ছোট্ট বন্ধুরা, আমরা জানি, ঈদের মতো আনন্দের কোনো দিন আমাদের নেই। এ দিনটির অপেক্ষায় আমরা প্রায় সারাটি বছর থাকি। ভাবতে থাকি কখন আসবে আমাদের সেই আনন্দের ঈদ! কখন উঠবে ঈদের নতুন চাঁদ! কখন রাত শেষ হয়ে ভোর হবে। তারপর আসবে ঈদের সকাল।
যখন রোজা শুরু হয় তখন থেকে ধীরে ধীরে ঈদের অপেক্ষাও চলতে থাকে। রোজার সংখ্যা বাড়তে থাকে আর ঈদের অপেক্ষার দিনও কমতে থাকে। মজার বিষয় হলো- রোজা শুরু হতে না হতেই ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। কে কয়টি জামা কিনবে, কোন রঙের জামা কিনবে আর কখন কেনা হবে- এই ভাবনায় চোখে ঘুমও আসতে চায় না! তখন রাত যেনো অনেক বড় হয়ে যায়! সকাল হতে যেনো কত দেরি হয়!

চাঁদ দেখার কাহিনি
ঈদের দিনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয় ঈদের চাঁদ ওঠার পর থেকে। রমজান মাস হয়তো ত্রিশ দিন অথবা ঊনত্রিশ দিনের হয়। যদি ত্রিশ দিনের হয় তো রোজাও ত্রিশটি হয়। আর যদি ঊনত্রিশ দিনের হয়, রোজাও ঊনত্রিশটি হয়ে থাকে। রমজান মাসের শেষ দিন ওঠে সাওয়াল মাসের চাঁদ। সাওয়াল মাসের এ চাঁদটিই হলো ঈদের চাঁদ। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য শিশুকিশোর আর বড়রা সকলেই চেষ্টা করে। আকাশ যদি পরিষ্কার থাকে, মেঘ না থাকে তখন চিকন নতুন চাঁদটি দেখা যায়। মাগরিবের নামাজ আদায় করে সবাই চাঁদ দেখার চেষ্টা করে। কোনো উঁচু জায়গায়, বিল্ডিংয়ের ছাদে অথবা খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখে সবাই। প্রথম দেখার একটি প্রতিযোগিতাও থাকে। কার আগে কে দেখবে। কে কাকে দেখাবে! এটিও একটি আনন্দের বিষয় হয়ে ওঠে। দেখার সাথে সাথে হো-হো করে একধরনের আনন্দের শব্দ বেরিয়ে আসে মুখ থেকে। কেউ কেউ নতুন চাঁদের দিকে হাত তুলে আসসালামু আলাইকুম বলে সালামও দেয়। তারপর সবাই যে যার বাড়ি বা বাসার দিকে চলে যায়।

নতুন জামার যত্ন
বাসায় বা বাড়িতে ফিরে ঈদের নতুন জামা বা পোশাকের অবস্থা দেখতে থাকে। আগেই কেনা হয় ঈদের পোশাক। কেনা পোশাকটি সিন্দুক বা আলমিরা থেকে বের করে হাতের কাছে রাখে। কেউ কেউ শোবার ঘরে বিছানার একপাশে অথবা বালিশের কাছে রাখে। যাতে বারবার একটু ছুঁয়ে দেখা যায়। চোখের সামনে ধরা যায়। রঙটি পছন্দের হলে বারবার সে রাঙা পোশাকটি চোখের সামনে তুলে দেখে।

রাতের কথা
রাতের খাবার খেয়ে পড়া হয় এশার নামাজ। অথবা নামাজ পড়ে খাওয়া হয়! খেয়ে একটু গল্প আড্ডা জমায়। যেহেতু একমাস রোজা শেষ তাই আগামীকাল রোজা নেই। নেই তো নেই-ই। কি মজা, সকাল থেকে আর না খেয়ে থাকতে হবে না। এটি একটি আনন্দ। সবচেয়ে বড় আনন্দ রাত পোহালেই ঈদ। আহা ঈদের আনন্দে যোগ দেয়ার জন্য সবাই ছুটবে ঈদগাহে! এই ভাবনায় চোখে ঘুম নামে না সহজে। আবার দেরি করে ঘুম এলেও একসময় হঠাৎ হঠাৎ ভেঙে যায় ঘুম। ঘুম ঘোরে ফের স্বপ্ন আসে। কল্পনা আসে কত রঙের! এসব স্বপ্ন ও কল্পনা থেকেও ঘুম ভেঙে যায়। বারবার ঘড়ি দেখা হয়! কখন ভোর হবে। কখন আজান হবে ফজরের। এপাশ-ওপাশ করে একসময় ভোর হয়। ফজরের আজান দেন মুয়াজ্জিন। অমনি ধড়মড় করে শোয়া থেকে উঠে যাওয়ার মজাই আলাদা! অজু করে ফজরের নামাজ আদায় করা হয়। তারপর ঈদের জন্য চলতে থাকে আয়োজন।
ঈদের প্রস্তুতি
ফজরের নামাজ আদায় করে গোসল সেরে নেয়া হয়। গোসলে নতুন সাবান গায়ে মাখে। চুলে শ্যাম্পু করে ঝরঝরে করা হয় চুল। গোসলখানা থেকে বের হলে শরীর থেকে সুবাস বেরিয়ে আসে। তারপর অনেক প্রতীক্ষিত নতুন পোশাক জড়ায় গায়ে। আয়নায় ঘুরে ফিরে দেখে নিজেকে কেমন মানিয়েছে নতুন জামা। কেমন লাগছে দেখতে। তারপর চুল আঁচড়ে নতুন টুপি মাথায় পরা হয়। তারপর ভাই ভাই, ছেলে বাবা মিলে যাত্রা করে ঈদগাহের দিকে।
গায়ে সুগন্ধি মেখে চলতে থাকে ঈদের নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে। ঈদগাহে যাওয়ার রাস্তা একটি। আবার ফেরার রাস্তা আরেকটি ব্যবহার করা আমাদের নবীজির সুন্নত। তাকবির বলতে বলতে যাওয়া এবং তাকবির বলতে বলতে ফেরা সুন্নত।

ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজ দুই রাকাত। কোনো খোলা মাঠে অথবা মসজিদের সম্মুখে খোলা জায়গায়। কিংবা মসজিদের ভেতরেও ঈদের নামাজ পড়া যায়। পড়া হয়। ঈদের নামাজের কোনো আজান নেই। একামতও নেই। কিন্তু ৬ তাকবিরের সাথে এ নামাজ আদায় করতে হয়!

কোলাকুলি
নামাজ শেষ করে ইমাম সাহেব খুতবা দেন। খুতবা শেষে দোয়া হয়। তারপর শুরু হয় কোলাকুলি। একজন আরেকজনের সাথে কোলাকুলি করে। ছোটরা করে। বড়রাও করে। বাবা ও ভাইয়ের সাথে। বন্ধুদের সাথে পরিচিত লোকজন, আত্মীয়স্বজন এমন কি অপরিচিত লোকের সাথেও কোলাকুলি চলে। ঈদগাহে, বাসায় বা বাড়িতে ফেরার পথে এবং বাসায় ফিরেও কোলাকুলি চলতে থাকে।

মিষ্টিমুখ
ঈদের রান্নাবান্নার আকর্ষণীয় বিষয় থাকে মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাবার। সেমাই, শিরনি, জর্দা, ফিরনি, পিঠা, পায়েস এমন নানারকম মিষ্টি খাবার তৈরি হয়। নামাজ আদায় করে এসব খাবারে অংশ নেয় সকলেই। আহা কি মজার মজার হালুয়া, সন্দেশ, লাচ্ছাসেমাই আরও কত কি! মজা করে খায় সকলে। খেয়ে আলহামদুলিল্লাহ পড়ে মহান আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে।

পোলাও বিরিয়ানির গল্প!
সকাল বেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার চলতে থাকে। একটু পরপর একেকটি পদ মুখে নিয়ে স্বাদ চাখতে থাকে। একটু ঘুরেফিরে এসে আবার খাওয়া। খানিক ঘুমিয়ে নিয়ে আবার খাওয়া। অথবা বন্ধুদের সাথে গল্প করে আবার খাওয়া। এ-বাসা ও-বাসা, এ-বাড়ি ও-বাড়ি যাওয়া। আর যেখানে যাওয়া সেখানেই খাওয়া। আহা কি আনন্দ! সবাই মন খুলে দিল খুলে খায়। আবার খাওয়ায়। এভাবে দুপুর হয়ে যায়। তারপর জোহরের নামাজ আদায় করে শুরু হয় দুপুরের খাবার। ঈদের দিন দুপুরের খাবার বেশ জমানো হয়ে থাকে। পোলাও রোস্ট অথবা খাশির বিরিয়ানি! কিংবা গরুর মাংসের তেহারি। কেউ কেউ চিকেন বিরিয়ানির আয়োজনও করে। কেউ আবার ভুনা খিচুড়িও পছন্দ করে। এভাবে দুপুরের খাবার হয় বেশ জমজমাট।

বেড়ানো
দুপুরের পর থেকে শুরু বেড়ানোর কাহিনি। আত্মীয়-স্বজনের বাসা বা বাড়িতে যাওয়া। বন্ধুদের বাসায় যাওয়া। অথবা পরিবারের সদস্যরা মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া খুব মজার। সবাই এটি খুব মজার সাথে করে। এভাবে একসময় নেমে আসে সন্ধ্যা। আর সন্ধ্যার সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় ঈদের দিন। বিদায় নিয়ে যায় একবছরের জন্য। আবার অপেক্ষা কবে আসবে রোজা। কবে আসবে রোজার ঈদ! ঈদের দিনটি স্মৃতি হয়ে চলে যায় অতীতের দিকে!

Share.

মন্তব্য করুন