জঙ্গলের উত্তর দিকে। মাঝারি সাইজের একটা ডুমুর গাছ। ডুমুর গাছটির পাতার ফাঁকে ছোট্ট টুনটুনির বাসা। টুনটুনির কেউ নেই, একটা ভাই ছিল সেও কোথায় হারিয়ে গেছে। টুনটুনিটি সকাল হলেই, বিষণœ মনে একা একা খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। আবার ঠিক সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে নিঃসঙ্গতায় মন খারাপ করে বসে থাকে। দিন পেরিয়ে রাত নামে, রাত পেরিয়ে দিন। এভাবেই তার জীবন কাটতে লাগলো।
একদিন সে খাবারের খোঁজে বাহিরে ছিল, শেষ বিকেলের দিকে বাসায় ফিরে দেখতে পায় ছোট্ট একটা খরগোশ ছানা ডুমুর গাছের নিচে বসে কাঁদছে। এটা দেখে তার খুবই কষ্ট হলো, সে খরগোশ ছানাটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন?
ছানাটি কেঁদে কেঁদে বলল, আমি আর আমার মা ঐ দূরে একটা গর্তের ভিতর থাকতাম। কিন্তু আজ মা আর আমি আমাদের গর্তের পাশেই সবুজ কচি ঘাস খাচ্ছিলাম, আর আনমনে গল্প করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এক দুষ্টু লোক আমাদের দেখে ফেলে, আমি পালিয়ে এলেও মা আর তার হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। আমি এখন কাকে মা বলে ডাকবো। কেঁদে কেঁদে ছানাটি সব বলছিল, আমি আর ঐ বাসায় ফিরে যেতে পারবো না। দুষ্টু লোকটা আমাদের বাসা চিনে ফেলেছে, আমাকেও ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেবে। মা তুমি কোথায়? ফিরে এসো!
টুনটুনিটি তার কষ্ট বুঝতে পেরে তাকে বুঝিয়ে সান্ত¡না দিলো। বলল, আজ থেকে তুমি আর আমি বন্ধু। ডুমুর গাছের নিচে একটা বাসা বানানোর পরামর্শ দিলো। ছানাটি একটু সান্ত¡না খুঁজে পেলো। নিজের জন্য ছোট্ট একটা বাসা বানিয়ে নিলো ছানাটি।
টুনটুনি আর খরগোশ ছানাটির বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। তারা সকল কাজ মিলেমিশে করতো। এভাবে অনেক দিন কেটে গেলো। একদিন সেই লোকটা ডুমুর গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, টুনটুনি সেটা দেখতে পায়, খরগোশ ছানা তাকে চিনতে পেরে দ্রুত গর্তের গভীরে চুপটি করে লুকিয়ে পড়ে। টুনটুনি দ্রুত তার প্রতিবেশী মৌমাছির বাসায় ছুটে যায়। সব ঘটনা শুনে তারা তড়িঘড়ি করে একঝাঁক ছুটে এসে লোকটির সমস্ত শরীরে কামড় দিয়ে মেরে ফেলে।
লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেই তার ব্যাগও পড়ে যায়। হঠাৎ খরগোশ ছানাটির মা ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে। এতদিন পর মাকে দেখতে পেয়ে ছানাটি মাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কাঁদে। মাও কাঁদতে থাকে। আর বলতে থাকে, লোকটা আজকে আমাকে শহরে বিক্রয় করে দেওয়ার জন্য যাচ্ছিল। তোমরা না এলে হয়তো আমি আর বেঁচে থাকতাম না। বলেই কান্না করতে থাকে। মৌমাছির ঝাঁক আর টুনটুনি খরগোশ মাকে সান্ত¡না দেয়।
ছানাটি মায়ের কোলে বসে টুনটুনি বন্ধুর সব কথা মাকে খুলে বলে। ডুমুর গাছের নিচের বাসাটাও দেখায়। মা খুব খুশি হয়ে টুনটুনিকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আর সেখানেই তারা সবাই সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে।

Share.

মন্তব্য করুন