এই গল্পটি বলেছেন উম্মে সালামা রা.। একদিনের ঘটনা। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. একটি মাঠে আসলেন। তিনি আসলেন কোনো একটি কাজ নিয়ে। অকারণ কখনও কোথাও যেতেন না তিনি। অথবা কাজ ছাড়া যেতেন না। আর তাঁর কাজ মানে হলো- মানুষের কল্যাণে। মানুষের প্রয়োজনে। প্রিয় নবী হেঁটে যাচ্ছিলেন আপন মনে। হঠাৎ একটি হরিণী দেখে ফেললো তাঁকে। হরিণীটি আকস্মিক পেছন থেকে ডেকে উঠলো- ইয়া রাসুলাল্লাহ অর্থাৎ হে আল্লাহর রাসুল।
প্রিয় নবী হরিণীর ডাকে সাড়া দিলেন। তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন। দেখলেন একটি হরিণী চেয়ে আছে তাঁর দিকে। হরিণীটিকে বেঁধে রেখেছে কেউ। হরিণীটির কাছেই একজন গ্রাম্য লোক ঘুমাচ্ছে। প্রিয় নবী বুঝে গেলেন লোকটি শিকারী। এবং এ লোকটিই বেঁধে রেখেছে এই হরিণীকে।
প্রিয় নবী হরিণীকে আদর মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন-
তুমি কি আমাকে কিছু বলবে?
হরিণী করুন কণ্ঠে পাশে ঘুমিয়ে থাকা লোকটিকে দেখিয়ে বললো- এ শিকারী লোকটি আমাকে শিকার করে নিয়ে এসেছে। আমাকে বন্দী করে রেখেছে। অথচ ওই পাহাড়ে আমার ছোট ছোট দুটি বাচ্চা আছে। দুটো বাচ্চাই আমার দুধ পান করে জীবন ধারণ করে। দয়া করে আপনি আমাকে কিছুক্ষণের জন্য মুক্ত করে দিন। আমি আমার বাচ্চা দুটোকে দুধ পান করিয়ে আবার ফিরে আসবো।
প্রিয় নবী বললেন-
সত্যিই তুমি ফিরে আসবে?
হরিণী বললো- হ্যাঁ আল্লাহর রাসুল আমি অবশ্যই ফিরে আসবো।
হরিণীর কথায় বিশ্বাস করলেন মহানবী। তিনি হরিণীর বন্ধন খুলে দিলেন। মুক্ত করে দিলেন তাকে। বন্দী হরিণী যেই না মুক্ত হলো অমনি দৌড় দিলো।দৌড়ে গেলো সেই পাহাড়ের দিকে। যেখানে অপেক্ষা করছে তার বাচ্চা দুটো। এক দৌড়ে পৌঁছে গেলো বাচ্চাদের কাছে। মাকে পেয়ে হরিণীর বাচ্চা দুটো আনন্দে আত্মহারা। পরম মমতায় দুধ পান কারালো আদরের বাচ্চা দুটোকে। দুধ পান করানো শেষ হলো। আর একটুও দেরী করলো না। রওনা হলো সেই মাঠের দিকে যেখানে বন্দী ছিলো সে।
এর মধ্যে শিকারী লোকটির ঘুম ভেঙে গেলো। দেখলো তার হরিণীটি নেই। সেখানে দাড়িয়ে আছেন প্রিয় নবী।
শিকারী নবীজিকে জিজ্ঞেস করলো- আমার হরিণী কই?
আপনি এখানে কেনো হে আল্লাহর রাসুল!
রাসুল সা. তাকে সব কথা খুলে বললেন। এর মধ্যে হরিণীটি এসে দাড়ালো প্রিয় নবীর পাশে। একটুও এদিক সেদিক করলো না হরিণীটি। সে মহানবীর সাথে করা ওয়াদা বাস্তবায়ন করলো পুরোপুরি।
প্রিয় নবী আগের মতো বেঁধে রাখলেন হরিণীকে।
এবার রাসুল সা. বিদায় নেবেন।
কিন্তু বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো শিকারী! জীবনে এমন ঘটনা কল্পনাও করেনি কখনও। বনের একটি অবলা প্রাণী যে কিনা বন্ধন খোলা পেয়ে চলে গেলো। গিয়ে আবার ফেরৎও এলো। এসে আবার গলায় রশি পরে নিলো! এমন বিস্ময়কর বিষয় কেউ কোনোদিন চিন্তাও করতে পারেনি। পারবেও না। এই ভেবে শিকারীর মন কেঁদে উঠলো। সে প্রিয় নবীকে জিজ্ঞেস করলো- এখন আমার প্রতি আপনার কোনো নির্দেশ আছে কি?
প্রিয় নবী দয়ার সাগর, বললেন- তুমি এই হরিণীকে ছেড়ে দাও।
শিকারী লোকটি সঙ্গে সঙ্গে হরিণীর গলার রশি খুলে দিলো।
হরিণী মুক্ত হয়ে দারুণ আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। সে এখন মুক্ত। ছুটে যাবে তার বাচ্চাদের কাছে। কিন্তু যাওয়ার আগে বললো- ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে হযরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসুল।’
কী বিস্ময়কর ঘটনা! কী বিস্ময়কর কাহিনি!

Share.

মন্তব্য করুন