : গণিত এমন একটি বিষয় যে মজা পায় সে মজায় মজায় শিখে, আর যে মজা পায় না সে সারাদিন গণিত করলেও কিচ্ছু ভালো লাগে না। গণিতকে আগে ভালোবাসা খুব জরুরি। গণিতের যে ভয় ছিলো তা এতদিনে নিশ্চয় তোমরা জয় করে ফেলেছো। গণিতে ভালো করার উপায় একটাই, গণিতকে ভালোবাসা। অধ্যায়ভিত্তিক অনুশীলন তোমাদের নিশ্চয় শেষ। এবার টেস্ট পেপার সলভ করতে বসে যাও। ফাইনালি বিগত বছরগুলোর যে সমস্ত প্রশ্ন ছিল ওগুলো সব শেষ করলে খুব ভালো করা সম্ভব হবে। গণিত এমন একটা বিষয় যেখানে অঙ্ক হলে কোনো নম্বর কাটা যায় না। আবার অঙ্ক না হলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কাটা যায়। কোনো নম্বর পাওয়া যায় না। সূক্ষ্ম একটি সূত্রের জন্য তোমার একটা অঙ্ক শেষ হয়ে যেতে পারে। সূত্রগুলো সাদা কাগজে লিখে রুটিনের পাশে টাঙিয়ে নাও। অনুশীলনের বিকল্প নেই গণিতে।
বিজ্ঞান : জেএসসির শেষ পরীক্ষা বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মানেই ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজির হালকা স্বাদ পাওয়া। কারণ এর পরেই তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে- বিজ্ঞানের বিশাল দুনিয়ায় তুমি থাকবে কি না। নাকি বেছে নিবে ব্যবসায় শিক্ষা অথবা মানবিক বিভাগ। জেএসসিতে বিজ্ঞানে যে A+ পায় না তাকে ক্লাস নাইনে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে কষ্ট করতে হয়। আর যারা বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাও তাদের জন্য ক্লাস এইট গুরুত্বপূর্ণ সময়। কারণ বিজ্ঞানের মূল ভিত রচিত হয় এখানে। নইলে ক্লাস নাইনে গিয়ে কিছুই বুঝতে পারবে না। সুতরাং বিজ্ঞান শুধু জেএসসির জন্যই নয়। ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও পড়ো।

জেডিসি

 

জেডিসির জন্য অতিরিক্ত বিষয়
কোরআন মজিদ ও তাজবিদ : কোরআন ও তাজবিদ বিষয়ে সূরার আয়াতগুলোতে ফোকাস করতে হবে। আয়াতের সারমর্ম, শানে-নুজুল এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরীক্ষার খাতায় এগুলো লেখার সময় কোনোভাবে অল্প জানা থাকলে চলবে না। এ ছাড়া যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো তাজবিদ বিষয়ে বেশির ভাগ সময় হোঁচট খেতে হয়। তাজবিদের নিয়ম-কানুন জানা না থাকলে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাজবিদ বিষয় খুব ভালোভাবে জানা থাকতে হবে।
আকাইদ ফিকহ : তোমাদের দ্বিতীয় পরীক্ষা হচ্ছেআকাইদ ফিকহ। স্বাভাবিকভাবে এখানে ফিকহী বিষয়ে মাসআলা-মাসায়েল থাকবে। এগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে ইমামদের মতানৈক্য আছে ঐ বিষয়গুলো থেকে প্রশ্ন আসার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং এই বিষয়টাও ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে। ইমামদের পরিচয় আসতে পারে। বিশেষ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ) সম্পর্কিত ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।
আরবি প্রথম : আরবি প্রথম পত্রে গদ্য ও পদ্য সম্পর্কিত প্রশড়ব আরবিতে করা হবে। বইতে পড়ার সময় প্রত্যেক শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে নস বা প্যাসেজগুলো সহজ মনে হবে। প্রশ্নে কী চায় ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। উত্তর দেওয়ার পর উত্তরটা পড়ে দেখতে হবে। কোথাও অক্ষর বাদ পড়ে যেতে পারে।
আরবি দ্বিতীয় : আরবি দ্বিতীয় পত্রের জন্য প্রচুর ছেলের A+ মিস হয়। মোটেও ভুলে যেও না বিষয়টা কতোটা কঠিন। কিন্তু একটু মনোযোগ দিলেই এই বিষয়ে ভালো করা সম্ভব। নাহু-সরফের যে সমস্ত কায়দা বা রুল আছে ওগুলো বারবার প্র্যাকটিস করলে আরবি দ্বিতীয় পত্রে A+ তোলা সম্ভব। রচনা লেখার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন অর্থের পরম্পরা ঠিক থাকে। আরবি দ্বিতীয় পত্র খুব ভালোভাবে পড়লে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
এই যা! তোমাদের অনেক সময় নিয়ে নিলাম! এই পরীক্ষার সময়টাকে নষ্ট করে দিলাম না তো? উপদেশ দেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। কঠিন। হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি। যদি তোমরা কিছুটা উপকার পাও তাহলে লেখাটা সার্থক। আর তোমরা খুব খুব ভালো কিছু বয়ে আনো দেশের জন্য এই কামনা। এই দেশ তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
তোমাদের কথা লেখার জন্য তোমাদের কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছে টেলিভিশনগুলো, পত্রিকাগুলো, তোমরা দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে অলিম্পিকে, গণিত অলিম্পিয়াডে। তোমাদের দিকে তাকিয়ে আছে মা-বাবা ও দেশ। তাদের হতাশ করো না।

Share.

মন্তব্য করুন