প্রকৃতির পরিচ্ছন্নতাকর্মী হল শকুন। এটি একটি তীক্ষèন দৃষ্টি বিশিষ্ট শিকারি পাখি। আকাশের অনেক উপর দিয়ে উড়ে কিন্তু নিচের সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পায়। সারা বিশ্বে প্রায় আঠারো প্রজাতির শকুন দেখা যায়। আমাদের দেশে রয়েছে প্রায় ছয় প্রজাতির শকুন। চার প্রজাতি স্থায়ী। দুই প্রজাতি পরিযায়ী। শকুন দেখতে কুৎসিত। আবার আকারেও বেশ বড়। শকুনের গলা, ঘাড় ও মাথায় কোনো পালক থাকে না। প্রশস্ত ডানায় ভর করে আকাশে ওড়ে। বট, পাকুড়, অশ্বত্থ, ডুমুর প্রভৃতি বিশালাকার গাছে সাধারণত লোকচক্ষুর অন্তরালে শকুন বাসা বাঁধে। সাধারণত শকুন বছরে একবার একটি ডিম পাড়ে। তাও আবার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার সাফল্যের হার মাত্র ৪০ শতাংশ। এদের প্রজননের হার খুব ধীর।
মানুষ এবং সমাজকে পচা, বাসি, দুর্গন্ধযুক্ত মরা প্রাণী খেয়ে পরিষ্কার করে রোগমুক্ত রাখে। অন্তত চল্লিশটি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষ ও পশু পাখিকে রক্ষা করে। মারাত্মক অ্যানথ্রাক্স ও যক্ষ্মা রোগের সংক্রমণ থেকে ও মানুষকে রক্ষা করে।
কৃষিতে অতিরিক্ত কীটনাশক, ইঁদুর ও পোকামাকড় মেরে ফেলার জন্য বিষ মিশ্রিত খাদ্য প্রয়োগ, উঁচু গাছ ক্রমাগত কেটে ফেলায় শকুনের প্রজনন স্থান কমে যাওয়ায় শকুন বিপন্ন প্রাণিতে পরিণত হয়েছে। ড্রাইক্লোফেনাক একটি নন-স্টেরয়েডাক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ যা ট্রমা ও সংক্রামক রোগের কারণে গরু, মহিষের প্রদাহ কমাতে ব্যবহৃত হয়। আর ঐ গরু ও মহিষ মারা গেলে শকুন যদি তার মাংস খায় তাহলে বিষক্রিয়ার ফলে কিডনি বিকল হয়ে শকুন মারা যায়। কিটোপ্রোফেন, এসিক্লোফেনাক ও ফ্লুনিক্সিনি জাতীয় ঔষধ ও শকুনের মৃত্যুর কারণ।
বাংলাদেশে ২০১৪ সালে সর্বশেষ যে শুমারি হয়েছে তাতে দেখা গেছে মোট ২৬০টি বাংলা শকুন রয়েছে। অর্থাৎ শকুনের অস্তিত্ব আজ বিপন্নপ্রায়।

Share.

মন্তব্য করুন