জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তি

জান্নাতুল ফেরদৌস মুক্তি তিতুমীর কলেজে ইংরেজী সাহিত্যে অর্নাস তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর আঁকাআঁকির শুরু। রক্ষনশীল পরিবার। নানা বাধা ছিলো। লুকিয়ে ছবি আঁকেন। বন্ধুদের দেখালে তারা প্রশংসা করতো। মুক্তি ক্যানভাসে কাজ করেন এক্রেলিক পেইন্ট দিয়ে। তিনি ২০১৭ সাল থেকে পুরোদমে কাজ করছেন। প্রথমে তিনি পোস্টার কালার দিয়ে ছবি আঁকতেন। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তার ছবি আঁকা বিষয়ে। অনবরত অনুশীলন, ইউটিউব ভিডিও দেখে শিখেছেন। তার ফেসবুক পেইজের নাম Artholic Shukty| https://www.facebook.com/ArtholicShukty/
শুধু ছবি আঁকা নয়। তিনি মাটির টবের উপর ক্লেও, রেজিনের কাজ করেছেন। মাটি প্রসেস করে টেরাকোটার কাজ হয়। তিনি কাগজে Poster Color এবং Gouache Painting করতে পারেন। ফ্রেমসহ পেইন্টিং বিক্রি করেন তিনি। তার বড় সাইজের পেইন্টিং ২৪-৩৬ ইঞ্চি হয়।
কেউ তাকে শিখায়নি। কোন কোর্স ও করেননি তিনি। যখন যা করেছেন সব নিজ চেস্টায়। নিজে কারো কাছে শিখতে পারেননি। একটু বুদ্বি,পরামর্শ ও দেয়নি কেউ। ঠেকে ঠেকে শিখেছেন। সে কারণে যখন নিজে কাজে দক্ষতা অর্জন করেছেন। নতুনরা যেন সহজে শিখতে পারেন। সে জন্য ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে।
মুক্তির ইউটিউব চ্যানেলের নাম আমার Avgvi Artholic Shukty (Channel Link: https://youtube.com/ArtholicShukt) সেখানে তার কাছে প্রায় উনিশ হাজার মানুষ ছবি আঁকা শিখছে। জানা যায়,আর্ট সংক্রান্ত বাংলা ভাষায় এত আলোচনা, রিভিউ, টিউটোরিয়াল অন্য কোন চ্যানেলে তেমন একটা নেই। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে চ্যানেলটি খুলেন তিনি। এরই মধ্যে ৩৭টি ভিডিও আপলোড করেছেন। গড়ে তার ভিডিও এর ভিউ সংখ্যা ১৬০০০ হাজার। কিভাবে এক্রেলিক পেইন্টিং শুরু করবেন। এই শিরোনামের ভিডিওটি প্রায় এক লাখ চার হাজার মানুষ দেখেছে। মুক্তির ছবির দাম ৬০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা। আগামী মে মাসে শিল্পকলা একাডেমীতে প্রদর্শনী হবে। সেখানে তার একটি পেইন্টিং থাকবে। যার দাম ২৫,০০০ টাকা বলে জানান। অনেকগুলো এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন মুক্তি। পেয়েছেন পুরুস্কার ও। মুখশের আড়ালে ২০১৯ এক্সিবিশন হয় Drik Gallery। সেখানে তিনি অংশ নেন। International Winter Art Festival ২০১৯, যার আয়োজক ছিলো। Alluring Artwork. এখানে তাঁর দুটো ছবি প্রদর্শিত হয়। It Ends With Us ছবিটি Best Award on Mixed Media Artwork পুরষ্কার পেয়েছে। অঙ্কুর ২০১৯ এক্সিবিশনে অংশ

নিয়েছেন। যেটি Military Institute of Science and Technology বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজক ছিলেন MIST Literature & Cultural Club. পেন্সিল সপ্তাহ ২০১৯ এক্সিবিশনে হয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে। সেখানেও তাঁর ছবি প্রশংসিত হয়। ২০২০ সালে Youth Collaboration Club এর প্রযোজনায় একটি অনলাইন আর্ট কম্পিটিশনে অংশ নিয়ে তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। চ্যাম্পিয়ান হয়েছেন PaintOff 2020- Tournament of Arts আর্ট কম্পিটিশনে ও। যার আয়োজক ছিলো Allstar. এই কম্পিটিশনে ১২৮ জনের মধ্যে তিনি প্রথম হন। সাতটি রাউন্ড তাকে পার হতে হয়। তাও মাত্র এক ঘন্টা সময়ে লাইভে ছবি এঁকে।

