বসন্ত এলেই বনে বনে কোকিল ডাকে। গাছে গাছে ফোটে নানারকম ফুল। সেই সাথে চতুর্দিকে সবুজ পাতা। ফসলের মাঠও ধানের সবুজে ছেয়ে আছে। মৃদুমন্দ হাওয়ায় দুলছে ধানের কচি পাতা। আকাশ ভারী নীল। গরম নেই তেমন। শীত তো আগেই বিদায় নিয়েছে। ফাগুনের গুনগুনানী ভোমরগুলো চৈত্রেও ঘুরে বেড়ায়। কারণ ফাল্গুন চৈত্র দুইমাস যে বসন্তকাল! শীতে পাতা ঝরে যায়। আর বসন্তে দেখা দেয় নতুন পাতা। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। এই সবুজের মাঝে চারদিকে তাকালেই চোখে পড়ে লাল শিমুল ফুল। আহা কি সুন্দর শিমুলের রঙ!

প্রকৃতিতে বইছে দখিনা বাতাস। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতানে ফাগুনের আউলা হাওয়া দিচ্ছে দোলা। তাই শিমুল ফুলে এখন বসন্তের হাসি। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি সেজে ওঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুলে। প্রকৃতিতে দেখা মেলে এমনই রূপ। বিভিন্ন জায়গায় এ-দৃশ্য মন কাড়ে প্রকৃতি প্রেমিদের।
গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পাশে, বনে বাদাড়ে প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যায়। গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, এসেছে বসন্ত। বসন্ত নিয়ে কবিরা কবিতা লেখেন। ঠিক শিমুল ফুল নিয়েও লেখেন কবিতা। নানা ছন্দে কবি-সাহিত্যিকদের লেখার খোরাক জোগায় রক্তলাল এই শিমুল ফুল। কিন্তু কালের বিবর্তনে গ্রামবাংলার প্রকৃতি থেকে এখন বিলুপ্তপ্রায় শিমুল গাছ। বর্তমানে শিমুল গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে দেখা যায় শিমুল ফুল। বন কেটে মানুষ বাড়ি বানায়। গাছও কাটে খুব সহজে। তাই শিমুল গাছও কমে গেছে অনেক।

একসময় গ্রামবাংলার বিভিন্ন এলাকায় শিমুল গাছের বেশ ব্যাপকতা ছিল। এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে গাছের মূলকে ব্যবহার করত। আখের গুড় তৈরিতে শিমুলের রস ব্যবহার হতো একসময়। বর্তমানে নানা কারণে তা হ্রাস পেয়েছে। শিমুল গাছ কেউ রোপণ করে না, এমনিতেই জন্মায়। দিনে দিনে বড় হয়ে একদিন বিশাল আকৃতি ধারণ করে। অবহেলিত এ গাছকে কেউ তেমন যত্নও করে না। গ্রামবাংলার এই শিমুল গাছ অনেককে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিত। হতদরিদ্র মানুষ এই শিমুল তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করত। তুলা দিয়ে বানাত লেপ, তোশক ও বালিশ। শিমুলের তুলা বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছে- এমন নজিরও আছে। শিমুল তুলার কদর এখনও রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ না থাকায় পর্যাপ্ত তুলা পাওয়া যায় না। ফলে শিমুল তুলার দাম বেড়ে গেছে খুব। সহজে এ তুলা পাওয়া যায় না। আবার শিমুল তুলা বলে অন্য তুলা বিক্রি হয় এখানে সেখানে। এরপরও এই গাছ কেটে ফেলছে প্রতিনিয়ত। যে কারণে গ্রামবাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে অতি পরিচিত শিমুল গাছ। হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।

একটি সময় ছিলো যখন বড় বড় শিমুল গাছ কিনে নিত মিল ফ্যাক্টরিগুলো। এখন তো তেমন গাছও নেই। তবুও বর্তমানে নৌকা এবং ইমারতের শাটারিংয়ের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে শিমুল গাছ। তবে সকলের উচিত শিমুল গাছের যত্ন নেওয়া এ গাছকে বাঁচিয়ে রাখা।
তবেই হয়তো আবার দেখা যাবে এ গাছের সারি।
শিমুলের রঙ এতো উজ্জ্বল! এতো জ্বলজ্বলে! অবাক করার মতো। সবুজ পাতার ফাঁকে যেনো লাল আগুন জ্বেলে রেখেছে কেউ। কোনো কোনো গাছে পাতাও থাকে না শুধু ফুল ফুটে থাকে। কী যে সুন্দর দেখতে। কীযে তার লাল রঙ! দেখতে দেখতে মন ভরে ওঠে।

Share.

মন্তব্য করুন