জানতে হলে পড়তে হবে। যে জানে সেই জ্ঞানী। হাদিসে এসেছে, মূর্খ লোক সারা রাত জেগে ইবাদত করে যে পুণ্য পাবে, জ্ঞানী লোক সারা রাত ঘুমিয়ে তার চেয়ে বেশি পুণ্য পাবে। জ্ঞানের এত দাম। যে জ্ঞানী সে সম্পদশালী। জ্ঞানী লোকের পক্ষে ধনদৌলত অর্জন করা সহজ। যে জ্ঞানী নয়, তার পক্ষে পাঁচ শত টাকা উপার্জন করাও অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। অপর পক্ষে যিনি জ্ঞানী তার পক্ষে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা অনেক সহজ। শুধু তাই নয়, জ্ঞান হলো আলো আর মূর্খতা অন্ধকার। জ্ঞান দ্বারা ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক জীবনের অন্ধকার দূরীভূত করা যায়। জ্ঞান সঠিক পথ প্রদর্শন করে আর ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনে। সঠিক জ্ঞান মুমিনের ঈমানের সদা সতর্ক পাহারাদার। যার সঠিক জ্ঞান থাকে সে কখনো পথ হারায় না। অজ্ঞ লোকেরা সঠিক পথ হারিয়ে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়ে থাকে অধিকাংশ সময়। যে বই পড়ে না সে অজ্ঞই থেকে যায়। অন্যের থেকে শুনেও শেখা যায়। তবে যিনি বলেন তাকেও তো বই পড়তে হয়েছে। তাহলে বোঝা গেল সকল শিক্ষা পড়ারই ফল।
মহান আল্লাহ আল কুরআনে সূরা আলাকের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন, ‘আমি জ্ঞান দান করেছি কলমের সাহায্যে’। তার মানে কী? কলমে লেখা হয় আর সেই লেখা পড়তে হয়। পড়লেই জ্ঞান অর্জন হয়। একজন জ্ঞানী মানুষ মহা মূল্যবান। না পড়লে তো জ্ঞান অর্জন হয় না। তাই সকল মানুষকে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আর জ্ঞান অর্জন করতে হলে বই পড়তে হবে।
কৃষক, শ্রমিক, রিক্সাচালক, মুটে মজুর, কামার, কুমার সকল শ্রেণির মানুষকেই বই পড়তে হবে। যার নাম মানুষ তাকেই বই পড়তে হবে। এদের বই পড়তে হবে জীবনে বিচক্ষণ হবার জন্য, ঈমান, আমল ঠিক রাখার জন্য। প্রকৃত জনদরদি মানুষ হবার জন্য। যে নিজের সার্বিক কল্যাণ কামনা করে তাকেই বই পড়তে হবে। বই পড়া ছাড়া মানুষকে কল্পনাই করা যায় না। যে বই পড়ে না সে কখনো প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। পড়ার কাজটা মানুষেরই। পশুর বই পড়ার প্রয়োজন নেই।
জাতি, ধর্ম, বর্ণ, উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব, আপন-পর নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে শিখতে হলে বই পড়তে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হলেও বই পড়তে হবে। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। নিজের জীবনের উন্নতি চাইলে বই পড়তে হবে। যে নিজের ভালো চায় তাকেই বই পড়তে হবে। যে নিজের ভালো বোঝে না সে অন্যের ভালো বুঝবে কিভাবে? এখন কেউ বলতে পারে যে নিজের ভালো আবার বোঝে না কে? আমি বলি, বেশির ভাগ মানুষই নিজের ভালো বোঝে না। তার প্রমাণ দিচ্ছি। মহান আল্লাহ্ আল কুরআনে উল্লেখ করেছেন, “অধিকাংশ মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত।” এই ক্ষতি ইহকালের ক্ষতি এবং পরকালের ক্ষতি। এই ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে মানুষকে বই পড়তে হবে। শুধু ধর্মগ্রন্থ নয়। মানুষের কল্যাণে যা যা পড়া দরকার তার সবই পড়তে হবে। তবে সব মানুষকে ডাক্তারি বিদ্যা শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যার যেটা প্রয়োজন তাকে সেটাই পড়তে হবে। সব মানুষেরই কোন না কোন বিষয়ে অবশ্যই পড়তে হবে।
সকল মানুষই জ্ঞানের মুখাপেক্ষী। তাই সকলকেই বই পড়তে হবে। যে জাতি যত শিক্ষিত হবে, সে জাতি ততই উন্নত হবে। সম্ভবত নেপোলিয়ন বলেছেন, আমাকে শিক্ষিত একজন মা দাও, আমি উন্নত এক জাতি দেবো। এর মানে হচ্ছে, উন্নত জাতি গঠন করতে হলে সকলকে শিক্ষিত হতে হবে, বিশেষ করে মাকে। কারণ একজন মা-ই সন্তানের প্রথম শিক্ষক। মা মূর্খ হলে তাঁর সন্তান শিক্ষিত হবে সে সম্ভাবনা অনেক কম।
