ঋতুর পরিক্রমায় বাংলাদেশে শীত আসে । বাংলাদেশে পৌষ এবং মাঘ এই দুইমাস মিলে হয় শীতকাল। আমাদের জীবনে এই ঋতুর প্রভাব অনেক বেশি।
বছর ঘুরে আবার এলো শীতের আগমন…! উড়ে আসা হিমালয়ের হিম হিম হাওয়া, বাংলাদেশে শীত তাই বাতাসেই পাওয়া!!
শীতকালে কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারদিক। মৌমাছির গুঞ্জনে মুখর হয় হলুদ সরষে খেত আর ফুলের বাগান। শীতকালে প্রকৃতি ফিরে পায় সজীবতা, মাঠে মাঠে সবুজের সমারোহ। শীতকালের শাকসবজি যেনো প্রকৃতিতে নতুনত্ব এনে দেয়। শীতকালীন সবজি সমূহ হলো- ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, লাউ, সিম, পালংশাক, লালশাকসহ আরো অনেক সবুজ সবজি। শীতের সকালে কুয়াশায় ঘেরা খেজুর গাছের সেই ঘটি বাধানো দৃশ্য! সেকি মনোরম দেখতে। গাছিরা সকাল বেলা সেই খেজুরের রস সংগ্রহ করতে বেড়িয়ে যায়। প্রতি ঘরে ঘরে খেজুরের রশ আর পিঠাপুলির ধুম পরে যায়। গ্রামের মানুষ হরেক রকম পিঠাপুলি, খির, পায়েস বানাতে ব্যাস্ত থাকে তখন। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, মিষ্টান্ন ইত্যাদি মজার মজার খাবার বানান প্রতি গৃহকর্মীরা। শীতের সকালে চুলার পাশে বসে গরস গরম পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। অতিথী পাখিরা এক গাছ থেকে আরেক গাছে ছুটাছুটি করতে থাকে। শহরের মানুষ গ্রামে আসে শীতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও মুগ্ধতা উপভোগ করতে। শীতের সকালে মানুষদের পোষাকেরও বেশ চাকচিক্যতা দেখা যায়। বাহারি রঙের পোশাক দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। শীত যেন ফুল, ফল, পিঠা-পুলি শুধু এগুলো নিয়েই আসেনা, বরং একটি খেলাও যেন শীতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তা হলো ব্যাডমিন্টন। শীতের কুয়াশামাখা রাতে বিদ্যুৎ সংযোগে বাতির আলোয় ব্যাডমিন্টন খেলার এক অন্যরকম জনপ্রিয়তা। শীতকাল গ্রাম বাংলায় এভাবেই হেলে পড়ে পশ্চিম দিগন্তে, বাঁশবনের ওপারে। শীতকাল নিয়ে কবি জীবনানন্দনন্দ দাশের একটি চমৎকার উক্তি মনে পরে গেলো, আর তা হলো-
“দেশ ছেড়ে শীত যায় চলে সে সময়, প্রথম দখিনে এসে পড়িতেছে বলে রাতারাতি ঘুম ফেসে যায়, আমারও চোখের ঘুম খসেছিল হায়- বসন্তের দেশে।”
প্রকৃতি আমাদেরকে একটি স্নিগ্ধ শীতল, মনোরম ঋতু দিয়েছে এই শীতের মাধ্যমে। শীতকালের ঘুম যেন কি শান্তি, আরামদায়ক। সবকিছুতেই তৃপ্তি, বাহারি সব জিনিস, পিঠাপুলি, খেজুরের রস সবকিছুই যেনো মন ছুঁয়ে যায়। আর এসব কিছুর সাথে মিলিয়ে একটি ছন্দ না লিখলেই নয়-
শীত মানেই তরতাজা শাকসবজির সমাহার,
শীত মানেই প্রকৃতির এক অপরূপ বাহার,
শীত মানেই তিলের টপি, মোয়া খাওয়ার ধুম,
শীত মানেই খেয়ে দেয়ে আরামে দেই ঘুম।
সোনার বাংলার এই পাতাঝরার মরশুমে বৃক্ষরাজি তাদের শরীর থেকে সকল শুকনো পাতা ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে উঠে। শীতকালে একটু খানি রোদ যেনো অনেক কামনার বস্তু। সব মিলিয়েই শীত ঋতু আসে সকলের মনে আনন্দের ফোয়ারা নিয়ে। এই ঋতুর বর্ণনা শেষ হওয়ার নয়। শীতকাল বাংলাদেশের মানুষদের জন্য মহান রবের পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। ঘন কুয়াশায় তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নামাজের জন্য দাড়িয়ে যায়। এ যেনো, শীতের সাথে লড়াই, রবের জন্য। শীতকাল এভাবেই প্রকৃতিতে বিরাজ করবে যুগের পর যুগ- মানুষের মান বইয়ে দিবে আনন্দের ফোয়ারা।

Share.

মন্তব্য করুন