এ সময়ের আলোচিত একটি প্রজন্মGen-z। শব্দটির পূর্ণ রূপ হলো Generation-z (জেনারেশন-জেড)। জেন-জি’কে Gen-z, i Generation, Gen Tech, Gen Wii, Homeland Generation, Net Gen, Digital Natives, Plurals Ges Zoomers নামেও ডাকা হয়। সাধারণত দুই যুগ তথা ২০ থেকে ২৫ বছরের মতো সময় ধরে যে প্রজন্ম বেড়ে ওঠে তাদের শুরু থেকে শেষ বছরটির নানান পরিসংখ্যান, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রজন্মটিকে চিহ্নিত করা হয়।
জেন-জি’র আগের প্রজন্ম দেখেছে ইন্টারনেটের উত্থান। দেখেছে ক্যাবলযুক্ত ডিশ, টেলিভিশন এবং ব্যবহার করেছে ল্যান্ড ফোনও। আর Gen-z বেড়ে উঠেছে উন্নত প্রযুক্তির সময়ে। এদের বেশির ভাগ ডুবে থাকেন সোস্যাল মিডিয়ায়। হাতের মুঠোয় দেখেন দুনিয়া। ইন্টারনেট ছাড়া দুনিয়া ভাবতে পারেন না।
সারাদিন হাতে ফোন থাকলেও নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে যারা সবসময় সচেতন থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেকেই অর্থ আয় করছেন এবং খারাপ সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার পরিচয় দিচ্ছেন। করোনার মতো মহাসঙ্কট দেখে বেড়ে ওঠা জেন-জি জীবনের বাস্তবতাকে খুব কাছ থেকে দেখেছে। জীবনকে বুঝতে শিখেছে। এসব প্রভাব পরিবর্তন এনেছে তাদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধে। এ জন্য প্রজন্মটি অন্যান্য প্রজন্মের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং আত্মবিশ্বাসের সাথেই তারা কাজ করেন।
তাইতো জেন-জি’রা ভালোবাসে উদ্যোক্তা হতে, নিজস্ব শব্দ ব্যবহার করতে, ভ্রমণ করতে, অর্থ সাশ্রয় করতে, নতুন দক্ষতা অর্জন করতে, গেম খেলতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে এবং নিজেদের নানান কাজের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিতে। পরিবেশের নানান বিরূপ প্রভাব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন থাকে বলে অনেকে জেন-জি’কে সচেতন ও পরিবেশবাদী হিসেবে চিনে থাকেন।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেন-জি প্রজন্মের ৩৮ শতাংশ দেশ-বিদেশে ঘোরার সুযোগ খোঁজে। এই প্রজন্মের ৭৫ শতাংশ অনলাইনে গেম খেলতে পছন্দ করে। করোনা মহামারী সঙ্কটের কারণে ২৯ শতাংশ ভোগেন দুশ্চিন্তায়।
অন্যান্য পরিসংখ্যানে জানা যায়, জেন-জিরা বেড়ে উঠেছে শহর এলাকায়। এদের মাত্র ১৩ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বেড়ে উঠছে। ২০১৮ সালের এক গবেষণার বরাতে ব্রিটানিকা জানিয়েছে, জেনারেল জেড-এর সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করেছেন। এদের মাত্র ৪ শতাংশ ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন।
কেয়ারগিভার্স অব আমেরিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। তাহলে জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন প্রজন্মের নাম, তাঁদের জন্মের সময়সীমা ও বর্তমানে তাঁদের বয়সের মান।
গ্রেটেস্ট জেনারেশন বা মহত্তম প্রজন্ম : এঁদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯০১ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স অবশ্যই ৯৫ বছরের বেশি।
সাইলেন্ট জেনারেশন বা নীরব প্রজন্ম : এঁদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স ৭৯ থেকে ৯৪ বছর।
বেবি বুমার্স জেনারেশন : এঁদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স ৬০ থেকে ৭৮ বছর।
জেনারেশন এক্স : এঁদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স ৪৪ থেকে ৫৯ বছর।
জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালস বা সহস্রাব্দ প্রজন্ম : এঁদের জন্মকাল আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স ২৮ থেকে ৪৩ বছর। এই প্রজন্মেরই যাঁদের জন্ম আবার ১৯৯০ সালের ভেতরে অর্থাৎ যাঁরা পুরো নব্বই দশকে তাঁদের শৈশব-কৈশোর পার করেছেন, তাঁদের বলা হয় নাইন্টিজ কিডস। এঁদের মা-বাবারা বেশির ভাগই বুমার্স ও জেনারেশন এক্সের সদস্য।
জেনারেশন জেড বা জেন-জি : এঁদের জন্মকাল ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এবং এঁদের বর্তমান বয়স ১২ থেকে ২৭ বছর। এঁদের মা-বাবারা মূলত জেনারেশন এক্স ও ওয়াইয়ের সদস্য।
জেনারেশন আলফা : এদের জন্মকাল আনুমানিক ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এবং এদের বর্তমান বয়স ০ থেকে ১২ বছর। এদের মা-বাবারা আবার জেনারেশন ওয়াই বা সহস্রাব্দ প্রজন্মের সদস্য।
যদিও আলফা প্রজন্মের শেষ সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই প্রজন্ম এখনো শিশু এবং এদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য ও পরিসংখ্যান এখনো সর্বব্যাপী প্রকাশিত নয়, কাজেই বলা যাচ্ছে না যে এই সময়কাল শেষ হবে কত সালে।
জেনারেশন জেডের সবচেয়ে বয়সী সদস্যও মাত্র ২৭ বছরের। অর্থাৎ এই প্রজন্মের সদস্যদের দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে বেশ কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে ইতিহাস বলে এঁদের হাত ধরে আসে নতুন পৃথিবী।
আলফার পরবর্তী প্রজন্মগুলোর নাম হতে পারে ‘বিটা’, ‘গামা’ ইত্যাদি।
Share.