হাদিসে এসেছে, প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। আমি বলি, সকল ধর্মের সকল মানুষের জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। ইসলামী পরিভাষায় ফরজ মানে অবশ্য কর্তব্য। যে যত শিক্ষিত তার জীবন যাত্রার মান তত উন্নত। যে নিজের ভালো চায় সে যেন বেশি বেশি বই পড়ে। বই না পড়লে মানুষ অন্ধকারে হারিয়ে যাবে এই সম্ভাবনাই বেশি। অন্ধকার মানে মূর্খতার অন্ধকার অবনতির অন্ধকার। যে নিজের ভালো চায় না এবং মানুষ হতে চায় না তার বই না পড়লেও চলবে। মানুষের শুধু অবয়বটাকেই মানুষ বলা হয় না। মানুষের মনুষ্যত্বকেই মানুষ বলা হয়। মহান আল্লাহ্ আল কুরআনে মানুষকে বলেছে, আশরাফুল মাখলুকাত। মানে সৃষ্টির সেরা। আবার এই মানুষকেই বলেছেন, মানুষ পশু বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। শুধু এই জ্ঞান আর আমলের কারণেই মানুষের মধ্যে এত এত ব্যবধান। মহান আল্লাহ্ আল কুরআনে আরও বলেন, “যে জানে আর যে জানে না, এই দুই ব্যক্তি কি সমান হতে পারে?” আরও বলেন, যে জানে তার কাছে যাও। সুতরাং যে ব্যক্তি বই পড়ে সেই-ই জানে আর যে বই পড়ে না সে জানে না। তাই আল্লাহ্ বলেন, পড়, তোমার প্রভুর নামে। যিনি জ্ঞান দান করেছেন কলমের সাহায্যে। আল্লাহর এই আদেশ পুরো মানবজাতির জন্য। যে ধর্মের যে-ই পড়বে সেই জ্ঞানের আলো পাবে এবং সার্বিক কল্যাণ লাভ করবে। সঠিক জ্ঞান কারো সাথে প্রতারণা করে না। জ্ঞান এমনই একটি জিনিস যা ছিনতাই করা যায় না। এর ভাগ অন্য কেউ পায় না। জ্ঞান নামক এই বন্ধু আজীবন সাথে থাকে। জ্ঞান কখনো পর হয় না।
এসব কারণে মানুষ মাত্রই বই পড়তে হবে। মানুষ মানেই বই পড়া। তাই মানুষ যদি বই পড়া ছেড়ে দেয়, তবে তারা ধ্বংসের অতলে হারিয়ে যাবে। শুধু টাকা উপার্জন করাই সফলতা নয়। ঘর সংসার করাই সফলতা নয়। ইহকাল ও পরকালের সাফল্য অর্জন করাই মানুষের প্রকৃত কল্যাণ। অমানুষ থেকে মানুষ হতে হলে তাকে বই পড়তে হবে।
মানুষ যেভাবে প্রতিদিন ভাত খায় সেভাবে প্রতিদিন বই পড়তে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জ্ঞানই মানুষের অবয়বধারী মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানায়। মানুষের হাতে হাতে এখন যেমন মোবাইল দেখা যায়, তেমন করে প্রতিটি মানুষের হাতে বই থাকতে হবে। কাগজের বই হতে হবে। এতে চোখের ক্ষতি নেই। প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে যেমন গতি দান করেছে তেমনই ক্ষতি সাধনও কম করেনি। প্রযুক্তির কল্যাণে জলবায়ুর পরিবর্তন হয়েছে। পৃথিবী আজ বসবাসের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
জ্ঞান হলো তরবারি, যা দিয়ে মিথ্যাকে কাটা যায়, অকল্যাণকে অপসারণ করা যায়। তাই জ্ঞানের এই তরবারি সবার সাথে থাকতে হবে। আর জ্ঞানের এই তরবারি অর্জন করতে হলে পানি খাওয়ার মতো, ভাত খাওয়ার মতো, ঘুমানোর মতো ও রোগের চিকিৎসা গ্রহণের মতো গুরুত্ব দিয়ে সকলকে বই পড়তে হবে। অজ্ঞতা একটি রোগ। এ রোগের চিকিৎসা যে করায় না সে অজ্ঞতার রোগে রুগ্নই থেকে যায়। অবশেষে তার ঘুমন্ত মনুষ্যত্ব মারা যায়।
তাই বলি, মানুষের জন্য বই আর বইয়ের জন্য মানুষ। বই পড়া ছাড়া কেউ প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। এ কারণে সকল মানুষকে বই পড়তে হবে, বই পড়তে হবে এবং বই পড়তে হবে। পড়া ছেড়ে দেয়া মানে মানবিক গুণ ছেড়ে দেয়া। মানবিক গুণে গুণান্বিতরাই প্রকৃত মানুষ। গুণহীন চিরদিন পৃথিবীর অভিশাপ। অজ্ঞতা ও মূর্খতাও একটি অভিশাপ। তাই অভিশপ্ত জীবন কারো কাম্য হতে পারে না।
অতএব আসুন সকলেই বই কিনি বেশি বেশি বই পড়ি
বই পড়ে জীবন গড়ি।
ভালো ভালো পড়ি বই
প্রকৃত মানুষ হই
আর মানবতার কল্যাণে কাজ করি।
Share.