নূরুল আবসার দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। দুরন্ত স্বভাবের খেলাধুলায়ও বেশ পারদর্শী। দেখলে যে কেউ নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবে এই কোনো সাধারণ ঘরের ছেলে নয়, কোনো রাজার ছেলে। কিন্তু সেই এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মেধাবী, বিচক্ষণ, সুদর্শনও বটে। স্কুল থেকে এসে বাড়ির পাশের মাঠে নিয়মিত ফুটবল খেলে। একদিন ফুটবল খেলে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। মাগরিবের নামাজের পর দিনের আলো অন্ধকারে মিশে একাকার হয়ে সর্বত্র অন্ধকার রূপ ধারণ করল। খেলার মাঠ থেকে বাড়ি আসার পথে কিছুটা পথ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আসতে হয়। খেলা শেষে বন্ধুরা নিজের মতো করে বাড়িতে চলে গেছে। নূরুল আবসার জঙ্গলের মাঝামাঝি আসতেই এক সুন্দরী পরী পাখা ঝাঁপড়িয়ে সামনে উপস্থিত হয়। নূরুল আবসার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। যখন তার জ্ঞান আসে তখন সেই একটা তুলতুলে নরম বিছানায় শুয়ে আছে। তার নোংরা কাপড় চোপড় কোথায় সে-ই জানে না। তার গায়ে সুন্দর পায়জামা ও পাঞ্জাবি। চারদিকে সোনা চকচক করছে। কিছুক্ষণ পর আপেল, আঙুর, মালটা, আনারসহ নানা ধরনের ফল নিয়ে একটা পরী আসে এবং আবসারকে বিনয়ের সাথে খেতে বলে। কিন্তু নূরুল আবসার কিছু খায় না, কোনো কথাও বলে না। সেই এভাবে পুরো তিন দিন পানি ছাড়া কিছু খায়নি।
যে পরীটা আবসারকে ধরে নিয়ে এসেছে তার নাম শিমলা। বিয়ের বারো বছরেও তার কোনো সন্তান নেই। বাচ্চাদের আদর ভালোবাসা, স্নেহ করার তার খুব ইচ্ছে তাই আবসারকে তার কাছে নিয়ে এসেছে। তার স্বামী রেহাব কি যেন কাজে তাদের রাজ্য থেকে দূরে ছিল। সেই এসে আবসারকে দেখে শিমলা থেকে জিজ্ঞেস করেন, কে এই সুদর্শন বালক? শিমলা বলেন, এই হলো আবসার মানুষের সন্তান। রেহাব বলেন, তার পরিবার চিন্তা করবে না? করলে করুক তাতে আমার কী? স্বামী বলেন, তবুও এমনটি করা তোমার উচিত হয়নি। যাও ওকে দিয়ে আস। সেই এভাবে না খেয়ে থাকলে মারা যাবে। আমাদের রাজা জানলেও তোমার কঠিন শাস্তি হবে। তা হোক তবুও আমি তাকে দিয়ে আসতে পারব না। তাকে আমার কাছেই রাখব। ঐদিকে আবসারের পরিবার হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি করছে। যাদের সাথে খেলেছে প্রতে্যক জনের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছে। মসজিদের মাইকে এলাকার সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে।
আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে খবর নিয়েছে কোথাও আবসার নেই। এই কয়েকদিনে মা-বাবা, ভাই, বোন সবাই নামাজ পড়ে জায়নামাজ ভিজিয়েছে, সিজদা দিতে দিতে কপালে কালো দাগ পড়েছে। তবুও আবসারের কোথাও কোনো খবর নেই। একদিন সকালে পরী তাকে একটা বড় পুকুরে গোসল করতে নিয়ে এসেছে। ঐ পুকুরের সিঁড়িগুলো জ¦লজ¦ল করছে। গোসল করিয়ে শিমলা তার বাড়িতে নিয়ে যান। শিমলার এক বান্ধবী নূরুল আবসারকে দেখে ফেলে ও এই ছেলে মানুষ জেনে তাদের রাজাকে বলে দেয়। পরীদের রাজা সিনহাম খবর পাঠান শিমলা যাতে রাজার দরবারে দেখা করে। শিমলা রাজার দরবারে উপস্থিত হয়ে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব ঘটনা খুলে বলে। রাজা সিনহাম গর্জন করে আদেশ করলেন, এখনই ঐ ছেলেকে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আয়। শিমলা নিরুপায় হয়ে রাগের মাথায় সাতদিন পর এক সকালে আবসারকে তাদের বাড়ির পুকুরে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। নূরুল আবসার মা বলে ডাক দিতেই পরিবারের সবাই এসে হাজির হন।
Share.