রাশিয়ার চলছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২১তম আসর। ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপের অনেকগুলো ম্যাচ শেষ হয়েছে। নিশ্চয়ই খুব আনন্দের সাথে উপভোগ করছো তোমার প্রিয় দলের খেলা। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বকাপ নিয়ে সারা বিশ্বেই চলে উন্মাদনা। আজ তোমাদের জানাবো বিশ্বকাপ নিয়ে কিছু বিচিত্র তথ্য।
অক্টোপাস পলের ভবিষ্যতবাণী
২০১০ গত বিশ্বকাপে মাঠের বাইরের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র ছিল অক্টোপাস পল। জার্মানির ওবেরহাউসেন সি লাইফ সেন্টারের একটি অ্যাকুরিয়ামে বসবাসকারী এই অক্টোপাসটি বিশ্বকাপের ফলাফল নিয়ে একের পর এক সফল ভবিষ্যৎবাণী করে চমকে দেয় পুরো বিশ্বকে। ভবিষ্যত কথনের সময় পলের কাছে দুটি মিউসাল জাতীয় খাবারের বাক্স রাখা হতো। ম্যাচে আগে দুই বাক্সে দুটি দেশের জাতীয় পতাকার ছবি থাকতো। পল যে বাক্স থেকে খাবার গ্রহণ করতো সেটির জয়ী হওয়াই ভবিষ্যৎবাণী হিসেবে ধরা হয়। প্রথম দিকে শুধুমাত্র জার্মানীর ম্যাচের ক্ষেত্রেই তার এই ভবিষ্যতবাণী পরীক্ষা করা হত। পরে সেমিফাইনাল ও ফাইনালেও ভবিষ্যতবাণী করে পল। ফাইনালসহ পলের করা সাতটি ভবিষ্যতবাণীই শতভাগ মিলে গেছে। এর আগে ২০০৮ ইউরোতে জার্মানীর ছয়টি ম্যাচের ক্ষেত্রে পলের করা চারটি ভবিষ্যতবাণী সঠিক হয়েছিল। ২০১০ এর ২৬ অক্টোবর মারা যায় অক্টোপাস পল।
জায়ান্ট কিলার
প্রায় প্রতি বিশ্বকাপেই দেখা যায় কোন না কোন ‘ছোট দল’ জায়ান্ট কিলার হিসেবে আবির্ভূত হয়। অর্থাৎ যাদেরকে হিসাবে ধরা হয় না তারাই উল্টে পাল্টে দেয় বিশ্বকাপের হিসাব নিকাশ। তাদেরকেই বলা হয় জায়ান্ট কিলার, যারা বড় শক্তিগুলোকে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় করে দেয়। যেমন ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ডেভর সুকারের ক্রোয়েশিয়ার কথা ফুটবল দুনিয়া বহুদিন মনে রাখবে। নতুন দল হিসেবে সবাইকে চমকে দিয়ে উঠেছিল সেমিফাইনালে। ২০০২ বিশ্বকাপ ছিল আরো চমকে ভরপুর। নতুন দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে চমক হয়ে এসেছিল আফ্রিকান দেশ সেনেগাল। খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়েছিলো আরেক জায়ান্ট কিলার তুরস্ক। তুরস্ক সেই স্বপ্নযাত্রায় তৃতীয় স্থান লাভ করেছিলো বিশ্বকাপে। ওই বিশ্বকাপের আরেক সেমিফাইনালিস্ট ছিল স্বাগতিক দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। অথচ টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এই তিনটি দলই ছিলো হিসাবের বাইরে। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা জায়ান্ট কিলার হিসেবে দেখা দেয় আফ্রিকার দেশ ঘানা। অনেক হিসেব পাল্টে দিয়ে পৌছে যায় কোয়র্টার ফাইনালে। ২০১৪ বিশ্বকাপে ইতালি ও ইংল্যান্ডকে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় করে দেয় কোস্টারিকা। অন্যদিকে পর্তুগালকে বিদায় করে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। আর আগের বারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় করে চিলি।
রেফারিদের উল্টো ভাবনা
বিশ্বকাপে সবাই নিজ নিজ দেশের সফলতা কামনা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্ষেত্রে রেফারিদের ব্যতিক্রম বলেই মনে করেন অনেকে। কারণ যে দেশ যত সফলতা লাভ করবে সেই দেশের রেফারিদের বিগ ম্যাচ পরিচালনা করার সম্ভাবনা ততই কম। আর বিশ্বকাপে বিগ ম্যাচ পরিচালনা করা যে কোন রেফারির জন্যই স্বপ্ন। কিন্তু বড় দলগুলোর রেফারিরা প্রায়শই এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন- যে দুটি দেশ ফাইনালে খেলবে নিশ্চিতভাবেই ঐ দুটি দেশের কোন রেফারি ফাইনালে মাঠে নামার সুযোগ পাবেন না। সেমিফাইনালেও একই হিসেব। কোয়ার্টার ফাইনাল ও দ্বিতীয় রাউন্ডেও নিজ নিজ দেশের সম্ভাব্য পরবর্তি সমীকরণ হিসেব করেই রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। অর্থাৎ দেশের সফলতার সাথে রেফারীদের স্বপ্ন পূরণের সম্ভাবনা বিপরীতধর্মী। তাই রেফারির নাকি বিশ্বকাপ থেকে দ্রুত নিজ দেশের বিদায় কামনা করেন!

