কেভিন অধীর আগ্রহ নিয়ে ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষা করছিল। তার মা ইঙ্গিতে বলেছেন যে, ছুটির সময় তার জন্য বড় ধরনের চমক রয়েছে।
কেভিন ছবি আঁকার খাতা বের করে। সবে মাত্র সে পরীক্ষা শেষ করেছে এবং গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছে। এখন সে পাখির মতো মুক্ত। সে ড্রয়িং করা, রং ও তুলি দিয়ে ছবি আঁকা, ক্রিকেট খেলা এবং টেলিভিশন দেখার জন্য মুক্ত- ছুটির দিনে সে যা কিছু করতে চেয়েছিল।
কেভিনের মামাতো ভাই ম্যাক্স এবং সে-ই হলো তার দুশ্চিন্তার কারণ। ‘হাই!’ চিৎকার করে ম্যাক্স বললো। বলার সময় সে কেভিনের বিছানার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং ছবি আঁকার পেন্সিলগুলো ভেঙে ফেলে। ‘আমি এখানে ছুটি কাটাতে এসেছি।’
কেভিন কখনই আশা করেনি যে, মা তার জন্য এই জঘন্য চমক রেখেছিলেন। যদি এই ভাবে তার ছুটি শুরু হয়, তাহলে পরের কয়েক সপ্তাহ হবে তার জন্য সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা।

কেভিনের জন্য পরের কয়েক দিন ভয়াবহ ছিল।
সকালের নাস্তা শেষ করে কেভিন ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নেয়। ভাগ্যক্রমে সেই সময় ম্যাক্স আশপাশে ছিল না। কেভিন ছবি আঁকার সমস্ত জিনিসপত্র তার চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে এবং একটা সুন্দর ছবি আঁকা শুরু করেছে। যখন সে ছবির উপর শেষ বারের মতো তুলির আঁচড় দিচ্ছিল, ঠিক তখনই ম্যাক্স এক বোতল পেপসি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। সে পিছলে পড়ে যায় এবং হাতের বোতল থেকে পেপসি ছিটকে পড়ে ছবির উপর। ছবিটা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়।
কেভিনের জন্য পরের দিন ছিল আরও বেশি খারাপ।
সন্ধ্যা পর্যন্ত সব কিছু স্বাভাবিক ছিল। ঘটনা তখনই শুরু হয়েছে, ম্যাক্স যখন কাপড় ধোয়ার মেশিনে ময়লা কাপড় ঢুকিয়েছে। কিছুক্ষণ পরে কেভিন কাপড় ধোয়ার মেশিনের ভেতরে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পায়। সে ঘটনা দেখার জন্য মেশিনের কাছে যায় এবং দেখতে পায় যে, ম্যাক্স তার সবচেয়ে ভালো জুতা ময়লা কাপড়ের সঙ্গে মেশিনে ঢুকিয়েছে।
একদিন কেভিন খবরের কাগজ পড়ছিল এবং কিছু আকর্ষণীয় সংবাদ তার চোখে পড়ে। সে শব্দ করে পড়তে শুরু করে, ‘গত সপ্তাহে বিশ্ববিখ্যাত ডাকটিকেট সংগ্রহকারী ডিক ব্রাউনের সমস্ত ডাকটিকেট তার শহরে চুরি হয়ে গেছে। অন্য আরও কয়েকটি ডাকটিকেট চুরির ঘটনা ঘটেছে এবং পুলিশের সন্দেহ যে, সবগুলো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে।’

সংবাদের শেষে ডাকটিকেট সুরক্ষিত রাখার জন্য সমস্ত সংগ্রহকারীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
কেভিনের ডাকটিকেট সংগ্রহ ছিল উল্লেখ করার মতো এবং তা ছিল তার বন্ধু অ্যালানের কাছে। সে ডাকটিকেটের অ্যালবামটি নিজের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। কেননা সে মনে করে অ্যালবামটি নিজের কাছে রাখাই নিরাপদ হবে। কিন্তু অ্যালবাম আনতে কেভিন যেতে পারেনি। কারণ চায়ের নিমন্ত্রণে তার মায়ের বান্ধবীর আসার কথা। মা চেয়েছেন তার বান্ধবী এলে কেভিন যেন বাড়িতে উপস্থিত থাকে।
অ্যালবামটি আনার জন্য কেভিন ম্যাক্সকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে ম্যাক্সকে অ্যালানের ঠিকানা দেয় এবং ম্যাক্স অ্যালবাম আনতে চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যাক্স অ্যালবাম নিয়ে ফিরে আসে। কেভিন যখন অ্যালবামটি নেড়েচেড়ে দেখে, তখন সে বুঝতে পারে আসলে অ্যালবামটি তার নয় এবং অ্যালবামের ভেতর অনেক মূল্যবান ডাকটিকেট রয়েছে। ম্যাক্স ভুল করে অন্য বাড়িতে গিয়েছিল। সে দরজায় কড়া নেড়েছে এবং ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ শুনতে পায়নি। একসময় তার চোখে পড়ে দরজায় কোন তালা নেই। সে দরজা ঠেলে ঘরের ভেতর ঢোকে এবং একটা অ্যালবাম দেখতে পায়, যা সে মনে করেছে কেভিনের অ্যালবাম। সেই অ্যালবাম নিয়ে সে ফিরে আসে।
কেভিনের মনে সন্দেহ জাগে। সে ভাবে, এটি সম্ভবত ডিক ব্রাউনের চুরি হয়ে যাওয়া অ্যালবাম।
কেভিন পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বলে যে, সে একটা মূল্যবান অ্যালবাম পেয়েছে।
সেই ঘটনার পর এক সপ্তাহ কেটে গেছে। ডিক ব্রাউনের অ্যালবাম খুঁজে পাওয়ার জন্য কেভিন এবং ম্যাক্সকে পুরস্কৃত করা হয়।

‘আমি কখনই ম্যাক্সের উপর রাগ করবো না,’ কেভিন ভাবে।
‘কেভিন, আমি সোফায় লাফালাফি করছিলাম এবং দুর্ভাগ্যক্রমে তোমার চশমা জোড়া ভেঙে ফেলেছি,’ ম্যাক্স বললো। ‘কেউ নিখুঁত নই,’ কেভিনের হাতের নাগালে পড়ার আগে সে যোগ করে।

(‘ছুটির দিন’ গল্পটি ইংরেজিতে ‘হলিডেইজ’ গল্পের অনুবাদ। মূল গল্পটি বেশ কয়েক জায়গায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে কোথাও লেখক বা লেখিকার নাম উল্লেখ করা হয়নি।)

Share.

মন্তব্য করুন