বহুদিন আগের কথা, জাপানের ড্রাগন রাজ্যে রিন জিন নামে এক রাজা ছিলেন। সমুদ্র তলদেশে সুন্দর এক রাজপ্রাসাদে রাজত্ব করতেন তিনি। কিন্তু রাণী না থাকায় ভীষণ একাকিত্ব বোধ করছিলেন। তাই, সারা ড্রাগন রাজ্য খুঁজে সুন্দরী এক পাত্রী আনা হলো। সেই পাত্রীর সাথে ধুমধামভাবে রাজার বিয়ে হয়। তারপর থেকে ড্রাগন রাজ্য মহাসুখেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রানী অসুস্থ হওয়ায় রাজ্যে দুঃখের কালো ছায়া নেমে এলো। কঠিন এক রোগে আক্রান্ত হন তিনি। কবিরাজ ডাকা হয় রানীর সুচিকিৎসার জন্য। কবিরাজ বলেন, ‘এ রোগ সারতে বানরের কলিজা লাগবে।’
রাজাতো ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেন। সমুদ্র তলদেশে কোথায় কেমনে বানরের কলিজা পাবেন। মন্ত্রিপরিষদে সভা বসালেন কলিজার সন্ধানে। তাদের মধ্যে থেকে বিজ্ঞ এক মন্ত্রী একটা উপায় বের করলেন। রাজপ্রাসাদে জেলিফিশ দ্বারা কলিজার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। জেলিফিশের কচ্ছপের মতো পা ও পিঠ আছে। জেলিফিশ বানর খুঁজে তার পিঠে করে রাজপ্রাসাদে আনতে পারবে। রাজা কিছুটা চিন্তামুক্ত হলেন। তাৎক্ষণিক জেলিফিশকে ডাকা হলো। জেলিফিশের বানর ধরার পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সে ভয় পাচ্ছিল। কিভাবে বানরের কলিজা আনবে বুঝতেও পারছিল না। তখন বিজ্ঞ মন্ত্রী কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দিলেন। ‘বানরের সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলে বন্ধুর মতো হবে। তারপর ড্রাগন রাজ্যের সৌন্দর্যের বর্ণনা দেবে। বলবে ড্রাগন রাজ্যে পাহাড় আছে। পাহাড় দেখার জন্য নিমন্ত্রণ করবে।’
জেলিফিশ কিছুটা আশাবাদী হলো। অতঃপর বানরের খোঁজে বের হলো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সমুদ্রের কিনারে পৌঁছে গেল। আশপাশে ঘুরে একটা গাছে বানরের দেখা পেল। জেলিফিশ আন্তরিকতার সাথে বানরের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। বিজ্ঞ মন্ত্রীর বুদ্ধি মোতাবেক ড্রাগন রাজ্যের সৌন্দর্যের গল্প শুরু করলো বানরের সাথে। তারপর বললো পাহাড়ের কথা। পাহাড় দেখার নিমন্ত্রণও জানালো। তখনই বানর যেতে রাজি হলো। বানর জেলিফিশের পিঠে চড়ে রাজপ্রাসাদের দিকে রওনা দিলো। কিছুদূর গিয়ে পথের মাঝে বিশ্রাম নিচ্ছিল দু’জন। তখন জেলিফিশ বানরের কাছে জিজ্ঞাসা করলো তার সাথে কি কলিজা আছে। বানর কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো, কারণ জানতে চাইলো। জেলিফিশ বোকার মতো রানীর অসুস্থতা ও কলিজা খোঁজার কারণ বলে দিলো। বানরতো মহাবিপদে পড়ে গেল। কিন্তু জেলিফিশকে বুঝতে দিলো না। কিভাবে বাঁচাবে নিজেকে! ভাবতে লাগলো কী করা যায়! হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।
‘জেলিফিশ তুমি বিষয়টা আমাকে আগে বললে ভালো হতো। আমিতো কলিজা গাছে ঝুলিয়ে রেখে আসছি। রোদে শুকাতে দিয়ে আসছি। বৃষ্টি আসলে ভিজে যেতে পারে। আমাকে এক্ষুনি ওখানে নিয়ে চলো। আমরা কলিজা নিয়েই রাজপ্রাসাদে ফিরবো।’
জেলিফিশ সরল মনে বানরের কথা বিশ্বাস করল।
বানরকে পিঠে নিয়ে আবার সমুদ্রের কিনারে ফিরে গেল। চালাক বানর পিঠ থেকে নেমেই এক লাফে গাছের আগায় উঠে গেল। ভুলে গেল জেলিফিশকে দেয়া কথা।
‘বোকা জেলিফিশ, রাজপ্রাসাদে যেমন পাহাড় থাকে না তেমনি কারোর দেহের বাইরেও কলিজা থাকে না।’
‘তুমি আর কলিজা পাবে না। শূন্য হাতেই প্রাসাদে ফিরে যাও।’
জেলিফিশ নিজের বোকামির জন্য অনুতপ্ত হলো। ভারাক্রান্ত মনে রাজপ্রাসাদে ফিরে গেল। সবাইকে খুলে বললো তার অপারগতার কথা। রাজা খুব রেগে গেলেন। রাগান্বিত হয়ে কঠিন শাস্তি দিলেন জেলিফিশকে। ‘বেকুবটাকে ধরে সব হাড্ডি খুলে ফেল। ইচ্ছেমত মেরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দে।’ রাজার আদেশ কার্যকর হলো। তখন থেকেই জেলিফিশ হাড্ডিহীন, নরম মাংসপিণ্ডের দেহ।

Share.

মন্তব্য করুন