আরো কিছু বিচিত্র তথ্য
১। কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার ভিভ রিচার্ডস একমাত্র খেলোয়ার যিনি ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় বিশ্বকাপে খেলেছেন। ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে তিনি এন্টিগুয়ার হয়ে অংশ নেন। আর ক্রিকেটে তো তিনি কিংবদন্তী।
২। আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্টিভ বাকনার একমাত্র ব্যক্তি যিনি ফুটবল ও ক্রিকেট উভয় বিশ্বকাপে খেলা পরিচালনা করেছেন। তার ক্যারিয়ার শুরু হয় ফুটবল রেফারি হিসেবে। তবে ফিফার ৪৫ বছর বয়সের পর আর রেফারি না হতে পারার আইনের কারণে তিনি ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। দীর্ঘদিন আম্পায়ারিং করেছেন ক্রিকেটে।
৩। বাছাই পর্বের একটি ম্যাচও না খেলে ১৯৫৮ সালের বিশ্বাকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছিল ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্যাতনের কারণে তিন প্রতিপক্ষ তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও সুদান ইসরাইলের সাথে খেলতে অস্বীকৃত জানালে ইসরাইল এই সুবর্ণ সুযোগ পায়। অবশ্য তাদের একটি বিশেষ প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হয়েছিল।
৪। আর্জেন্টিনার তারকা ক্যানিজিয়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপে এক ম্যাচেও মাঠে নামতে পারেননি। তবে রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই লাল কার্ড দেখেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কটুক্তি করায় তাকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। পুরো ম্যাচে আর সাইড বেঞ্চে থাকতে পারেনি সে। চলে যেতে হয় ড্রেসিং রুমে।
৫। ১৯৫০ বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও খেলেনি ভারত। কারণটা ছিল বেশ মজার। সে বিশ্বকাপ থেকেই খেলোয়ারদের খালি পায়ে খেলা নিষিদ্ধ হয়। তাতেই বিপত্তি বাধে ভারতের, বুট পরে খেলার অভ্যাস ছিল না তাদের।
৬। ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্টের সেমিফাইনাল ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে মাঠের মাঝখান দিয়ে দৌড় দেন এক মার্কিন ট্রেইনার। হাতে থাকা ডাক্তারি ব্যাগটি তিনি রাগে ছুঁড়ে মারেন মাটিতে। এসময় ব্যাগে থাকা ক্লোরোফর্মের বোতল ভেঙে গেলে তিনি মাঠেই অজ্ঞান হয়ে যান।
৭। ১৯৫০ বিশ্বকাপে নিজেদের মাটিতে ফাইনালে হারে ব্রাজিল। ঐ ঘটনার পর অন্তত চার ব্যক্তি শোকহত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

Share.

মন্তব্য করুন