কাবার ছবি

মুক্তির আঁকা পবিত্র কাবার ছবি যেন বাস্তবতার এক নির্ভেজাল চিত্রায়ন। ছবিতে বাম পাশের দেয়ালটা হচ্ছে আমাদের জীবনের প্রতীক। যেখানে ছোট-বড় সব ধরণের ইটের ব্যবহার আছে। যেমন আমাদের জীবনে আছে ছোট বড় কস্ট। মানুষের জীবনে এমন কিছু ট্রমা থাকে যেগুলো চাইলেও মিটিয়ে দেয়া যায় না। শিকড়ের মত এগুলো আমাদের জীবনকে আঁকড়ে ধরে রাখে। আমাদের জীবনের দেয়ালেও সেরকমই একটা গাছ আছে। যার আছে শত শত ডাল-পালা। কিন্তু কখনও কখনও সেগুলো যদি বিশ্বাস ও ভালবাসার আলোর ছোঁয়া পায়, তবেই সেগুলোও জীবন্ত

হয়ে উঠে। কাবার ছবি আঁকার কনসেপ্ট তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে এসেছে। তিনি বলেন, ছবিটা আঁকার কনসেপ্টটা আসে আমার নিজের একটা অভিজ্ঞতা থেকে। ছোটবেলায় বুঝে প্রথম নামাজ পড়া শুরু করি তখন চোখ বন্ধ করলে ঠিক এমন কাবা শরীফ দেখতে পেতাম। খালি একটা কাবা শরীফ যেখানে আমি জায়নামাজ নিয়ে দাঁড়িয়ে। এই ভাবনা থেকেই কাবার ছবি আঁকা।
It Ends With Us টং মুক্তির আলোচিত আরেকটি ছবি। ছবিটিতে নারীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। এই চোখের ভেতরে লুকানো হাজারও শব্দ। এই চোখে আছে স্বপ্ন। আছে বাঁচার আশা। শত কস্টেও সে আলো খুঁজতে থাকে একটা নতুন পৃথিবী গড়ার জন্য। তিনি এই পেইন্টিংয়ের নাম দিয়েছেন – It Ends With Us। তার প্রিয় একটা বইয়ের নামে দেয়া পেইন্টিংটির নাম।

নুসরাত জাহান মীম

নুসরাত জাহান মীম কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে বাংলা বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করেন। কুমিল্লাতেই মা,বাবা সাথে থাকেন। ছবি এঁকে তার মাসিক আয় দশ থেকে বারো হাজার টাকা। পড়াশোনার কোন ক্ষতি না করেই তিনি আয় করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি ছবি আঁকতে পারেন। যেমন পেন্সিল, এক্রিলিক, অয়েল, ওয়াটার কালার ইত্যাদি। কফি দিয়ে আঁকা তার একটি ছবি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এ পর্যন্ত আনুমানিক ২৫০ টির মতো ছবি এঁকেছেন। প্রথমে ছবি আঁকা ছিল তাঁর শখ মাত্র। এখন তা রীতিমত পেশায় পরিনত হয়েছে। তিনি তার আয়ের প্রায় ৭০% সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ব্যয় করেন। ক্রেতা যেমনটা চান,ঠিক তেমন ছবি তিনি এঁকে দেন। মীম জানান,স্টুডেন্ট হয়েও এভাবে শখের কাজ করতে গিয়ে আমার পড়াশুনার কোনো ক্ষতি হয় না। পড়াশুনার সময় ঠিক রেখে, বাকী সময়টুকু ছবি আঁকার জন্য ব্যয় করেন।

কাবার ছবি

কাবার ছবি এঁকে তিনি ব্র্যাক এলোরিন আর্ট ইন্টারন্যাশনাল উইন্টার পেস্ট এক প্রতিযোগী হিসাবে অংশ নেন। ছবিটি সকলের নজর কাড়ে। অনেকে ভুয়শী প্রশংসা করেন বলে জানান। সামাজিক মাধ্যমে ছবিটি প্রচুর লাইক,কমেন্ট পেয়েছে বলে জানা যায়। তার আরেকটি বিখ্যাত ছবি অসহায়ত্ব। এখানে শিশু নির্যাতনের খন্ড চিত্র তুল ধরা হয়েছে। ছবিটি কুমিল্লা চারু শিল্প কর্তৃক আয়োজিত শিল্পকলা একাডেমীতে গত ফেব্রয়ারী মাসে ১০০ জন আর্টিসদের ছবি নিয়ে একটি এক্সিবিশনে ছিলো।

Share.

মন্তব্য করুন