দূরের গ্রামটিতে এক কাঠমিস্ত্রি তার স্ত্রী পুত্র আর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে থাকে। সে তার বাবার সাথে খুব একটা ভালো ব্যবহার করে না। নোংরা মাটির বাসনে সামান্য খেতে দেয়, যা তার ক্ষুধা মেটানোর জন্য যথেষ্ট না। আবার তার যথাযথ খোঁজখবরও নেয় না। অভাবের কারণে যে এমন করে তাও না। একটু ফ্রি হয়েই বৃদ্ধ বাবার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। আচ্ছামতো গালমন্দ করে। বৃদ্ধ চুপচাপ সয়ে যান। ভালো মন্দ কিছুই বলেন না।
কাঠমিস্ত্রির ছেলেটা তার বাবার মতো না। খোশমেজাজের মিষ্টি ছেলে। সে দাদুকে খুব ভালোবাসে। দাদুমণিই তার বন্ধু। বাবার দুর্ব্যবহারে সেও কষ্ট পায়। অনেক সময় বাবার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধও হয়, কিন্তু ছোট বলে কিছু করতে পারে না।
একদিন সকালের নাশতা খেতে গিয়ে অনিচ্ছায় বৃদ্ধের হাত থেকে মাটির বাসনটি পড়ে যায়। মেজেতে পড়ে একেবারে কারবার সারা। টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যায় অনেক জায়গা জুড়ে। তা দেখে বৃদ্ধ বাবার ওপর রেগে যায় কাঠমিস্ত্রি। ক্রুদ্ধ হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। রাগে ক্ষোভে যেন নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু বৃদ্ধ মুখ খুলে কিছুই বলেননি।
আফসোস! বৃদ্ধ পুরনো মাটির বাসনটি ভেঙেছে মাত্র, আর ছেলেটা তার মনটাকেই চূর্ণবিচূর্ণ করে ছেড়েছে। ছেলের রাগ উপশম করার মতো কোনো মন্ত্র তার কাছে নেই। চোখের অশ্রু গাল বেয়ে বুক ভেসে যায়। কী আর করা, নীরবেই সয়ে নিলো এবারও।
নাতিটা এবারের ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছে। অসহায় দাদার ওপর এমন অমানবিক নির্যাতনে সে ভীষণ কষ্ট পায়। ছোট বলে বাবার সামনে দাঁড়াতে সাহস করে না।
পরের দিন মিস্ত্রি অভ্যাসমতো কাজে গেল। দেখে ছোট্ট সোনাটা হাতুড়ি দিয়ে কাঠ ঠুকে ঠুকে কী যেন বানাতে চাইছে।
বাবা : আব্বু, কী বানাচ্ছ?
ছেলে : কাঠের বাসন বাবা।
বাবা : কাঠের বাসন! কার জন্য?
ছেলে : বাবা তোমার জন্য। তুমি যখন দাদার মতো বৃদ্ধ ও দুর্বল হয়ে পড়বে তখন যে খাবারের বাসন প্রয়োজন হবে? আর মাটির বাসন তো অল্পতেই ভেঙে যায়। তখন আবার দাদুমণির মতো তোমাকেও বকাঝকা করতে হবে, তাই বুদ্ধি করে কাঠের একটা বাসন বানিয়ে নিচ্ছি যাতে না ভাঙে।
ছেলের মুখে এমন কথা শোনে তার চোখে অশ্রু টলমল করতে লাগল। গাল বেয়ে বেয়ে অশ্রুর ফোঁটায় বুক ভেসে গেল। তার ভুল বুঝতে দেরি হলো না। সাথে সাথে সিদ্ধান্ত নিলো, অসহায় বাবার সাথে আর দুর্ব্যবহার করবে না। সেদিন থেকে কাঠমিস্ত্রি তার বাবার সেবায় মনোযোগ দিলো।

Share.

মন্তব্য করুন