আমরা যখন ছোট্ট তখন নানা গাছের সঙ্গে সখ্য ছিল। ফুলেও ছিল দারুণ আকর্ষণ। ছোট ছিলাম বলে সময়ের ফুল হিজল, বরুণ, কচুরি, জারুল, ডুমুর, শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম ফুল কুড়িয়ে চট বিছিয়ে খেলতাম।
আমাদের ঘরের চৌকাঠের তিন হাত দূরে ছিল ছাতিম গাছ। এতে প্রায় দেড় থেকে দুই’শ দেশী কবুতর এবং জালালী কবুতরের আশ্রয়স্থল ছিল। সকাল হলে দেখতাম, গাছের গোড়ায় নানা পাখির মলে ভরে যেতো। তখন কষ্ট পেতাম না, আনন্দ পেতাম।
পাশের বাড়ির আনছুর আলী চাচার মতো আরো অনেকে প্রতিদিন সকালবেলা রোগমুক্তির জন্য ছাতিম গাছের পাতা ছিঁড়ে নিয়ে খেতে দেখতাম। কী মজা না পেতাম, তা মনে হলে এখনো স্মৃতিকাতর হই।
সেইসব ফুল অনেকের জানা থাকলেও ছাতিম ফুল সম্পর্কে নতুন প্রজন্মের কাছে হয়তো অজানা থাকতে পারে। ছাতিম ফুলের ম ম গন্ধে হেমন্তের মৃদু হাওয়া যখন ভেসে বেড়ায়, তখন মৌমাছি, ভ্রমরও নিজস্ব ভঙ্গিমায় নৃত্যের তালে তালে ফুলে ফুলে গান গায়। ওই পরিবেশটাও অনন্য লাগে। এর ফুলের গন্ধে যে কাউকে মত্ত করতে দ্বিধা করে না। এটি অযত্ন-অবহেলায় এখানে সেখানে এমনিতেই বেড়ে ওঠে। ছাতিমের সরল উন্নত কাণ্ড কিছুদূর উপরে গিয়ে হঠাৎ শাখা-প্রশাখার একটি ঢাকনা সৃষ্টি করে। আবার অল্প সময়ে ছাতিম গাছটি একে-একে ছাড়িয়ে অনেক দূর উঠে যায় এবং পত্রঘন কয়েকটি চন্দ্রাতপের স্তর সৃষ্টি করে থাকে। এ সব কারণে অনেক দূর থেকে ছাতিম গাছ শনাক্ত করা যায়।
এটি বৃহৎ চিরহরিৎ বৃক্ষ। এর উচ্চতা ৬০ থেকে ৭০ ফুট। গাছে রস তিতো, দুধের মতো আঠা থাকে। বাকল অমসৃণ ও ধূসর বর্ণের ভারি। ডালা-পালা চক্রাকারে সাজানো থাকে। গাছের গোড়ায় থাকে অধিক মূল আর গাছের পাতা গুচ্ছ খসখসে। ফুল ছোট সবুজাভ, ফল সাদা, সরু, গোলাকৃতি, গুচ্ছভাবে ঝুলে থাকে। কাঠ সাদা ও নরম। সাধারণত প্যাকিং বাক্স, পেন্সিল, ম্যাচ বক্স তৈরি এবং সস্তা দামের আসবাবপত্র তৈরি ও ব্যবহার করা হয়। ছাতিম গাছের বাকল পুরনো ডায়রিয়া, হাঁপানি, ক্ষত, জ্বর, কোষ্ঠকাঠিন্য, একজিমা, আমাশয় ও ম্যালেরিয়া, হৃদরোগে ব্যবহৃত হয়।
ছাতিমের বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris. এর ইংরেজি নাম Apocynaceae. আদি নিবাস ভারত, চীন ও মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার বনাঞ্চল ছাড়াও এখানে সেখানে দুর্লভ দর্শন অসাধারণ সুন্দর ছাতিমের তরু যা- ঢাকা, চট্টগ্রাম উভয় দিকে যেতে যেতে দেখা যায়।

Share.

মন্তব্য করুন