মহানবী হযরত মুহাম্মদ স. এর একদিনের ঘটনা। একটি জলসায় তিনি তাঁর সাহাবীদের উপদেশ দিচ্ছিলেন। তাঁর উপদেশ মানেই সুন্দর ও উন্নত জীবনের কথা। কীভাবে সফল হবে মানব জীবন সেই বাণীই দিতেন তিনি। মহানবী যখন কথা বলতেন তাঁর সাহাবীরা একদম নীরব নিশ্চুপ হয়ে শুনতেন। মনে হতো তারা মৃত মানুষ। নিশ্বাসের শব্দও শোনা যেতো না। অনেক সময় মরুভূমিতে খোলা আকাশের নীচে এমন মজলিসে সাহাবীরা বসে মহানবীর কথা শুনতেন। তখন এমনই নীরবতা বিরাজ করতো পিন পড়লেও শোনা যাবে। এ অবস্থায় অনেক সময় সাহাবীদের মৃত্যু ভেবে মাথায় পাখি বসতো! এমনই নীরবতার মধ্যে বসে মহানবীর উপদেশ শুনছিলেন সাহাবীগণ। এই মজলিসে ছিলো প্রাণবন্ত এবং জীবন্ত মানুষের উপস্থিতি। মহানবী কথা বলছিলেন। হঠাৎ একজন গ্রামের লোক এসে হাজির। লোকটি কোনোরকম ভদ্রতা না করেই সরাসরি ঢুকে পড়লো মজলিসের ভেতর। মজলিসের ভেতর দিয়ে সোজা রাসুলের সামনে গিয়ে বসলো। গ্রামের লোক তো গ্রাম্য আচরণই করবে। রাসুল স. বুঝতে পারলেন লোকটির আচরণ। লোকটির কাছে ছিলো একটি থলে। থলের ভেতর ছিলো একটি গুইসাপ। গুইসাপটি শিকার করেছিলো সে।
লোকটি মহানবীর দিকে ইশারা করে সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলো- ইনি কে?
সাহাবীরা জবাব দিলেন- ইনি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল মুহাম্মদ স.। শুনে লোকটি তার দেবতা লাথ ও উযযার শপথ করে থলের গুইসাপটি দেখিয়ে বললো- যতক্ষণ পর্যন্ত এই গুইসাপটি আপনার ওপর ঈমান আনবে না ততক্ষণ আমিও আপনার প্রতি ঈমান আনবো না। আনবো না তো আনবোই না। এই বলে লোকটি থলে থেকে গুইসাপটি ছেড়ে দিলো রাসুলের সামনে।
তখন গোটা জলসায় একধরনের টানটান উত্তেজনা। এ এক বিস্ময়কর ঘটনা বটে। কি হয় কি হয় এমন একটি বিষয়। সাহাবীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। ফলাফল জানার জন্য সবার ভেতর উত্তেজনাকর অপেক্ষা। কারো মুখে টু শব্দটিও নেই। পিনপতন নীরবতা ছড়িয়ে পড়লো মজলিসে। এমনই নিস্তব্ধ হলো যেনো সব শব্দ বরফ চাপা দেয়া হয়েছে। সাহাবীরা মাঝে মাঝে চোখ তুলছেন রাসুলের দিকে। আরেকবার দেখছেন ওই গ্রাম্য লোকটিকে।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ স গুইসাপটিকে ডেকে বললেন- ওহে গুইসাপ!
সবাইকে বিস্মিত করে জবাব দিলো গুইসাপ। বললো- ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি উপস্থিত, আমি আপনার অনুগত!’
গুইসাপের মুখের কথা উপস্থিত সকলেই শুনতে পেলেন।
নবীজী স. গুইসাপকে জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কার ইবাদত করো?
জবাবে বললো গুইসাপ, ‘আমি ওই মহান আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করি- যার আরশ আকাশে। যার রাজত্ব পৃথিবীতে। যিনি সমুদ্রের ভেতর পথ সৃষ্টি করেছেন। যিনি জান্নাতে রহমত ও জাহান্নামে আজাব সৃষ্টি করেছেন।’
রাসুল স. তাকে আবার জিজ্ঞেস করলেন- আমি কে?
জবাব দিলো গুইসাপ- ‘আপনি আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত রাসুল। যে আপনার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে সফল হবে। আর যে আপনাকে অস্বীকার করবে সে ব্যর্থ হবে।’
গুইসাপের এমন কথা শুনে উপস্থিত সকলেই বিস্মিত হলো। একইসাথে আনন্দে বুক ভরে গেলো সাহাবীদের।
গ্রাম্য লোকটি ভীষণ অবাক হলো। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ইসলাম কবুল করলো। মহানবী তাকে নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের পদ্ধতি শিখিয়ে দিলেন। শিখিয়ে দিলেন সুরা ইখলাস।
এরপর লোকটি চলে গেলেন তার গোত্রের কাছে। গিয়েই তার চোখে দেখা তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করলো বিস্তারিত। একেবারে তার সাথে ঘটা ঘটনা অস্বীকার করলো না তার গোত্রের কেউ। কয়েকদিন পর ওই গোত্রের সবাই হাজির হলো রাসুলের দরবারে। এবং সবাই একসাথে মহানবীর মুখে মুখে উচ্চারণ করলেন কালিমা শাহাদাত। গুইসাপের একটি ঘটনায় মুসলমান হয়ে গেলো সকলেই।

Share.

মন্তব্য করুন